শৈশবের মধুর স্মৃতি!

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago

16-03-2025

০২ চৈত্র , ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৬ রমজান, ১৪৪৬ হিজরি


🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼


islamic-7093979_1280.jpg

copyright free image from Pixabay

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি আপনারা সবাই অনেক ভালো ও সুস্থ্য আছেন। তো রহমতের এ মাসে আশা করছি রোজাগুলো যথাযথভাবে পালন করছেন। দেখতে দেখতে ১৫ রোজা চলে গেল। আসলে ভালো সময়গুলো কিভাবে যে চলে যায় তার টেরই পাওয়া যায় না। এ সময়টা আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। গত রমজানেও অনেকে বেচেঁ ছিল। এ রমজানে হয়তো অনেকেই আছে আবার অনেকে নেই। আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া যে এ রমজান মাসেও রোজাগুলো রাখতে পারছি।

শৈশবে রমজান মাস নিয়ে মজার মজার সব স্মৃতি আছে। বিশেষ করে রোজা রাখা নিয়ে। রমজান মাস আসলে আমার টার্গেট থাকতো প্রথম রোজা যে করেই হোক রাখার চেষ্টা করবো। আর শেষ রোজা। মাঝখানের রোজা রাখা হবে না। তবে ১৫ তম রোজাটা রাখার মানসিক প্রস্তুতি আগেই নিয়ে নিতাম। কিন্তু বয়সে ছোট থাকায় রোজা রাখাতে অনেক বিধিনিষেধ ছিল। আগে সারাদিনের সময়টাও অনেকটা দীর্ঘ ছিল। প্রায় ১৬ ঘন্টার উপরে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হতো। সেজন্য আমার মা তো রোজা রাখতে মানা করতো। তবে তবুও আমি রোজা রাখতাম। রোজা যেদিন রাখতাম সেদিন শুধু বারবার ঘড়ির দিকে তাকাতাম। কখন বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যার সময় হবে।

রমজানে সবাই মিলে ইফতার করার মুহূর্তটা অন্যরকম ছিল। আর রোজা রেখে সারাদিন সবার মাথায় থাকতো গরম। বিশেষ করে মা বাবার মাথা তো গরম থাকতো। ইফতারের আগে মায়ের কাজে সাহায্য না করলে কতো কথা যে শুনতে হতো। একেকজনকে দেয়া হতো একেক দায়িত্ব। কেউ শরবত বানাতো, কেউ ছোলা, বেগুনী, আলুর চপ রান্না করতো! আর সবাই মিলে ইফতার করার মজাটাই অন্যরকম হতো।

আর রোজার সময় তারাবীর নামাজ আদায় নিয়ে কতো কি হতো! আমাদের দিকে তখন দুটি ছোট মসজিদ ছিল। তারাবীর নামাজ যেহেতু ২০ রাকআত ছিল। আমাদের দিকে সাধারণত সূরা তারাবী পরা হতো। তারাবীর নামাজ ২০ রাকআত ধৈর্য ধরে খুব করা হতো। আগে আগে বাড়ি চলে আসতাম। আর মা বলতো এতো তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ হলো কি করে! রমজান মাসে আবার বিকালবেলা খেলাধুলাও করতাম। রমজান মাস বেশিরভাগ সময় গ্রীষ্মের সময় পেতাম। রোজা রেখেই ফুটবল খেলা হতো।

আর খেলা শেষ করে বাড়ি এসে বলতাম আমি এখনও রোজা ভাঙেনি। মা তো অবাকই হয়ে যেত। মাঝে মাঝে সেহরীর সময় মা ডেকে তুলতো না। কারণ ভালো করেই জানে সাহরীতে খেলে রোজা রাখবো আমি। যেদিন ডেকে তুলতো না সেদিন সারাদিন তো রাগ করে থাকতাম বলতে গেলে। কিন্তু রাগ আর কতোক্ষণ করা যায়। ঠিক বেলা গড়ানোর আগেই খাওয়া শেষ, হাহা।

রোজা ঈদে শপিং নিয়ে হতো মজার সব কান্ড। ঈদের আগেই করা হয়ে যেত শপিং। কিন্তু শপিং করার পর সেগুলো লুকিয়ে রেখে দিতাম। ভেবে নিতাম ঈদের জামা যদি কেউ ঈদের আগে দেখে ফেলে তাহলে আমার ঈদ চলে যাবে, হাহাহা। ঈদ উপলক্ষে
নতুন নতুন জুতাও কেনা হতো। সেটাও কাউকে দেখাতাম না। তবে আমি ঠিকই ট্রায়াল দিতাম বারবার!

ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যেতাম। ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ কবর পরিষ্কার করা। দাদী,বড়মা, আপু সবার কবর একসাথেই ছিল। সকাল সকাল কবরের চারপাশ পরিষ্কার করে ফেলতাম। তারপর গোসল করে ঈদের নতুন জামা পরে নিতাম। ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে বাবা মাকে সালাম করতাম এবং বাড়িতে বয়সে বড় যারা ছিল সকলকে সালাম করতাম এবং সালামি নিতাম তাদের কাছ থেকে। তখন তো টাকার এতো ভেল্যু বুঝতাম না। ১০-২০ টাকা দিলেই ভাবতাম অনেক টাকা, হাহা।

আসলে গ্রামে ঈদ করার মজাটাই হলো এখানে। সবাই একসাথে মিলে ঈদ উদযাপন করা। গ্রামে পরিবারগুলো মূলত যৌথ পরিবার। সেখানে সবাইকে নিয়েই একটা পরিবার গড়ে উঠে। এখন এটা কম দেখা যায়। গ্রামেও এখন যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমেছে। তবে শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো আজও মনে পরে। সময়গুলো কত তাড়াতাড়ি চলে গেল!!



10% beneficary for @shyfox ❤️

1000158488.jpg

PUSS COIN:BUY/SELL

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG_4442.JPG

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে আমি ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করছি ঢাকা প্রককৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) থেকে । পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত তিন বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 7 days ago 

আসলে ভাইয়া শৈশবে রোজা রাখা ছিল মজার একটা অভিজ্ঞতা। প্রথম ও শেষ রোজা রাখার চেষ্টা করতাম, কিন্তু না খেয়ে থাকা কঠিন লাগতো। আম্মু মানা করলেও রোজা রাখতাম। ইফতারের সময় সবাই মিলে অনেক আনন্দ করতাম।যাইহোক স্মৃতিময় কিছু কথা তুলে ধরেছেন ধন্যবাদ ভাইয়া।

 7 days ago 

শৈশবের সময়টাই অন্যরকম ছিল আসলে আপু

 7 days ago 

যেদিন ডেকে তুলতো না সেদিন সারাদিন তো রাগ করে থাকতাম বলতে গেলে

এই ব্যাপার টা নিয়ে আমিও রাগ করতাম। আপনার লেখাগুলো পড়ে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় সালামির ক্ষেত্রে এমাউন্ট দেখতাম না বরং কত নতুন নোট সেটা দেখতাম। বেশ ভালো লাগলো আপনার লেখাগুলো পড়ে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 7 days ago 

হাহা! আসলেই সালামিতে নতুন নোট পেলে তো খুব ভালো লাগতো।

 7 days ago 

রমজান ও ঈদ নিয়ে শৈশবের মধুর স্মৃতি শেয়ার করেছেন। আপনার শৈশব স্মৃতি পড়ে আমি ও আমার শৈশবকে দেখতে পেলাম।রোজা আমিও প্রথম আর শেষটা রাখার চেষ্টা করতাম। তবে ২০ রমজান আমরা সব ভাই-বোনরা রাখতাম।সেদিন আমার দাদার মৃত্যুবার্ষিকী।তাই সেদিন কেউ মিস করতাম না রেজা রাখাটা।আর ঈদ সালামী নতুন ৫ টাকা আর ১০ টাকা পেলেই খুশী হয়ে যেতাম।ভালো লাগলো আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে।