নববর্ষের সকাল বেলা

in Incredible India2 months ago

নমস্কার বন্ধুরা।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি নববর্ষের দিনের মুহুর্ত।

১৫ ই এপ্রিল, বৈশাখ মাসের ১ তারিখ বাঙালির নববর্ষ। বাংলার ১৪৩২ শুরু হলো। সকলে তো এখন নিউ ইয়ার নিয়েই বেশি মাতামাতি করে। তবে বাঙালিরা ১লা বৈশাখ বেশ আনন্দ করেই উৎযাপন করে থাকেন । অন্তত এখনও এই রীতি নীতি ঠিক আছে। অন্তত আমাদের এখানে পহেলা বৈশাখের দিন যেভাবে আনন্দ করে সকলে ,ইংরেজি নিউ ইয়ার এ অতটাও আনন্দ হয় না।

নিউ ইয়ার এ হয়তো মানুষ রেস্টুরেন্টে খেতে যায় অথবা বাইরে ঘুরাঘুরি করতে যায়। তবে পয়লা বৈশাখের দিন আমাদের বাঙালিরা সবাই হালখাতা করে। দোকানে দোকানে গিয়ে মিষ্টিমুখ করে আসে।

20250415_153624.jpg

20250415_153629.jpg

যাদের ব্যবসা রয়েছে সেটা সোনার দোকান হোক ,রঙের দোকান হোক কিংবা অন্যান্য দোকান সকলেই কিছুদিন আগে কার্ড দিয়ে কাস্টমারদের নিমন্ত্রণ করে।। কাস্টমাররাও বিকেল হলে পহেলা বৈশাখের দিন নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে দোকানে দোকানে যায় এবং একটা করে মিষ্টির প্যাকেট আর ক্যালেন্ডার নিয়ে আসে।

যদি বকেয়া কোন টাকা থাকে ,তাহলে সেটাও পূরণ দিয়ে আসে। আবার অতিরিক্ত টাকা জমা করতে পারে। হালখাতা করার দিনকে ওই দোকানগুলি থেকে নানান ধরনের খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়। বেশিরভাগ সময় আইসক্রিম অথবা কোল্ড্রিংস থাকে ,যেহেতু গরমকাল।

20250415_153935.jpg

20250415_155338.jpg

আমি ছোটবেলায় " হালখাতা " ওয়ার্ড ঠিকভাবে বলতে পারতাম না। এই ওয়ার্ডটাকে বিকৃত করে কিভাবে যেন বলতাম, আর সবাই এটা নিয়ে হাসাহাসি করত। ছোটবেলার কথা বারবার মনে পড়ে যখনই পহেলা বৈশাখ আসে। ছোটবেলা থেকেই বাবার গাড়ির পেছনে বসে দোকানে দোকানে গিয়ে হালখাতা করে আসতাম।

বাবা অতিরিক্ত টাকা জমা করে আসতো। আর আমি খুব রাগ করতাম ,ভেবে পেতাম না কেন ওদেরকে বিনা কারণে টাকা দিচ্ছে। পরে বাবা বুঝিয়ে বলত, যে এখান থেকে তো আবার জিনিস কিনতে হবে। তাই জন্য কিছুটা টাকা এক্সট্রা দিয়ে রাখলাম। ছোট থেকে হালখাতা করতে এই জন্যই ভালো লাগতো কারণ দোকানে দোকানে গেলে আইসক্রিম বা কোলড্রিংস খাওয়াতো।

20250415_160921.jpg

20250415_161631.jpg
তিওয়ারি সোনপাপড়ি

বড় হবার পর এসব আর একদম নেশা নেই। পহেলা বৈশাখের দিন বিকেল বেলায় বেরিয়ে কোন একটা জায়গায় একটু শান্তি ভাবে চুপ করে রিলাক্সে সময় কাটাতেই বেশি ভালো লাগে। ভিড়ের মধ্যে একদম যেতে ইচ্ছা করে না।। তবুও যবে থেকে ঈশান হয়েছে ,তবে থেকে ঈশান বায়না করে বেরোনোর জন্য। তাই ঈশানকে নিয়ে বেরোতে হয়। বাবা মাঝে মধ্যে যেতে রাজি হয় না তাই আমি ঈশানকে নিয়ে বার হই ।

