গল্প: ছোট নানীর একটা ঘটনা
গল্প
একটি বাড়িতে ফলের গাছ থাকা অনেক ভালো। ফলের গাছ থাকলে, বিনা খরচে অনেক বেশি ফল পাওয়া যায়। তাই গ্রামে যারা বসবাস করে থাকেন তারা সবসময় চেষ্টা করে থাকেন বাড়ির আশেপাশে যেকোন ফলের গাছ লাগাতে। একটা সময় গ্রামের মানুষ নারিকেল গাছ লাগাতে বেশি পছন্দ করতেন। সেই সময় গ্রামের ছাগল গরুর অত্যাচার কম ছিল। খুব অল্প সংখ্যক মানুষের ছাগল পুষতো। আরো বিষয় ছিল জনসংখ্যা কম ছিল। নতুন নতুন ঘর তৈরি করে, মানুষ তার বাড়ির আশেপাশের নিজের জমিগুলো ফলের গাছ লাগিয়ে সুন্দর রূপে গড়ে তুলত। ঠিক এভাবেই আমার ছোট নানী, তাদের নতুন বাড়িতে বিভিন্ন ফলের গাছের পাশাপাশি অনেকগুলো নারিকেল গাছ লাগিয়েছিলেন। অনেক মানুষ রয়েছে, নারিকেল গাছের চারা বসাত টিউবওয়েল এর আশেপাশে ভেজা জায়গায়। নানীরাও তাদের টিউবওয়েল এর আশেপাশেই অনেকগুলো নারিকেল বসিয়ে চারা থেকে গাছ বানিয়ে ফেলেছিল। নারিকেল গাছগুলো দিন দিন বড় হতে থাকে। একটি সময় নারিকেল ধরা শুরু হলো। তাদের নিজেদের জমি জায়গা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলল।
সবে মাত্র ডাব নারিকেল ধরা শুরু হয়েছে, গাছ অনেক ছোট। চোর যেন চুরি করে না নিয়ে যেতে পারে, তাই দ্রুত পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলেছিল বাড়ির এরিয়া। ডাব হতে থাকলো, নারিকেল হতে থাকলো। যখন প্রয়োজন গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া হয় তাদের। এভাবেই বেশ অনেক বছর চলে গেল। গাছগুলাও বেশ অনেক বড় হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজন গেলে তাদের হাতে ভুল করেও নানী দিতে চাইতো না। তার ননদদে হক রয়েছে বাবার জমির ফল খাওয়ার। কিন্তু সে ছোট নানী তার ননদের অপমান করত। বলতেন আমি বিয়ে হয়ে এসে তোর বাবার হাতে কয়টা ফল পেয়েছি। আমি নিজের হাতে লাগিয়ে গাছ বড় করে তারপর ফল হচ্ছে। তোদের বিয়ে হয়েছে, তোদের ভিটে মাটিতে গাছ লাগাতে পারিস না। ঠিক এভাবে কয়েকবার ননদের সাথে তার ঝগড়া হয়েছে। নিজের গাছের ফল অন্যকে দেবো কেন, এমন মনোভাব ছিল তা। কিন্তু সে বুঝতে চাইতো না নিজের গাছের ফল আরেকজনকে খাওয়ানোর মধ্যে ভালোলাগা রয়েছে। আত্মীয় হিসেবে তাদের হক রয়েছে।
ছোট নানীদের টিউবওয়েল এর পাশেই চারটা গাছ। সেগুলা ছাড়া বাড়ির এদিকে ওদিকে মিলে প্রায় ১৫-১৬টা নারিকেল গাছ হয়ে গেছিল। একদিন এই ডাব নারিকেল নিয়ে নানার সাথে নানীর তর্ক হয়ে গেল। নানা বলেছিলেন আমার ভাই বোনদের দিলে তোমার সমস্যা। আর তোমার ভাই বোন এসে খেয়ে যাবে নিয়ে যাবে তাতে কোন সমস্যা নেই। এমন মনোভাব দূর করতে হবে। এগুলো ছোটলোকের পরিচয়। তোমার মান সম্মান যায় না, আমার মান সম্মান যায়। বাইরের পরিবেশে তোমার চলতে হয় না, আমার চলতে হয়। যত কথা আমার কানে আসে। নানী নানার কথাটা বুঝতে চাইলো না। নানার সাথে ঝগড়া সৃষ্টি করলো। তখন নানা বলল আচ্ছা তাহলে আমার বোনরা আসলে, তাদের আমি কিনে খাওয়াবো, বেতনের টাকা তাদের হাতে তুলে দেব। তারা আমাকে কোলেপিটে মানুষ করেছে, তাদের হক রয়েছে না ফল খাওয়ার। তোমার বোন তো তোমার হাতে খেয়ে যেতে পারে, আমার বোনরা তো পারেনা। নানা কেন টাকা খরচ করবে, এই নিয়ে আবারো নানার সাথে ঝগড়া হয়ে যায়। কিন্তু নানি এতটাই কৃপণ, সে কখনো সঠিক পথটা বুঝার চেষ্টা করেনা। মনের মধ্যে হিংসা রয়ে গেছে। বিয়ের পরে শশুর শাশুড়ি ননদের সাথে সামান্য কিছু ঝগড়া হয়েছিল হয়তো, সেইগুলোই বারবার উচ্চারণ করে আর হিংসা করে। নানা বারবার বুঝাতে চাই মানুষ ভুল করবে তাই বলে নিজে ভুল করব কেন। অন্যের ভুলগুলো ধরে বসে থাকলে নিজেরও ক্ষতি হয়। নানি নানার এমন কথায় আবারও রিঅ্যাকশন করে।
একদিন নানা মন খারাপ করে না খেয়ে বাড়ি ছেড়ে স্কুলে চলে যায়। নানায মাস্টারির চাকরি করতেন। এদিকে নানী গেট আটকিয়ে বাড়ি মধ্যে একলা কাজ করছে। তিনি শুনতে পেরেছেন তার ননদের এসেছে, তার আর একটা জায়ের ঘরে উঠেছে। নানী টিউবওয়েলের পাশে বসে থাল গ্লাস মাজা ধোয়া কাজ করছে আর একলা একলাই ননদদের নামে গীবত করছে। পাশের বাড়ির মানুষরা এবং তার ছেলেরা শুনছে। ছেলে মানা করলো অকারনে বকবক না করতে। এরপর ছেলে বাড়ি থেকে চলে গেল তার কাজে। নানী ছেলের বাইরে থেকে গেট তালা দিয়ে যেতে বলল। ননদরা তার বাড়িতে এসে যেন দেখে গেট বাইরে থেকে তালাক দেয়া, অর্থাৎ যেন বুঝতে পারে বাড়িতে মানুষ নেই।
নানীর ছেলে তার কথা শুনে তাই করল, ছেলেটা তো আর জানছে না মায়ের মনোভাব। ভাবলো মা সকাল ভোর থেকে কাজ করে, না জানি কখন ঘুমিয়ে যায়। এদিকে তারা বাসায় ফিরতে মায়ের ডাকলে গেট খুলতে মায়ের ঘুমের ডিস্টার্ব হবে। তাই ভেবেচিন্তে বাইরে থেকেই তালা দিয়ে গেল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটাই ছিল যে, টিউবওয়েল এর পাশে বসে নানী তার কাজ করছে। এমন সময় ডাব গাছ থেকে একটি নষ্ট ডাব এসে নানীর মাথার উপর পড়ে। নানীর কপালের এক সাইড ফেটে যায় এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে টিউবওয়েল এর সানের উপর পড়ে যান। কিছুক্ষণ পর ঠিকই তার ননদরা গেটের কাছে আসে। ভাবি বলে ডাকতে থাকে। কোন সাড়াশব্দ নেই। তালা ঝুলানো দেখে ভাবলো সত্যি তারা কেউ বাড়িতে নেই। ননদরা চলে গেল। পাশের বাড়ির মানুষেরাও মনে করল তারা কেউ বাড়িতে নেই। তারা কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছে না। অনেকক্ষণ পর নানির জ্ঞান ফিরে। ততক্ষণে রক্ত বের হয়ে গা ভিজে গেছে। এরপর নানী কোনরকম ঘরে গিয়ে বসে রয়েছে। স্কুল ছুটি হলে নানা বাসায় ফিরে, গেটে তালা ঝোলানো। নানার কাছে থাকা আলাদা চাবি দিয়ে গেট খুলে। বাসায় ফিরে দেখে তার বউ এই অবস্থা। তখন সে জানতে পারে ডাব গাছ থেকে একটি নষ্ট ডাব তার মাথায় এসে পড়েছে। নানী তখন কান্না করছে আর বলছে কত কষ্ট করে গাছগুলা তৈরি করেছি ফল খাওয়ার জন্য। আর সেই গাছ আমার মাথার উপর ডাব ফেলায়। যারা আমার উপর হিংসা করে তাদের মাথায় ডাব না ফেলে আমার মাথায় ফেলে। ওই গাছ কেটে ফেলতে হবে। নানা বলছিল এটা তোমার পাওনা ছিল, গাছের কাছ থেকে। এখনো পাওনা থাকতে পারে। গাছ কেটে ফেললে তো আর হবে না। বাকি পাওনা কে নিবে। কিন্তু দেখা যায় নানী তখনও তার নিজের ভুল বুঝলোনা। বরং নানাকে আরো দোষারোপ করতে থাকলো। নানা নানীর নামে বদদোয়া করেছে তাই এমনটা হয়েছে।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | গল্প |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
X--promotion
আজকের কাজ সম্পন্ন
আজ আপনার পোষ্টের ভিতরে কথাগুলো পড়ে বেশ ভালো লাগলো। খুব সুন্দর আপনি গুছিয়ে কথাগুলো লিখেছেন। আসলে কিছু কিছু মানুষ আছে অন্যের সাথে হিংসা ও কৃপণতা করে। আর এদের বিশেষত মানসিক সমস্যা। আপনার নানা তো ঠিক বলেছে? জীবনে সবকিছু ধরে বসে থাকলে হয় না। ননদের আসার খবর পেয়ে গাছের ফল খাওয়াবে না বলে ছেলেকে বাইরে থেকে তালা মেরে যেতে বলেছে। তাই হয়তো তার কপালে এই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে।
কিছু কিছু মানুষ আছে কখনোই তাদের নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চায় না। আপনার নানীও দেখছি সেরকম। তারপরও তার ভাগ্য ভালো যে নারকেল মাথায় পরেও অনেক বড় সমস্যা হয়নি। কিন্তু সে উল্টো আপনার নানাকে দোষারোপ করে গেল। যাইহোক আপনার পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো।