"অবশেষে বায়োপসি"
![]()
|
---|
Hello,
Everyone,
"বায়োপসি" শব্দটার সাথে পড়াশোনা করাকালীন সময়ে পরিচিত হলেও, সেটার গভীরতা কখনো মনের ভিতরে সেভাবে ছাপ ফেলেনি। যতটা ছাপ ফেলেছিল ২০১০ সালে যখন প্রথমবার মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। দিদির জানাশোনা একজন ডাক্তারের কাছে মা কে চেক আপের জন্য নিয়ে গেলে, তিনি এই বায়োপসি টেস্ট করার কথা বলেছিলেন।
দিদি তখন সবেমাত্র নার্সিং পাস করেছে, অভিজ্ঞতা তখনও বেশি হয়নি। তবে আমাদের থেকে তুলনামূলক অভিজ্ঞতা বেশি হওয়ার কারণে ও বিষয়টা আরও ভালোভাবে বুঝেছিল। যাইহোক এর পরের সবটাই পর্যায়ক্রমে ঘটেছে। বোনম্যারো ক্যান্সারের কারণে ২০১১ সালে মাকে হারিয়েছি আমি। মাঝে অনেকগুলো বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর, পুনরায় এই শব্দটি আমাকে নাড়া দিলো তিনদিন আগে।
আপনারা প্রায় সকলেই জেনে গেছেন গত মঙ্গলবার থেকে শশুর মশাইকে নিয়ে হসপিটালে আছি। বিভিন্ন রকম টেস্টের পর, শেষপর্যন্ত ডক্টর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বায়োপসি করানো হবে। কারণ সমস্যা ঠিক মতন না জানতে পারলে ট্রিটমেন্ট সেই অনুযায়ী করা কিছুতেই সম্ভব নয়। শুরুর থেকে সকলেই এই বায়োপসি বিষয়টাকে এড়িয়ে চলতে চাইলেও, শেষ পর্যন্ত তার সম্ভব হলো না।
কারণ এইটাই একমাত্র অপশন রয়েছে যার মাধ্যমে শশুর মশাইয়ের সমস্যাটা সঠিকভাবে ধরা সম্ভব হবে। তাই আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই ও অন্যান্য আরও বিভিন্ন টেস্টের পরে শেষ পর্যন্ত বায়োপসি করার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত করেছেন ডক্টররা।
![]()
|
---|
গতকাল বায়োপসি হবে এই কথাটা আরও দুদিন আগে আমাদেরকে জানিয়ে, প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কেনার লিস্ট দিয়েছিলো আমাদেরকে, যাতে মাঝের দুদিন সময়ের মধ্যে আমরা সেগুলোতে জোগাড় করতে পারি। আসলে জিনিস গুলো একটু দামি, তাই রোগীর বাড়ির লোকদেরকে ওনরা দুদিন আগে থেকে লিস্ট দেয়, যাতে তারা সেটা যোগাড় করতে পারে।
এরপর খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি, ভিতরের দোকানে বায়োপসি করার মাত্র দুটো কিট রয়েছে। যার মধ্যে একটা ইতিমধ্যেই একজন রোগীর বাড়ির লোক বুক করেছেন।এরপর কিছুক্ষণ সকলের সাথে কথা বললাম। আমার নিজের দিদির কাছে বিষয়টি বলাতে ও নিজের ওয়ার্ডের স্টক চেক করে জানলো, সেখানেও এই কিট নেই।
ওকে পুনরায় আবার অর্ডার করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে সমস্যা হল কোনো একটি রোগীর ডিটেইলস দিয়ে তবেই সেটা অর্ডার করা লাগে। না হলে সরকারি হসপিটালে এই দামী কিটগুলো ডেলিভারি দেওয়া হয় না। অর্ডার দিলেও সেগুলো পেতে দু-তিনদিন সময় লাগে। কিন্তু মাঝখানে শনি ও রবিবার থাকাতে আরও বেশি সমস্যা হলো। কারণ এই দুইদিন কোনো অর্ডার ডেলিভারি করে না। তাই সোমবার দিন অর্ডার করলে সেটা পেতে অন্তত পক্ষে বুধ বৃহস্পতিবার হবেই, অথচ আমাদের ডেট দিয়েছে সোমবার।
![]()
|
---|