পহেলা বৈশাখের দিন সকাল থেকেই বড়দের সকলকে প্রণাম করে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলাম সাথে প্রণাম জানাচ্ছিলাম। আমার বাড়িতে এখনো নববর্ষের দিন সকালবেলায় এভাবেই কেটে যায়।তারপর আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল আমাদের এখানেই বাড়ির কাছে একটা কারখানায়। ওখানে বেসিক্যালি গ্রিল, রড ,পাতি এই সমস্ত কিনতে পাওয়া যায় ,আঙ্গেল কিনতে পাওয়া যায়। নাম - কুন্ডু ট্রেডার্স।

যেহেতু প্রচন্ড গরম ছিল বাড়িতে মিস্ত্রি কাজ করছিল ,এ কারণে বাবা দুপুর বেলায় আর সেখানে যায়নি। আমাকে আর ঈশানকে নামিয়ে দিয়েছিল, আমি এর আগেও ওখানে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছি। প্রত্যেক বছরই এরা বেশ বড় করে আয়োজন করে থাকে। টেবিল চেয়ার পেতে বেশ অনেকজন লোককে খাওয়ায়।

এছাড়া ওরা দুর্দান্ত একটা সন পাপড়ির প্যাকেট দেয়। এই কোম্পানিটার নাম হলো তিওয়ারি কোম্পানি। সন পাপড়িটা অসাধারন খেতে হয়।খাবারের মেনুতে থাকে পোলাও ,আলুর দম, চাটনি ,মিষ্টি ,চানা মশলা, পনিরের তরকারি আরও কত কিছু। সাথে কোলড্রিংস তো আছেই।
এ বছরও ঠিক সেরকম ভাবেই আয়োজন হয়েছিল কিন্তু আমি আর ঈশান শুধুমাত্র গিয়েছিলাম।

20250415_164429.jpg

তারপর ওখানে এক ঘন্টার মত সময় কাটিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছি ,কারণ অত্যাধিক গরম ছিল। তবে এবারে পয়লা বৈশাখের গরম টা গত বছরের পয়লা বৈশাখের গরমের থেকে বেশ অনেকটা কম ছিল। কারণ এক দিন আগেই বেশ ঝড় বৃষ্টি হয়েছিল। এই গরমের মধ্যে বেশি খাওয়া-দাওয়া করা যায় না, তবে একটু ঝড় বৃষ্টির আভাস পেলে ঘোরাঘুরি করেও শান্তি আবার খেয়েও শান্তি।

ওখান থেকে কাজ মিটিয়ে আবার টোটো করে বাড়ি ফিরে আসলাম ।তারপর বাড়িতে এসে দেখি কত মিষ্টি বাড়িতে অনেকে দিয়ে গেছে। আমাদের শোরুমে অনেকে পৌঁছে দিয়ে গেছে বিভিন্ন রকমের মিষ্টির প্যাকেট।সেগুলোই এক জায়গায় করে ছবি তুলে রেখেছি।

নববর্ষের আগের দিন খুব প্রিয় একজন এর কাছে আবদার করেছিলাম মিষ্টি খাব বলে । সে আমাকে মিষ্টি খাওয়ার টাকাও দিল, কিন্তু নববর্ষের দিন এত মিষ্টি বাড়িতে, সেদিন আর কিনিনি তাই ।এই নিয়ে মনটা খারাপ লাগছিল, আর মনে মনে প্ল্যান করে রেখেছিলাম এই সমস্ত মিষ্টি গুলো শেষ হলে তবে ওই টাকা দিয়ে আবার মিষ্টি কিনব। সেই কাজ সম্পূর্ণও করতে পেরেছি।

যাইহোক পহেলা বৈশাখের দিন সকালটা ঠিক এই ভাবেই কাটলো। পরবর্তী পোস্টে সন্ধ্যের মুহূর্তটুকু শেয়ার করব।

Sort:  
Loading...
Loading...
 2 months ago 

পহেলা বৈশাখ কেটে গেছে বেশ কিছুদিন হয়ে গেল।। যদিও নববর্ষের দিন সকালবেলায় গিয়ে শুভ নববর্ষ বাড়ির সকলকে জানিয়ে এসেছিলাম। নববর্ষের দিন সকালবেলাটা সকলেরই এই ভাবেই কেটে গিয়েছে। তবে এটা ঠিক কথা বলেছ ছোটবেলাকার মতো নববর্ষ এখন আমরা কাটাতে পারি না। ছোটবেলার কোন স্মৃতির সাথেই এখনকার কোন স্মৃতি মেলে না। হয়তো ছোটবেলার হালখাতার বিষয়টা বেশ ভালো ছিল। মনে হচ্ছে হালখাতা করে বেশ অনেক মিষ্টি পেয়েছো কিন্তু বৌদিকে তো একটা মিষ্টি খাওয়ালে না।