এক বৃদ্ধ ও তার মহিষ এর গল্প

in আমার বাংলা ব্লগlast year


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমন একটি কষ্টদায়ক ঘটনা আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলেছি, আজকের এই পোস্টে। হয়তো এই পোস্ট পড়লে আপনাদের কষ্ট লাগবে, তারপরেও বাস্তব ঘটনাটা জানা প্রয়োজন।


IMG_20240714_165437_780.jpg


এক বৃদ্ধ ও তার মহিষের গল্প:


সময় ২০০৭ সাল অথবা ২০০৮ সাল হবে। আমার একটা বন্ধু ছিল আলমগীর। আমরা হাই স্কুলে একসাথে লেখাপড়া করতাম। তার নানার ছিল দুইটা মহিষ। সে নানা বাড়ি থেকে লেখাপড়া করত। তার নানার গ্রামের নাম সহড়া-বারিয়া। আমাদের পাশের গ্রাম। তার নানার সাথে আমার মোটামুটি পরিচয় ছিল কথা হতো। কারন সে বৃদ্ধ লোকটি মহিষের পিঠে চড়ে আমাদের গ্রামে আসতো। মাঝে মাঝে মহিষ দুইটা চরাই করতো আমাদের মাঠে। ধান লাগানোর সময় ওই মহিষ দিয়ে লাঙ্গল দেয়া হত আমাদের মাঠের ধানের জমিগুলোতে। আর এভাবেই সে বৃদ্ধ লোকটার সাথে পরিচয় ও সুন্দর সম্পর্ক সৃষ্টি হলো আমাদের।

সে বিকেল মুহূর্তে আমাদের গ্রামে মহিষ চরিয়ে, মহিষের পিঠে চড়ে বাড়ি চলে যেত। আর এভাবেই প্রায় আমাদের গ্রামে আসা-যাওয়া কর। কিন্তু আমার জানা ছিল না এই মানুষটা আমার বন্ধু আলমগীরের নানা। মাঝেমধ্যে আলমগীরের নানার সাথে তার ছোট মামাও আসতো আমাদের গ্রামে। যখন তার নানা আসার সুযোগ পেতো না তার ছোট মামা মহিষ দুইটা নিয়ে আসতো। তবে যাই হোক একদিন আমরা স্কুলে অবস্থান করছি। এমন মুহূর্ত শুনতে পারলাম তার নানার এক্সিডেন্ট। আমাদের গ্রামের পর তার নানার গ্রাম তারপরে রয়েছে কামারখালী গ্রাম। অর্থাৎ মাঝখানে সহড়া-বাড়িয়া। আমাদের মাঠে যখন ঘাস থাকত না তখন উনি কামারখালীর মাঠে মহিষ চরাই করাতেন।

IMG_20240714_165434_922.jpg


আলমগীরের নানার মত অন্য এক ব্যক্তিও কামারখালীর মাঠে মহিষ চরাই করাতে এনেছিলেন। আলমগীরের নানার মহিষ এবং সেই অচেনা ব্যক্তির মহিষ মারামারি শুরু করেছিল। অচেনা ব্যক্তিটা মহিষের কাছে ছিল না। তাই মহেশ কন্ট্রোল করতে হয়েছিল আলমগীরের নানাকে। এদিকে বুঝতে পারছেন মহিষ রেগে গেলে তার মাথায় কাজ করে না। এমন মুহূর্তে আলমগীরের নানা মহিষের মারামারি ছোড়াতে লাঠি দিয়ে মার শাসানো,মাঝে মাঝে মহিষের গায়ে আঘাত করা কাজে ব্যস্ত ছিল। অন্যজনের মহিষ একটু দূরে সরে যায়। এমন অবস্থায় নিজের মহিষ আলমগীরের নানাকে শিং দিয়ে মাটির সাথে চেপে ধরে। এরপর এমন দৃশ্য অনেক মানুষের দেখতে পারে। কিন্তু দেখে কোন লাভ হয়নি। নিজের মহিষ রাগ কন্ট্রোল না করতে পেরে সে বৃদ্ধকে মাটির সাথে চেপে ধরে পেটের মধ্যে শিং ঢুকিয়ে দেয়। মহিষের শিং এমন ভাবে পেটের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল, ছুঁড়ছিল না। এরপর রাস্তার পাশে ছিল বাবলা গাছ। মহিষ আলমগীরের নানাকে বাবলা গাছের সাথে চেপে ধরে আছড়াতে থাকে। পথচারী মানুষের অনেক চেষ্টা করেছিল মহিষকে থামাতে কিন্তু পারিনি। ঘটনাস্থলে যারা ছিল তারা বর্ণনা করে বলেছিল যে মহিষের সিংহের সাথে বেঁধে থাকা অবস্থায় উনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এরপরেও মহিষের শিং থেকে তাকে সরাতে পারছিল না।

