শেষ আশ্রয় বৃদ্ধাশ্রম
"বাস্তবতার স্বীকার" কথাটি আপাতদৃষ্টিতে একটি সাধারণ কথা মনে হলেও এর ভিতরে লুকিয়ে থাকে হাজারো মানুষের অন্তর্নিহিত আর্তনাদ।যে মানুষটা ফুলের মতো বড় হয়েছে সেই মানুষটাই একসময় কাঠের মতো কঠোর হয়ে যায়।যে মানুষটি একসময়ে বিশেষ দিনে নতুনত্বের ছোয়ায় মেতে থাকতো সেই কিনা এখন বছরের পর বছর পুরোনোটা দিয়েই চালিয়ে নেয়।
যে মানুষটি সারাদিন ঘুরাফেরা আর আড্ডায় মাতোয়ারা হয়ে থাকতো সেই মানুষটি এখন সারাদিন কর্মস্থলে থেকে রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরে।সারাদিন বন্ধুবর্গ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ছিলো যার নেশা সে এখন আর নিজেকেও তেমন সময় দিতে পারে না।কিভাবে হলো এসব?
একজন ব্যাক্তি ঠিক ততদিনেই তাদের মনস্কামনা অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করতে পারে যতদিন তাদের পিতামাতার অগোচরে লালিত হয়ে থাকে।আমাদের বাবা-মা কখনোই আমাদের বুঝতে দেন না তাদের রক্ত পানি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর সন্ধ্যায় বাবা যখন ঘরে ফিরেন ঠিক তখন আমরা তার মুখে মিথ্যা হাসি দেখতে পাই।
তার পুড়ে যাওয়া মুখটা যে কখনোই হাসির সাথে খাপ খায় না।তার ভিজে যাওয়া শার্টটি বলে দেয় সারাদিন কি ঝড় যায় তার দেহের উপর দিয়ে।এতোকিছুর পরের মায়ের আকুতি মিনতি ছেলেটাকে নিয়ে।সহজসরল মানুষটি সব সময় আদরের ছেলেটাকে নিয়ে ভাবে।ছেলেটিকে যে মানুষের মতো মানুষ বানাতে হবে।বাইরে গেলে পথের পানে চেয়ে চেয়ে দিন কাটিয়ে দেয়।খোকা কখন ফিরবে ঘরে?
এক সময় ছেলেটি বড় হয়ে যায়।বাবা মায়ের ঘামের বিনিময়ে শিক্ষিত হয়ে উঠে।চাকুরী প্রাপ্ত হয়।লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা কামানো শুরু করে।এরপর কোনো এক রূপবতী রমনীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।তাদেরও কোল ঘেষে ফুটফুটে সন্তান আসে।এরপর ধিরে ধিরে সেই ছেলেটি মায়ের থেকে প্রিয় রমনীকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে।বাসায় ব্যবহৃত সবকিছু যে তাদের জন্য নয়।কোনো কিছু তৈরি করতে আর বাবার অনুমতি লাগে না।যে বাবার ঘামের ঘন্ধ দিনের পর দিন পুরোনো শার্টটিতে লেগেই থাকতো,সেই বাবার মতামত যে আর কোনোকিছুতে লাগে না।
আহারে দূর্ভাগা,সেকালে শান্তি পেলো না আর একালেও শান্তি নেই।এভাবেই চলতে চলতে সকলের মনমালিন্য হতে হতে সবশেষে বাবা-মায়ের ভালোর কথা চিন্তা করেই আদরের সন্তান তাদেরকে রেখে আসে বিদ্যাশ্রম নামের হাজতে ।বাকি জীবন এভাবেই শুখে থাকতে হয় হাজারো অসহায় অভাগা মা-বাবাকে। কিন্তু দিন তো এখানেই শেষ নয়।তার ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চাগুলো যে একদিন তার মতো বড় হবে।আর হ্যাঁ, একটা কথা চিরন্তন সত্য' প্রকৃতি সবকিছুর বিনিময় ফিরিয়ে দেয়।
সমাজে কিছু শিক্ষিত পশুর বিচরণ সেকালেও ছিলো আর একালেও আছে।ভাবতেই কষ্ট লাগে যে মানুষ কিভাবে আরেকজন মানুষের করা কষ্ট, অসহায়ত্ব, আত্মত্যাগ এতো তাড়াতাড়ি ভূলে যায়।আমি যদি উচ্চ পদস্থ কোনো ব্যক্তি হতাম তাহলে এসব পশুদের ধরে ধরে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করতাম।সৃষ্টির সেরা জীব নাকি মানবজাতি।আমি জানিনা আমরা কতোটুকু সেরা।তবে আমি নিজেও মানুষ হিসেবে খুব লজ্জা বোধ করি।আসুন আমরা সকলে সোচ্চার হই এবং এধরনের কর্মকান্ডের বিরোধিতা করি। আর ভবিষ্যত প্রজন্মকে এসব বিষয়ে আগে থেকে সচেতন করি।
সত্যি আপনার পোষ্টটি পড়তে পড়তে নিজের চোখের কোণে কখন যে জল এসে গেছে বুঝতেই পারিনি। অনেকদিন পর এরকম বাস্তবধর্মী একটি পোস্ট পড়ার সুযোগ হলো। বর্তমান সমাজে এরকম অনেক ছেলেমেয়ে কে দেখা যায়। বাবা মায়েরা তাদেরকে অনেক কষ্ট করে বড় করে তোলে। একদিন সেই মা বাবাকেই তারা বিদ্যাশ্রম নামক স্থানটিতে রেখে আসে। আমাদের প্রত্যেকেরই একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না। আমাদেরও একদিন সন্তান হবে, আমরাও হয়তো এই দিনটির সম্মুখীন হতে পারি।
বাস্তব জিনিস নিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।
নিস্বন্দেহে প্রসংসাকারীরা স্বচ্চ মনের অধিকারী।সবাই মানুষের প্রসংশা করতে আগ্রহী নয়।আপনি আমার অনেক প্রসংশা করায় আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।আসলে আমি চেষ্টা করেছি স্পেশাল কোনো টপিক ব্যাখ্যা করতে।
আসলে যে বাবা মা আমাদেরকে তারা না খেয়ে না দিয়ে আমাদেরকে খাওয়া হয়েছে, সেই বাবা মাকে আমরা যখন তাদের বয়সে যাই এবং তাদের চলাফেরার কোন গতি থাকে না তখন আমরা তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসি। আমরা একটা বড় ভাবি না যখন আমরা চালকরা করতে পারতাম না ,তখনই এই বাবা-মা আমাদেরকে চলাফেরা করা কি আছে ভালো পথে চলার শিখিয়েছে সেই বাবা মাকে কিভাবে আমরা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে পারি।
ভাই মানবজাতি বড়ই আজব।আমরা সেরা জীব আবার আমরাই নিকৃষ্ট জীব।তবে সবাই নিজ নিজ যায়গা থেকে ঠিক থাকার চেষ্টা করতে হবে।তাহলেই হয়তো আমরা কিছুটা বের হয়ে আসতে পারবো এমন অবস্থা থেকে।ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া
বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আপনি খুব সুন্দর ও যুগোপযোগী লেখা শেয়ার করেছেন। পিতা মাতা কতই না কষ্ট করে তার সন্তানকে বড় করতে। নিজের ইচ্ছাগুলো অপূর্ণ রেখে সন্তানের আবদার মেটানো বাবা মায়ের শেষ স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রম।
এটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন। সত্যি খুব ভালো লাগলো আপনার চিন্তা ভাবনা দেখে। ভালো থাকবেন আর এমনই সুন্দর সুন্দর লেখা শেয়ার করবেন।
আমি এইধরনের লিখা লিখতে খুবই ইঞ্জয় করি ভাই।আসলে বাস্তবতা বড়ই কঠিন।সবার জীবনেই খারাপ বাস্তবতার অভিজ্ঞতা আছে।আর তাই তো মানুষ এই ধরনের লিখা পড়তে পছন্দ করে থাকে।পিতামাতার সেবা যারা করতে পারবেনা তারা যেনো পরপারে শান্তি আশা করে না। সে যতই ধর্মভীরু হোক না কেনো।
