আমসত্ত্ব তৈরীর রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি একটা রেসিপি। আমি চেষ্টা করি সপ্তাহের একটা দিন আপনাদের সকলের সাথে কোন একটা রেসিপি শেয়ার করার।
রান্না করতে আমার যে খুব একটা ভালো লাগে, তা নয়। কিন্তু নিজের পছন্দের জিনিস রান্না করতে আমি পছন্দ করি। আর আমি আপনাদের সাথে যে রান্নার রেসিপিগুলো শেয়ার করি, সে রেসিপিগুলো আমার সত্যিই অনেক পছন্দের। আজকে যেমন আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি কিভাবে আমসত্ত্ব বানাতে হয়।
এখন গরম কাল, বলতে গেলে বর্ষাকাল চলে এসেছে। বর্ষাকালটাকে গরমকালের মধ্যেই ধরা যায়। এই সময় এত পরিমানে আম হয় । আম খেয়ে শেষ করা যায় না। যাদের বাড়িতে আমের গাছ আছে ,তাদের বাড়িতে আম পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এত এত আম বেশি খেলে পেট খারাপ করবে। তাই নষ্ট হবার আগে আম দিয়ে যদি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করে নেওয়া যায় ,তাহলে কিন্তু মন্দ হয় না।
আমসত্ত্ব কিন্তু সেরকমই একটা রেসিপি। তার ওপর আমসত্ত্ব বানালে স্টোর করে বেশ অনেক মাস রাখা যায়। এমনকি বছর বলা যেতে পারে। ঠিকঠাক ভাবে বানালে আমসত্ত্ব অনেক দিন থাকে।
আমার বাড়িতে আমসত্ত্ব বানানোর সাথে সাথে আমি রাক্ষসের মতন খেয়ে শেষ করি। কারণ আমার আমসত্ত্ব খেতে খুবই ভালো লাগে। দোকানের আমসত্ত্বগুলোতে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি থাকে। আর আমি যে আমসত্ত্ব বানাই তাতে তো চিনি মেশাই না। কারণ এমনিতেই আমাদের গাছের আম অনেক মিষ্টি।
আম যখন পাওয়া যায় না, গরমকাল শেষ হয়ে যায়, তখন আমের একটু স্বাদ পেতে সবারই ইচ্ছা করে, সেই সময় এই আমসত্ত্ব কিন্তু খাওয়া যেতে পারে আর একটু আমের কথা মনে করা যেতে পারে ।আমাদের বাড়িতে আমসত্ত্ব বানানোর কারণ এটাই ,আম যখন শেষ হয়ে যাবে তখন এই আমসত্ত্ব আমরা খেতে পারব।
আমার মত আপনারাও যদি এরকম আমটাকে আমসত্ত্ব বানিয়ে অনেক দিন রাখতে চান, তাহলে ধাপে ধাপে এবার রেসিপিটা ফলো করুন। রেসিপিটা বলার আগেই শেয়ার করছি উপকরণ।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | আম | ইচ্ছা মত |
২ | বিট লবণ | এক ছোট চামচ |
৩ | পাঁচ ফোড়ন গুঁড়ো | এক চামচ |
৪ | সরষের তেল | পরিমাণ মত |
প্রথম ধাপ
এই যে এতগুলো আম দেখতে পাচ্ছেন এগুলো সব কিন্তু আমাদের গাছের ।এবার আমি এখান থেকে ছয় টা মত আম নিয়ে নিয়েছি। আপনারা যতটা পরিমাণ বেশি করবেন ,ততটা স্বাভাবিকভাবে আমসত্ত্ব বেশি হবে ।আমি ছটা মত আম ব্যবহার করেছিলাম।
দ্বিতীয় ধাপ
একদম পাকা আম ব্যবহার করতে হবে ,যাতে ঠিক এইভাবে হাত দিয়ে নিংড়ে আমের রসটাকে কালেক্ট করে আলাদা করে নেওয়া যায় এবং স্বাভাবিকভাবে আটিটা ফেলে দেব, প্রত্যেকটা আমের ক্ষেত্রেই তাই করে নেব।
তৃতীয় ধাপ
এবার মিক্সিচার গ্রাইন্ডারে এটাকে একবার গ্রাইন্ড করে নিতে হবে ,এতে পুরো আমের পাল্পটা মিহি হয়ে যাবে ।কোনরকম দানা বা আমের শক্ত পাল্প থাকবে না ,পুরো একটা সুন্দর লিকুইড ফর্মে চলে আসবে।
চতুর্থ ধাপ
এবারে ওই আমের পাল্প একটা কড়াই এর মধ্যে ঢেলে নেব। আর কড়াইটা বসিয়ে দেবো গ্যাসের উপর। ওভেন অন করে মিডিয়াম ফ্লেমে রেখে খুন্তি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকবো। মিশ্রণটা সামান্য গরম করে নেব ।তবে মিশ্রণটা অতিরিক্ত রাখলে ,কিন্তু ঘন হয়ে যেতে পারে ।তাই মোটামুটি মিডিয়াম এ রেখে ,এক দু মিনিট খুন্তি চালিয়ে নিলেই হয়ে যাবে।। এক মিনিট পর ওভেন বন্ধ করে মিশ্রণটা রেখে দেব।
পঞ্চম ধাপ
এবার পাঁচফোড়নের গুঁড়ো করে নিচ্ছি ।এর জন্য আমি সামান্য চার চামচ মত পাঁচফোড়ন তাওয়াতে একটু হালকা ভেজে নিয়ে হামান দিস্তাতে গুঁড়ো করে নিয়েছি।। পুরোটা এর পরবর্তী ধাপে ব্যবহার হবে, তবে এতটা না, পরিমাণ মতো।
ষষ্ঠ ধাপ
মিশ্রণটা সামান্য একটু ঠান্ডা হয়ে গেলে তাতে দিয়ে দেব পরিমাণ মতন বিট লবণ, আমি এখানে ছোট চামচের এক চামচ বিট লবণ আর এক চামচ মত পাঁচফোড়নের গুড়ো অ্যাড করেছি। এবং তারপরে সবকিছু ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়েছি খুন্তির সাহায্য এ।
সপ্তম ধাপ
পাত্র নিয়ে নিতে হবে ,যে পাত্রে আমরা আমসত্ত্ব তৈরি করব। আমি এখানে স্টিলের কিছু গোল মত থালা নিয়ে নিয়েছি। তাতে অল্প করে তেল মাখিয়ে নিচ্ছি। সরষের তেল আমি ব্যবহার করেছি।
অষ্টম ধাপ
এবারে মিশ্রণটা প্রত্যেক পাত্রে এমন ভাবে ঢালবো যাতে , বেশি মোটা স্তর না হয়। পাতলা করে । লেয়ার টা যত পাতলা হবে, তত ভালো। এবার রোদে দিয়ে দিতে হবে। সারাদিন টানা রোদ এ রাখতে হবে।আমি ছাদে রোদে দিয়েছিলাম।
নবম ধাপ
একদিন রোদ দেওয়ার পর , আমসত্ত্ব উল্টে দিতে হবে তারপর আরেকদিন রোদে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে।অর্থাৎ মোট দুদিন রোদ পেলে ভালো হয়।
দশম ধাপ
এবারে থালা থেকে তুলে নিলেই বুঝতে পারবেন কত সুন্দর পাতলা আমসত্ত্ব হয়েছে।
দোকানের মতন পিস করে কেটে রাখতে পারেন অথবা কেটে রোল করে রাখতে পারেন।
এই আমসত্ত্ব তে মশলা দেওয়াতে খেতে আরো ভালো লাগে।আপনারা চাইলে এভয়েড করতেই পারেন। তবে আমি সাজেস্ট করব, একবার মশলা দিয়ে ট্রাই করার। আর আম মিষ্টি হলে একদম চিনি দেবেন না।
এরকম কাচের বয়েমে আপনারা স্টোর করে রাখুন। মাঝে মধ্যে রোদে দিতে পারেন। আমার মনে হয়, স্টোর করার প্রয়োজন পড়বে না , কারণ এই আমসত্ত্ব খুবই ভালো খেতে হয়। আপনারা কদিনেই শেষ করে নেবেন মনে হয়।
যাইহোক, আশা করছি আমার আজকের এই রিসিপি আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। আজ এখানেই শেষ করলাম। সকলে ভালো থাকবেন।
এ বছরে আমিও প্রথমবার আমসত্ত্ব তৈরি করেছিলাম। তবে তোমার মতো বিশেষ কোনো উপকরণ ব্যবহার করিনি, তোমার সমস্ত উপকরণ দিয়ে আর একবার বাড়িতে আমসত্ত্ব বানিয়ে দেখব। আমার আমসত্ত্ব খুব ভালোভাবে শুকিয়ে ছিল খেতেও খুব ভালো হয়েছিল তবে তোমারটা মসলা দিয়ে হয়তো আরো ভালো খেতে হবে। আম সব তো দেখে ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে। প্রত্যেকটি ছবি উপকরণ সহ আমসত্ত্ব বানানো রেসিপি শেয়ার করেছ। তোমার রেসিপি অনুযায়ী আর একবার বাড়িতে বানানোর ট্রাই করবো।
আমসত্ত্ব পেলে আমিও আপনার মতোই রাক্ষসের মতো করেই খেয়ে ফেলি যার কারনে আমার কাছে আমসত্ত্ব টিকতে পারে না খুব বেশিদিন।
আপ্নি খুবই চমৎকার করে ধাপে ধাপে এই আমসত্ত্ব বানানোর পদ্ধতি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন ।
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর করে এই রেসেপিটা শেয়ার করার জন্য ।
You have been supported by the Team 04: