সন্তান ও পিতা মাতার ভালবাসা

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই ? নিশ্চয় পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল ‍ও সুস্থ্য আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও মহান আল্লাহর রহমতে বেশ ভাল আছি।

আমি আমার পোস্টের মাধ্যমে চেষ্টা করি আপনাদের কাছে সমাজের নানা প্রকার অসঙ্গতির গল্প তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আমি সফল হতে পেরেছি। তবে একটি কথা না বললেই নয়, আমি আমার পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের কাছে যে গল্পগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি সেগুলো আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কিছু সত্য বিষয় । যা হয়ত ইতোমধ্যে আপনাদেরও চোখে পড়েছে।


আজ আমি এমন একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি যেখানে আপনারা দেখতে পাবেন যে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হয়েও বৃদ্ধ বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা আর আন্তরিকতার বিষয়ে এক দৃষ্টান্ত মূলক প্রতিদান।


তাহলে শুরু করা যাক।

image.png

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

সারোওয়ার সাহেব। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ঢাকার শহরে একটি তিন তলা বাড়ী আছে তার। আর পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে দুই মেয়ে আর এক ছেলে। বড় মেয়ে শম্পা ব্রাকে একটা ভাল পদে চাকরী করেন। শম্পার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২০ বৎসর। কিন্তু বিয়ের প্রথম থেকেই স্বামীর সাথে তেমন মানিয়ে চলতে পারছে না। যদিও শম্পার এখন দুই ছেল। শম্পার জামাই একজন অসুস্থ্য মানুষিকতার মানুষ। তাই স্বামীর সাথে শম্পার বনি বনা হয় না। ইতোমধে শম্পার স্বামী বেশ কয়েকবার বাসা ছেড়ে চলে যান। কিন্ত শম্পা প্রতি বারই ফিরিয়ে আনেন। এই নিয়ে বাবা মা ভাই ও ভাইয়ের বউ এর কাছে অনেক খোটা শুনতে হয়। এদিকে সারোওয়ার সাহেবের ছোট মেয়ে স্বামীর সাথে সুইজারল্যান্ড থাকেন।


একমাত্র ছেলে হিমেল এমবিএ শেষ করে একটি বেসকারী ব্যাংকের অফিসার হিসাবে চাকুরী করছেন। ছেলেও বিয়ে করেছেন প্রায় ৬-৭ বৎসর হলো। তার ঘরে একটি ৩ বৎসরের মেয়ে আছে। বাবা বহুবার তার ব্যবসা দেখার কথা বলেও হিমেল বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসার দায়িত্ব নিতে অপারগতা দেখায়। একমাত্র ছেলে হওয়ায় বাবা মা উচ্চাংক্ষা নিয়ে ছেলে কে হোস্টেলে রেখে পড়া লেখা করায়।যাতে করে ছেলে মানুষের মত মানুষ হন। কিন্তু প্রশ্ন হলো ছেলে কি সত্যি মানুষের মত মানুষ হয়েছে?

family-g4d3199b4f_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

প্রচন্ড শীত সারোওয়ার সাহেবের ছেলে তার নিজের ঘরের বাথরুমে ব্যবহার করার জন্য দামী গ্রিজার বসালো। অথচ বৃদ্ধ পিতা মাতা কলের ঠান্ডা পানিতে গোসল করে নেন। করোনায় যখন মানুষ হিমসিম খাচ্ছে তখন সারোওয়ার সাহেবের স্ত্রীকে দেখা গেছে বাজারের ব্যাগ হাতে বাজার করতে। এমন কি সাপ্তাহিক ছুটির একটি দিনেও সারোওয়ার সাহেবের স্ত্রীকে ঘরের বাজার করতে দেখা যায়। আর এই দিনটাতে ছেলে হিমেল স্ত্রী কে সময় দিতে পছন্দ করেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর স্ত্রী কে নিয়ে চলে যায় বাহিরে সময় কাটাতে।

family-g5c20306bf_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

হঠাৎ একদিন সারোওয়ার সাহেব অসুস্থ্য হয়ে পড়লে, তাৎক্ষনিক ভাবে তার করোনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আর সারোওয়ার সাহেবের অবস্থাও অনেক খারাপ। তাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সারোওয়ার সাহেবের স্ত্রীর ও করোনা পজিটিভ হয়ে যায় কিন্তু তিনি সুস্থ্য। করোনা হয়েছে বুঝার কোন উপায় নেই। এদিকে সারোওয়ার সাহেবের বড় মেয়ে, বড় নাতি সবারই করোনা পজিটিভ হয়। শুধুমাত্র সারোওয়ার সাহেবের ছেলে আর তার স্ত্রী করোনা নেগেটিভ থেকে যায়। ছেলের বউ শ্বশুর শ্বাশুড়ীর জন্য হাসপাতালে খাবার পাঠায়। ছেলেও বাবার জন্য অনেক পরিশ্রম করে । এদিকে বড় মেয়ে আর নাতি করোনা পজিটিভ হয়ে এক দূর্বি সহ জীবন যাপন করেন। কারন সেবা করার বা খাবার দেওয়ার কাছাকাছি কেউ নেই। এক বাড়ীতে থেকেও ভাইয়ের বউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না। তাই বলে কি আল্লাহর দুনিয়ায় কেই অভুক্ত থাকে ? সারোওয়ার সাহেবের আত্মীয় স্বজন যারা কাছাকাছি থাকে তারা সবাই পালা করে মেয়ের জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয়।

