দুটি কবিতা - "দুঃখ-সুখ"

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


Copyright-free Image source : Pixabay


দুটি কবিতা - "দুঃখ-সুখ"



💘

ছোট্ট একটি ভূমিকা : এখানে দুটি কবিতা শেয়ার করেছি । প্রথমটি আজকে লিখেছি । পরিণত লেখা । মানুষের জীবন নিয়ে লেখা । একজন পুরুষের আকুতি ফুটে উঠেছে । এই পুরুষ শাসিত সমাজে শুধু নারীরা নয় পুরুষরাও প্রতারণা, মিথ্যে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি আর হৃদয় ভাঙার ব্যাথার সায়রে নিমজ্জমান । পুরুষ তার চোখের জল লুকিয়ে ফেলে, কেননা সে যে পুরুষ ।

আর দ্বিতীয়টি হলো কাঁচা হাতের লেখা । আমার স্কুল জীবনে লেখা একটি হাসির কবিতা । ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় স্কুল ম্যাগাজিনে দিয়েছিলুম লেখাটি । বেশ বড় ছিল কবিতাটি । আজ এত দীর্ঘ বছর পর মনে করতে গিয়ে দেখছি স্মৃতিরা অস্পষ্ট, ঝাপসা, বিবর্ণ-প্রায় । তারপরেও মনের গহনে হাতড়ে হাতড়ে কিছু কিছু কবিতার লাইন উদ্ধার করতে পেরেছি । তাই-ই সাজিয়ে দিলুম এখানে । কোনো সংশোধন ছাড়াই । পুরোনোকে পুরোনোই থাকতে দিলুম ।


♡ ♥💕❤

১. দ্বিতীয় পুরুষ

ভালোবাসতাম তোমায় আমি,
খুব বেশি, হৃদয়ের সবটা দিয়ে ।
কথা দিয়েছিলেম তোমায়,
থাকবো সুখে দুঃখে তোমারই পাশে ।
আমি জানতাম আমিই তোমার সব,
তোমার হাসি-কান্না, দুঃখ-সুখ,তোমার মনের কথা,
শুধু ভাবতাম আমারই জন্য ।

খুব বেশিদিন তো নয়,
এই তো সেদিন তোমায় সাথী করে,
করেছিলাম শুরু
আমার জীবনের সু-দীর্ঘ পথে চলা ।
আঁকা-বাঁকা বন্ধুর পথ পার হতে চেয়েছিলাম
তোমারি হাত ধরে ।
বেঁচে থাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে
আঁকড়ে ধরেছিলাম তোমার দু'হাত ।

তারপরে আকাশ জুড়ে উঠলো সে কী তীব্র
কালবৈশাখীর এক ঝড় ।
এলোমেলো করে দিলো নিমেষে
সকল সাজিয়ে রাখা সুখ ।
ব্যাথার সায়রে উঠলো ফুঁসে
বেদনার রঙে নীল,
আর দুজনের মাঝে জন্ম নিলো দূরত্ব অপার ।

ভালোবাসতে তুমি,
হয়তো বা এখনো বাসো ।
তবে আমি তোমার দ্বিতীয় পুরুষ,
এটা এখন তুমিও মানো ।
মিথ্যের জাল বুনে সেদিন আমায় বলেছিলে
"তুমি আমার প্রথম পুরুষ",
এতো বড় মিথ্যেটা অনায়াসেই বলে দিলে ?

হৃদয় আমার কাঁদে আজো,
কাঁদুক ।
পুরুষ হৃদয় কাঁদলেও চোখ ভেজে না ।
সুখস্মৃতিতে তুমি থাকবে
আমার প্রথম নারী হয়ে ।
আর থাকবে দু'জনের মাঝে
অভিমানী আমার দ্বিতীয় পুরুষ সত্ত্বা ।

কাঁদো, পুরুষ তুমি কাঁদো ।



Copyright-free Image source : Pixabay


২. ভুতো ও জুতো

সেদিন মাঠে খেলতে গিয়ে
হঠাৎ, দাঁড়িয়ে গেলুম ভীষণ ভয়ে ।
দেখতে পেলুম ক'টি ছেলে
ব্যাটের বাড়ি মারছে ফেলে ।

হায় হায় হায় ! মারে কাকে ?
আরে ! এ যে আমাদেরই ভুতো কে ।
কি হয়েছে রে ? ব্যাপার কি ?
ওদের চড় মেরেছিস ? সে কী !!

