alokmoy Bangladesh 'জনপ্রিয় গান কীভাবে তৈরি হয়, তা নিয়ে গবেষণা

in #news7 years ago

alokmoybangladesh002.png

জনপ্রিয় গান মানেই জমজমাট ব্যবসা। তাই তো গীতিকারদের এত তোয়াজ। জনপ্রিয় গান তৈরিতে গীতিকারেরা যাতে প্রয়োজনীয় উপাদান যুক্ত করেন, তার জন্য পয়সাও খরচ করে মিউজিক কোম্পানিগুলো। তবে সব গান কি আর জনপ্রিয় হয়? শ্রোতাদের কোন গান ভালো লাগবে বা কোন গান রাতারাতি জনপ্রিয়তা পাবে, তা ঠিক করা কঠিন। কারণ, গানে বিভিন্ন উপাদানের জটিল মিশ্রণ থাকে। সেগুলো কীভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা নেই। আবার জনপ্রিয় গানের ধারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয় বলে তা ঠিক করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই কঠিন কাজটিকেই সহজ করার চেষ্টা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিনের গণিতবিদ নাতালিয়া কোমারোভা। চলতি সপ্তাহে তিনি ‘র‍য়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স’ সাময়িকীতে এ নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন। তাঁর লেখা গান জনপ্রিয় হওয়ার পেছনের কিছু তথ্য জানা গেছে।

গানের জনপ্রিয়তার পেছনে ঘাঁটতে গিয়ে নাতালিয়া কম্পিউটার বিশ্লেষণপদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। তাতে দেখা গেছে, বর্তমানে যেসব গানে নাচ করা যায় বা অনুষ্ঠানে চালানো যায়, সেগুলোই গ্রাহকদের টানে বেশি।

কোমারোভা ও তাঁর সহকর্মীরা গানের জনপ্রিয়তার কারণ খুঁজতে ১৯৮৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে উন্মুক্ত হওয়া গানের তথ্য সংগ্রহ করেন। এ কাজে তাঁরা গানপ্রেমী ও একাডেমিক কাজের উপযোগী প্রকাশ্য গানভান্ডারের মেটাডেটা ব্যবহার করেন। জনপ্রিয় গানগুলো কীভাবে তালিকার শীর্ষে এসেছে, তার সঙ্গে এসব তথ্যভান্ডারের মেটাডেটার সঙ্গে তুলনা করে দেখেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মেটাডেটা হচ্ছে—গানের ধরন-সম্পর্কিত তথ্য, যা থেকে শ্রোতারা ওই গান সম্পর্কে আগাম ধারণা পান।

গবেষকেরা গানের মেটাডেটা ধরে জনপ্রিয় গান হিসেবে শীর্ষে থাকা গানের সঙ্গে ফ্লপ বা অজনপ্রিয় গানের তুলনা করেন। তাঁরা দেখতে পান, সুখের গান তৈরি হয় কম। দুঃখের গানই বেশি।

যুক্তরাজ্যে গত তিন দশকে ‘হ্যাপি’ ও ‘ব্রাইট’ ট্যাগের বা সুখ ও আনন্দময় ধরনের গান দুর্লভ হয়ে গেছে। এর বদলে দুঃখের গান হামেশাই হচ্ছে। তবে জনপ্রিয় গানের তালিকার ক্ষেত্রে এ বিষয়টির প্রতিফলন দেখা যায় না। গানের তালিকায় শীর্ষে আছে যেসব গানে বেশি আনন্দ-উচ্ছ্বাস হয়েছে সেগুলোই। একই বছরে মুক্তি পাওয়া গানের গড়পড়তা জনপ্রিয় গানের চেয়ে কম স্বচ্ছন্দের বা হালকা গানগুলোই বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। টপচার্টের অধিকাংশ গান নারী শিল্পীদের গাওয়া।

গবেষকেরা বলেন, মিউজিক কোম্পানির কর্মকর্তাদের জন্য এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

গবেষণায় পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে তাঁর কম্পিউটারের জন্য বিশেষ মডেল তৈরি করেন গবেষক কোমারোভা ও তাঁর সহকর্মীরা। তাঁর তৈরি ওই কম্পিউটার মডেল কোনো গান জনপ্রিয় হবে কি না, তার পূর্বাভাস জানাতে পারে। সাধারণত কোনো গান সফল হবে কি না, তা সাধারণভাবে পূর্বাভাস দিলে ৪ শতাংশ পর্যন্ত সফলভাবে বলা যায় কিন্তু কোমারোভার পদ্ধতিতে সফলতার হার ৭৫ শতাংশ।

গবেষকেরা বলছেন, জনপ্রিয় গানের ক্ষেত্রে অবশ্য এর কনটেন্ট বা উপাদানই সব নয়। এর সঙ্গে গানের ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতিরও বিষয় আছে। বিশেষ করে শিল্পীর খ্যাতির প্রভাব পড়ে। তবে গানের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে শিল্পীর খ্যাতির প্রভাব খুব বেশি নয়। কোমারোভা ওই মডেলের ক্ষেত্রে যদি শিল্পীর তথ্য যুক্ত হয়, তবে গানের জনপ্রিয়তার পূর্বাভাস ৮৫ শতাংশ সফলভাবে দেওয়া সম্ভব হয়। এতে বোঝা যায়, গানের খ্যাতির বিষয়টি প্রচারের চেয়ে শিল্পীর প্রতিভার ওপর বেশি নির্ভর করে। সংগীতাঙ্গনে যাঁরা প্রতিভাকে গুরুত্ব দেন না, এটা তাঁদের জন্য কাজে লাগতে পারে।