"বিগত কয়েক দিন"
![]()
|
---|
Hello,
Everyone,
গল্পটা শুরু হয়েছিল গত সোমবার থেকে। আশা করছি যারা আমার এনগেজমেন্ট রিপোর্ট পড়েছেন তারা বিষয়টি খেয়াল করেছেন যে, শশুর মশাইকে নিয়ে পুনরায় হসপিটালে উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার সময়, গাড়িতে বসে এনগেজমেন্ট রিপোর্ট লেখা শুরু করেছিলাম।
ইচ্ছে ছিলো ওনাকে এইমসে ভর্তি করানোর, যেহেতু সপ্তাহখানেক আগে ওখান থেকে ওনাকে ডিসচার্জ করা হয়েছিলো। কিন্তু পুনরায় একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিই সেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসার। তবে দুর্ভাগ্য, আসার পরে জানতে পারি তিনি ছুটিতে আছেন, ১৫ তারিখের পরে ফিরবেন।
"এমারজেন্সির সামনে"
"এমারজেন্সির সামনে"
তাই আরও একবার এমার্জেন্সির দরজায় উপস্থিত হলাম। তবে খুব আশা নিয়ে গিয়েছিলাম সে কথা বললে ভুল হবে। কারণ এইমসের এমারজেন্সিতে এর আগের বার অনেক কাকুতি মিনতি করে রাখা গিয়েছিলো, তবে এবার এসে দেখলাম কোনো সিট ফাঁকা নেই।
এবার সাথে ননদ আসতে পারেনি কারণ, সেদিন ছোটো ছেলের প্রথম স্কুল শুরুর দিন ছিলো। ক্লাস ফাইভে উঠেছে তাই নতুন বই দেওয়ার সময় অভিভাবকের থাকাটা বাধ্যতামূলক। তাই অগত্যা আমি, শুভ, শুভর একটা বন্ধু তিনজন মিলেই রওনা করলাম।
"এমারজেন্সি থেকে বেরোনোর সময়"
"এমারজেন্সির উল্টোদিকের পরিবেশ"
শুভ বাইক নিয়ে এসেছিল কারণ এখানে যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাইকটা খুবই উপকারী। তাই গাড়িতে আমি এবং শুভর বন্ধু শশুর মশাইকে নিয়ে এসেছিলাম। কিছুক্ষন এমারজেন্সির সামনে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছিলাম যদি কোনো ক্রমে কোনো যোগাযোগ বের করা যায়।
কিন্তু কোনো লাভ হলো না, তাই শাশুড়ি, ননদ, মামা শ্বশুর সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত হলো শুভর মামাবাড়ির পাশের একটি নার্সিংহোমে অন্তত দুদিনের জন্য ভর্তি রাখা হবে। তারপর আবার এই ডাক্তারের সাথে কথা বলে্ এইমসে ভর্তি করানোর চেষ্টা করা হবে।
"হেলথ কেয়ার নার্সিংহোমের কেবিনে শশুরমশাই"
"হেলথ কেয়ার নার্সিং হোম"
হেলথ কেয়ার নামক নার্সিংহোমে দুটো দিন ওনাকে ভর্তি রাখা হয়েছিলো। তবে নার্সিংহোমে যেমনটা হয়, চিকিৎসা হোক বা না হোক, বিলগুলো বড্ড বেশি হয়ে থাকে, এখানেও তেমনটাই হলো। শ্বশুর মশাইয়ের অবস্থা তখন কতটা সিরিয়াস ছিলো ছবি দেখলে বুঝতে পারতেন। তবে ঐ ছবি এখানে শেয়ার করার নিয়ম নেই বলে, আমি সেগুলো এখানে শেয়ার করতে পারছি না।
"রাতে নার্সিংহোম থেকে বেরোনোর সময়"
"প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে ওষুধের দোকানে"
যাইহোক বুধবার খুব সকালে শুভ এইমসে চলে আসলো ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য। অনেক দৌড়াদৌড়ি করে, কোনো রকমে ওপিডিতে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে, ওখানে ভর্তির ব্যবস্থা করলো। আমিও তৎক্ষণা নার্সিংহোমে গিয়ে ওনাকে রিলিজ করিয়ে, ছোট মামার শশুরকে সাথে নিয়ে রওনা করলাম এইমসের উদ্দেশ্যে। এখানে এসে ভর্তি করে ওখনাকে বেডে তুলে, সমস্ত ওষুধ পত্র গুছিয়ে দিতে দিতেই কেটে গেল সেই দিনটা।
""এইমসের এই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন শশুরমশাই
"বেডে শুয়েছেন- লুকিয়ে তোলা ছবি"
রাত প্রায় ৯ টা নাগাদ মামা শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে, টিউটোরিয়াল ক্লাসে যোগদান করলাম কিছু সময়ের জন্যে। তারপর স্নান করে, জামা কাপড় ধুয়ে খেতেই চোখের পাতায় ঘুম জড়িয়ে আসে। অনেক কষ্ট করে একটা/দুটো পোস্ট ভেরিফাই করেছিলাম মনে হয়। আবার পরদিন সকাল সাতটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, রওনা করলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