অতঃপর কোনভাবে মহিষের শিং থেকে সেই বৃদ্ধর লাশ ছুটে যায়। লোকজন তার নিকটে এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু বৃদ্ধ মানুষ তখনই মৃত্যুবরণ করেছিল। তাই আর কারো কিছু করার ছিল না। পেটের নাড়িভুঁড়ি টা বের হয়ে গেছিল। শিং এর আঘাতে অনেক কিছু ছুড়ে ছুটে বের হয়ে গেছিল। এমন ঘটনা স্কুল থেকে হালকা কানে আসছিল। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানতে পারলাম। এরপর আরো জানতে পারলাম সে বৃদ্ধটা আমার বন্ধুর নানা। একদিকে পরিচিত মানুষের এমন মৃত্যু শুনে খুবই খারাপ লাগছিল। তারপর যখন জেনেছিলাম সে আমার বন্ধুর নানা এতে যেন আরো বেশি কষ্ট লেগেছিল।

IMG_20240714_165437_211.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিভিন্ন মহিষ
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
ঘটনা লোকেশনকামারখালী
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 last year 

আহারে কতো কষ্ট পেয়ে মৃত্যুবরন করেছিলেন নানাটি নিজের গৃহপালিত মহিষের হাতে।রাগি মহিস কি নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। আসলে শিং পেটে গেঁথে যাওয়ার কারণে ছোটানো সম্ভব হয়নি এবং নানাটি সেখাই মৃত্যুবরন করেছে। এরকম মৃত্যু কোন পরম শত্রুর ও না হোক সেই কামনা করি।ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 last year 

হ্যাঁ বেশ কঠিন একটা মৃত্যু।

 last year 

বেশ ভয়ানক একটি ঘটনা আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। মহিষের এই গল্পটা পড়ে বেশ খারাপ লাগলো আমার। কত কষ্ট করে না মানুষটা মারা গেছে। আর যেন কারো এমন মৃত্যু না হয় সেই কামনা করি। খুবই ভয়ানক একটা বিষয় ছিল এটা।

 last year 

আমারও খুব খারাপ লেগেছিল যখন ঘটেছিল বিষয়টা।

 last year 

আপনার পোস্ট পড়ে অনেক খারাপ লাগলো বৃদ্ধের জন্য। আসলে ভাইয়া মহিষ এমন আচরণ করবে আমার কখনো ধারণা ছিল না। যাইহোক আপনার বন্ধুর নানা জেনে আরো খারাপ লাগলো। সত্যি পরিচিত কারো এভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া সত্যি কষ্টকর। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছেন।

 last year 

আপনার গল্পটি পড়ে ভাইয়া অনেক কষ্ট লাগলো। বৃদ্ধ মানুষটির অনেক করুন মৃত্যু হয়েছে। আমরা কেউই এরকম মৃত্যু কামনা করি না। হঠাৎ করে মহিশটি এমনি খেপে গিয়েছিল কোন মানুষের পক্ষে ছোটানো সম্ভব ছিল না। বেশি খারাপ লেগেছে বৃদ্ধ নানাটির নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গিয়েছিস পড়ে।সবচেয়ে বেশি কষ্ট লেগেছে তার নিজের পালিত মহিশ তাকে শিং দিয়ে মাটির সাথে চেপে ধরে পেটের মধ্যে সিং ঢুকিয়ে দেয়।খুবই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক একটি গল্প ভাইয়া।

 last year 

আসলে অবলা প্রাণী কখন কি করে বসে বোঝা বড় কঠিন। মহিষ একবার রেগে গেলে তাকে কন্ট্রোল করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ লোকটি এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো।

তাই মহেশ কন্ট্রোল করতে হয়েছিল আলমগীরের নানাকে

এই লাইনটা ঠিক করে নিবেন ভাই ধন্যবাদ।