সাম্প্রতিক সময়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

in #travel7 years ago

received_291794371342802.jpeg

এই মাসের ১২ তারিখে কয়েকজন বন্ধু মিলে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। দ্বীপটিতে এটি আমার দ্বিতীয়বারের মতো ভ্রমণ। প্রথমবারের অভিজ্ঞতার তুলনায় এবার এখানে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করলাম। আগ্রহীদের অবগতির স্বার্থে খরচসহ এই ট্যুরের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করছি।
ঢাকা থেকে টেকনাফ রুটে বেশকিছু ভালো বাস আছে। আমরা গিয়েছি শ্যামলীতে। সার্ভিস মোটামুটি। এই রুটে সব ননএসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়ায় ভিন্নতা রয়েছে। বাস টেকনাফে শিপঘাটের একেবারে কাছে এনে নামিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে, রাত সাড়ে আটটার আগের বাসে উঠে পড়তে। কোনক্রমে বাস দেরী করে টেকনাফ পৌছালে শিপ মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমরা গিয়েছিলাম কেয়ারি সিন্দাবাদ শিপে করে। এই মুহূর্তে চলাচল করছে কেয়ারি সিন্দাবাদ (ননএসি), এলসিটি কুতুবদিয়া (ননএসি), কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন (এসি) ও গ্রিন লাইন (এসি)। ননএসি শিপের মেইন ডেকের ভাড়া ৫৫০ টাকা এবং ওপেন ডেকের ভাড়া ৭০০ টাকা করে। এসি শিপের ভাড়া ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকার মধ্যে। এবার যথেষ্ঠ সংখ্যক শিপ ছাড়ে নি বলে শিপের টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে।
অনেককে দেখলাম, সিট পান নি বলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে যাচ্ছেন। ব্যপারটা খুব কষ্টকর না হলেও বয়স্কদের জন্য খানিকটা পরিশ্রমের। তবে শুনতে পেলাম, দু’একদিনের মধ্যে বে ক্রুজ এবং ফারজান ক্রুজ নামের দুটি শিপ চলাচল করতে শুরু করবে।
শিপ টেকনাফ থেকে ছাড়ে সকাল সাড়ে নয়টায়, সেন্টমার্টিনে এসে পৌছায় বারোটায়। শিপঘাটে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। ঘাটের একটু সামনে সারি সারি ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজেদের রিসোর্ট/হোটেল খুব বেশী দূরে না হলে হেঁটে যাওয়া-ই ভালো। কেননা, সবগুলো শিপ কাছাকাছি সময়ে পৌছায় বলে তখন ভ্যান ভাড়া হয় খুবই বেশী। আমাদের রিসোর্টের নাম ছিলো Sea View Resort & Sports। ফেইসবুকে রিসোর্টটির রেটিং খুব ভালো দেখে এর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। এর লোকেশন ছিল চমৎকার, বীচের খুব কাছে।
কম খরচের ব্যপারটাকে মাথায় রেখে আমরা তাবুতে ছিলাম। দুটি তাবুতে মোট সাতজন মানুষ। প্রথমদিন নর্থ বীচে গোসল করে ও ভাড়ায় নেয়া সাইকেল চালিয়ে কাটিয়ে দিলাম। সেন্টমার্টিনের পানি কক্সবাজারের তুলনায় অনেক বেশী নীল। যারা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন, দুটি-ই ভ্রমণ করবেন বলে ভাবছেন, তাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে কক্সবাজার দিয়ে শুরু করতে। নইলে সেন্টমার্টিনকে দেখে আর কক্সবাজারকে ভালো লাগবে না।
দ্বিতীয় দিন সকালে ছেড়া দ্বীপ দেখতে গেলাম। ছেড়া দ্বীপে ইঞ্জিনের নৌকায় করে যেতে হয়। জনপ্রতি খরচ হয় ১৫০ টাকা। এছাড়া স্পিডবোট বা গামবোটেও যাওয়া যায়। এগুলো খানিকটা ব্যয়বহুল। যাওয়া-আসা ও ভ্রমণ মিলিয়ে ছেড়া দ্বীপের জন্য চার ঘণ্টার মতো সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। ছেড়া দ্বীপে এসে ধারালো প্রবালের ঘায়ে অনেকের পা কেটে যায়। এর জন্য ব্যান্ডেজ বা সমজাতীয় ব্যবস্থা সাথে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সমুদ্র ছাড়া সেন্টমার্টিনে দেখার মতো আর কিছু নেই। আমাদের একদিন থাকার কথা ছিল। কিন্তু সমুদ্রের মায়ায় পড়ে আমরা আরো একদিন বেশী থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ফলে শিপে আজ আমরা এসেছি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। গতকাল এলে নিজেদের সিটে বসে আসতে পারতাম। বলতে ভুলে গেছি, ফেরার শিপ দুপুর তিনটায় ছাড়ে। টেকনাফে এনে নামিয়ে দেয় সন্ধ্যা ছয়টায়। টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে বাসে ১৬০ টাকা নেয়।
সেন্টমার্টিনের খাবারকে বৈচিত্রময় বলা যায় কিনা জানি না। কিন্তু সামুদ্রিক মাছের জন্য এটি একেবারে আদর্শ একটি স্থান। হরেকরকম রেস্ট্যুরেন্টে তাজা মাছ কেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আপনি বললেই ভেজে এনে পাতে তুলে দেবে। ভাত-মাছ-ডাল-সবজি খেতে চাইলে ১৯০-২০০ টাকা বাজেট রাখতে হবে। মাছের মধ্যে থাকবে কোরাল/সুরমা/সুন্দরী/লইট্টা ইত্যাদি। রূপচাঁদা খেতে চাইলে ৩০০ টাকা পড়বে। তবে রূপচাঁদা খেতে না চাওয়া-ই ভালো। কালোচান্দা বা টেকচান্দা এনে হাজির করার করার সম্ভাবনা প্রচুর।
কিছু কথাঃ
*সেন্টমার্টিনের রিসোর্টগুলোতে এখন ঘন ঘন চুরি হচ্ছে। জিনিসপত্র সাবধানে রাখতে হবে।
*বীচের কাছাকাছি রিসোর্টে থাকার পরামর্শ থাকবে। সমুদ্রের সান্নিধ্য দিনটিকে রঙ্গিন করে তুলবে। এই ডিসেম্বর মাসের ১৫, ১৬, ২২-২৫, ৩১ তারিখে সেন্টমার্টিনের সকল রিসোর্টের ভাড়া হবে অত্যধিক বেশী। যাদের বাজেট কম, এই দিনগুলো তাদের এড়িয়ে চলতে হবে।
*বারবিকিউ চাইলে রেস্ট্যুরেন্ট থেকে ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। চিকেন বারবিকিউ ২০০-২২৫ টাকার মধ্যে এবং কোরালের বারবিকিউ ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
*সেন্টমার্টিনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুম বা স্যাটেলাইট টেলিভিশন পাবেন না।