শিশুদের উপর পরিবেশের প্রভাব এবং এক বড় ভাইয়ের ভাবনা।

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে শিশুদের উপর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে হাজির হয়েছি।


boys-286245_1280.jpg

Image by Kris from Pixabay


কিছুদিন আগে এক বড় ভাই আমাদের ফার্মেসিতে এসে হাজির হলেন। তিনি করোনাকালীন সময় বেশ কিছুদিন এই ফার্মেসিতে সময় দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, তার সাথে অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা হয়। তখন তিনি বেশ দারুন একটি চিন্তা আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। তার কথাগুলো আমাকে ভাবালো। তিনি কি বলেছেন তা বলার আগে তার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আপনাদের একটা ধারণা দেই।

ভাইয়ের জন্মস্থান এবং পৈতৃক ভিটা বগুড়া জেলায়। কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে তারা সর্বস্ব হারিয়ে সিরাজগঞ্জের কোথাও এসে বসতি স্থাপন করে। বাল্যকালে পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তিনি বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি। যুবক বয়সে ঢাকা ইপিজেডে এসে একটি ফ্যাক্টরিতে ঢুকেন। এই ফ্যাক্টরি সেই ফ্যাক্টরি করে শেষ পর্যন্ত রিং-শাহীন নামে একটি ফ্যাক্টরিতে দীর্ঘ সময় কাজ করেন। যতদিন ফ্যাক্টরিতে কাজ ছিল ততদিন তিনি ভালো ছিলেন। এসময়ের মধ্যে তিনি বিয়ে-শাদী করেছেন। তার একটি মেয়ে এবং একটি ছেলে হয়েছে। কিন্তু করোনাকালীন সময় ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকে এবং পরবর্তীতে মন্দা কাটানোর জন্য ফ্যাক্টরির কিছু কর্মী ছাটাই করে। ভাই সেই দূর্ভাগাদের মধ্যে একজন ছিলেন।

ওই সময়টুকুতেই তিনি ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমাদের ফার্মেসিতে এসে কাজ শিখছিলেন। কিন্তু বুঝতে পারলেন, এই জিনিসটি তাকে দিয়ে হবে না। তখন তিনি কেমিক্যাল বিজনেস শেখার জন্য এক বন্ধুর কাছে গেলেন। আল্লাহর রহমতে তিনি এখন ভালো কিছু টাকা প্রতি মাসে আয় করেন। এজন্য তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার নতুন চিন্তা এসেছে। যা তিনি আমাদের সাথে শেয়ার করেন।

সাভার স্মৃতিসৌধের ঠিক বিপরীত পাশে সাভার ডিওএসএইচ গঠিত হয়। ভাইয়ের ইচ্ছা তিনি সেখানে একটি ফ্লাট নিয়ে ভাড়া থাকবেন। এর একটাই মাত্র কারণ। তা হচ্ছে তার সন্তানরা যাতে ভালো পরিবেশে বড় হয়। যেখানে তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গী-সাথী হবে বড় বড় অফিসার লেভেলের মানুষের ছেলে-সন্তান. আপনি হয়তো বিষয়টিকে দৃষ্টিকটু ভাবে দেখার চেষ্টা করবেন। কিন্তু উনার চিন্তা সঠিক। বর্তমানে তিনি যেখানে থাকেন, সেখানে গার্মেন্টসের অপারেটর এবং হেল্পাররা থাকে। তাদের মধ্যে না আছে পড়ালেখা, না আছে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা। বেশিরভাগ সময় তাদের মধ্যে মারামারি-ঝগড়া লেগে থাকে। একজন আরেকজনকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে। যখন একটি শিশু এসব শব্দ শুনে, এই পরিবেশে থাকে, মনস্তাতিকভাবে সে এগুলোই শিখবে।

