#বাজি
·
#বাজি
#৭মতথাশেষ_পর্বঃ-
••••••••আয়াত নিজের রুমে তন্ন করে ফাইলটা খুজছে। কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। সেটা দেখে তানিয়া জিগেস করলো
তানিয়া: কতক্ষন ধরে কি খুজছো আয়াত?
আয়াতঃ কিছু না?
তানিয়া: আমাকে বলো আমি খুজে দিচ্ছি?
আয়াতঃ আলমারিতে গ্রিন আর হোয়াই কালারের একটা ফাইল ছিলো তুমি দেখেছো?
তানিয়া মনে মনে ভাবছে এই রে ফাইলটাতো আমার কাছে। আমি তো ওটার কথা ভুলেই গেছিলাম। কিন্তু আয়াত ওটাকে পাগলের মত করে কেন খুজছে ? কি আছে ঐ ফাইলে? নাহ আগে আমাকে জানতে হবে তারপর ফাইলের কথা বলবো। এর আগে বলা যাবে না। স্যরি আয়াত বিয়ের পর এই প্রথম তোমায় মিথ্যা বলছি। মাফ করে দাও। ফাইলের বিষয় সব জানলেই আমি তোমায় সব সত্যি বলে দিবো।
তানিয়া: না আয়াত আমি দেখি নি।
আয়াতঃ ওহ আচ্ছা। আচ্ছা শোন আমি বের হচ্ছি। তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবে। আর হ্যা বাচ্চাদের মত দুষ্টমি করবা না। তুমি কিন্তু তন্নি আর অনিক (আয়াতের বোনের ছেলে মেয়ে) ওদের সাথে একদম দৌড়া দৌড়ি করবা না।
তানিয়া: আয়াত তুমি এমন ভাবে কথা বলতেছো যেন আমি কোন ছোট বাচ্চা?
আয়াতঃ তার থেকে কম কিসে ?
তানিয়া: পচাঁ আয়াত (মুখ ভার করে)
আয়াত হাসি দিয়ে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে
আয়াতঃ আই লাভ ইউ।
তানিয়া বাচ্চা মেয়ের মত আয়াতকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে থাকে। আয়াত তানিয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে হাসপাতালে যায়। তারপর তানিয়াও ফাইলটা নিয়ে বেরিয়ে পরে। আসলে ফাইল ছিলো তানিয়া মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট। দু মাস আগে তানিয়ার কিছু অসুস্থতার জন্য আয়াতের বোনের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলো। তখন যে টেস্ট গুলো দিয়েছিলো এটার মধ্যে তারই রিপোর্ট। কিন্তু রিপোর্ট দেখে আন্নি বলেছিলো সব ঠিক আছে। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে ফাইলটা আয়াতের কাছে কেন? আর আয়াতই বা ফাইলটা নিলো কেন? আয়াত বা আন্নি আপুর কাছে জিগেস করলে তো তারা কিছু বলবে না। তার থেকে বরং অন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। দেখি তিনি কি বলেন? কথা গুলো ভাবতে ভাবতে তানিয়া হাসপাতালে পৌছে গেলো। ডাঃ সুহানা নামের এক গাইনোক্লোজিস্টের কাছে গেলো। এবং রিপোর্ট গুলো দেখালো।
ডাঃ সুহানাঃ মিসেস তানিয়া! রিপোর্ট গুলো তো দুমাস পুড়োনো তাহলে এখন কেন নিয়ে আসলে?
তানিয়া: আসলে ডাঃ আপনার কাছে মিথ্যা বলবো না। কেন জেনো রিপোর্ট গুলো আসার হ্যাজবেন্ড আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলো। আমি জানতে চাই রিপোর্ট গুলো কি লেখা আছে?
ডাঃ সুহানাঃ তাহলে আপনার না জানাই বেটার!
