বর্তমান শৈশব
হ্যাল্লো বন্ধুরা
|| আজ ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ || শুক্রবার ||
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলে সব দিক থেকে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় পরিবার সহ যেমন আছি, বেশ ভালো আছি। আজ বরাবরের মতো আবারো আপনাদের মাঝে হাজির হলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করবো আমার পোস্ট টি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে। এবং আপনারা আপনাদের মূল্যবান মতামত শেয়ার করবেন। তো আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি চলে যাই মূল পোস্ট এ।
বিগত কয়েকটা দিন থেকেই বেশ অস্থিরতার মাঝে যাচ্ছি। সমসাময়িক বেশ অনেকগুলো ব্যাপার ভীষণ ই ভাবাচ্ছে। বর্তমানে ইন্টারনেট এর সুবাদে অনেক বিষয় না চাইলেও আসলে চোখের সামনে চলে আসে কোনো না কোনো ভাবে। সবচেয়ে সহজ বিষয় যেনো এখন ভাইরাল হয়ে যাওয়া। বেশ অনেক মাস আগে থেকেই আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় অস্থিতিশীল বিষয় গুলো এভোয়েড করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। তবুও না চাইতেও কিছু কিছু জিনিস চোখের সামনে বারবার চলেই আসে। তেমন ই একটি রিসেন্ট ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন মোহাম্মদপুর থেকে ১১ বছর বয়সী একজন নাবালিকা মেয়ে তার কাজিনের সাথে শপিং এর উদ্দেশ্যে বের হয়ে সেখান থেকে আরেকজন ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। ওদিকে মেয়েটির বাবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেতে। মেয়েটির মা আবার ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজের পেশেন্ট। সারা দেশের মানুষ সেই মেয়েটির জন্য প্রার্থনা করে যেনো তার সাথে খারাপ কিছু না হয়। সে যেনো ভালো থাকে, তাকে যেনো সুস্থভাবে উদ্ধার করা যায়। পরে সেই মেয়েটির খোঁজ পাওয়াও যায়। কিন্তু জানা যায় ১১ বছরের মেয়েটি তার নিজ ইচ্ছায় বাসা থেকে পালিয়েছিলো। যার সাথে পালিয়েছিলো, সে প্রাপ্তবয়স্ক একজন ছেলে ! টিকটক করতে গিয়ে দুজনের পরিচয় হয়েছিলো। পরে সাংবাদিকরা যখন মেয়েটির কাছে জানতে চায়, সে কেনো পালিয়েছিলো? উত্তরে মেয়েটি বলে- কারণ তার বাসায় ভালো লাগে না!
তারপর যথারীতি সেই মেয়েকে নিয়ে যথেষ্ট ট্রল শুরু হয়ে গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে আমাকে ভাবাচ্ছে আমাদের বর্তমান ছেলে-মেয়েদের চিন্তাভাবনা, তাদের সামাজিক মূল্যবোধ কোন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে সে টা! শুধু ছেলে -মেয়ে না, ট্রল করছে কিন্তু সকল বয়সীরাই, মানে তার মাঝে একটা বিশাল অংশ প্রাপ্তবয়স্ক! যাস্ট মেয়েটা নিজে থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো বলেই তাকে নিয়ে এখন সমানে ট্রল করা হচ্ছে! তার পরিবারকে, পারিবারিক শিক্ষাকে ট্রল করা হচ্ছে। একটি পরিবার, যেখানে একজন ক্যান্সার পেশেন্ট রয়েছে, যেই পরিবার দুইটা দিন মেয়ে নিঁখোজ হওয়ার টেনশন এর মাঝে গিয়েছে, সেই পরিবার এখন কোন সিচুয়েশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, সেটুকু বোঝার মতো মানসিকতা বা বিবেক কি বাকিদের নেই? মেয়েটি অবশ্যই ভুল করেছে।সে বিষয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই। ১১ বছরের একটি মেয়ে, যার মা ক্যান্সার এর লাস্ট স্টেজের পেশেন্ট, তার বাসায় ভালো না লাগার অনেক কারণ ই থাকতেই পারে। কিন্তু আমি ভাবছি, তাই বলে বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা তার মাথার ভেতরে আসে কীভাবে? কেন আসে? তার না হয় ম্যাচুরিটির অভাব, সে দুনিয়ার কিছুই জানে না। তাই তার সাথে কি কি হতে পারতো, সেই চিন্তা তার মনে আসবে না, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাথে তার কাজিন ও ছিল, সেই ছেলেও জানতো! ওদিকে যে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে তাকে নিয়ে পালিয়েছে, সে তো ম্যাচিউর! তারও কোনো বিবেক বোধ কাজ করে নি মেয়েটির এমন পারিবারিক সিচুয়েশনে এমন একটা দুঃসাহসিক কাজ করতে! অথচ সেই ছেলের ছবি কিন্তু ভাইরাল হয় নি এমনকি নামটা পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজেই আসছে না।
আসলেই কি আমরা ভেবে দেখছি যে বর্তমানে বাচ্চাদের বাসায় ভালো লাগার জন্য আমরা কতটুকু কি ব্যবস্থা করছি? বিশেষত শহরাঞ্চল এ, বাবা-মা দুজনেই যখন অফিস নিয়ে ব্যস্ত, আদৌ কতটুকু কোয়ালিটি টাইম পায় একজন বাচ্চা?? বর্তমানে তো ঠিকঠাক কথা বলা শেখার আগেই কোন না কোন ভাবে একজন বাচ্চা অন্তত কিছু সময়ের জন্য মোবাইল হাতে পেয়েই যায়।
মোবাইল, টিকটক, ইন্সটায় বাকিদের চকমকে রীল লাইফ, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা গেমিং -- এসব নিয়েই কেটে যাচ্ছে বর্তমান বাচ্চাদের শৈশব। বড়রা হয়তো জানে বা বোঝে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখানো হয়, তার বেশিরভাগ ই সাজানো, মার্কেটিং এর অংশমাত্র। তবে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চার তো সেই বুঝ নেই! সে যখন তার বাসার লাইফের সাথে কম্পেয়ার করবে এবং তার বাসার সাধারণ লাইফ তার ভালো লাগবে না সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?? আসল- নকল, ভালো- মন্দের পার্থক্য যেখানে বড়রাই ধোঁকা খেয়ে যাচ্ছে অনায়াসে, সেখানে বাচ্চাদের কি খুব বেশি দোষ দেয়া যায়?
এসব ই ভাবাচ্ছে কদিন থেকেই। মাথা থেকে সহজে তাড়াতে পারছি না আসলে। যাই হোক, সকলের সুবুদ্ধি প্রাপ্ত হোক- এটাই কামনা করি। আজকের লেখা আর বাড়াচ্ছি না। তবে যাদের বাসায় বর্তমানে বাচ্চা রয়েছে, তারা বিষয় গুলো নিয়ে কি ভাবছেন৷ সেটাও জানার ইচ্ছে থাকলো। সকলের সুস্থতা কামনা করে আমার আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি। শুভরাত্রি।
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শিক্ষগত যোগ্যতায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। দীর্ঘ ৬ বছর চাকরির পর বর্তমানে পুরোদমে একজন গৃহিণী। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি। OR
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যে আমাদের সমাজে শিশুদের মানসিকতা ও আচরণ কিভাবে পরিবেশের সাথে বদলাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও আধুনিক জীবনের চাপ অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। মেয়েটির ঘটনাটি শুধু তার ভুল নয়, বরং আমাদের পারিবারিক এবং সামাজিক কাঠামোকে পুনরায় মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। শিশুদের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা ও ভালোবাসা দেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা এই ঘটনায় স্পষ্ট।
আমার মাথাতেও এই কারণেই বিষয়টা ঘুরছে আপু। আমাদের নতুন করে চিন্তাভাবনা করা খুব প্রয়োজন। শিশুদের দিকে মনোযোগ দেয়ার ব্যাপারে আরোও সচেতন হওয়া ভীষণ জরুরী!
এই ঘটনায় আমি রীতিমতো তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে আমি কী করলাম জীবনে হা হা। তবে এটা বেশ আশঙ্কাজনক আপু। এটা ঠিক বতর্মান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের সাথে আমাদের ঐসময়ের পার্থক্য ছিল। তবে এদের দোষ যে পুরোপুরি সেটাও কিন্তু না। সত্যি তো আমরা পরিবার সমাজ রাষ্ট্র তাদের এই অবস্থা থেকে দূরে রাখতে কী করেছি??
বর্তমানে বাচ্চাদের এমন কাজকর্ম, চিন্তাভাবনা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্পর্কেও ভাবায় বেশ! কাদের হাতে যাচ্ছে ভবিষ্যত! আসলে ওদের দোষও দিচ্ছি না, তবে একটা পজেটিভ পরিবর্তন তো দরকার!
সমাজের পরিবর্তনের সাথে শিশুদের মানসিকতা ও আচরণও বদলাচ্ছে, যা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। সোশ্যাল মিডিয়া, প্রযুক্তির অগ্রগতি ও আধুনিক জীবনের চাপ শিশুদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। তাই শুধু তাদের দোষ দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বরং আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো নতুনভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি। শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা, ভালোবাসা ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারে। বর্তমান প্রজন্মের সাথে আমাদের সময়ে পার্থক্য ছিল। তবে তাদের এই অবস্থার জন্য আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা দায়িত্ব পালন করেছি সেটা ভাবার সময় এসেছে।
শিশুদের এমন মানসিকতা এবং আচরণের পরিবর্তন অবশ্যই আমাদের আমলে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন।