রণবীর আর জ্যোতি কী চায়?
মাংসের বড় দুটি টুকরা কাঠের পাটাতনে রাখার সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে মুখ বের করল জ্যোতি। হেলেদুলে এগিয়ে এল। দীর্ঘ শ্বাস টেনে মাংসের ঘ্রাণ নিল। কিন্তু চেখে দেখল না। বেশ আয়েশি ঢঙে আট-দশ কদম হেঁটে বসে পড়ল রোদে। এমন সময় বিশাল হাই তুলে ঘর থেকে বেরিয়ে এল রণবীর। শুরু হলো রাজকীয় পায়চারি। এই মিনিট তিনেক, তারপর এদিক-সেদিক তাকিয়ে এগিয়ে গেল জ্যোতির কাছে।
রণবীরের এগিয়ে আসা দেখে জ্যোতিও উঠে দাঁড়াল। মুখ বাড়িয়ে রণবীর ও জ্যোতি কিছুক্ষণ মুখ নাড়াল। কী একটা সংকেতে ভাব বিনিময় করল! কিন্তু মাংসের টুকরো মুখে পুরল না। ঘণ্টাখানেক মাংসের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলাল। ঘড়ির কাঁটায় দুটো বাজতে না বাজতে জ্যোতি-রণবীর একসঙ্গে খাওয়া শুরু করল। পুরোটা খেল না, কিছুটা রেখে দিল। ১১ মার্চ রণবীরের সঙ্গে এভাবে সুখের সংসার করতে দেখা গেল বেঙ্গল টাইগার জ্যোতিকে।
মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় রয়েছে ছয়টি বেঙ্গল টাইগার। এগুলোর মধ্যে সুন্দরবনে জন্ম নেওয়া বুনো বাঘ কেবল জ্যোতি। বাকি পাঁচটি বেঙ্গল টাইগারের জন্ম মিরপুরের চিড়িয়াখানায়। এদের বাবা-মায়ের জন্মও সুন্দরবনে ছিল না। আনা হয়েছিল ভারতের মধ্যপ্রদেশের চিড়িয়াখানা থেকে। মধ্যপ্রদেশের বাঘ রাজা ও প্রমীলার শাবক রণবীর এখন জ্যোতির সঙ্গী।
ছয় বছর বয়সী বাঘিনী জ্যোতির জীবনটা বড়ই কষ্টে ভরা। ওরা ছিল দুই বোন, এক ভাই। ২০১২ সালের ১৪ মে সুন্দরবনে মধু আহরণ করে ফেরার পথে কৌশলে এক বাঘিনীকে তাড়িয়ে তিনটি বাঘের বাচ্চা নিয়ে এলাকায় ফেরে সাতজনের একটি বনজীবী দল। তিন দিন চেষ্টা চালিয়ে সংঘবদ্ধ পাচার চক্রের সদস্য আবু ইছা, নুরুজ্জামান গাজী, মোস্তফা ও আমিনুরের কাছে বাচ্চাগুলো মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরে সাতক্ষীরা শহরের একটি পাচার চক্রের সদস্যদের কাছে বাচ্চাগুলো ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এরপর তা বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়। প্রায় এক মাস পর ১১ জুন সকালে রাজধানীর শ্যামলী ২ নম্বর সড়কের ১৩/১২ নম্বর বাসার নিচতলার ফ্ল্যাট থেকে তিনটি বাঘের বাচ্চাকে উদ্ধার করে র্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের ছাত্র জাকির হোসেন ও তাঁর মা জাহানারা বেগমকে। এরপরই বাচ্চা তিনটির নাম হয় জ্যোতি, জয় ও জুঁই। র্যাব হেফাজত থেকে বাঘের বাচ্চাগুলো হাতিরপুলে একটি ব্যক্তিগত ছোট চিড়িয়াখানায় রাখা হয়। কয়েক দিন পর দুই ভাইবোনসহ জ্যোতি চলে যায় কক্সবাজারের ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।