দীপাবলি: আলোর উৎসব

in #steemit7 days ago

164d82eb968f96b77aa0d1451b376be0.jpg

দীপাবলি বা দীপাবলির অর্থ হলো “আলোর সারি।” এটি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব, যা বছরের অমাবস্যা রাতে পালিত হয়। সাধারণত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয়, এবং এটি আলোর বিজয় ও অন্ধকারের পরাজয়ের প্রতীক। এই উৎসবটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময়; লক্ষ্মী পূজা, বাজি ফাটানো, মিষ্টি বিতরণ এবং আনন্দে পরিবার পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানো এ সময়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

দীপাবলির পেছনের কাহিনি

দীপাবলির পেছনে রয়েছে পুরাণের কাহিনি। রামায়ণ অনুসারে, রামচন্দ্র ১৪ বছরের বনবাস শেষে ও রাবণকে পরাজিত করে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। এই বিজয়ের আনন্দে, অযোধ্যাবাসী তার সম্মানে ঘরবাড়িতে প্রদীপ জ্বালিয়ে আনন্দ উদযাপন করেন। একইভাবে, মহাভারতের কাহিনিতেও বলা হয়, পান্ডবেরা ১২ বছরের বনবাস শেষে ফিরে এলে তাদেরও প্রদীপ জ্বালিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এইসব ঘটনার কারণে দীপাবলি শুধুমাত্র আলোর উৎসব নয়; এটি সঠিক ও ন্যায়ের প্রতীক।

পূজা ও আচার-অনুষ্ঠান

দীপাবলির মূল অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম হলো লক্ষ্মী পূজা। লক্ষ্মী দেবীকে ধন-সম্পদের দেবী হিসেবে পূজা করা হয়। এই দিনে মানুষ নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করে এবং ঘর আলোকিত করার জন্য প্রদীপ ও রঙিন বাতি জ্বালিয়ে সাজায়। এছাড়া, রঙ্গোলি বা আলপনা আঁকা হয় বাড়ির প্রবেশপথে, যা দেবী লক্ষ্মীকে স্বাগত জানায়।

দীপাবলির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বাজি পোড়ানো। যদিও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে এবং অনেকেই এখন বাজি পোড়ানো কমিয়ে দিয়েছেন, তবুও এই ঐতিহ্য অনেক জায়গায় এখনো পালিত হয়। বিশেষত শিশুরা আতশবাজি ও ফটকা ফাটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজির বিকল্প হিসেবে ফানুস উড়ানো একটি সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প হয়ে উঠেছে।

দীপাবলির সামাজিক দিক

দীপাবলি শুধু হিন্দু ধর্মের উৎসব নয়, এটি একটি সামাজিক উৎসবও। ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সবাই দীপাবলির আলোয় মেতে ওঠেন। এই দিনে আত্মীয়-স্বজনদের মিষ্টি বিতরণ ও উপহার দেওয়ার প্রচলন রয়েছে, যা সম্পর্ককে মজবুত করে। এছাড়া, এটি ধনী-গরিব, সব স্তরের মানুষকে একত্রিত করে; কেউ কাউকে আলাদা মনে করেন না।

পরিবেশ সচেতনতা ও দীপাবলি

বিগত কয়েক বছরে দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো নিয়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজির ফলে যে ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ হয়, তা শুধুমাত্র মানুষের স্বাস্থ্যেই নয়, বরং পশুপাখির উপরেও প্রভাব ফেলে। তাই এখন অনেকেই ইকো-ফ্রেন্ডলি উপায়ে দীপাবলি উদযাপন করছেন, যেমন ফানুস উড়ানো, ফুল ও রঙ দিয়ে সাজানো, এবং আলো দিয়ে ঘর আলোকিত করা।

উপসংহার

দীপাবলি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি সবার জন্য আনন্দের একটি উপলক্ষ। দীপাবলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আলো সবসময় অন্ধকারকে পরাজিত করে। এই উৎসবে আমরা সকলেই আশা ও ভালোবাসার আলোকময় জীবন কামনা করি। দীপাবলির এই আলোর ছটায় আমাদের মনেও যেন প্রেম, ঐক্য ও শান্তি বিরাজ করে, এটাই দীপাবলির আসল প্রার্থনা।

Sort:  
Loading...