তানিয়া: প্লিজ ডাঃ আমার মনে হয় এই কারনেই আমার হ্যাজবেন্ড সবসময় কোন এক টেনশনে থাকে। প্লিজ ইট'স এ ডিপ রিকোয়েষ্ট। আমার জানাটা খুব জরুরি।
ডাঃ সুহানাঃ ঠিক আছে তবে তার আগে আপনি এই টেস্ট গুলো আবার করান রিপোর্ট কালকে জানতে পারবেন।
তানিয়া: ধন্যবাদ ডাঃ অনেক ধন্যবাদ।
তানিয়া টেস্ট গুলো করিয়ে বাসায় চলে আসলো।
রাতের বেলা তানিয়া জানালার কাছে দাড়িয়ে ভাবছে কি আসতে পারে রিপোর্টে ? আয়াত এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে
আয়াতঃ আমার জানটা কি ভাবছে?
তানিয়া: কিছুনা। আচ্ছা আয়াত তুমি কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছ?
আয়াতঃ (কিছু টা তুতলিয়ে) কই নাতো।
তানিয়া আয়াকের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আয়াত ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তানিয়া: আয়াত একটা কথা বলি! হাসবে নাতো?
আয়াতঃ বলো?
তানিয়া: আমাদের একটা বেবি হলে কেমন হবে?
মূহুর্তের আয়াতের খুশি খুশি মুখটা কালো মেঘে ছেয়ে গেলো। তারপরও নিজেকে সামলে বললো
আয়াতঃ তুমি এখনো অনেক ছোট।
তানিয়া: এ্যাঁ অনার্স ৩য় বর্ষে পড়া মেয়ে ছোট? তুমি জানো আমার অনেক বান্ধবি আছে যাদের বেবি আছে।
আয়াতঃ হ্যা ঠিক আছে। কিন্তু আগে তুমি পড়া লেখা শেষ করে নিজের পায়ে দাড়াও তারপর কথা! কারন আমি চাইনা তুমি কারো উপর নির্ভরশীল হও। আমি চাই তোমার নিজের পরিচয় হোক। নিজের স্বপ্ন গুলো পুরোন হোক।
তানিয়া: সো সুইট। লাভ ইউ। বাট তবুও আমার বেবি চাই।
আয়াতঃ আল্লাহ চাইলে সব হবে।
পরেরদিন তানিয়া হাসপাতালে গেলো
তানিয়া: কি খবর ডাঃ?
ডাঃ সুহানাঃ তোমার রিপোর্ট গুলো দেখলাম। কিন্তু কথা গুলো ঠিক কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না? তোমার সাথে কেউ থাকলে ভালো হতো । কারন এ ধরনের কথা গুলো সরাসরি তোমাকে বলা ঠিক না।
তানিয়া: এমন কি কথা ডাঃ? বলুন? আমি শোনার জন্য প্রস্তুত।
ডাঃ সুহানাঃ আচ্ছা তানিয়া তোমার কি কখনো একসিডেন্ট জাতীয় কিছু হয়েছিলো যাতে তুমি তোমার পেটে খুব আঘাত পেয়েছিলে।
তানিয়া: কিছুক্ষন ভেবে। হ্যা ডাঃ যখন আমার বয়স তেরো কি চৌদ্দ বছর তখন আমি একবার কিছুটা উচু জায়গা থেকে পরে গিয়ে পেটে খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছিলাম। তখন আমার অনেক ব্লাডিংও হয়েছিলো। তারাতারি চিকিৎসা পাওয়ায় তেমন ক্ষতি হয়নি। শুধু মাত্র ছোট একটা অপারেশন করতে হয়েছিলো। তাতে তেমন কোন কাটাছিড়া লাগেনি।
ডাঃ সুহানাঃ তখন কি তুমি তোমার রিপোর্ট এর বিষয়ে তোমার বাবা মায়ের কাছে কিছু জানতে চেয়েছিলে?
তানিয়া: না তবে বাবা মা তখন খুব টেনশন করতো। আমি ভাবতাম আমি অসুস্থ বলে!
ডাঃ সুহানাঃ মানে তোমার বাবা মা সব জানে? কিন্তু তোমায় বলেনি! ইনফ্যাক্ট তোমার বরও জানে। তুমি কষ্ট পাবে বলে তারা কেউ তোমায় বলেনি।
তানিয়া: এমন কি কথা ডাঃ ?
ডাঃ সুহানাঃ দেখো তানিয়া শক্ত হও। আমি এখন যা বলবো তার জন্য তোমার মনকে শক্ত করো। দেখো টেনশন নিবে না। এমন অনেকের সাথেই হয়।
তানিয়া: ডাঃ বলুন আমি ঠিক আছি।
ডাঃ সুহানাঃ তানিয়া তোমার সেই একসিডেন্টে তোমার পেটে খুব আঘাত লাগে। যার ফলে তোমার গর্ভনালী ফেটে যায়। আর তোমাকে বাঁচানোর জন্য ডাক্তারা তোমার গর্ভনালী কেটে ফেলে। ডাঃ কিছুক্ষন চুপ
তানিয়ার নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছে তারপরও কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললো তারমানে?
ডাঃ সুহানাঃ তারমানে তুমি কখনো মা হতে পারবে না। পৃথিবীর আধুনিক থেকে আধুনিক তম চিকিৎসা তোমার কোন কাজে আসবে না।
ডাঃ কথা শুনে তানিয়া নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না চেয়ার থেকে দপ করে নিচে পরে অজ্ঞান হয়ে গেলো। ডাঃ তারাতাড়ি ওকে বেডে শুয়ালো। তারপর তানিয়ার মোবাইল থেকে আয়াতকে ফোন করে আসতে বললো। আয়াত তাড়াতাড়ি ডাঃ এর কাছে চলে গেলো। ডাঃ সব কিছু খুলে বললো। আয়াত নিঃস্তব্ধ হয়ে গেলো। কারন আয়াত এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। এই ভয়ের কারনে সব সত্যি জেনেও কিছু বলতে ছিলো না।
ডাঃ সুহানাঃ মিঃ আয়াত আপনি নিজেও একজন ডাক্তার। আপনাকে কিছু বলার প্রয়োজন নাই। ওনি হঠাৎ এমন কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারেনি। কিছুক্ষন ঘুমাক। এখন উঠলে হয়তো ওভার রিয়াক্ট করতে পারে। আপনি ওনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।
আয়াত তানিয়াকে পাজকোলা করে নিয়ে যাচ্ছে। তানিয়ার মাথাটা আয়াতের বুকের সাথে লেগে আছে। কিন্তু চোখের কোন বেয়ে অশ্রুর বইছে। গাড়িতে বসে আয়াত তানিয়ার মাথাটা নিজের কোলের উপর রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। আয়াত তানিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ আয়াতের চোখ থেকেও বের হচ্ছে অশ্রু নামক নোনা তরলটা। আয়াত সেটাকে থামানোর যথেষ্ট চেষ্টা করছে কিন্তু বারবার ব্যার্থ হচ্ছে। বাড়ি এনে তানিয়াকে রুমে শুইয়ে দিলো। তানিয়া ঘুমাচ্ছে ? নাকি ঘুমের ঘোরে থেকে নিজের জীবনের চরম সত্যিটাকে ইগনোর করতে চাইছে।
আয়াতের মাঃ কি হয়েছে তানিয়ার?
আয়াতঃ বাইরে চলো তারপর বলছি।
বাইরে এসে মা ও সব সত্যি জেনে গেছে।
আন্নিঃ কি বলিস ভাই? মেয়েটা এতটুকু বয়সে এত বড় একটা আঘাত কি করে সইবে?