এসে দেখি একই অবস্থা, বরং সারা গা চুলকাচ্ছে। রাতে ঘুমাতে পারেনি, অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে পেটে, সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা খারাপ। একটা বড় ওষুধের লিস্ট ধরিয়ে দিলো নার্স এসে। এখানে ভিতরের দোকান থেকে ওষুধ নিতেও ২-৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়। যদিও ৬০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়, তাই এই কষ্টটা অনেকেই করেন আমাদের মতো,এই কারণেই ভির বেশি হয়।
তারপর একগাদা ব্লাড টেস্ট, ক্যাথেটার আটকে যাওয়া, সেটাকে পুনরায় চালু করা, কখনো রুমের ভেতরে ঢোকা, কখনো বাইরে বসে থাকা, এইসব করতে গিয়েই সাড়ে চারটে নাগাদ আমি আর শুভ একটু খাবার খেলাম। খাবার সম্পূর্ণ হতে না হতে আবার ওয়ার্ড থেকে ফোন করলো স্যালাইন আনতে হবে। আবার গেলাম ওষুধের দোকানের সামনে।
"সিটি স্ক্যান ও এম আর আই এর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের লিস্ট"
"গতকাল রাতের প্রয়োজনীয় জিনিসের লিস্ট"
"ওয়েটিং এড়িয়া-এখানে বসেই কাটে দিনের বেশিরভাগ সময়"
"করিডরে দাড়িয়েও দীর্ঘ প্রতীক্ষা করতে হয়"
আমার থেকেও শুভর ধকল বেশি, তবে একা ম্যানেজ করা এখানে খুবই সমস্যার। সমস্ত ওষুধপত্র বুঝিয়ে দিয়ে প্রতি দিনের মতো বাড়ি পৌঁছলাম ১০ টা নাগাদ। গতকালকের দিনটা অতিবাহিত হয়েছে এক্সরে ও সিটি স্ক্যানের মধ্যে দিয়ে। আজ আবার সকাল ৭.৩০ মধ্যে আসতে হয়েছে এমআরআই হবে এই কারনে। গত দুদিন ধরে একটু একটু লিখতে লিখতে আজ এখন লেখাটা শেষ করলাম। বাকি কথা অন্য পোস্টে জানাবো। ভালো থাকবেন সকলে। আজকের দিনটি সকলের খুব ভালো কাটুক সেই প্রার্থনা রইলো।
আপনার পোস্টটি পড়ে পুরো ঘটনাটি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারলাম। শশুর মশাইয়ের চিকিৎসার জন্য যে ধৈর্য, পরিশ্রম এবং ত্যাগ করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। হাসপাতালের ঝামেলা, ওষুধের লম্বা লাইন এবং অবিরাম দৌড়াদৌড়ি সব কিছু সামলে পরিবারের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। আশা করি আপনার শশুর মশাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনার এবং পরিবারের জন্য শুভকামনা।
আদেও এর মধ্যে অনুপ্রেরণামূলক কিছু আছে কিনা জানিনা, তবে সত্যি কথা বলতে কিছু কিছু দায়িত্ব পালন করাটা মানবিকতার পরিচয়। তবে অনেকের কাছ থেকে এই মানবিকতা আশা করা উচিত নয়। কারণ যে মানুষগুলোর জন্য আমরা অবিরাম পরিশ্রম করি, কখনো কখনো তাদের থেকেও অনেক অমানবিক আচরণ পেয়ে থাকি। তবে এখানেই সেই মানুষ গুলোর সাথে আমাদের শিক্ষা ও মানবিকতার পার্থক্য। তবে হ্যাঁ হাসপাতালে গেলে মানুষের লড়াই দেখলে, নিজের জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর মনে হয় এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
আমি বিগত পোস্টে পড়েছিলাম আপনার শ্বশুর মশাই কে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছিলেন। এ পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম উনাকে অন্য একটি হেলথ কেয়ার নামে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র ভর্তি করেছেন। আপনার শ্বশুর জন্য দোয়া করি। সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে তাড়াতাড়ি সুস্থতা দান করে। দুলাভাই আর আপনার উপরে কয়েকদিন ধরে! অনেক ধবল যাচ্ছে, আর অনেক পরিশ্রম হচ্ছে বটে। আপনার পরিবারের জন্য দোয়া রইল দিদি।
হাসপাতালে কেউ ভর্তি থাকা মানেই যতটা লড়াই মানসিক, ঠিক ততখানি লড়াই শারীরিক। আর আর্থিক লড়াইয়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে নার্সিংহোমে চিকিৎসা দীর্ঘদিন চালানো অসম্ভব, তাই পরবর্তীতে তাকে হসপিটালে ট্রান্সফার করানো হয়েছিলো। এখন কিছুটা সুস্থ আছেন তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার কোনো আশা নেই। আবার কয়েকদিনের মধ্যেই বোধ হয় হসপিটাল ছুটতে হবে।সত্যিই জানিনা এই লড়াই কত দিনের, তবে আপনাদের শুভ কামনার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ভালো থাকবেন।
দোয়া রইল দিদি, আপনার শ্বশুর মশাইয়ের জন্য. সৃষ্টিকর্তা যেন উনাকে তাড়াতাড়ি সুস্থতা দান করে।
বেশ কিছুদিন ধরে আপনি আপনার শ্বশুরকে নিয়ে যে দৌড়ের দৌড়ী করছেন হসপিটাল বাসা, তাতে আপনার কিছুটা খারাপ লাগাটা ও স্বাভাবিক,, তার উপরে আবার কমিউনিটির কাজেও বেশ দায়িত্বের সাথে পালন করার চেষ্টা করছেন।
প্রার্থনা করছি যেন আপনার শ্বশুর মাত্রায় খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন,, হসপিটালে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ওষুধ কেনা যে কতটা কষ্টসাধ্য সেটা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারি। ভালো থাকবেন এবং আপনিও সাবধানে থাকবেন।।
আপনার মন্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে এলো, কারণ আপনার শ্বশুরমশাইয়ের সংবাদ ইতিমধ্যেই পেয়েছি। সত্যিই হসপিটাল আর বাড়ি মধ্যকার যাত্রাটা অনেক বেশি কঠিন মনে হয়। বাড়িতে ফিরেও ক্লান্তি কিছুতেই কাটেনা। সরকারি হসপিটালে ওষুধের লাইন লম্বা হয় শুধুমাত্র অনেকখানি ছাড় পাওয়া যায় বলে। তবে সবদিক সামাল দিতে গেলে ওই লাইনে দাঁড়ানোটাই আমাদের একমাত্র উপায়। আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য প্রার্থনা করি ঈশ্বর যেন আপনাদেরকে এই শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দেন।
আসলে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করে খুব খারাপ লাগে নিজের প্রিয় মানুষগুলোর সাথে হসপিটালে কাটাতে গিয়ে আপনি কখনো নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তারপরেও কিছু করার নেই কারণ এদের দায়িত্ব দিন শেষে আমাদেরকেই নিতে হয়।
প্রতিনিয়ত এভাবে হসপিটালে কাটাতে কাটাতে আসলে মানুষের মধ্যে একটা অসুস্থতা চলে আসে তারপরেও দোয়া করি আপনার শ্বশুর খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক অসংখ্য ধন্যবাদ এত ব্যস্ততার মাঝেও আপনার বিগত দিন কি কি করেছেন সেটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।
সত্যিই সংসারে কিছু দায়িত্ব কখন নিজের কাঁধে চলে আসে বুঝে ওঠা কঠিন হয়। যতই লড়াই চলুক, যতই দায়িত্ব গুলো নিতে অস্বীকার করি না কেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামনের মানুষগুলোর অসহায়তা আমাদেরকে দুর্বল করে তোলে। এই অসহায়তাকে এড়িয়ে চলার শিক্ষা পাইনি কখনো, তাই হয়তো এতো দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে চলেছি। ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা এগুলো পালন করার শক্তি তিনি যেন দেন। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার পাশাপাশি, আমার শ্বশুর মশাইয়ের সুস্থতার প্রার্থনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।
Curated by : @miftahulrizky
I pray for a speedy recovery for your father-in-law.
Thank you so much @miftahulrizky for your prayers and support. 🙏