ভারতীয় রন্ধন শিল্প।।২৬ মে ২০২৫
হ্যালো বন্ধুরা,
ভারতীয় রন্ধনশিল্পের ইতিহাস মূলত সভ্যতার ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই খাদ্যশৈলীর চিহ্ন পাওয়া যায়—তাঁরা যব, গম, মটর, খেজুর ও দুধ ব্যবহার করতেন এবং মাটির পাত্রে রান্না করতেন।এরপর বৈদিক যুগে খাদ্য ছিল আচার-অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেখানে ঘৃত, মধু, দুধ, ফলমূল, চাল ও নানা ধরণের লতা-পাতা ব্যবহৃত হতো।তখনকার রান্না ছিল মূলত উপকরণ নির্ভর এবং ঋতু ও ধর্মীয় রীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
মৌর্য ও গুপ্ত যুগে রন্ধনশৈলীতে আয়ুর্বেদের প্রভাব দেখা যায়—খাবারকে শুধু রসনার জন্য নয়,স্বাস্থ্যরক্ষার উপায় হিসেবেও দেখা হতো।স্পাইস বা মসলা ব্যবহারে ভারতীয়রা তখন থেকেই পারদর্শী ছিল।মধ্যযুগে আরব ও পারস্য থেকে আগত মুসলিম শাসকরা ভারতীয় রান্নায় আনেন মাংসভিত্তিক রেসিপি, দুধ ও বাদাম ব্যবহারে তৈরি রাজকীয় পদ, যেমন বিরিয়ানি, কাবাব, কোরমা, শিরমাল ইত্যাদি।এই সময়ে দিল্লি, লক্ষ্ণৌ ও হায়দরাবাদে মুঘল ও নবাবি খাবার বিকশিত হয়।
দক্ষিণ ভারতে তামিল, তেলেগু, কন্নড় ও মালায়ালি সংস্কৃতির প্রভাবে গড়ে ওঠে ভিন্নতর এক রান্নাশৈলী, যেখানে ভাত, নারকেল, মসুর ডাল, ইমলি ও কারি পাতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।এখানে ইডলি, ডোসা, সাম্বার, আপ্পাম ইত্যাদি পদ তৈরি হয় নানা পদ্ধতিতে যেমন ভাপানো, প্যানে ভাজা বা চূর্ণ করে গাঁজন করা।
উত্তর ভারতে গম ও দুগ্ধজাত খাদ্যের আধিক্য দেখা যায় যেখানে রুটি, পরোটা, দই, ঘি ও ছানার ব্যবহার সাধারণ।কাশ্মীরের রাজবোগ ‘ওয়াজওয়ান’ এক অনন্য রন্ধনশৈলীর নিদর্শন।পাঞ্জাবি রান্না—যেমন বাটার চিকেন, দাল মাখানি, ছোলেভাটুরে—বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।
পূর্ব ভারতের রান্না—বিশেষ করে বাংলা, অসমিয়া ও ওড়িয়া খাবার—মাছ, সরষে, টক ও মিষ্টির ওপর ভিত্তি করে তৈরি।বাঙালি রসনার জগতে যেমন ইলিশ বা চিংড়ি বিশিষ্ট, তেমনি রসগোল্লা বা সন্দেশের মতো মিষ্টান্ন শিল্পেরও জন্ম এখানে।ওড়িয়ার ‘মহাপ্রসাদ’ বা ভোগ, জগন্নাথ মন্দিরের ঐতিহ্যবাহী রান্না, হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতিকে ধারণ করে।
ব্রিটিশ শাসনকালে ইউরোপীয় খাদ্যাভ্যাস কিছুটা প্রভাব ফেললেও ভারতীয় রান্নার মূল স্বাদ ও গন্ধ অটুট ছিল।স্বাধীনতার পর খাদ্যকে ঘিরে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য আরও প্রসার লাভ করে এবং ২০শ শতকের শেষভাগে ভারতীয় রেসিপি আন্তর্জাতিক রন্ধনজগতে প্রবেশ করে।আজ ‘ইন্ডিয়ান কারি’, ‘তন্দুরি চিকেন’, ‘বিরিয়ানি’ বিশ্বের বহু দেশে সুপরিচিত।
বর্তমানে ভারতীয় রন্ধনশিল্প আধুনিক প্রযুক্তি ও ফিউশন ধারার সঙ্গে মিলিয়ে এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, কুকিং শো, ইউটিউব চ্যানেল ও গ্লোবাল রেস্তোরাঁর মাধ্যমে ভারতীয় রান্নার পরম্পরা আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে—প্রাচীন ঐতিহ্য আর আধুনিক সংযোজনের এক অপূর্ব মেলবন্ধনে।
VOTE @bangla.witness as witness

OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Beauty of Creativity. Beauty in your mind.
Take it out and let it go.
Creativity and Hard working. Discord
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
ভারতের রন্ধনশৈলীর ইতিহাস কেবল স্বাদের নয়, বরং এটি এক ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের দীর্ঘ যাত্রাপথ। মৌর্য ও গুপ্ত যুগে আয়ুর্বেদের প্রভাব, মধ্যযুগে আরব-ফারসি সংমিশ্রণ, এবং বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতিনির্ভর রান্নার বৈচিত্র্য—সব মিলিয়ে ভারতীয় খাবার এক বিস্ময়কর গাঁথা। প্রতিটি পদ যেন একেকটি গল্প, একেকটি সভ্যতার ছোঁয়া।