অপ্রত্যাশিত সাফল্যের অনুভুতি।
সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি,সুস্থ আছি।
জীবনে সফল হওয়ার প্রথম শর্তই হল নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা। কিন্তু লক্ষ্য ঠিক থাকা সত্ত্বেও এমন অনেকেই আছেন যারা জীবনে সফল হওয়ার দৌড়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েন। কারণ শুধুমাত্র লক্ষ্য ঠিক করা বা কোনো অবস্থানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাই যথেষ্ট নয়। সে স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় মনোভাব কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি আর উৎসাহ থাকলেও সামান্য ভুলের জন্য আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনা।তাই যখন যে কাজগুলো করা দরকার আমরা সেই কাজগুলো সময় মতো নিয়ম করে করলেই খুব সহজেই আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
আপনারা সকলেই জানেন আমার বড় মেয়ে মোটামুটি ভালোই গান করে। যা আপনারা সকলেই অনেক পছন্দ করেন এবং সবসময়ই ভালো ভালো মন্তব্যের মাধ্যমে ওকে সাপোর্ট করেন এবং উৎসাহ দিয়ে থাকেন।আমি ওকে বরাবরই একটা কথা বলে থাকি যে খুব বেশি গান করতে হবে না হাতেগোনা কয়েকটা গান সুন্দর মতো শিখলেই যেকোনো অনুষ্ঠানে গাইতে পারবে।ও নিত্য নতুন গান তুলতে খুবই পছন্দ করে আর তখন হয় কি আগের গান গুলো পিছনে পড়ে যায় সেগুলো আর প্রাকটিস করা হয় না তখন সেগুলো মাঝে মাঝে ভুলে যায়।আর এই জিনিস টা আমি একদম পছন্দ করি না।
প্রতিদিন সকাল ৮টায় কোচিং এ যায় আর ১০টায় বাসায় ফিরে আসে।প্রতিদিনের মতো গতকালও সময়মতো কোচিং এ যায় এবং ১০টায় খুব অস্থির হয়ে বাসায় ফিরে আসে।ওর অস্থিরতা দেখে আমি বেশ ঘাবড়ে গেছিলাম যে রাস্তায় আবার কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলো কি-না।পরে দেখি হাতে ফরম আমাকে দেখিয়ে বললো এখনি উপজেলায় যেতে হবে আজকে শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতা আছে আমি শুনেই তো বললাম এটা আবার কেমন কথা কোনো প্রস্তুতি ছাড়া কি করে সম্ভব উপজেলায় যাওয়া?তখন ও বললো যে আমাকে যেতেই হবে স্যারের সাথে রাস্তায় দেখা হলো স্যার আমাকে ফরম হাতে দিয়ে বললো এটা পূরণ করে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ উপজেলায় চলে আসো।আসলে স্যারের কোনো দোষ না প্রায় দুইমাস ধরে স্কুল বন্ধ আছে তাই সব ছাত্রীদের জানাতে পারছে না যার সাথে দেখা হচ্ছে বা পরিচিত তাদেরকেই জানাতে পেরেছে।
কি আর করা স্কুলের আদেশ বলে কথা।আমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হতে লাগলাম আর ও হারমনিয়াম টা নিয়ে গান তুলতে লাগলো।হঠাৎ করেই আমি লক্ষ্য করলাম ও গান ভুল গাইছে তখন আমি ওকে বললাম ঠিকমতো গান করো ভুল হচ্ছে।কিন্তু ও বার-বার ভুলই গাইছে তারপর আমি ওকে বললাম তোমার উপজেলায় যেতে হবে না তার কারন এরকম ভুল ওখানে করলে সবাই হাসবে আর আমি তা দেখতে পারবো না। কেন জানি আমার খুব রাগ হলো এবং সত্যি সত্যিই জেদ ধরে বসলাম যে আমি যাবোই না।ও তো খুবই রিকোয়েস্ট করতে লাগলো মা চলো আমি ওখানে ভুল করবো না কিন্তু তারপরও আমার রাগ কমলো না।আমি বললাম তোমাকে রিকশা ভাড়া দিচ্ছি তুমি একা যাও আমি তোমার সাথে যাবো না।
ও কেনো জানি সাহস নিয়ে বললো ঠিক আছে আমি একাই যাবো আর সত্যি সত্যি তাই করলো।আমি বেশ কিছুক্ষণ মন খারাপ করে থাকলাম।তারপর আর মন মানলো না তাড়াতাড়ি রান্না করে ওর জন্য খাবার নিয়ে উপজেলায় চলে গেলাম।ভগবানের কি কাজ আমি যে মুহুর্তে রিকশা থেকে নেমে বিডি হলে ঢুকতে যাবো তখন দেখি ও গান গাইছে আর মাঝে একটু তাল কেটে গেছে, এটা তো আমি শুনে ফেলছি শোনার সাথে সাথে তো আমার রাগ আরও দ্বিগুণ হয়ে গেলো।কি করবো বুঝতে পারছি না।অনেক ভেবে চিন্তে ভিতরে গেলাম এবং দর্শক সারির পিছনে একটা সিটে বসলাম।ও দেখি ওর ছোটমা কাকু আর ওর বোনের সাথে বসে আছে। আমার দেবরের মেয়েও গান গাইতে আসছে বাড়ি থেকে।আমি চুপচাপ পিছনে বসে আছি অনেকক্ষণ পর পিছনে তাকিয়ে দেখে আমি বসে আছি তখন আমার কাছে এসে বললো মা আমি ঠিকঠাক গাইছিলাম তবলা বাদক ভুল করে বাজিয়েছে তাই তালে কেটে গেছে আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে আছি।
পরে আবার লোক সংগীতের জন্য খ গ্রুপ কে ডাকে ও যেতে চাইছিলো না তখন ওর বান্ধবী মৈত্রী ওকে জোর করে স্টেজে নিয়ে গেছে।যাইহোক গান মোটামুটি ভালোই করলো তারপর একে একে সবাই গান করলো, নাচ হলো অভিনয় হলো।ভাবছিলাম সবকিছু শেষ হলে হয়তো রেজাল্ট ঘোষণা করবে,কিন্তু তা করলো না।বিচারকরা বললেন যে আগামীকাল শিক্ষা অফিস থেকে রেজাল্ট জেনে নিতে।তাই আর দেরি না করে বাসায় চলে আসলাম।মনটা ভীষণ খারাপ তাই শরীর টাও খারাপ লাগছিলো।তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নাশতা করে ভাবলাম উপজেলা থেকে ঘুরে আসি তো দেখি কি রেজাল্ট করলো জেনে আসি।মন থেকে মনে হয়েছে ভালো কিছু হবে না তারপরও রেজাল্ট শুনতে গেলাম মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে।ওখানে গিয়ে একজন কে জিজ্ঞেস করলাম যে গতকাল শিক্ষা সপ্তাহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হলো তার রেজাল্ট কোথায় দেওয়া হবে?উনি বললেন যে রেজাল্ট কার্ড এখনো তৈরি হয়নি,হলে স্কুলে জানিয়ে দেওয়া হবে।এ কথা শোনার পর আমি বেড়িয়ে আসতে লাগছিলাম তখন উনি আমাকে ডাকলেন এবং আমার মেয়ের নাম জিজ্ঞেস করলেন।তখন আমি নাম শ্রেণি বললাম উনি একটা ফাইল খুলে খুঁজে খুঁজে আমার মেয়ের নাম বের করলেন এবং বললেন যে ও দেশাত্মবোধক গানে ১ম, লোক সংগীতে ১ম আর নজরুল সংগীতে ২য় হয়েছে।এই কথা শুনে তো আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না।তারপর নিজের চোখে যখন দেখলাম যে বর্ষা চাকী বি,এম স্কুল তখন বিশ্বাস হলো।
রেজাল্ট দেখার পর কি যে খুশি হয়েছি সেই মুহূর্ত টা বলে বোঝাতে পারবো না।আমার মেয়ের এই সাফল্য আমার কাছে একদম অপ্রত্যাশিত একটি সাফল্য।মাঝে মাঝে এরকম অপ্রত্যাশিত কিছু প্রাপ্তি ঘটলে সত্যিই অনেক ভালো লাগে।এখন ২০ তারিখে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতা হবে তার প্রস্তুতি নিতে হবে এই বিষয় টা মেয়েকে বোঝালাম।দুই একদিনের মধ্যেই হয়তো সার্টিফিকেট স্কুলে চলে আসবে তখন সেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
আমার মেয়ের জন্য সবাই আশীর্বাদ,দোয়া করবেন যাতে করে ও আগামীতে আরও অনেক ভালো কিছু করতে পারে।সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।
OR
দিদি আপনার মেয়ের জন্য দোয়া করি জীবনে অনেক বড় হোক,আর ওর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। সত্যি মাঝে মাঝে এমন অপ্রত্যাশিত সাফল্য দেখলে অনেক ভালো লাগে। যাইহোক, দুই জায়গায় ১ ম হয়েছে আর এক জায়গায় ২য় হয়েছে জেনে অনেক ভালো লাগল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদি সাফল্য আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপু সবসময়ই আপনাদের দোয়া আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।চাওয়ার চেয়ে পাওয়া যখন বেশি হয় তখন ভালোলাগা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ধন্যবাদ আপু।
সত্যিই বাচ্চাদের ঠিকমতো গড়ে তুলতে পারলে ওরা এগিয়ে যেতে পারে। আপনার সন্তানের প্রথম স্থান দখল করার বিষয়টি আগেই জেনেছি ফেসবুকের মাধ্যমে। যাক পুরো বিষয়টি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। দোয়া করছি ও এভাবেই এগিয়ে যাক।
জ্বি ভাইয়া বাচ্চাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিলে ওরা খুব সহজেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।হ্যাঁ আমি এই খুশি ফেসবুকে শেয়ার করেছি এবং আপনিও অনেক ভালো মন্তব্য করেছেন।সবসময় দোয়া করবেন ভাইয়া।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
স্বপ্ন দেখতে আমরা সবাই পছন্দ করি আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে অবশ্যই আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়।।
আর পরিশ্রম করলে সুফল অবশ্যই মিলবে।।
আপনার মেয়ের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া স্বপ্ন দেখতে সবাই ভালোবাসি আর সেই স্বপ্ন পূরণ হলে জীবনের স্বার্থকতা আসে।সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
পুরোটা পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু।মেয়ের সাফল্য অর্জন সত্যি মায়ের জন্য অনেক আনন্দের।আর যদি অপ্রত্যাশিত হয় তবে তো আনন্দ হয়ে যায় দ্বিগুণ। আপনার মেয়ের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
জ্বি সন্তানের সাফল্য মানে মায়ের জন্য অনেক আনন্দ ও গর্বের বিষয়।যা ভাবিনি তার চেয়ে বেশি পেয়েছি তাই ভালোলাগাও অনেক বেশি ছিলো আপু।ধন্যবাদ আপু।
আসলে যে কোন কিছুতে প্র্যাকটিস করলে তা খুবই ভালো হয়। যেহেতু আপনার মেয়ে পুরনো গান গুলো প্র্যাকটিস করেনি তাই ও কিছুটা ভুলে গিয়েছিল। আপনার এটা দেখে ভীষণ রাগ হচ্ছিল এবং স্টেজে গিয়ে ও দেখলেন সে ভুল তাল মেলাচ্ছে যার কারণে আপনার রাগ আরো দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু যখন পরের দিন রেজাল্ট দেখার জন্য গিয়েছিলেন তখন দেখলেন দেশাত্মবোধক গানে প্রথম, লোকসঙ্গীতে প্রথম আর নজরুল সংগীতে দ্বিতীয় হয়েছে এটা দেখে আপনি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারতে ছিলেন না। আসলে দোয়া করি আপনার মেয়ে যেন বড় হয়ে অনেক কিছুই করতে পারে এবং সে যেন সফলতা অর্জন করে সব সময়। দোয়া এবং ভালোবাসা রইলো তার জন্য।
হ্যাঁ আপু আমি ওকে সবসময়ই বলি কিছু কিছু গান রেগুলার প্রাকটিস করতে তাহলে হঠাৎ কোনো অনুষ্ঠান হলে যাতে সুন্দর মতো গাইতে পারে। কিন্তু ও মাঝে মাঝে করতে চায় না এজন্য আমার খুব রাগ হয়েছিলো।তারপর তো ফলাফল দেখে খুবই খুশি হয়েছি আপু।আপনাদের সবার দোয়া ভালোবাসা থাকলে সত্যিই আমার মেয়ের অনেক ভালো কিছু হবে এটা আমার বিশ্বাস আপু।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
আপনার মেয়ের এরকম অপ্রত্যাশিত সাফল্য দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে আমার কাছে। আপনার মেয়ে প্রত্যেকটা প্রতিযোগিতায় প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছে এটা দেখে ভীষণ ভালো লাগলো আমার কাছে। প্রথমে তো আপনি একটু রাগ করে ছিলেন। কিন্তু পরে যখন দেখলেন আপনার মেয়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছেন এটা দেখে আপনার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছিল বুঝতে পারছি। আপনার মেয়ে যেন এভাবে সবসময় সফলতা অর্জন করে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যায় সেটাই কামনা করি। আপনার মেয়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা রইল।
জ্বি ভাইয়া প্রথমে আমি খুবই রেগে গেছিলাম এবং সারাদিন খুবই মন খারাপ করে ছিলাম।কিন্তু পরেরদিন ফলাফল দেখে এতটাই খুশি হয়েছি যা বলে বোঝাতে পারবো না।সবসময়ই দোয়া রাখবেন ভাইয়া।সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।
বড়দি,, একদম মন থেকে ভালো লাগার কাজ করছে লেখাটা পড়ার পর। হয়তো তাদের প্রপার গাইডলাইন্স দিয়েছেন এবং যেখানে গেলে সর্বোচ্চ শিক্ষা টা পাবে, সেই দিকেই নিয়ে গেছেন, তাই জন্যই হয়তো আজ এই সফলতা। বাচ্চাদের এই ধরনের সৃজনশীলতা আমি সব সময় অনেক বেশি পছন্দ করি। আমার বিশ্বাস জেলা পর্যায়ে অনেক ভালো একটা সাফল্য বয়ে নিয়ে আসবে এবং আপনার মুখের হাসিটা ধরে রাখবে। ভগবান সব সময় আপনাদের পাশে থাকুন 🙏🙏
ছোড়দা আমারও আপনার মতো হয় হয় যদি অন্যের বাচ্চার ভালো কিছু শুনি খুশিতে মনটা ভরে যায়।একজন মা হিসেবে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাই যাতে ওরা ভালো কিছু করে।আপনার মুখের কথা যেনো সত্যিই হয় ছোড়দা।ভালো কিছু হলে আমি সত্যিই অনেক খুশি হবো কারন আমার সমস্ত খুশি আনন্দ ওদেরকে ঘিরেই।ভগবান ভরসা।অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো ছোড়দা।🙏🙏