তাই অগত্যা ৬০০০ টাকা দিয়ে বোয়োপসির যে কিটটি ওষুধের দোকানে ছিলো সেটাই আমরা কিনে নিই। আর সেই মতো শ্বশুর মশাইয়ের ওয়ার্ডেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো ।গতকাল ছিল ওনার বায়োপসি টেস্ট।
সকাল থেকে না খেয়ে এই টেস্টটি হওয়ার কথা। তাই সকাল১০.৩০ নাগাদ ওনাকে নিয়ে যাওয়া হলেও, সেখান থেকে আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। দুপুর ১২.৩০ টার পর নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলো, তাই ওনাকে তখন আবার ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।
১২.৩০ নাগাদ আমরা যখন ওনাকে নিয়ে যাই, সেই সময় থেকে ওখানেই আমাদেরকে বসিয়ে রাখে। কিন্তু আমার কিছু কাজ ছিলো বলে, শুভকে বসিয়ে রেখে আমি বাইরে বেরিয়ে আসি, কারণ ভেতরে একেবারেই নেটওয়ার্ক থাকে না। গতকাল এনগেজমেন্ট রিপোর্ট উপস্থাপনের দিন ছিলো, তাই সেই সংক্রান্ত কাজ আমাকে করতে হতো। এইকারনে ওপিডিতে এসে বসি।
![]()
|
---|
![]()
|
---|
দুপুর দুটো নাগাদ খবর পাই তখনও ডাক্তার আসেননি, তাই সেখানে আয়া মাসিকে রেখে শুভ লাঞ্চ করতে যায়। গতকাল আমার একাদশীর উপবাস ছিলো। আমি একটু ফল মামা শশুর বাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছিলাম। আমি সেটাই খেলাম। অপেক্ষার অবসান হয় বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ। যখন শুভ ফোন করে জানায়, শশুর মশাইকে টেস্টের জন্য ভেতরে ঢোকানো হয়েছে।
এরপর ২০-২৫ মিনিট অতিক্রান্ত হলে, শুভর ফোন আসে যাতে আয়া মাসিকে ওয়ার্ড থেকে স্ট্রেচার কিংবা হুইল চেয়ার নিয়ে যাওয়ার কথা বলি। ততক্ষণে ওর কথা শুনে বুঝতে পারছিলাম শ্বশুরমশাইয়ের টেস্ট হয়ে গেছে। আমিও আমার ননদ ও শাশুড়ি মাকে খবরটা দেওয়ার পর চুপচাপ বসে রইলাম। ইতিমধ্যে এনগেজমেন্ট রিপোর্টটা ওখানে বসেই পোস্ট করেছিলাম।
কিছুক্ষণ বাদে শুভ এসে জানালো ভিতর থেকে নার্স একটা কন্টেনার দিয়ে ওকে উপরে গিয়ে ওয়ার্ডে জমা করতে বলেছেন। ও সেটাই নিয়ে গিয়েছিলো। ওর কাছ থেকে জানতে পারলাম কন্টেনারের মধ্যে জলের মতো লিকুইড জাতীয় কোনো একটা জিনিস ছিলো, যার মধ্যে তিন চার টুকরো চামড়ার মতন কিছু একটা দেখা যাচ্ছিলো। যেটা শশুরমশাইয়ের লিভার থেকে নেওয়া হয়েছে, মূলত এই ভাবেই বোধহয় বায়োপসি টেস্ট হয়।
ওর এবং আমার জন্য এটা প্রথম অভিজ্ঞতা। ও নিজেই বলল যে, নার্স যখন ওর হাতে এই কন্টেইনারটা দিয়েছিল তার গ্লাভসে পুরো রক্ত লাগাছিলো। ও ভয় পাচ্ছিল যদি অতটা রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে, তাহলে আবার শ্বশুর মশাইকে রক্ত দিতে হতে পারে, কারণ এমনিতেই ওনার শরীরে হিমোগ্লোবিন অনেক কম। তার উপরে যদি রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই রক্ত দেওয়া লাগবে।
দুজনই চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে রইলাম। মুখে কোনো কথা নেই। বাইরে ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে এসেছে। ওপিডি সম্পূর্ণ ফাঁকা।এই ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের দুজনের ক্ষেত্রেই প্রথম। তবে পরিস্থিতি এমন যে সেখান থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। ভয় লাগুক, কষ্ট হোক, বা টেনশনে থাকি না কেন সিদ্ধান্ত আমাদেরকে নিতেই হবে।
