বিশ্বের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস নিয়ে আমার লেখা গল্প - পর্ব ০৫
গল্পের বাকি অংশ সুরু করা যাক ......
উপরে আমাদের সন্তানের সাফল্যের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যা বলা হলো তা চরিত্র-নৈতিকতার সাফল্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । তবে আমি একথা বলছি না যে, ব্যক্তিত্ব-নৈতিকতা অর্থাৎ ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন, পারস্পরিক ভাববিনিময়ের দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ, প্রভাব খাটানোর কৌশল আয়ত্ত করা এবং ইতিবাচক চিন্তা করার ব্যাপারে শিক্ষা গ্রহণ উপকারী নয়, বরং আমি বলবো, কোনো কোনো সময় এ সব শিক্ষা সাফল্যের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু এই শিক্ষা সাফল্যের প্রধান শর্ত নয়। বরং গৌণ মাত্র।
আমি যা চাই তা যদি অন্য মানুষকে দিয়ে করাই, তাদের কাছ থেকে যদি আমি অধিকতর ভালো কাজ আশা করি, যদি তাদেরকে আরো অনুপ্রাণিত করতে চাই, অন্যেরা আমাকে পছন্দ করুক যদি চাই এবং একই সঙ্গে তাদের একজন আরেকজনকে পছন্দ করুক তা হলে চরিত্র-নৈতিকতার আদর্শ আমাকে অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে যদি আমি ব্যক্তিত্ব-নৈতিকতাকে অনুসরণ করে মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা অনুসরণ করি তবে আমার চরিত্রে দ্বৈততা এবং অনান্তরিকতার অভাব দেখা দেবে। আমার দ্বৈততা অবিশ্বস্ততার জন্ম দেবে, এতে আমি যা কিছু করবো সব কিছুকেই উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে হবে । উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক না কেন যদি কোনো মানবিক সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি থাকে তবে সে সম্পর্ক স্থায়ী সাফল্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে না। একমাত্র অকৃত্রিম বা মৌলিক বস্তুই সফল জীবনের ভিত্তি রচনা করতে পারে ।
কৌশল বা চাতুরী করে জীবনে সফল হতে চাওয়া অনেকটা স্কুলের পরীক্ষায় ভালো ফল করার মতো। অনেক সময় একজন ফাঁকিবাজ ছাত্রও স্কুলের পরীক্ষায় উৎরে যেতে পারে। এমনকি কখনও কখনও খুব ভালো ফললাভ করতে পারে। তবে সে তার বিষয়ের উপর পুরো দখল আনতে পারে না। কিন্তু প্রতিদিন যে ছাত্রটি আন্তরিকতার সঙ্গে পড়াশুনা করে সে-ই কেবল তার বিষয়ের উপর সত্যিকার অর্থে দখল আনতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ যথার্থ অর্থে বিদ্বান হয়ে উঠে । জীবনের সাফল্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফল। এর জন্য একজন মানুষকে যথার্থ মূল্য দিতে হয় এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় । এটাই স্বাভাবিক, আমরা যে বীজ আমি বপন করবো সে বীজের ফসলই ঘরে তুলব । সাফল্যের জন্য ক্রমান্বয়ে ধাপে ধাপে এগুতে হবে। জীবনের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই ।
ব্যক্তিত্ব-নৈতিকতার নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়ে জীবনে সফলতা পাওয়া যাবে না-এমন নয়। কিন্তু তা হবে প্রকৃত বিদ্বান না হয়ে চাতুরীর মাধ্যমে ভালো ফল করার মতো। অর্থাৎ তা হবে ক্ষণকালীন সাফল্য। এতে যে মানবিক সম্পর্ক তৈরি হবে তা স্বল্পকালীন, দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী নয়। ক্ষণিক চমকের জন্যে বা কোনো স্বল্পস্থায়ী সম্পর্কের জন্য ব্যক্তিত্ব-নৈতিকতার কৌশলসমূহ কার্যকরী, কিন্তু কোনো মানুষের যদি গভীর বিশুদ্ধতা এবং মৌলিক চারিত্রিক শক্তি না থাকে তবে জীবনযুদ্ধ কেবল বাহ্যিক চাকচিক্যে রূপ নেয়, এবং মানবিক সম্পর্কগুলো ব্যর্থ হয় । এতে যে সাফল্য আসে তা হয় স্বল্পকালীন।
অনেকেই আছে তাদের গৌণ মাহাত্ম্যের গুণে, অথবা তাদের বুদ্ধির জন্যে সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করতে পারে। কিন্তু তাদের চরিত্রে মুখ্য মাহাত্ম্যের বা ভালোত্বের অভাব দেখা যায়। এ ধরনের মানুষ যে কোনো দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিচয়-সংকটের সম্মুখীন হয়। এই সংকট আগেও হতে পারে বা পরেও হতে পারে। কিন্তু হবেই হবে। এই সংকট হতে পারে তাদের ব্যবসায়ের অংশীদারের সঙ্গে, হতে পারে তাদের পারিবারিক জীবনে সঙ্গে, বন্ধুর সঙ্গে, অথবা কিশোর বা তরুণ সন্তানের সঙ্গে । মানুষের চরিত্রই সবচেয়ে বেশি নিবিড়ভাবে পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন করে ভাববিনিময় করতে পারে। এজন্য ইমারসন বলেছেন, 'তুমি আমার কানের কাছে চিৎকার করছো। কিন্তু তুমি কী বলছো আমি এর কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।'
সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের চারিত্রিক শক্তি বা গুণাবলি রয়েছে। কিন্তু পারস্পরিক যোগাযোগ বা ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে তাঁদের দক্ষতার অভাব থাকে। এই অদক্ষতা নিঃসন্দেহে তাঁদের মানবিক সম্পর্কের মান ক্ষুণ্ণ করতে পারে। কিন্তু এই ক্ষতিও গৌণ। কারণ, আমরা যা বলি বা করি এবং আমরা যে ভাববিনিময় করি তা অভিন্ন নয়, বরং আলাদা। পারস্পরিক ভাববিনিময়ে আমাদের মৌলিক চরিত্রই প্রকাশিত হয়। সত্যিকার অর্থেই কোনো কোনো মানুষের উপর আমরা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি। কারণ, আমরা তাদের চরিত্র সম্পর্কে জানি। তারা কথাবার্তায় আমাদেরকে মোহিত করতে সক্ষম হোক বা না হোক, তাদের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক ও দক্ষতা থাকুক বা না থাকুক, আমরা তাদেরকে বিশ্বাস করি। ফলে আমরা তাদের সঙ্গে সফলভাবে কাজ করতে পারি।
এ প্রসঙ্গে উইলিয়াম জর্জ জর্ডানের একটি মন্তব্য স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছেন, 'প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই ভালো ও মন্দের আশ্চর্যজনক ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতা হলো তার জীবনের নীরব, অবচেতন, অদৃশ্যের প্রভাব। আর এই প্রভাব হলো একজন মানুষ যথার্থ অর্থে ঠিক যা তারই বিরামহীন বিচ্ছুরণ। সে ভণিতা করে তার বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারে না।'
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 21.2710348667349 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.