পুরানো ধান-এর ঘ্রাণ।
মরিয়ম বেগমকে বছর কুড়ি আগে যেমন দেখা যেতো, তেমনই দেখা যায় আজও।
উঠানে একটা কুলা হাতে নিয়ে ধানের বীজ বেছে যাচ্ছেন।
“রাখো তো,
অন্যেরা আছে তো এই কাজের জন্য!
অনেকদিন তো কাজ করলে, এখন আরাম করো।
এই নিয়ে অনেকে অনেকবার বলেছে তাকে।
কিন্তু তার ঐ এক কথা, বসে থাকতে কি ভালো লাগে?
বরং ধান বাছাতেই আনন্দ।
হ্যাঁ, বয়সের কারণে আজকাল চোখে একটু ঝাপসা দেখেন, সময় লাগে বাছতে, সেটাও তিনি টের পান।
কিন্তু তাই বলে বসে থাকবেন নাকি?
সেই ছোট্টবেলায় কৃষক বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিলেন। এখনকার মত পাকা ঘর-দুয়ার তখন হয়ে ওঠেনি।
সে সময় শাশুড়ি আর জা-এর সাথে এই ধান বাছাই, মাড়াই করেই তো অনেকটা দিন কাটতো মরিয়ম বেগমের।
এই বীজ-ই ঘরে আনবে সোনা।
যত ভালো বীজ, তত ভালো ধান।
কুলার ওপরে ছড়ানো এই দানাগুলো হলো লক্ষী!
এর সাথে কি অবহেলা করলে চলে?
আজ না-হয় সব পাল্টে গেছে, শাশুড়ি জা আর নেই।
নাতি-নাতনিও বড় হয়েছে মরিয়ম বেগমের, শহরে পড়াশোনা করে।
ঘরবাড়িতেও এসেছে পরিবর্তন।
উঠানটাতে আর দুপুরবেলায় বাড়ির দুই-তিনজন মহিলাকে তেলের বোতল হাতে বসে থাকতে দেখা যায় না।
বদলে যাওয়াই নিয়ম।
এটা মরিয়ম জানেন।
তবু নিজের জীবনের সোনালি অতীতের ঘ্রাণ যে ধানের বীজে, তা থেকে কি দূরে থাকা যায়?
আমার লেখা ভালো লাগলে আমাকে আপভোট দিয়ে সাহায্য করুন।
আপনার বন্ধু হৃদয় পালয়ান।