কেন মারলি ? কি জন্য ?
বলিস কী রে ? জঘণ্য !
তোকে বলেছে রাঙা মুলো !!
ওই বখাটে গুলো ?

এবার কোথায় যাবি তোরা ? দাঁড়া দাঁড়া ।
পিটিয়ে তোদের করছি খাড়া ।
এই মারলাম চড়, আর এই মারলাম গুঁতো !
এ কী ! এ কী ! সবার হাতে কেনরে ভাই জুতো ?

পালিয়ে আয়রে ওরে ভুতো,
তা না হলে খাবিরে খুব জুতো !
বলেই আর না করে দেরী,
দিলাম দৌড় প্রাণের আশা ছাড়ি ।


♡ ♥💕❤


Sort:  
 3 years ago 

দাদা দ্বিতীয় পুরুষ পড়ছিলাম আর যেন আয়নাতে নিজের মুখ টাই দেখছিলাম। বর্তমানের তথাকথিত ভালোবাসার বাস্তব চিত্র একদম তুলে ধরেছেন। সবটাই আপনি জানেন। আসলে জীবনের এই পর্যায়ে এসে বারবার একটা কথাই মনে হয় দাদা, এই সকল মেয়েদের জীবনে স্পেশাল ওয়াণ বলতে কিছু নেই তাদের কাছে বেটার ওয়ান টাই আগে। এদের জন্যই ভালোবাসা নামক পবিত্র জিনিস টা বারবার কলঙ্কিত হয়েছে। এসব নিয়ে আর বেশি না বলাই ভালো।

আর দ্বিতীয় কবিতাটা পড়তে খুব মজা পেয়েছি দাদা। সাত-আট বছরের কোন ছোট বাচ্চা যদি এই কবিতাটা আবৃত্তি করতো খুব সুন্দর শোনাতো।

 3 years ago 

পুরুষের একচোখে তার প্রিয়তমা, আরেক চোখে পরিবার।
অন্যকোনো চোখ নাই নিজেকে দেখিবার। হ্যাঁ! এটাই পুরুষ। বর্তমান সমাজে পুরুষ এখন প্রতারিত হয় প্রতিনিয়ত। চোখ ভিজিয়ে হয়তো কাদঁতে পারেনা, কিন্তু তাদের অন্তরে অনেক কষ্টই যে লুকায়িত থেকে যায় 🙂

ভালোবাসতে তুমি,
হয়তো বা এখনো বাসো ।
তবে আমি তোমার দ্বিতীয় পুরুষ,
এটা এখন তুমিও মানো ।

এই লাইনগুলো আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে দাদা। যাকে মনে থেকে ভালোবাসি তার কাছে আমি যদি হয়ে যায় দ্বিতীয় পুরুষ। এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে! 🙂

দ্বিতীয় কবিতাটি অনেক আগের হলেও পড়া মজা পেলুৃম দাদা 🥰

 3 years ago 

দ্বিতীয় কবিতাটি খুবই মজার দাদা।ভুতো নামটি শুনেই সেই লাউ গুড় গুড় গল্পের কথা মনে পড়ছে।রঙ্গা, বঙ্গা ও ভুতো নামের তিনটি কুকুর ছিল এক বুড়ির।যাইহোক আর প্রথম কবিতাটি বর্তমান সমাজের ,যেখানে ছেলেরাও ভালোবাসায় ধোকা খেয়ে লুকিয়ে সবার আড়ালে কাঁদে।কিন্তু সেই মানুষগুলো বুঝে না কাউকে কাঁদিয়ে নিজেও ভালো থাকা যায় না।ধন্যবাদ দাদা।

 3 years ago 

পুরুষ হৃদয় কাঁদলেও চোখ ভেজে না ।
সুখস্মৃতিতে তুমি থাকবে
আমার প্রথম নারী হয়ে ।

দাদা আপনার কবিতার দুটি পড়ে আমার খুবই ভাল লাগল। সত্যিই অসাধারণ কবিতা লিখেছেন। কবিতার ভাষা গুলো খুবই ভাল হয়েছে। বিশেষ করে এই কবিতার লাইন আমার খুবই ভালো লেগেছে। আসলে পুরুষ মানুষ সহজে কাঁদে না। আপনি ঠিকই বলেছেন দাদা, কবিতাটি আমার মন ছুঁয়ে গেছে।

 3 years ago 

কবিতার পটভূমি ভীষণ চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন দাদা। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। তবে প্রথম কবিতার ভাবার্থ আমার মাথায় মোটেও ঢোকেনি, একদম মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে😁। তবে দ্বিতীয় কবিতাটি ভীষণ উপভোগ করেছি খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে 😍

 3 years ago 
সত্যি কথা বলতে কি দাদা আমাদের সমাজে আমরা সব সময় নারীর করুন হৃদয়ের গল্প রক্তক্ষরণের গল্প শুনে অভ্যস্ত কিন্তু এর পেছনের গল্প আমরা কেউ শুনতে চাইনা কত নারী কত সুন্দরী রমণী পুরুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করছে তাদের হৃদয়কে যে ভেঙ্গে তছনছ করছে সে বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দেই না। নারীর মন ভাঙ্গলে আমরা সহ্য করতে পারিনা কিন্তু সেই নারী যখন পুরুষের মনকে তছনছ করে দেয় সেটা কি আমরা স্বাভাবিক ভাবে নিতে অভ্যস্ত কিন্তু আমি এ বিষয়গুলো সাথে কখনো একমত হতে পারি না। সমাজের নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু নারীর কষ্টকে দুঃখ খেয়ে গুরুত্বসহকারে দেখবে আর পুরুষের কষ্ট কে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সমাজে অনেক পুরুষ আছে যারা মনো প্রান দিয়ে নারীর প্রেমে মুগ্ধ থাকে তাদের মনে থাকেনা কোন ছলনা কোন প্রতারণা কিন্তু তারাই বরাবর প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আমরা যখন পুরুষ কষ্ট দেই তখন হয়তো পুরুষের কষ্ট আমার চোখে দেখতে পাই না কারণ তারা কাঁদতে জানে না তারা ভেতরে ভেতরে ঢুকরে মরে। তাদের ভিতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আপনার লেখা প্রথম কবিতা টি আমার খুব ভালো লেগেছে আপনি বাস্তব কিছু বিষয় উপলব্ধি করেছেন এবং সে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

তবে আপনার পরবর্তী কবিতা ভুতো জুতো কবিতাটি পড়ে আমার এতটাই ভাল লেগেছে তা হয়তো আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না ভালো লাগার কারণ হচ্ছে আপনার শব্দচয়ন ও একটি লাইনের সাথে অন্য লাইনের অন্ত্যমিল আপনি আমাদের মাঝে দেখিয়েছেন তা একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক এর পক্ষে সম্ভব। আপনার সর্বক্ষেত্রে বিচরণ বিষয়টি আমার কাছে দারুন লাগে দাদা। আসলে আমাদের এমনই রিসোর্স পারসন হওয়া উচিত যাতে যে কাজে আমাদের দাগ হোক না কেন সেখানে আমরা আমাদের দক্ষতার ছোঁয়া দেখে আসতে পারি।

যাইহোক এত সুন্দর সুন্দর দুটি কবিতা আমাদের মাঝে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক
Loading...
 3 years ago 

দাদা আপনার দ্বিতীয় পুরুষ কবিতাটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। বাট কোন কমেন্ট করব না,
নিরব শ্রোতা হয়ে থাকবো
নীরব পাঠক হয়ে রবো
শুধু উপলব্ধি করব,
কল্পনার জগতে ভেসে বেরাবো।
পুরুষের কান্না কেউ দেখে না দাদা
তাদের কান্না গায়ের রক্ত ঝরা ঘাম হয়ে ঝরে।
মাঝরাতে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়
চোখ ছলছল খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
দাদা ভালো লাগে আপনার লেখনি ভালো লাগে আপনার কবিতা। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল বেঁচে থাকুন হাজার বছর, লিখে যান মানুষের জন্য।

 3 years ago 

ঠিকই বলেছেন দাদা এই পুরুষশাসিত সমাজে শুধু নারীরা নয় পুরুষেরাও প্রতারণার শিকার হয়। দ্বিতীয় টি হল কাঁচা হাতের লেখা এটাও আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।

কেন মারলি ? কি জন্য ?
বলিস কী রে ? জঘণ্য !
তোকে বলেছে রাঙা মুলো !!
ওই বখাটে গুলো ?

দাদা এই লাইনগুলো আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।