আয়াতঃ আপু সে জন্যই তো ওর কাছে আমি কিছু বলিনি। আমি শুধু ওকে ভালোবাসি। তার ওর অসম্পূর্ন ত্রুটি গুলোকেও আমি ভালোবাসি। দু মাস আগে যখন তুই তানিয়ার রিপোর্টের কথা আমায় বললি। তখন ভুল বসতো সিয়াম শুনে ফেলেছিলো।তারপর থেকেই সিয়াম তানিয়াকে বিয়ে করতে নারাজ হয়ে যায়। কিন্তু আমি তানিয়াকে এত ভালোবাসি যে ওর সব কিছুকে আমি মেনে নিতে রাজি। এমন কি তানিয়ার বাবা যখন বিয়ের আগে মাকে সব বলেছিলো তখন মা ই বলেছিলো। এই সামান্য খুদে তানিয়ার জীবন নষ্ট হবে না। মা বাবা সবাই জানে তানিয়ার বিষয়টা। কিন্তু তানিয়াকে কেউ কিছু এ জন্য বলতে ছিলো না যাতে এত কম বয়সে ও বড়সড় ধাক্কা না খায়। কিন্তু আপু কথায় আছে না সত্যি লুকানো অসম্ভব। এখন কি করবো আমি? তানিয়াকে কি বলে শান্তনা দিবো?
আয়াতের বাবাঃ তুই তানিয়ার কাছে যা। এখন ওর পাশে যদি কারো সবচেয়ে বেশি থাকা দরকার সে হচ্ছিস তুই।
তানিয়া দড়জার আড়ালে দাড়িয়ে সবার কথা শুনছিলো। আয়াতের আসার শব্দ পেয়ে আবার বিছানায় গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। তানিয়া মনে মনে ভাবছে একটা মেয়ে ঠিক কতটা ভাগ্যবতী হলে এমন পরিবার এমন স্বামী পায়? আল্লাহ আমাকে মা হবার ক্ষমতা দেয়নি তার ক্ষতিপুরোন হিসাবে আয়াত আর ওর পরিবারকে আমায় দান করেছে। আল্লাহ তুমি ঠিক কতটা মহান! তোমার মহানুভবতার সীমা কল্পনা করা আমাদের মানুষের পক্ষে সম্ভব না। আয়াতকে তুমি আমার জীবনে নুর হিসাবে পাঠিয়েছো। যে আমার জীবনটাকে আসন্ন অন্ধকার থেকে আলোকিত করার চেষ্টা করছে।
আয়াত এসে তানিয়ার পাশে বসলো। ওর চোখ থেকে বেয়ে পড়া অশ্রুগুলো মুছে দিয়ে কপালে ভালোবাসার চিন্হ একে দিয়ে বললো।
আয়াতঃ চোখ বন্ধ করে তুমি ঠিক যতটা অন্ধকার দেখছো চোখ খুললে ঠিক ততটাই আলো। তানিয়া তুমি ভুলে যাচ্ছো রঙিন আগামীর স্বপ্ন গুলো কিন্তু অন্ধকারে ঘুমের মধ্যেই বোনা হয়। তুমি অন্ধকারে রঙিন স্বপ্ন দেখো। আর চোখ খুলার পর সেটা আমায় বলো তোমার স্বপ্ন গুলো পুরোনের দায়িত্ব আমার। একান্তই শুধু আমার। কারন তুমি নিজেই তো আমার । আমার পিচ্চি তানিয়া। চোখ খুলো না তানিয়া। তারপর তানিয়ার দুচোখে দুটো ভালোবাসার পরশ দিলো।
তানিয়া উঠে আয়াতকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আয়াতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে আয়াতকে ছেড়ে দিলে ওকে ছেড়ে পালিয়ে যাবে। সেই ভয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আয়াতকে।
আয়াতঃ তুমি আমায় ছেড়ে যেতে চাইলেও আমি তোমায় ধরে রাখবো। বলেছিলাম না যে তোমার পায়ে শেকল দিয়ে রেখে হলেও তোমায় আমি নিজের কাছে শক্ত করে ধরে রাখবো। তুমি আমার শুধুই আমার।
তানিয়া: তাই রাখো আয়াত। তোমাকে ছেড়ে যে আমি বাঁচতে পারবো না। দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো। কিন্তু ভয় হয় যদি একটা বেবির কারনে তুমি আমাকে----- বাকিটা বলার আগে আয়াত নিজের আঙুল দিয়ে তানিয়ার ঠোঁট চেপে ধরে।
আয়াতঃ হুসসসস। আরে বোকা যদি তেমন কিছু হতো তাহলে আমি সব জেনে তোমাকে বিয়ে কেন করলাম? আমি তো বিয়ের আগে থেকেই তোমার এই সমস্যাটা সম্পর্কে জানতাম। তাইতো যখন বুঝলাম সিয়াম তোমায় এই কারনে বিয়ে করবে না বরং বিয়ের আগে তোমার সাথে******। সেজন্যই তো #বাজি ধরলাম। তানিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই তোমার দোষ গুন, ভুল ত্রুটি, সব কিছুকে ভালোবাসি।
তানিয়া: কিন্তু আয়াত আমি কখনো মা হতে পারবো না। আর না তোমাকে কখনো বাবা হবার সুখ দিতে পারবো?
আয়াতঃ এই তানিয়া শুধু গর্ভে ধারন করলেই বা জন্ম দিলেই কি বাবা মা হয়? পৃথিবীতে অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা পাঁপ কাজে লিপ্ত হয়ে বাবা মা হয়। কিন্তু সমাজের ভয়ে তাদের বাচ্চা গুলোর স্থান হয় ডাস্টবিনে নয়তো অনাথ আশ্রমের বারান্দায়। আর তাছাড়া আমাদের তো একটা সন্তান চাই তাই না? বল?
তানিয়া: হুমম
আয়াতঃ তো সেটা কি জরুরি যে সন্তান তোমার গর্ভ থেকেই জন্ম নিবে? দেখো তানিয়া আমাদের সন্তানের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারন তুমি থাকলে আমার আর কিছু চাই না। তবুও তোমার যেমন একটা সন্তান চাই তেমনি এমন অনেক বাচ্চা আছে যাদের বাবা মা চাই। আমরা তাদের মধ্যে থেকে একজন এ্যাডপট করে নিবো। রক্তের সম্পর্কই কি সব? মনের সম্পর্ক বলেও একটা সম্পর্ক আছে। বুঝলা সুইট হার্ট
তানিয়া: সেটা নাহয় বুঝলাম আয়াত। কিন্তু তুমি কি ভাবছো আমার বাচ্চা না হবার কথা শুনলে বাইরের লোক আমাকে পাঁচটা কথা বলবে না? আমাকে তারা তখন অপয়া, বন্ধ্যা বা বাজ নামে ডাকবে না। আর যে বাচ্চাটিকে আমরার এ্যাডপট করবো তাকে কি তারা বার বার অনাথ বলে বাজে কথা বলবে না? তুমি জানো না আমাদের সমাজের কিছু মানুষের মানুষিকতা ঠিক কতটা নিচু।
আয়াতঃ তানিয়া প্রথম এই বাজে কথা গুলো আর কখনো বলবে না। আর দ্বিতীয়ত সমাজের চিন্তা আমি বা আমার পরিবারের কেউ করে না। তারপরও তোমার যদি ভয় হয়। তাহলে আমরা একটা কাজ করতে পারি?
তানিয়া: কি কাজ?