কিন্তু কোন শিশু যদি একটি ভালো পরিবেশে থাকে, যেখানে তার সমবয়সীরা পড়ালেখা করে। নিয়ম-কানুন মানে। নিয়মিত খেলাধুলা করে। একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করে। তাহলে তাদের সাথে থেকে সেও এই ভালো পরিবেশটাই শিখবে। ভাইয়ের ভাষ্য ছিল, আমি সারা জীবন ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করেছি ওয়ার্কারদের সাথে। অফিসারদের সাথে মেশার সুযোগ খুব কম হয়েছে। কিন্তু এখন অফিসারদের সাথে ডিল করি। তাদের সাথে একসাথে চা খাই। তাদের আচরণ, কথাবার্তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি চাই আমার সন্তান যেন আমার মত করে না বড় হয়। এগুলো না শিখে। ছোটবেলা থেকেই সে ভালোটা শিখুক। এজন্য আমি ভালো পরিবেশে যেতে চাই।

বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবায়। আসলেই তো! এটা সত্য। আমরা যদি ভালোভাবে খেয়াল করি, তাহলে দেখবেন, কিশোর গ্যাং, মাদক চোরা কারবারি, মাদকাসক্ত; এদের বেশিরভাগই বস্তি কিংবা প্রায় একই রকম পরিবেশ থেকে উঠে এসেছে। তাদের মুখ থেকে বের হওয়া শব্দগুলো সভ্য মানুষের জন্য অসহ্যকর। কিন্তু একটি ভালো পরিবেশে বড় হওয়া সন্তান এরূপ আচরণ করে না। গুটি কয়েক যা আছে, যারা সভ্য পরিবেশে বড় হয়েও অসভ্য আচরণ করে, এর সংখ্যা খুবই কম। এর মূল কারণ, যারা এরূপ আচরণ করে তাদের সাথেই সে মিশেছে।

ভাইয়ের চিন্তা আমার বেশ ভালো লেগেছে পছন্দ হয়েছে আমিও এমনটাই ভাবছি সামর্থ্য সাথী ভালো কোন পরিবেশে গিয়ে বসবাস কর যাতে আমার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গ ভালো পরিবেশ পায়।


Siam.png

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Sort:  
 3 days ago 
az_recorder_20250128_220631.jpgaz_recorder_20250128_220659.jpgaz_recorder_20250128_220731.jpgaz_recorder_20250128_220801.jpg
Twitter PromotionCMC PromotionDEXScreen Vote#CoinGem# Vote
 2 days ago 

শিশুরা নরম কাদার তালের মত হয়। তাই ছোট থেকে তাকে যেভাবে তৈরি করা হয় সে সেই ভাবেই তৈরি হয়। শিশুরা বড় হওয়ার জন্য সবথেকে যেটা বেশি প্রয়োজন তা হল একটি সুস্থ পরিবেশ। সে ক্ষেত্রে আপনার ওই দাদার সিদ্ধান্ত একদমই সঠিক। ভালো পরিবেশে থাকলে বাচ্চারাও ভালো মানসিকতার মানুষ হয়ে উঠবে এবং যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে অনেকটাই সাহায্যকারী হবে আসলে বাচ্চার ধর্মই হল খারাপটা তাড়াতাড়ি শিখে নেওয়া। আর যতটা খারাপ দ্রুত পরিমাণে ঢুকে যায় তাকে বের করা কিন্তু ততটাই কঠিন। তাই আমার মতে উনি একদম ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 20 minutes ago 

আমারও চিন্তাটা খুব পছন্দ হয়েছে। এজন্যই শেয়ার করা। ধন্যবাদ দিদি, খুব সুন্দর এবং শিক্ষণীয় মন্তব্য করেছেন।

 yesterday 

শিশুরা হলো কাঁদা মাটির মতো। আপনি যে আকার চাইবেন দিতে পারবেন। একটা ভালো পরিবেশ যেমন একটা শিশুর উপর ভালো প্রভাব ফেলে ঠিকই প্রভাব ফেলে একটা খারাপ পরিবেশ। এখানে পরিবেশ অনেক বড় একটা ম‍্যাটার। সুন্দর লিখেছেন ভাই।

 14 minutes ago 

সাইকোলজিতে এসম্পর্কে পড়েছিলাম। পরিবেশের একটা প্রভাব থাকে। ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।