image.png

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

এদিকে সারোওয়ার সাহেব সুস্থ্য হয়ে বাড়ীতে ফিরে আসেন। আর হাসপাতালের সব বিল সারোওয়ার সাহেব নিজের টাকায় পরিশোধ করেন। বাড়ীতে আসার কয়েকমাস পর ছেলে আর ছেলের বউ মিলে সারোওয়ার সাহেবের সাথে কথা বলেন। তারা এখানে এভাবে থাকতে পারবে না। তারা বাহিরে চলে যাবে। আলাদা বাসায় যাবে। তাদের আরও ঘর লাগবে। কিন্তু সারোওয়ার সাহেব আর তার স্ত্রী ছেলেকে এতটাই ভালবাসে যে, তারা ছেলের জন্য বাড়ীর এক বাড়াটিয়া কে উঠিয়ে দিয়ে সেই পুরো ফ্লাট টা ছেলে আর ছেলের বউ এর জন্য দিয়ে দেন। তবু ছেলেটা তাদের কাছে থাকুক। আর ফ্লাটটি ছিল ছেলের বউ এর ফ্লাটের সাথে এটাস্ট করা। তাই ছেলে আর ছেলের বউ ভবলো খারাপ হয় না। বাহিরে গেলে এরকম একটি ফ্লাট এর ভাড়া মাসিক ৩০-৪০ হাজার টাকা গুনতে হবে। তাই তারা রাজি হয়ে গেল।

sheggeor-laker-5frMHnKrx1E-unsplash.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

ছেলে আজ তার ফ্লাটে দামী টাইলস, নতুন সোফা, দামী আসবাবপত্র, দামী ফ্রিজ আর দামী ফিল্টার স্ত্রীর জন্য কিনে দিয়েছে।এদিকে বৃদ্ধ মা আজও চুলায় ফুটিয়ে পানি খান। আজ সারোওয়ার সাহেবের ঘরের চুলায় দুজনের জন্য রান্না হয়। এতকিছুর পরও সারোওয়ার সাহেব কে বলা হয়- যাতে তিনি বেচেঁ থাকা অবস্থায় তার সম্পত্তি ছেলেমেয়েদের মধ্যে ফারায়ায মোতাবেক বন্টন করে দিয়ে যায়। কিন্তু সারোওয়ার সাহেব তা অকপটে নিষেধ করে দেন। তিনি বলেন যে এতে করে তার ছেলের তার প্রতি বিশ্বাস কমে যাবে। ছেলে কষ্ট পাক তিনি এমন কোন কাজ করবেন না।

তাইতো বলা হয় কু সন্তান যদিও হয়, কু মাতা কদাচিৎ নয়।

জানিনা আপনাদের মতামত কি এ বিষেয়ে। আপনাদের মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম।

ভাল থাকবেন সবাই , সুস্থ থাকবেন সবাই।

4bEjbgCbFMvA8T33kKpp3RsBvZue1Hns5Cwuz57pgmmNsNm69BvSk1AJmpxNTS4pL3vHiENLbAz3uRYvkzCHo62J16v8SBo7zpHgViW2yotwk1h5RE41hP2qzb7ELuJ3M646bDwEPdWALxxSwivrhMnjnGhcCBFuAKUHSjQuMNQZSJx9eV.gif

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovTUshBEnxRTgb9n2LUqHX7h1H2p2D18YQFUDgxbpg8bp7AxwH9vK7k1SRqaoEJbCQrboh4ga6xfDvigcW6zfkH8S.png

আমি মাকসুদা কাউছার। আমি একজন বাঙ্গালী। ভালবাসি বাংলায় কথা বলতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে। বাংলা আমার মায়ের ভাষা। আমি পেশায় একজন চাকুরীজীবি। তবে চাকুরীর পাশাপাশি আমি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ও ইউটিউব চ্যানেলে কনটেন্ট লিখে থাকি। আমি ভালবাসি আমার মাকে, ভালবাসি আমার বাংলাব্লগ কে।

pBMyo3B2Sao2EbuHAFTX1CNWMbam25xJGPs4sKmLS6XL7jPcLJ4PhfmbsQbXEmSBkiJH1y8vcCZLEDiVjH9fUC37Hpjmz6Czw4oJd4hidqWpdsEDnaUW3Rt3p3eTZGQkoiwZDyH4hdDt99wPqRBy3pVZE1qtEmMBB3MC4V4MJCpzUCii.png

Sort:  
 3 years ago 

সত্যি আপনার গল্পটা বাস্তব জীবনের সাথে অনেক মিল রয়েছে। আসলে সন্তান বাবা মাকে ছেড়ে যেতে পারে কিন্তু বাবা মা কখনো সন্তানকে ছেড়ে দিতে পারে না। যেমন সারোওয়ার সাহেবের কথা ধরুন তিনি তার সন্তানের জন্য কতো কিছু করলেন মিনিময়ে সন্তান কি দিল বাবা মাকে। আল্লাহর দুনিয়ায় কেই অভুক্ত থাকে এটা একদম সত্যি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শিক্ষামূলক একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপু আমার পোষ্টটি পড়ে কমেন্ট করার জন্য। তবে কমেন্ট দিতে সামান্য কিছু বানান ভুল আছে আশা করি ঠিক করে নিবেন।

 3 years ago 

আমার ছেলে যেন থাকে দুধে ভাতে। পিতামাতা শত কষ্ট সহ‍্য করার পরও ছেলে মেয়েদের জন্য কিন্তু ঠিক এই দোয়াটাই করে থাকে। আপনার গল্পটা এখন যেন সমাজের বাস্তব চিএ। চমৎকার শিক্ষনীয় ছিল। অনেক সুন্দর লিখেছেন আপু।।

 3 years ago 

হয়ে আমি চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত সমাজের বাস্তব চিত্র গুলো কি আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য। আমার জন্য দোয়া কর আমি যাতে সামনে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প আপনাদেরকে উপহার দিতে পারি।

 3 years ago 

হিমেলের অনেক কাজে ভুল আছে। তার উচিৎ ছিল বাবা মা কে এই শেষ সময়ে দেখে রাখা।তাদের যত্ন করা।তাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা।বোনের খোজ খবর নেওয়া।খুব খারাপ লাগল তার আচরণে।

 3 years ago (edited)

সত্যি বলেছেন হিমেলের অনেক কাজে ভুল আছে। হিমেইল যদি পরিপূর্ণ কাজগুলো করত তা হলে কত সুন্দর হতো তাদের জীবনটা?

 3 years ago (edited)

অনেক সুন্দর হত।আপু আপনি হিমেল লিখতে জিমেইল লিখে ফেলেছেন।

 3 years ago 

সন্তানও পিতা-মাতার ভালোবাসাটা কখনোই ফুরায় না। হোক না সেটা যতই পুরানা তবুও ভালোবাসাটা সব সময় জীবন্ত অবস্থায় পূর্ণতা পায়। একজন সন্তান তার পিতা মাতার কাছে গেলে তার সকল দুঃখ ভুলে যায়। আবার একজন মাথা পিঠা তার সন্তানকে একটুখানি দেখতে পেলে তাদের নিজেদের কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। আর আপনি সেই বিষয় নিয়ে অনেক সুন্দর একটি গল্প তৈরি করেছেন ভাইয়া।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল

 3 years ago 

আপনি লেখেন বেশ ভালো।তবে সবসময় এক রকম পোস্ট করলে একটু এক ঘেয়েমি চলে আসে।তাই আমি মাঝে মাঝেমধ্যে ট্রাভেল ব্লগ,রেসিপি,রিভিউ পোস্ট করতে পারেন।

 3 years ago 

জি আপু সত্যিই বলেছেন । আসলে আমার প্রশ্ন একই রকম হয়ে যাচ্ছিল। এখন থেকেসব ধরনের পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।

 3 years ago 

আপু বাবা-মা আমাদের জন্য যে কোন স্থান জুড়ে রয়েছে আসলেই সেটা অনেকেই বোঝেনা। যেমন আপনার কথায় আজকে হিমেল সেও তো একদম ভুল কাজ করলো। বাবা মায়ের মূল্যটা বুঝলো না। তার উচিত ছিল বাবা-মাকে দেখে রাখার। এমনকি তার বোনকেও দেখে রাখার। আমার বাবা আজকে অনেকদিন কিছুটা অসুস্থ। এইজন্য যে আমরা কোন পরিস্থিতিতে আসছি আপু বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু কেন যে সেটা সবাই বুঝতে পারে না।

 3 years ago 

সত্যি বলতে কি আপু আসলে যারা বুঝার তারা বুঝে বাবা মায়ের মর্ম। আর আমার তো বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই।