ঝুমুরের সাথে দেখা - ''ছোট্ট গল্পো''

in #sort2 years ago

-এই যে সাহেব দাড়ান । এতো রাতে কই যান ?

আমি সাইকেল থামালাম । সামনেই একটা পুলিশের গাড়ি দেখতে পাচ্ছি । টহল পুলিশ, আমার একটু ভয় পাওয়ার কথা । কারন এখন দেশের অবস্থা খুব একটা ভাল না । পুলিশ ধরলে খবর হওয়ার কথা তবে কেন জানি আমি ঠিক চিন্তিত হলাম না ।

cyclist-safetyr.webp
image-Sourch

একজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে ভাল করে সার্চ করলো ।

আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল

-এতো রাতে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

আমি বললাম,

-কোথাও না । এমনি সাইকেল চালাচ্ছি । দিনের বেলাতে সাইকেল চালিয়ে মজা নেই তো তাই মাঝে মাঝে রাতের বেলা সাইকেল চালাই !

আমার উত্তরে সম্ভবত পুলিশের মন ভরলো না । আমাকে দাড় করিয়েই পুলিশ চলে গেল দাড়িয়ে থাকা গাড়ির দিকে, আমি সাইকেল থেকে নেমে ফুটপাতের উপর বসে পরলাম । সম্ভবত আমাকে এখানে অনেক সময় বসতে হবে । এরা, সহজে আমাকে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না।

ঝুমুরকে আরেকবার ফোন দিবো কি না ভাবছি । আজকে ওর দেখা করার কথা, সারা দিনে ও একবারও আমার ফোন ধরে নি । ধরবে না জানতাম । আমার সাথে ওর যেদিন দেখা হওয়ার কথা থাকে সেদিনই ও ফোন ধরে না । আমি জানি ও আমার সাথে দেখা করবে না তবুও ওর পেছনে লেগেই থাকি দেখা করার জন্য । মাঝে মাঝে ও বলে যে কাল দেখা করবে কিন্তু সেই কাল আর আসে না । সেই দিন সারাদিনই ওর ফোন অফ থাকে নয়তো ফোন ধরে না ও । আমি ফোন দিয়ে যাই । আজ সারা দিন তাই করেছি । ধরবে না তবুও দিয়েছি, কেন দিয়েছি আমি নিজেই জানি না । আমি ফোন বের করেই ঝুমুরকে ফোন দিতেই ঝুমুর ফোনটা রিসিভ করলো । বেশ অবাক হলাম । আজকে তো ওর ফোন ধরার কথাই ছিল না ।

-হ্যালো ।

ওপাশ থেকে কোন কথা শুনতে পেলাম না । আমি আবার বললাম

-হ্যালো ? শুনতে পাচ্ছো নাকি ?

-হ্যা পাচ্ছি!

ঝুমুরের কন্ঠ শুনেই মনে হল ও বেশ কান্না কাটি করেছে । আমি আর ওসব জানতে চাইলাম না । বললাম

-মন ভাল আছে?

-ভাল থাকার কথা?

-জানি না । সারা দিন ব্যস্ত ছিলে বুঝি ?

-না ! এক দম ব্যস্ত ছিলাম না ।

-ও !

আমি কি বলব ঠিক বুঝতে পারলাম না । ঝুমুর ওপাশে কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল

-তোমার রাগ হচ্ছে না আমার উপর ?

-কেন রাগ হবে কেন?

-তুমি জানো কেন রাগ হবে ? রাগ হয় না ?

-নাহ্!

-অন্য কেউ হলে আমাকে ছেড়ে ঠিক চলে যেত । আমাকে আর কোন দিন ফোন দিতো না ।

-তারা তো তোমাকে আমার মত ভালবাসে না ।

ওপাশ থেকে আবারও বেশ কিছুটা সময় কোন কথা শোনা গেল না । আমার কেন জানি মনে হল ঝুমুর নিজের কান্নাকে আটকানোর চেষ্টা করছে । আমি ওকে শান্ত করার জন্য বললাম,

-সমস্যা নেই । আমার সাথে না হয় অন্য কোন দিন দেখা কর । কেমন !

আমি ঝুমুরের কান্না জড়িত কন্ঠ শুনতে পেলাম । ও বলল

-করবো না । কোন দিন দেখা করবো না । তবুও অপেক্ষা করবে ?

-হ্যা করবো!

আমার আরও কিছু বলার ছিল দেখি তার আগেই পুলিশের সেই লোকটা আমার কাছে ফিরে এল । আমাকে বলল

-চলেন!

আমার তখনও ফোন কানে । আমি বললাম

-কোথায়?

-থানায় চলেন । আপনে গাড়িতে উঠেন । আমি আপনার সাইকেল নিয়ে আসতেছি !

এখানে আমার আসলে কিছুই করার নেই । আমাকে গাড়িতে উঠতেই হবে । ফোনের ওপাশ থেকে ঝুমুর বলল

-কার সাথে কথা বলছো?

-পুলিশের সাথে!

-এতো রাতে তুমি বাইরে কি করছো ?

-এই তো একটু হাওয়া খেতে বের হয়েছিলাম ।

-মানে ? এখন কি হয়েছে ?

-ওরা বলছে থানায় যেতে হবে!

ওপাশ থেকে আবারও কোন কথা শোনা গেল না । পুলিশ আমাকে আবারও তাগাদা দিল জলদি গাড়িতে ওঠার জন্য । ঝুমুর একটু পর বলল

-বলতো ওর কোন থানার?

-জানি না তো!

একটু ধমকের সুরে বলল

-জানো না, জিজ্ঞেস কর!

আমি পুলিশ লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম

-ভাই আপনার কোন থানার?

-কেন?

-না মানে একজন জানতে চাচ্ছে ।

পুলিশ বলল

-বলেন যে আপনাকে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যাচ্ছি আমরা !

আমি ঝুমুর কে থানার নাম বললাম । ঝুমুর ফোন রাখতে রাখতে বলল আমি যেন কোন চিন্তা না করি । ও দেখছে । মনে মনে ভাবলাম তুমি যে কি দেখা দেখবে।

আমি মোবাইল পকেটে রেখে গাড়িতে উঠলাম । পুলিশের গাড়িতে এর আগেও বেশ কয়েকবার উঠেছি । আমার ক্যাম্পাসের পাশেই বড় থানা ছিল । মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় যখন বাস পেতাম না, তখন পুলিশকে বললেই ওনারা পেছনে উঠতে বলতো । কিন্তু আজকের ঘটনা একেবারেই অন্য রকম । আমি চুপচাপ বসে রইলাম । রাত বলেই রাস্তা ঘাট একেবারে ফাঁকা । গাড়িটা চলছে একভাবে তবে গাড়ির গতি খুব বেশি না । কত সময় গাড়িতে বসে ছিলাম জানি না দেখি গাড়িটা একটা বাসার সামনে এসে থামলো । আমি বসেই রইলাম । একটু পরে একজন অফিসার গাড়ির পেছনে এসে দাড়ালো । আমার দিকে তাকিয়ে বললেন

-নামেন ।

আমি নামলাম । ধানমন্ডি থানা আমি চিনি । এটা যে সেই থানা না সেটা বুঝতে কষ্ট হল না। আমার দিকে তাকিয়ে পুলিশ অফিসার টি বলল

-আরে রাস্তায় এমন একা একা চলেন কেন ? আর বলবেন না যে সৈয়দ সাহেব আপনার পরিচিত ।

আমি মনে করার চেষ্টা করলাম এই সৈয়দ সাহেবটা আবার কে? আমাকে কি ভুল করে ছেড়ে দিবে নাকি ! তারপরেই আমার মনে পড়লো সৈয়দ হচ্ছে তৃষাদের বংশীয় পদবী ।

অফিসার আবার বলল

-ওনার ফোন এসেছিল । শুনুন এর পর থেকে আমাদের কেউ যদি আপনাকে ধরতে যায় তাহলে আগে পরিচিত মানুষের নাম বলবেন । ঠিক আছে !

আমি বললাম

-আচ্ছা! আমার সাইকেল টা?

-ওটা আসছে । এইখানে চলে আসবে । চিন্তা করবেন না । যান ভেতরে যান !

পুলিশ আমাকে হাত ইশারায় সামনের বাসাটা দেখালো । আমি বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এতো রাতেও বাসার সব আলো জ্বলছে । দারোয়ান গেট খুলে এদিকে এগিয়ে আসছে ।

আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে এসব ঝুমুরের কর্ম । ও নিশ্চয়ই এই সময়ের ভেতরেই এই পুলিশকে ফোন দিয়েছে এবং অনুরোধ করেছে যেন আমাকে ওর বাসার সামনেই নামিয়ে দেয় ! এরা তাই করেছে ।

আমি আস্তে আস্তে গেটের দিকে এগোতে থাকলাম । ঝুমুরের সাথে যে আমার এই ভাবে দেখা হয়ে যাবে আমি কোন দিন ভাবতেও পারি নি । অবশেষে আমাদের দেখা হতে যাচ্ছে । আমি একটু কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে যাই ঝুমুরদের বাসার দিকে ।

Sort:  

অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট করার জন্য