"গতকাল সারাদিনের কিছু কথা"
![]()
|
---|
Hello,
Everyone,
জীবনে যত বেশি বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছি, তত বেশি অনুভব করছি প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। "আজ নয় কাল করবো" এই কথাটা আজকাল চেষ্টা করি কম ব্যবহার করার, কারণ কাল বলে সত্যিই আমাদের জীবনে কিছু আছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলা আসলেই কঠিন।
জীবনে কতগুলো দিন কতগুলো বছর কিছু না করে শুধু নষ্ট করেছি, সেটা এখন হিসেব করতে বসলে আফসোস ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকবে না। এখনও যে সমস্ত সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি এমনটা ও নয়, তবে এখন কোথাও নিজের মতামত উপস্থাপন করা, নিজের ভালো না লাগা গুলোকে সকলের সামনে প্রকাশ করতে শিখছি, এই বা কম কিসে।
![]()
|
---|
কারণ এতদিন মনে হতো ভালোবাসার মানুষগুলো বোধহয় না বলা কথাগুলো বুঝে যায় এমনিতেই। কিন্তু ঐ যে বললাম বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্মুখীন হয়ে বুঝলাম, এই পৃথিবীতে নিজের ভালো-মন্দ বোঝার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। অন্য কেউ বুঝবে এই অপেক্ষা করলে সময় কোথা থেকে পার হয়ে যায় বোঝাই যায় না। এই জন্যই চলতি একটা প্রবাদ হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন "না কাঁদলে নিজের মা ও দুধ দেয় না"। আপনার অপছন্দ যেমন আপনাকে বলতে হবে, আপনার আপত্তিগুলো যেমন আপনাকে জানাতে হবে,তেমনি আপনার খুশি গুলো আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে।
যাইহোক এতগুলো কথা এ কারণেই বললাম কারণ, গতকাল আবার গিয়েছিলাম শ্বশুর মশাইকে নিয়ে হসপিটালে চেককাপের জন্য। আর এই হসপিটাল এমন একটা জায়গা যেখানে বোধহয় আমরা নিজেরা নিজেদের জীবনের বাস্তবতার সম্মুখীন সবথেকে ভালোভাবে হতে পারি।
![]()
|
---|
ওখানে ওপিডি সেকশনে ডাক্তার দেখাতে গেলে মোটামুটি ভোরবেলা থেকেই লাইন পড়ে যায়। হাসপাতালে থাকাকালীন দেখেছি দূর দূরান্ত থেকে মানুষেরা আগের দিন রাতে আসে। সেই রাতে হসপিটালের ওয়েটিং রুমে রাত কাটান, যাতে পরদিন ভোরবেলায় লাইন দিতে পারেন। সেই বিষয়গুলো যেহেতু সামনে থেকে চাক্ষুষ করে এসেছিলাম, তাই সাড়ে আটটা নাগাদ গাড়ি আসতে বলা হয়েছিলো। আর তার আগেই আমরা রেডি হয়ে নিয়েছিলাম।
আমাদের বাড়ি থেকে কল্যাণী পৌঁছাতে মোটামুটি প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগে। যেহেতু নির্দিষ্ট সেকশনেই আমাদেরকে যেতে হবে, তাই বেশি ভোরে বেরোইনি। যদিও ভেবেছিলাম সেখানে খুব বেশি পেশেন্ট হবে না, তবে গিয়ে যখন সেখানকার অবস্থা দেখলাম তখন বুঝলাম আরো অনেকক্ষণ আগে বেরোনো উচিত ছিল আমাদের। যাইহোক নিয়ম অনুসারে ওখানে গিয়ে বই জমা দেওয়া হলো। তারপর শুরু হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
![]()
|
---|
একদিনে সেখানে মোটামুটি ২২ থেকে ২৩ হাজার পেশেন্ট দেখা হয় সব কটা সেকশন মিলিয়ে। আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল নেফ্রোলজিতে। সেখানেও প্রায় সাড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ পেশেন্টের লাইন ছিল গতকাল। এর মধ্যে অনেক এমারজেন্সি পেশেন্ট ছিলো, অনেকে দ্বিতীয়বার রিপোর্ট দেখাতে এসেছিলো, আবার অনেকেই ছিল যারা ওখানে ভর্তি রয়েছে। ওয়ার্ড থেকেই তাদেরকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে ডক্টরের চেকআপ করানোর জন্য। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে ব্যস্ততা, ভিড়, আর অপেক্ষার আন্দাজ বোধহয় আপনারা করতে পারছেন।
![]()
|
---|
কখনো আমি, কখনো শুভ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম কখন আপনার শ্বশুর মশাইয়ের নাম ধরে ডাকবে। নিয়ম অনুসারে উনি ভেতরে ঢুকে অপেক্ষা করবে, যখন ডাক্তার ডাকবে তখন কেবলমাত্র পেশেন্টের সাথে একজন ভিতরে গিয়ে কথা বলতে পারবে। সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৩.১৫ নাগাদ আমরা নেফ্রোলজি সেকশন থেকে বেরোতে পেরেছিলাম। মাঝখানে শুধুমাত্র বাড়ি থেকে করে নিয়ে যাওয়া দুটো রুটি খাওয়া হয়েছিল আমাদের।
![]()
|
---|
নেফ্রোলজির কাজ শেষ করে সেখানকার যে ওষুধ ও ইনজেকশন শ্বশুরমশাইয়ের জন্য ডাক্তার দিয়েছেন, সেগুলো কেনার জন্য শুভ ঔষধের দোকানে চলে গেলো। আর আমি অপেক্ষা করলাম শ্বশুরমশাইয়ের খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত। কারণ তারপর একবার ওনাকে ডারমাটোলজিস্ট দেখানোর চেষ্টা করবো, এমনটা ইচ্ছে ছিল আমাদের। যদিও কোনো লাভ হবে কিনা বা, সেখানে পেশেন্টের চাপা আদেও কতটা রয়েছে আমরা জানতাম না।
যাইহোক সেখানে পৌঁছে দেখলাম ইতিমধ্যে ৭৫ জন পেশেন্ট দেখা হয়ে গেছে। একজন পেশেন্ট অপেক্ষা করছেন। শশুর মশাইয়ের বইটা সেখানে দেখাতেই ওরা পরবর্তী তারিখটা লিখতে গিয়েছিলো। তবে শুভ অনেক রিকোয়েস্ট করেছে, যেহেতু বয়স্ক মানুষ এবং অনেকটা দূর থেকে আসা হয়েছে তাই ওরা একবার ডক্টরের সাথে কথা বলল এবং সবশেষে শ্বশুর মশাইয়ের নামটা লিখে নিলো। আবারও কিছুক্ষণের অপেক্ষা শুরু হলো।
![]()
|
---|
সেই সময় বসে আমি আমার পোস্ট লিখছিলাম। শুভ শশুর মশাইকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে এলো। সত্যি কথা বলতে শারীরিক অবস্থা ওনার মোটেই ভালো না, বিশেষ করে লিভার এবং কিডনির অবস্থা একেবারেই খারাপ। এর পরেও যতটুকু ওষুধের দ্বারা ঠিক করা যায় সেই প্রচেষ্টাই করে চলেছি বলতে পারেন।
![]()
|
---|
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বেশ কিছু ক্রিম, ট্যাবলেট লিখে দিলেন, সেগুলোই কেনার জন্য আবারও নিচে এসে লাইন দিতে হলো। পূর্বেও আপনাদেরকে হসপিটালের ওষুধের দোকানের লাইনের সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলাম।
আর ওপিডিতে যে সংখ্যক পেশেন্ট হয়, তারা প্রত্যেকে যদি ওষুধের জন্য লাইনে দাঁড়ায়, তাহলে ঠিক কতক্ষণ বাদে ওষুধ পাওয়া যেতে পারে আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন। যাইহোক অনেকখানি পয়সা যেহেতু কম লাগে, তাই ধৈর্য্য সহকারে সেই লাইনে আমাদের মতো আরও অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকেন।
সমস্ত কাজ শেষ করে আমরা সন্ধ্যা ৬.৩০ নাগাদ ওখান থেকে বাড়ি আসার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। বাড়ি এসে পৌঁছাতে আমাদের রাত ৮ টার বেশি বেজে গেলো। এরপর আমি আগেই বুমিং এর কাজটা সেরে নিলাম। তারপর স্নান করে, রাতের খাবার খেলাম, প্রচণ্ড খিদে পেয়েছিলো, যেহেতু সারাদিন ওই রুটি দুটো ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয়নি।
![]()
|
---|
আমাদেরকে আবার এপ্রিল মাসে যাওয়ার জন্য ডেট লিখে দিয়েছে। অবশ্য তার পূর্বে সপ্তাহখানেক আগে গিয়ে অনেকগুলো টেস্ট করাতে হবে। ইতিমধ্যে যেন আর যেতে না হয় এখন সেইটুকুই প্রার্থনা। গতকাল সেখানে অনেক ধরনের পেশেন্টের যাতায়াত দেখে খানিকটা মন খারাপ হয়েছে। আবার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করেছে, অন্তত আমাদেরকে তিনি এতোটুকু সুস্থ রেখেছেন।
যদিও জানি না ভবিষ্যতে কি হবে। তবে মানুষের অসহায়ত্ব বোঝার জন্য হসপিটালের থেকে ভালো জায়গা সত্যিই আর কোথাও হয় না। অর্থ, প্রতিপত্তি, নাম, যশ, খ্যাতি কোনো কিছুই মানুষের এই অসহায় দিনগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে না। বয়সের ভারে সকলকেই একদিন নত হতে হয়, পরনির্ভরশীল হতে হয়, তবে সেই সময় দাঁড়িয়েও যদি নিজের ভিতরে আত্মহংকার কাজ করে, তাহলে বোধহয় উল্টো দিকের মানুষগুলোর কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করাটা নিতান্তই বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।
যাইহোক গত প্রায় দু-তিন বছর ধরে এতো বেশি হাসপাতালে সময় কাটিয়েছি, এতো বেশি অসহায়ত্ব দেখেছি যে, মাঝেমধ্যে যে নিজের জন্য ভয় করে না এ কথা বলবো না। কিন্তু তারপরেও মনে হয় সত্যিই সকলে যা বলে তা সঠিক, - যার কেউ নেই, তার ঈশ্বর আছেন। যদিও কতখানি সততা নিজের মধ্যে বজায় রাখতে পারে জানিনা, তবে চেষ্টা করি সব সময়। আর এই চেষ্টার ফল ঈশ্বর নিশ্চয়ই দেবেন।
যাইহোক গতকালের কিছু অভিজ্ঞতা ও মুহূর্ত আপনাদের সাথে আজ এই পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করলাম। আপনাদের প্রত্যেকের সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখা শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।
আপনার শ্বশুর মশায়ের সুস্থতা কামনা করছি। তিনি যেন খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠেন।
পোষ্টটা পড়ে জীবনের সত্য কিছু চিত্র আবারও মনে পরে গেল। লেখা গুলো যেন মনের ভিতরে নাড়া দেয়। আসলেই নিজের দায়িত্ব বা নিজেট ভালো মন্দ গুলো সব সময় নিজেকেই দেখভাল করতে হয়। আজকের কাজগুলো কাল বলে রেখে দিলে সব সময় সেটা পরে থাকবে।
সত্যি বলতে এমন সময় গিয়েছে আমার আমি প্রতি মাসে ৩/৪ বার হাসপাতালে গিয়েছি৷ কখবও সেটা নিজের জন্য, বাবা মা বা আত্নীয় স্বজনদের জন্য। হাসপাতালে গেলেই আমার যেন মনে হয়, আমি কত সুখে আছি তারপরও সৃষ্টি কর্তার গুনগান করি না। মনে হয় এই জীবনের সফলতা, চাকরি সবই যেন অসুস্থতার কাছে হেড়ে যায়। মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। এজন্য হাসপাতালে যেতে ভালো লাগে না।
এটা ঠিক বলেছেন দিদি, মানুষ যখন অসহায় অবস্থায়ও তার ইগো, অহংকার আর অহামিকা নিয়ে পরে থাকে, নিজের দ্রুর্বলতাকে শিকার করতে চায় না, তার পাশে থাকা মানুষগুলোও অনেক সময় তাকে অবহেলা করতে পারে।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল। এভাবেই পরিবারের পাশে থেকে সবাই ভালো রাখুন।
এক কথায় অনবদ্য একটি লেখা আপু। বাস্তবতার আলোকে প্রতিটি অনুভূতি এত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন রে পড়তে পড়তে যেন আমি নিজেও সেই মুহূর্তগুলোর অংশ হয়ে গেলাম। হাসপাতালের অভিজ্ঞতা, অপেক্ষার ক্লান্তি, মানুষের অসহায়ত্ব সবকিছুই অত্যন্ত বাস্তব ভাবে ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে যার কেউ নেই তার ঈশ্বর আছেন এই লাইনটি সত্যি হৃদয় ছুয়ে গেল।
আপনার লেখার গভীরতা ও অভিব্যক্তি সবসময় প্রশংসার দাবিদার। ভবিষ্যতে এমন সুন্দরও মন ছুয়ে যাওয়া লেখা আশা করব। আপনার এবং পরিবারের সবার সুস্থতা কামনা করছি। অনেক অনেক শুভকামনা।
উপরের এই কথাটুকু আমি আপনার সাথে একমত।
আপনার শ্বশুর মশাইয়ের জন্য অনেক দোয়া রইল। সৃষ্টিকর্তা যেন উনাকে দ্রুতভাবে সুস্থতা দান করে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা সত্যিই জীবনের গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে। জীবনের মূল্য বুঝতে শিখায় আমাদের।
আপনার লেখা পড়ে সত্যিই মনে হয়েছে, জীবন কতটা অনিশ্চিত। নিজের সুস্থতা এবং সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক বেশি। আপনি যেভাবে নিজের পরিবারকে সহায়তা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
Congratulations! This post has been voted through steemcurator09 We support quality posts, good comments anywhere and any tags.
Thank you so much @okere-blessing ma'am for your support. 🙏
আগামী দিন বলে আমাদের জীবনে কিছু আছে এটা আমরা কখনোই বলতে পারি না। কারণ আমাদের জীবনের এক সেকেন্ডের ভরসা নেই যে কোন মুহূর্তে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। আপনি ঠিকই বলেছেন আমরা কত বছর কত দিন নষ্ট করেছি। সেটা যদি এখন হিসাব করতে বসি তাহলে আফসোস ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না। আপনার মত আমিও এখন আর আজকের কাজ কালকের করব এই চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিয়েছে, সময়ের কাজ সময় করার চেষ্টা করছি।
নিজের কষ্টের কথা আপনি যদি কারো কাছে প্রকাশ না করেন। তাহলে সেটা কেউ বুঝতে চায় না। আপনি ঠিকই বলেছেন না কাটলে মাও দুধ দেয় না, এটাই স্বাভাবিক। তবে আজকের দিনটা আপনার অনেক বেশি ব্যস্ততার মধ্যেই কেটে গেছে। আপনার শ্বশুরকে হসপিটালে চেকআপ করানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। পুরোটা সময় আপনার ওখানেই ব্যয় করতে হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার আর একটা দিনের অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।