গল্প : তোমার ছায়া (চতুর্থ পর্ব)
ঢাকার এক ক্লান্ত সন্ধ্যা। দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে আদনান তার রুমমেট আরাফের সঙ্গে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। জানালার বাইরে ধোঁয়াটে আকাশ আর রাস্তায় অসংখ্য গাড়ির হর্ণ। শহরের কোলাহল যেন বাড়ির ভেতর পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা দুজন সেই কোলাহল থেকে দূরে একটু শান্তি খুঁজে নিচ্ছে। আদনানের চোখে ক্লান্তি, আরাফ তা ঠিকই টের পায়।
“তোর দিনটা কেমন গেল?” আরাফ জানতে চায়, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে।
“ভালোই,” আদনান একটুখানি হেসে উত্তর দেয়। “তবে এই শহরের ব্যস্ততা দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠছে। মনে হয় প্রতিটা দিন যেন আমার শ্বাসরোধ করে দিচ্ছে।”
আরাফ একটু মুচকি হেসে বলে, “সবাই তো তোর মতো প্রকৃতিপ্রেমী না। তুই কি আসলেই শহরটাকে বোঝার চেষ্টা করছিস?”
আদনান মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর বলে, “তুই জানিস, আমি ঢাকার এই কোলাহল পছন্দ করি না। আমার সৃজনশীলতা যেন এই ব্যস্ততার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন মনে হয় যেন আরও একটু দম বন্ধ হয়ে আসছে। জানিস, আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক জায়গার, যেখানে প্রকৃতির মাঝে মুক্তি পাব। এই ইট-কাঠের শহর আমার জন্য নয়।”
“তুই সায়মার সঙ্গে কাজ করছিস, কেমন লাগছে?” আরাফ প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে।
আদনান একটু হাসে। “সায়মা খুব প্রফেশনাল। কাজের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি অসাধারণ। ওর কাছে কাজের সফলতা মানে হলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া আর সময়ের সঠিক ব্যবহার। কিন্তু আমার কাজের ধরণ পুরো ভিন্ন। আমি ধীরগতিতে চলতে পছন্দ করি। প্রতিটি কাজ নিখুঁত হওয়া চাই। এই শহর যেমন সবকিছুকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, সায়মাও তেমনই। আমি যেন শহরের এই গতি আর সায়মার কর্মশক্তির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি।”
আরাফ একমুহূর্ত চুপ থেকে বলে, “ভাই, তুই একটা জিনিস বুঝিস না। দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে থেকে সবচেয়ে ভালো কাজ বের হয়। তুই ধীরগতিতে চিন্তা করিস, সায়মা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। তোরা একসঙ্গে কাজ করলে তো সেরা সমাধান বের করতে পারবি। আর তুই শহরটাকে কেন এভাবে দেখছিস? শহরের কোলাহলের মাঝেও অনেক রূপ আছে। একটু চেষ্টা কর, এই ব্যস্ততার মধ্যেও তোর জন্য কিছু শান্তি খুঁজে বের কর।”
আদনান মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। “হয়তো তুই ঠিকই বলছিস। কিন্তু জানিস, শহরটার প্রতি আমার বিতৃষ্ণা কাটানো কঠিন। আমি প্রকৃতির মাঝে মুক্তি খুঁজে পাই। এই ব্যস্ত জীবন যেন আমার চিন্তাভাবনা আটকে দিচ্ছে। আমি চেষ্টা করছি নিজেকে খুঁজে পেতে। কিন্তু প্রতিদিন মনে হয় যেন আরও একটু হারিয়ে যাচ্ছি।
আরাফ এবার গভীরভাবে বলে, “তোর সমস্যার মূল কারণ তোর এই শহরের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। তুই শহরটাকে মানতে পারছিস না। কিন্তু তুই যদি নিজের ভেতরের দিকটাকে একটু খুলে দিস, দেখবি এই শহরের ব্যস্ততা, এই কোলাহল, সবকিছুর মাঝেও একটা সৌন্দর্য আছে।”
আদনান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তার ভেতর যেন কোথাও আরাফের কথাগুলো দাগ কাটে। সে জানে, শহরের এই কোলাহল আর ব্যস্ততাকে মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু সে এটাও বুঝতে পারে, পার্থক্য মানেই সব সময় খারাপ কিছু নয়।
অন্যদিকে, শহরের আরেক প্রান্তে সায়মাও নিজের জীবনের সংকট নিয়ে ভাবছে। তাদের দুজনের জীবন ভিন্নধর্মী হলেও কোথাও যেন একটা গভীর সুর মিলছে। আদনান প্রকৃতির মাঝে মুক্তি খোঁজে, আর সায়মা নিজের কর্মশক্তির মধ্যেই শান্তি খুঁজে পেতে চায়। তাদের চিন্তার ভিন্নতা দুই বিপরীত সত্তার মতো, কিন্তু সেই ভিন্নতার মাঝেই একটা অদ্ভুত সংযোগ যেন ক্রমশ তৈরি হচ্ছে।
সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। জানালার বাইরে শহরের বাতিগুলো জ্বলে ওঠে। দুই ভিন্ন মানুষ, দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। তারা জানে না, এই পার্থক্য হয়তো তাদের জীবনকে নতুন কোনো পথে নিয়ে যাবে।
দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, কিন্তু একই বাস্তবতার অংশ আদনান আর সায়মার চিন্তার এই দ্বন্দ্ব সত্যি দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন। শহরের কোলাহল একদিকে যেমন ক্লান্তিকর অন্যদিকে তা নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করে। আদনানের প্রকৃতির প্রতি টান আর সায়মার কর্মশক্তির প্রতি ভালবাসা, এই দুই বিপরীত দিকে সমন্বয় হয়তো এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। গল্পটি খুবই প্রাণবন্ত লেগেছে, পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
তোমার চেয়ে গল্পের চতুর্থ পর্ব আজকে আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আসলে এই শহর সবকিছুই একটু দ্রুত পছন্দ করে সায়মা ঠিক তার মত তবে সবাই তার মত হবে এটা ঠিক না কেউ ধীরগতিতে চলতে পছন্দ করে সবকিছু একেবারে নিখুঁত হওয়া চাই তার জন্য কিছুটা সময় যদি একটু বেশি লাগে তাতে কোন সমস্যা নাই অসংখ্য ধন্যবাদ পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম ভালো থাকবেন।