আপনার লেখাগুলো পড়তে আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে অনেক পছন্দ করি। সত্যিই আপনি খুব ভালো লেখেন। বাস্তবতা সত্যিই অনেক কঠিন। বাবা মা সারাজীবন কষ্ট করে তার সন্তানকে সুখি করার জন্য। আর সেই বাবা মায়ের শেষ পরিনতি যদি হয় বৃদ্ধাশ্রম তাহলে এর মতো দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আমাদের সকলেরই উচিত মা বাবাকে ভালোবাসা উচিত। ধন্যবাদ আপনাকে আমার মতামতের উওর দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন।
বাবা মায়ের পরিশ্রম আমরা বুঝতে পারি না, একজন বাবা তার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য তার জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে থাকে, আমরা যেমন এখন বন্ধুদের সাথে মিশে থাকি, আমার বাবাও কিন্তু একটা সময় তার বন্ধুদের সাথে মিশে থাকতো কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার সব অভ্যাস পরিবর্তন করতে হয়েছে কারণ সংসার জীবনে এসে নিজের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে ছেলে মেয়ে মানুষ করতে গিয়ে তার সব সুখ তার সব স্বপ্ন জীবন থেকে ফেলে দিতে হয়েছে।
কিছু কিছু ছেলে-মেয়েদের জন্য আজ আমাদের সমাজে অনেক বদনাম বাবা-মা অনেক ত্যাগ স্বীকার করার পরেও নিজের স্বার্থের জন্য বাবা-মাকে ধরে আসা হয় বৃদ্ধাশ্রম আসলে আমরা সব কিছু ভুলে গিয়েছি বাবা-মা আমাদের জন্য কি করেছে।
আসলেই ঠিক বলেছেন।কিছুসংখ্যক ছেলে-মেয়ের জন্যই আজকে সবার কাছে এই বদনামটা চলে গেছে।আপনার বাবাও যেমন অনেক কষ্ট করে আমার বাবাও ঠিক একইভাবে কষ্ট করে।পৃথিবীর সকল বাবাই পরিবারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলেও সকল ছেলে-মেয়ে বাবার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে না।ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান মন্তব্যের জন্য।
এখনকার বেশিরভাগ মানুষই মা-বাবার পরিশ্রমের ফল দিতে পারে না। আমাদের ছোট থেকে মা বাবা কত কষ্ট করে আমাদের বড়ো করে তোলে। নিজে না খাইয়ে আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেয়। আবার নিজের সামর্থের বাইরে গিয়েও আমাদের লেখাপড়া শেখায়। কিন্তু শেষ বয়সে এসে বেশিরভাগ মানুষই সেই পরিশ্রমের মর্যাদা দিতে পারেনা। বাবা-মা তাদের সবটুকু রোজগারের পয়সা দিয়ে আমাদের মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা শেষ বয়সে এসে বুঝতে পারে যে তারা তাদের সন্তানকে ঠিকমতো মানুষই করতে পারেনি। বাবা-মা যখন বয়স হয় তখন বেশিরভাগ সন্তানে এখন মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। আপনার পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো।
খুব ভালো লাগলো যে আপনি আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন।আসলে পিতামাতার ঋণ আমরা আমাদের রক্ত বিক্রি করেও যে শোধ করতে পারবো না তা হয়তো অনেকের জানা নেই।যারা পিতামাতাকে অবহেলা কিরে তারা নিশ্চয়ই কোনো না কোনো দিন এর প্রতিফলন পাবেই পাবে।সেটা নিজের সন্তানকে দিয়ে।