![]()
|
---|
তবে দুঃখের বিষয় গতকাল টেস্ট হতে এতটাই দেরি হয়েছিল যে, সেটা গতকালকে ল্যাবরেটরীতে পাঠানো সম্ভব হয়নি। যদিও ওখানে উপস্থিত হেড নার্স বলেছিলেন সম্ভব হলে রাতে সেটা পাঠিয়ে দেবেন। তবে আদেও সেটা কতখানি সম্ভব হবে সেটা সঠিকভাবে জানা নেই। যদি কোনোভাবে রাতে পাঠানো সম্ভব না হয়, তাহলে ওরা বলেছে আজ সকালে পাঠিয়ে দেবে।
এরপর অপেক্ষা করতে হবে ১০ থেকে ১২ দিন। কারণ এমআরআই রিপোর্ট দুদিনের মধ্যে পাওয়া গেলেও, বায়োপসির রিপোর্ট পেতে কম করে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। ফলাফল কি এলো সেটা আমরা আরো ৮-১০ দিন বাদই জানতে পারবো। তবে সবথেকে বেশি চিন্তিত আদেও শ্বশুর মশাইকে এতদিন ভর্তি রাখবে, নাকি ডিসচার্জ করে দেবে এই বিষয়ে।
![]()
|
---|
একদিকে শুভর অফিসে ছুটি হচ্ছে, দ্বিতীয়ত প্রতিদিন হসপিটালে যাতায়াত করতে করতে আমরা দুজনে যথেষ্ট ক্লান্ত। সেটা শারীরিক হোক বা মানসিক দিক থেকে। আর বর্তমানে শশুর মশাইয়ের খুব বেশি সমস্যা আছে এমনটাও নয়। তাই একদিকে মনে হচ্ছে হয়তো ছুটি হবে, আবার অন্যদিকে ওনার সুগার যে পরিমাণে বাড়ছে, তাতে ডক্টর কি সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
যাইহোক আজ সকালেই চলে এসেছি হসপিটালে। কিছুটা লেখা গতকাল লিখলে সম্পূর্ণটা শেষ করা হয়নি। তাই ওপিডির সামনে বসেই লেখাটা শেষ করছি। এরপর ভেতরে যাবো। সারাটা দিন কিভাবে কাটবে জানিনা, আদেও আজ বাড়ি যেতে পারবো কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত নই। তবে আর ভালো লাগছে না। আজ এক সপ্তাহ বাড়ির বাইরে। পিকলু জন্য মনটা বড্ড খারাপ লাগছে। এবার বাড়ির প্রতি মন ছুটেছে, তবে জানিনা আজকে যেতে পারবো কিনা।
যাইহোক বায়োপসি সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা ইচ্ছে হলো আপনাদেরকে জানাই, তাই আজকের এই পোস্ট লেখা। আপনাদের কার কার এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। ভালো থাকবেন প্রত্যেকে। প্রত্যেকের সুস্থতা কামনা করে আজকের পোস্ট লেখা শেষ করছি। আপনাদের সকলের আজকের দিনটা খুব ভালো কাটুক। ধন্যবাদ।
|
---|
বায়োপসি এই শব্দটা আমার কাছে একেবারেই নতুন আমি কখনোই এসবের সাথে পরিচিত হইনি বা আমার পরিচিত কারো এই ধরনের কোন কিছু করতে হয়েছে সেটা আমার জানা নেই তবে ২০১০ সালে আপনার মায়ের করতে হয়েছিল যেটা আপনি আমাদের সাথে শেয়ার।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আপনার শশুর মশাইয়ের জন্য বায়োপসি করাতে হয়েছিল আসলে প্রতিনিয়ত এভাবে হসপিটালে থাকা-ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা সুস্থ মানুষও কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ে এটা আমি যতটুকু জানি আমার অভিজ্ঞতা থেকে তাই সবকিছু সামলে নেয়ার পাশাপাশি নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন কারণ একটা মানুষ যখন শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সব দিক একেবারে এলোমেলো হয়ে যায়।
Team Steem Peacocks 🦚
Congratulations! Your post has been upvoted through steemcurator07.Thank you @afzalqamar for your support 🙏.