হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। একদিন পুকুর পাহারা করতে গিয়ে বেশ কয়েকটা বিষয় সম্মুখীন হয়। সেই বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে চলেছি এই গল্পের মধ্যে। আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পুকুরে পাঙ্গাস মাছ যখন বড় হয়ে যায়, তখন রাতে বেশিরভাগ সময় পুকুরে ঘোরাঘুরি করতে হয় মাছ চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আমাদের পাশাপাশি চারপাশটা পুকুর থাকায় সন্ধ্যা রাতে অথবা দিনে ঘুম দিয়ে রাতের বেশিরভাগ সময় আমি একা পুকুর পাহারা জন্য মাঠে চলে যেতাম। বাড়ি থেকে বেশি দূর না হলেও মাঠে একা পুকুর পাহারা করা বেশ কঠিন। যদি সাহস না থাকে তার জন্য। আমার বেশি সাহস না থাকলে মোটামুটি রয়েছে যেটা দিয়ে নিজের পুকুরগুলো পাহারা করার সাধ্য আছে। রাতে একা থেকে কিভাবে প্রতিবছরে পুকুর পাহারা করে থাকি আর পুকুর পাহারা করতে গিয়ে অনেক কিছু সম্মুখীন হতে হয় আমার,ঠিক তারই একটা বিষয় আজকে আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করতে এসেছি। যে দিনের ঘটনা ঠিক সেই দিন আমি রাত ১১ টার সময় পুকুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। যেহেতু দিনে ঘুম দেওয়া হয়েছিল সারারাত জেগে থাকতে হবে তাই একটু দেরি করে বের হচ্ছি। রাত ৯ টার সময় খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম। তখন স্টিমিট এ কাজ করতাম না। এ বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না আমার। আমার জীবনে প্রথম নিজের টাকায় কেনা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ওয়ালটন GH6+ সেটটা আমার হাতে ছিল। তখন ওয়াইফাই লাইন ছিল না আমাদের তাই মোবাইলের মধ্যে কিছু নাটক সিনেমা পুরে রাখতাম রাতে বসে দেখতাম। যেদিন জোসনা রাত থাকতো সেদিন পুকুরে চলতে বেশ সুবিধা হত হাতের টস রীতিমতো আমি বন্ধ রাখি।

এদিকে পুকুর পাড়ে আলোর ব্যবস্থা করেছিলাম। যখন পুকুরে ঘোরাঘুরি করি মাঝেমধ্যে লাইটের আলো জ্বালিয়ে রাখি যদি অন্ধকার রাত হয়। চাঁদের আলোর দিন রাতের লাইটের আলো বন্ধ রাখি। পুকুরে উপস্থিত হলাম জিন্সের প্যান্ট পরে; পায়ে গামবুট; আর গেঞ্জি। নিজের প্রটেকশনের জন্য বেশি কিছু হাতে রাখতাম না শুধু একটা ছোট লাঠি। যাই হোক পুকুরে পৌঁছে নীরবে ১০-১৫ মিনিট দাড়িয়ে রয়েছি ওই দিন। আশেপাশে কোন সাড়াশব্দ নেই। এখন পর্যন্ত লাইটের অথবা মোবাইলের টস অন করিনি একবারও। এরপর আমি নীরবে কলাগাছের নিচ দিয়ে পৌঁছে গেলাম যেখান থেকে মাছের খাবার দিতে হয় সে মাচার পাশে।

সব সময় যে মাছের খাবার দেওয়া মাচার উপর বসে সময় পার করতাম সেটা কিন্তু নয়। মাঝে মধ্যে কলা গাছের নিচে বসে থাকতাম; সবজি পানের নিচে বসে থাকতাম। ঐদিন মাছের খাবার দেওয়া মাছের উপর বসে আকাশে ঘুড়ি ওড়া দেখছিলাম আর মোবাইলে একটা সিনেমা দেখছিলাম। আমি রীতিমতো মোবাইলের গ্লাসের আলোটা কম করে রাখি। কে জানি ঘুরে ওড়াই ছিল মিউজিক বাল্ব সেট করা, তাই ঘুড়িটা মাঝে মাঝে মিটমিট করছে, দেখতে বেশ ভালো লাগছিল। আর ঠিক এভাবেই একবার উঠেও এদিক-ওদিক যাওয়া সিনেমা দেখা হঠাৎ ঘুড়িটা আকাশ থেকে নামিয়ে ফেলল তারা। ঘড়িটা অবশ্য এই মাঠে উড়ছিল না গ্রামের ওইপারের মাঠে উড়ছিল। এভাবে সময় হয়ে গেল রাত 1:45 মিনিট।
এর আগে আমার একটা ফেসবুক আইডি ছিল সেই আইডিটায় কারা যেন মেসেঞ্জার গ্রুপে আমাকে অ্যাড করে দিয়েছিল। লক্ষ্য করেছিলাম সেখানে যুবক ছেলে মেয়েরা আড্ডা দেয়। বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা দিতে থাকে তারা। রাত দুইটার দিকে একটা ছেলে একটি মেয়েকে প্রশ্ন করছে 'তুমি ঘুমাচ্ছো না কেন? মেয়েটা বলছে আমার ঘুম আসছে না। ছেলেটা উত্তর দিল আমি পাশে থাকলে ঘুম পাড়িয়ে দিতাম। এভাবে তারা আরো কিছু কথা বলতে থাকলো যার মধ্যে কুরুচিপূর্ণ কথা শুরু করল উভয়ে।

এই মুহূর্তে আকাশের চাঁদ ডুবে গেছে। আমার কাছে একটি লাঠি একটা লাইট আর একটা কাটারি ছিল। মোবাইলে ফটো তুলে সাথে সাথে মেসেঞ্জার গ্রুপের মধ্যে তাদের কাছে দিয়ে দিলাম। তারা কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা দূর করে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল। ছেলেটা বললো কে ভাই আপনি? আমি বললাম আমিও তোমাদের মত মানুষ কিন্তু অশ্লীলতা পছন্দ করি না। জীবন সংগ্রাম নিয়ে টিকে রয়েছি। যেকোনো মুহূর্তে মারা পড়তে পারি চোর সন্ত্রাস জিন-ভূতির হাতে। তারপর বিস্তারিত কথা হল আমার বিষয়ে বললাম। তখন ছেলেটা আর মেয়েটা তাদের ভুল বুঝতে পারল। আমি বললাম আল্লাহ নিজেদের বাবা-মার ঘরে তোমাদের দেখেছে ভালো রেখেছে শান্তিতে রেখেছে এরপরে কেন তোমরা কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা নিয়ে ধ্বংসের পথে নামছে। তারা আমার কাছ থেকে মাফ চাইলো আর বলল আমাদের ভুল হয়ে গেছে। এরপর তারা গ্রুপ থেকে বিদায় নিল কারণ তারা বুঝতে পেরেছে সত্যি আমরা আবেগে কতটা খারাপ দিকে ঝুঁকে পড়ছিলাম। এভাবে আরও এক ঘন্টা পার হলো রাত তখন প্রায় তিনটা।
চাঁদ মামা আলো দিচ্ছিল সেও তো চলে গেছে। গ্রুপে দুইটা ছেলে মেয়ে জেগেছিল অশ্লীল কথাবার্তা বলছিল তাদেরকেও বিদায় করে দিলাম। আকাশের ঘুড়িটা রাত সাড়ে বারোটার দিকে তো নামিয়ে ফেলেছে। এখন একা কি করব আবার না হয় সিনেমা দেখি। এমন চিন্তাধারা নিয়ে একটা সিনেমা দেখা শুরু করলাম তামিল বাংলা ডাবিং। তবে আমি সিনেমার শব্দ আস্তে দিয়ে ইয়ারফোনে শুনছিলাম। হঠাৎ ছাড়া পেলাম মানুষের ফিসফিস কথা বলার শব্দ। কাল থেকে এয়ারপোর্ট নামিয়ে মোবাইলের গ্লাসের আলো অফ করে দিলাম।

দূরে রোপ আঙ্কেলের পুকুর পাড়ের লাইটের আলো জ্বলছে। সে আলোর হালকা উজ্জ্বলতায় দুইজন চোর নীরবে বন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পুকুরে পাড় দিয়ে চলছে। আমি নিরবে চেয়ে থাকলাম দেখি তারা কোন পুকুরে নামে। রাত তখন তিনটা কত মিনিট যেন হবে। এরপর চোর দুইটা আমাদের একটা পুকুরের কর্নার দিয়ে নেমে পড়ল। তখনো আমি নীরব রইলাম ভাবলাম কি করব তাদের সাথে খারাপ আচরণ করলে যে কোন মুহূর্তে একদিন পুকুরে বিষ দিয়ে যেতে পারে মাছ নষ্ট হয়ে যাবে,চোরদের উচিত শিক্ষা না দিলেও তো হয় না। আমি যেহেতু পুকুরের আরেক পাশে আর তারা সামনের পাশে আমি যে রয়েছি তারা এখনো দেখতে পারেনি বা অনুমান করতে পারেনি কারণ কলা গাছের নিচে মাচার উপরে বসেছিলাম অন্ধকারে তারা বুঝতে পারছে না কিন্তু আমি তাদের দুজনকে ঠিকই দেখতে পারছি আলোর ছটায়। তারা ফিসফিস করে বলছে বড় মাছ ভেসে আছে কি বোঝা যাচ্ছে। মূলত তারা শীষ কিশোর এসেছে তেকুইছি নামের ছোট্ট ছোট্ট মাছ ধরার নাম করে মশারি দিয়ে পুকুরের কোল দিয়ে টেনে টেনে ধরবে। পাশাপাশি ভেসে থাকা মাছ বা কোলে থাকা মাছ উঠে পড়লে সেগুলো নিয়ে যাবে। এদিকে আমি নিরবে আস্তে আস্তে চার-পাঁচজনার মোবাইলে ফোন করলাম কিন্তু কেউ কোনো সাড়া শব্দ করল না। ওরা যখন পুকুরে মশার রেজাল্ট টানা শুরু করলো আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তাদের চোখ পানে লাইট মারলাম। দুজনার মধ্যে একজনকে চিনে ফেললাম আমাদের গ্রামের ছেলে। তার নাম বলায় খাবড়ে গেল। ভয় তো বলতে থাকলো আমরা মাছ চোর না,তেকুইসি ধরতে এসেছি। তাই বলে কি রাত তিনটার সময় ভালো মানুষ লোকের পুকুরে নামবে?
আমি রাগের সাথে তাদের পানে কিছুটা পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। চোর দুইটা ভয়তে ভয়তে উঠে পড়লো, দ্রুত চলে যাচ্ছে আর বলল আমার আর কোনদিন তোমাদের পুকুরে আসবে না। আমরা তো এমনিতেই ছোট মাছ ধরি। ঠিক এভাবে চোর দুটো দ্রুত জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলে গেল। আমি দেখলাম বেশি কিছু বলা মোটেও ঠিক হবে না যেহেতু মাঠের সম্পদ। কখন কে কিভাবে ক্ষতি করে দিবে তার তো ঠিক নেই তাই বাড়াবাড়ি না করে চারিপাশে লাইট মারতে থাকলাম ওদের দিকেও লাইট মারতে থাকলাম দেখলাম তারা দূরে কোথাও চলে গেছে বোন জঙ্গলে আর দেখা যাচ্ছে না। এরপর আমি আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফজরের আজানের সময় মসজিদে চলে গেলাম এবং মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে তারপর বাড়িতে ফিরলাম।

পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |

রাত জেগে কোন কিছু পাহারা দেয়ার অভিজ্ঞতা একদমই নেই আমার। তবে অনেক আগে একবার গ্রাম পাহারা দিয়েছিলাম অনেকজনা একসাথে মিলে।
আপনার তো দেখছি ভাই অনেক সাহস একা একাই মাঠের মধ্যে মাছ পাহারা দিতে শুরু করে দিলেন।
আসলে রাতে যদি চাঁদের আলো থাকে পরিপূর্ণভাবে তাহলে রাত জেগে পাহারা দেয়া তেমন একটা কষ্ট হয় না কেননা চারিদিকে আলোয় আলোকিত থাকে।
অনাকাঙ্ক্ষিত লোকাল অনাকাঙ্খিত ঘটনা এখন তো অহরহর ঘটছে।।
পরিবেশ মানুষকে অনেক কিছু শেখায় ভাই
রাত জেগে মাছ পাহারা দেয়া,অন্ধকার আকাশে ঘুড়ি ওরানোর দৃশ্য, ফোনে মেসেনজারে ছেলে মেয়েদের অশ্লীল কপোতকথন করার কারণে তাদেরকে ভয় দেখিয়ে সঠিক পথে আনার চেষ্টা সব মিলিয়ে অসাধারণ পোস্ট ভাইয়া।আমার বাবার বাড়িতেও অনেক বড়ো পুকুর আছে আর রাতে লোক রেখে পাহারা দেয়।আর পুকুর পাড়ে একটি ঘর আছে মাছ পাহাড়া দেয়ার জন্য আমরা সেই ঘরকে মাছের ঘর বলে থাকি।তবে অনেক রিক্সা এভাবে আপনার মাছ পাহারা দেয়াটা ছিলো।কারণ পরিচিত চোর বেশি ভয়ংকর হয়।পরিচিত চোরদের হাতে প্রাণ নাশের ভয় থাকে বেশি। কারন পরিচিত চোর মনে করে যে এই তো আমাকে চিনে ফেলেছে হয়তো সবাইকে বলে দেবে এই ভয়ে তারা খুন করতেও পিছু পা হয় না।ভাগ্যিস আপনার তেমন কিছু হয় নি ঠিক বলেছেন চোরদের সাথে খারাপ আচরন করলে বিষ দিয়ে পুরা মাছ মেরে দিতে পারো।এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে।ধন্যবাদ
এই জন্য তো চোরদের কিছু বলা যায় না
আসলে ভাইয়া আপনার সাহস আছে বটে। সত্যি একা একা এভাবে পাহাড়া দেওয়া ভয়ের কাজ। তারপর গভীর রাত। আসলে মাছ বা অন্য যা কিছু হোক না কেন এগুলো পরিচিত লোকজন বেশি করে থাকে। আপনি ঠিক বলেছেন সত্যি যদি বিষ দিয়ে মাছ গুলো মেরে ফেলে। তাই বেশিকিছু না বলে ভালোই করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
সাহস করে চলতে হয় আপু কিছু করার নাই তো
আমি অনেক আগে থেকে অনেকের পুকুরে পাহারা দিতে দেখেছি এমনকি আমার আব্বাকেও অনেক সময় অনেক রাত করে পুকুরে যেতে দেখেছি। তবে এভাবে রাত জেগে পুকুর পাহারা আমি কোনদিন দেইনি বা এর সম্বন্ধে আমার কোন অভিজ্ঞতাও নেই। আপনি রাত এগারোটার সময় পুকুরে গিয়েছিলেন জেনে বেশ ভালো লাগলো কেননা এখান থেকে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা জানিয়েছে।
সাবলীল ভাষায় সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।