আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে অনেক ভালো লাগে। তাই গল্প লেখার চেষ্টা করি। আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।

কোন একটা সময়ে গিয়ে মানুষ সফলতার পথ দেখে। জীবনে বারবার হোঁচট খেতে খেতে যখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সফলতার মুখ দেখে তখন হঠাৎ করেই সমকে দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। আবির সাহেব বারান্দার গিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর অতীত জীবনের কথা মনে করছে। অতীত যে তার অনেক কঠিন ছিল। জীবনের এই প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে কখন যে সে জীবনের সমীকরণ হারিয়ে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি। আবির সাহেবের মনে পড়ে যায় জীবনের সেই সুন্দর দিনগুলোর কথা। মনে পড়ে যায় জীবনের সেই হারানো স্মৃতির কথা।

বাবা হারা আবির যখন ছোট ছিল তখন মা অন্য একজনের সাথে ঘর বাঁধে। হয়তো জীবনের বাস্তবতা গুলো এরকমই। বাবা হারানোর কষ্ট আর মাকে হারানোর কষ্টে আবিরের দিনগুলো যখন এলোমেলো হয়ে যায় তখন তার ঠাঁয় হয় মামা মামির ঘরে। মামার বড্ড আদরের ছিল আবির। কিন্তু মামী যে তার বড্ড হিংসুটে। সে আবিরকে মেনে নিতে পারত না। তবুও তার দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। মাকে বড্ড মিস করতো আবির। অন্যের সংসারে গিয়ে তার মা যেন চাপা কলে পিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ছেলের সাথে কথা বলার সময় ছিল না তার।

একাকীত্ব আর বাবা-মাকে হারানোর কষ্টে আবির দিনের পর দিন মানসিকভাবে বড্ড বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কাউকে বলতে পারছিলো না। এই দুনিয়ায় তার আপন বলতে আর কেউ ছিল না। মা বেঁচে থেকেও যেন মরার মতই ছিল। মাকে দেখার ইচ্ছে জাগলেও ছুটে যেতে পারত না। এভাবে দেখতে দেখতে হঠাৎ একদিন আবির জানতে পারলো তার মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আবিরের মানসিক কষ্টটা আরো দ্বিগুণ হয়ে গেল। এভাবে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। জীবন সংগ্রামে একটি ছোট্ট শিশু বেঁচে ছিল ঠিকই কিন্তু মৃত মানুষের মতন।

আবির ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিজের বাস্তবতা বুঝতে শিখেছে। একাকিত্বের মাঝেও নিজের ভালোলাগা খুঁজে নিতে শিখেছে। শহরের নামকরা কলেজে শিক্ষকতা করছে সে। জীবনের কোন এক প্রান্তে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সে কিন্তু জীবনের সাথে লড়াই করে। বহুকাল একা পথ চলতে চলতে কখন যে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে নিজেও জানে না। হয়তো হাজারো চড়াই উতরাই পার হয়ে সে জীবনের সফলতা দেখেছে। জীবনের সমীকরণ মেলাতে শিখেছে। কিন্তু বাস্তবতা তাকে একাকিত্বে ফেলে দিয়েছে।

আজ বহু বছর পরেও আবির সাহেবের জীবনের প্রতি আফসোস হচ্ছে। জীবনের সফলতা, গ্লানি, কষ্ট সবকিছু মিলেমিশে জীবনের সমীকরণটা মেলাতে গিয়েও মেলাতে পারছে না। কোথাও যেন অপূর্ণতা থেকেই গেছে। কোথাও যেন আপনজন হারানোর সেই নির্মম কষ্ট হৃদয়ের জমা রয়ে গেছে। যেই কষ্টটা আজও তাকে কাঁদায়। যেই কষ্টটা আজও তার জীবনে আঁধার নামায়। হয়তো জীবনের সমীকরণ এভাবেই বদলে যায়। হয়তো এভাবেই অপূর্ণতার মাঝে জীবনের সমীকরণগুলো পাল্টে যায় কিংবা সময়ের সাথে রং বদলায়।