হঠাৎ দৌড়
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি কিছুদিন আগের একটা ছোট্ট ঘটনা। ছোট ঘটনাটা যত ছোট ,ততটাই সাংঘাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আসলে আমার বাবা কিছুতেই টেনশন নিতে পারেনা। কোনরকম চাপ বাবা নিতে পারেই না বললে চলে , যেহেতু সারাক্ষণ নানান ধরনের মূর্তি তৈরি করতে হয়, মাথার মধ্যে চাপ পড়লে কখনোই মূর্তি তৈরি হবে না।। যদি সোজা ভাষায় বলি, কারোর বাবার মাথা তৈরি করতে গিয়ে অন্য কিছুর মাথা হয়ে যাবে। শিল্প সৃষ্টির জন্য লাগে প্রবল কন্সেন্ট্রেশন এবং চিন্তা মুক্ত ব্রেন সাথে সঠিক পরিবেশ। হয়তো আপনারা খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন বেশিরভাগ শিল্পীরাই যখন কাজ করে একটু নিঝুম পরিবেশে কাজ করতে পছন্দ করে।
যাইহোক বাড়িতে পাসপোর্ট নিয়ে একটু সমস্যা ছিল। পাসপোর্ট বই ক্যানসেল হয়ে যাওয়ায় , আমরা বুঝতে পারছিলাম না, এরপরে কি করা উচিত। পাসপোর্ট বইটা পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে ,নাকি বাড়িতেই রাখবো। তাও বুঝতে পারছিলাম না। আর এটা স্বাভাবিক চিন্তার ব্যাপার ।কারণ এটা একটা সরকারি বই। আর এই জাতীয় বিষয়ে আমাদের কোন ধারণাও নেই ।কারণ এই সমস্যা আগে কখনো হয়নি ।
যাইহোক এই নিয়ে দিনরাত্রি বাড়ির সবাই চিন্তা করছিল । পাসপোর্ট সেবাতে কাস্টমার কেয়ার নাম্বারে কল করলে এক একজন এক এক রকম কথা বলছিল। কেউ বলছিল এপয়েন্টমেন্ট করতে, কেউ বলছিল গিয়ে ডাইরেক্ট ভিজিট করে আসতে।অবশেষে আমরা প্ল্যান করি পাসপোর্ট অফিস এপয়েন্টমেন্ট করে তারপরে যাব। সেই মতো হাজার টাকা চার্জেস দিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা হয়।
এ সত্ত্বেও আমার বাবার মন মানছিল না। কারণ এপয়েন্টমেন্টটা আমরা একমাস পরে পেয়েছিলাম। এক মাস ধরে আমার বাবা চিন্তা করবে, আর শরীর খারাপ করবে। এটা স্বাভাবিক মেনে নেওয়ার বিষয় নয়। আর যেহেতু প্রচুর প্রচুর মূর্তি অর্ডারে আছে। এগুলো ডেলিভারি করতে হবে। তাই এই ঝামেলাটা যত তাড়াতাড়ি ঘাড় থেকে নামে ততোই ভালো। আমি সব থেকে অবাক হয়ে গিয়েছি এই ব্যাপারে যে পাসপোর্ট অফিসের কাস্টমার কেয়ার নাম্বারে ফোন করার পরেও তারা এ ব্যাপারে কোন সলিউশন দিতে পারেনি।
কিছুদিন আগে অর্থাৎ শুক্রবারে সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে যখন চা খাচ্ছি, মোটামুটি আটটা বাজে ।বাবা আবার শুরু করে দিয়েছিল এসব নিয়ে চিন্তা করা ।বিগত প্রায় ১৫-২০ দিন ধরে টানা এক জিনিস শুনতে শুনতে আমারও মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সবাই বুঝিয়ে পাচ্ছিল না যে, এতে কিছু হবে না। কারণ বইটা ক্যান্সেল হয়ে গেছে, বইটা রেখে দিতে হবে, কেউ বই ফেরত নেয় না।
বাবার মনে শান্তি কিছুতেই না আসছিল না। তাই সাথে সাথে আমি আর মা ডিসিশন নিয়ে তৎক্ষণাৎ ঠিক করে ফেললাম কলকাতা যাবো। মা সবে পুজো করে উঠেছে। আমি আর মা ট্রেনে করেই কলকাতা যাওয়ার কথা ঠিকঠাক করলাম। কারণ এ ছাড়া উপায় নেই। গাড়ি করে গেলে বেশ সময় লেগে যাবে। মা সাধারণত কলকাতা ট্রেনে কখনোই যাতায়াত করেনি। আমি যা যাতায়াত করেছি। এদিকে ঈশানকে কার কাছে রাখবো, তাই বাবাকে থাকতে হলো বাড়িতেই। কিন্তু সমস্যাটা মেটানোর দরকার ছিল ।আমরা সবাই স্নান করেই ছিলাম। কিছু না মুখে দিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলাম সেদিন। তারপরে যে ট্রেন সামনে পেয়েছি, সেই ট্রেনে উঠে সোজা শিয়ালদা। কৃষ্ণনগর থেকে একটু পরপরই শিয়ালদার দিকে ট্রেন থাকে।
শিয়ালদা থেকে পাসপোর্ট অফিস গাড়ি করে চলে গেলাম। তারপর সেখানে অফিসে গিয়ে কাজ সেরে নিলাম ফটাফট। সবাই যেরকম বলছিল এবং আমিও বাবাকে যেরকম বোঝাচ্ছিলাম ,সেটাই হল। কখনোই পাসপোর্ট বই অফিসে ফেরত নেয় না। যদি ক্যান্সেল হয়ে যায়, তাহলে আমরা বাড়িতেই রাখতে পারি। যাইহোক এই শুধুমাত্র এই কথাটা শোনার জন্য এতদূর আমাদের জার্নি করে আসতে হল। এই কথাটা যদি কাস্টমার কেয়ার থেকে বলে দিত তাহলে এই ঝামেলাগুলো হয় না। অফিসে আমাদের বেশিক্ষণ সময় লাগেনি, আমাদের আগে পাঁচ ছয় জন ছিল, তারপর আমি আমার মতন সমস্ত কথা বলে নিয়ে খুব জোর ১৫ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে এসেছি।বাবাকে ফোন করে বলাতে বাবা তারপর থেকে একদম রিলাক্স।
আমার মা যখন ট্রেনে উঠেছে, মানে আমি কৃষ্ণনগর থেকে শিয়ালদা আসার কথা বলছি। মা কত কিছু যে কিনল ধারণার বাইরে। যা দেখে হকারদের কাছ থেকে তাই কিনতে চায়। যাইহোক সেদিন কি আমার ভালই পকেট এর অবস্থা খারাপ হয়েছে। অফিস থেকে বেরিয়েই সামনের ডাবের দোকানে ডাব খেয়ে নিলাম। আর তারপরে ঘটনাগুলো পরের দিন পোস্টে শেয়ার করব।
সবকিছুর মধ্যে দিয়ে এত টেনশন এ ছিলাম যে বেশি ছবি তুলতে পারিনি যাওয়ার সময়, তার জন্য ক্ষমা চাইছি।
পোস্টটা পড়ে মনে হল যে দৌড়ের ওপরে লিখছেন। পাসপোর্ট নিয়ে ঝামেলা হলে আসলে দৌড়াদৌড়ি করার শেষ থাকে না সরকারি কাজ অনেকটাই ঝামেলার।
কিছুদিন আগে আমার মামার একটি পাসপোর্ট হারিয়ে গিয়েছিল সেই পাসপোর্টটা পুনরায় বানাতে গিয়ে অনেকটাই বেগ পোহাতে হয়েছিল।
আপনার এলাকার সেসব তো দেখি আমার আগ্রহ হয়েছে আপনার পোস্টটি পরিদর্শন করার। কারণ অনেকবার বিভিন্ন ক্রিয়া করার কারণে এরকম হঠাৎ দৌড় দেওয়ার সাথে যুক্ত আমি। ঠিক সেই কৌতুহল থেকে আপনার পোস্টটা করলাম।
আপনার বাবার কাজের বিষয়ে যে অভিমত আপনি তুলে ধরেছেন এটা একদমই সঠিক কারণ শিল্প সূক্ষ্ম মেধার এক সৃষ্টি। যেটার জন্য মনোযোগ ঠিক রাখাটা বাধ্যতামূলক তাই মাথায় কোনো দুশ্চিন্তা থাকলে সেটা একদমই সম্ভব না।
যে পরিস্থিতি তাতে এতোদিন বিলম্ব করাটাও সম্ভব ছিলনা। আপনার জায়গায় আমি হলেও এই সিদ্ধান্তই নিতাম। তবে আমাদের এখানে এভাবে চার্জ দিয়ে সিরিয়াল দিতে হয় না। মোটামুটি স্ব-শরীরে একটু পকেট ভারী করে নিয়ে গেলেই করা সম্ভব। যেটা এক কথায় খুব খারাপ তবে খুব জরুরী হলে এটা ভালোই।
এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যেমনটা আপনি নিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে প্রয়োজন কোনো আইন মানে না। তবে আপনার কিছুটা অভিজ্ঞতা ও আছে যে কারণে হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিতে আপনার অসুবিধা হয়নি।