বিশ্বকাপ ২০২২: কাতারের ব্যয় পরিকল্পনা...
শেষ হলো রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল। পরের আসরটি ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপটি হতে যাচ্ছে কাতারে। যার প্রস্তুতি আরো আগেই শুরু করে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশটি। এ জন্য রাশিয়া, ব্রাজিল বিশ্বকাপের চেয়ে প্রায় ১৫ গুন বেশি খরচ করছে দেশটি। সমুদ্র উপকূলে পড়ে থাকা শামুকের আদলের আল খোর স্টেডিয়াম। যার অবস্থান কাতারের রাজধানী দোহা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে। যেখানে ৪৩ হাজারের বেশি দর্শক একসাথে বসে ২০২২ সালে ফুটবল খেলা দেখতে পারবে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাতার যেসব স্টেডিয়াম তৈরি করছে তারই মধ্যে আল খোর স্টেডিয়াম একটি। বারোটি স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে। কোনটি সামুদ্রিক নৌকার, কোনটি ঝিনুক, কোনটি মরুদ্যানের নকশার আদলে। শুধু বাইরের চাকচিক্যই নয়। এসব স্টেডিয়ামের ভিতরেও থাকছে অভিনবত্ব। খেলোয়ার আর দর্শকদের জন্য আরামদায়ক আবহাওয়া নিশ্চিত করবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি। এজন্য ব্যবহার করা হবে সৌরশক্তি। বিশ্বকাপ আয়োজনে সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞটি চলে যেখানে খেলা হবে সেই ময়দানের প্রস্তুতি নিয়ে। এরই মধ্যে একটি স্টেডিয়ামের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। বাকিগুলোর কাজও চলছে জোরেসোরে। শুধু এই বাবদই কাতার ১ হাজার কোটি ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। স্টেডিয়ামকে ঘিরে গড়ে উঠছে এমনকি নতুন শহরও। নির্মাণ করা হচ্ছে শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্র, পার্কিং আর সড়ক ও আকাশ পথে যাতায়াত ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে খরচের অংকটা কপালে চোখ তুলবার মতো। ২০ হাজার কোটি ডলার বা ১৬ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করবে তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতার ২০২২ সালের বিশ্বকাপের জন্য। যেখানে ১৪০০' কোটি ডলার খরচ করেই সফল হয়েছিল রাশিয়া আর ব্রাজিল। গোটা এ দায়িত্বের আয়োজনে আছে দেশটির Supreme Committee for Delivery & Legacy। বিশাল এই যজ্ঞকে সফল করতে এরই মধ্যে তারা প্রচার কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া থেকেই। তবে আগামী চার বছরে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও তাদের মোকাবেলা করতে হবে। মুসলিম সংস্কৃতির দেশটি বিশ্বকাপের দর্শকদের আতিথিয়তায় কতটা উদার হতে পারবে, মধ্যপ্রাচ্যের গরম আবহাওয়া, বিশ্বের নানা দেশের মানুষের জন্য কতটা উপযুক্ত হবে এমন সব প্রশ্ন যেমন রয়েছে তেমনি বিতর্কও রয়েছে বিশ্বকাপ আয়োজনের টিকেট প্রাপ্তি আর নির্মাণের জড়িত শ্রমিকদের অধিকার নিয়েও। তবে সবকিছু পেছন ফেলে রাশিয়ার মতই সফল এক বিশ্বকাপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কাতারের। সেটা যত টাকা খরচ করেই হোক না কেন।
আগের আসরের সব উম্মাদনা আর আকর্ষণ ছাড়িয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি কাতারের। আয়োজকরাও বলছেন মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীর ধারণা বদলে দিতে চায় তারা। যদিও রীতি ভাঙ্গার শুরু কাতার দিয়েই। যেখানে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে শীতকালীন বিশ্বকাপ। ২০২২ সালে হতে পারে প্রথমবারের মতো ৪৮ দলের ফুটবল বিশ্বকাপ। ধর্মীয় কারণে জনগণ সম্মুখে অ্যালকোহল পানে নিষেধাজ্ঞাও থাকতে পারে যা হয়তো নিরুৎসাহিত করবে অনেক পশ্চিমা সমর্থকদের। অ্যালকোহল নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে তবে এটি রক্ষণশীলতা নয় বরং একটি দেশের সংস্কৃতি। অ্যালকোহল পানে নির্দিষ্ট স্থান রাখা হবে এবং তা বিক্রিও করা যাবে। তবে জনসম্মুখে নয়। সমানতালে চলছে ৮টি স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ। সব প্রস্তুতি ২০২২ সালের আগেই সম্পূর্ণ করতে চায় কাতার। বিশ্বকে যে স্বাগত জানাতে হবে।