আয়াতঃ দেখো তানিয়া তুমি আগে থেকেই জানো আমরা আমেরিকায় সেটেল কিন্তু বাবা মা দেশে থাকতে চায়। সেখানে আমাদের সব কিছু আছে। আমরা কয়েক বছরের জন্য আমেরিকায় চলে যাবো। সেখান থেকে আমরা আমাদের এ্যাডপট করা বেবি নিয়ে ফিরবো। তখন সবাই ভাববে বেবিটা আমাদের। কেউ তার দিকে আঙুল তুলবে না।
তানিয়া ছলছল চোখে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়াতঃ কি হলো?
তানিয়া আয়াতকে জড়িয়ে ধরে বললো
তানিয়া: তুমি আমার জন্য এত কিছু কেন করছো?
আয়াতঃ সারা রাত রামায়ন পরে সকালে বলে সীতা কার বাপ? তানিয়া এগুলো আমি তোমার জন্য না নিজের জন্য করছি। আমার তানিয়াটা খুশি থাকলে আমার হৃদয়টা খুশি থাকে। আর আমার তানিয়াটাই হচ্ছে আমার হৃদয়। বুঝলা? আমি আমার এই হৃদয়টাকে প্রচন্ড পরিমান ভালোবাসি। বলে খুব শক্ত করে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। এতটা শক্ত করে পারলে তানিয়াকে নিজের বুকের ভিতর পুরে রাখে।
কিছু দিন পর ওরা সত্যিই আমেরিকা চলে গেলো। এদিকে কয়েকটা এ্যাডপশন সেন্টারে বাচ্চার জন্য খোজ নিতে থাকলো। আল্লাহ ওদের দিকে মুখ তুলে চাইলো। একটু দেরি হলো কিন্তু দেড় বছর পর একটা ফুটফুটে এক মাসের মেয়েকে ওরা দত্তক নেয়। আয়াত মেয়েটাকে তানিয়ার কোলে দিয়ে বলে। নাও আমাদের মেয়ে। তানিয়া মেয়েটাকে কোলে নিয়ে আয়াতের বুকে মুখ লুকিয়ে অঝোড়ে কেঁদেছিলো। এ কান্না যে খুশির কান্না। মেয়েটার নাম রাখে #সকাল কারন মেয়েটা ওদের শূন্য আধারময় জীবনটাকে সকালের মিষ্টি রোদে পরিপূর্ন্য করে তোলে। আয়াত তানিয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসে। আয়াত তার কথায় কাজে কখনো তানিয়ার ক্রুটিটাকে নিয়ে কষ্ট পেতে দেয় না। ইনফ্যাক্ট আয়াতের পরিবারের লোকও তানিয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তানিয়াও তাদের ভালোবাসার মান রাখতে জানে। আর আয়াত? আয়াত আর তানিয়ার ভালোবাসাতো দিন দিন বাড়ছে । কোন ঘাটতি নেই ওদের ভালোবাসায়।
তানিয়া একা একা নিজের জীবনের কাহীনি গুলো লিখছে আর মুচকি হাসছে। কি লিখছে?
জীবনের শুরুটা একটা #বাজি দিয়ে হয়েছিলো কিন্তু সেই #বাজিটাই জীবনে পরম পাওয়া হয়ে দাড়ালো। জীবনের #বাজিতে হার জিতের খেলায় আমরা কখনো নিজের মানুষটার কাছ থেকে দূরে চলে যাই আবার কখনো নিজের মানুষ গুলোকে এতটা কাছে পেয়ে যাই যা সয়ং বিধাতা জানে। নিজের মানুষটার সামান্য ভুলত্রুটি ইগনোর করতে পারলে জীবনটা হবে মধুর থেকেও মধুময়। তাই নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে বোঝার চেষ্টা করুন জানার চেষ্টা করুন। আর কোন বিপদ আসলে আল্লাহর উপর ভরশা রাখুন।
এর মধ্যে সকাল কান্না শুরু করে দিলো।
তানিয়া: আরে মেয়েটা আবার কাঁদছে! একটু লিখতেও দিচ্ছে না। এখন আয়াতের কাছে না দেয়া পর্যন্ত থামবে না। ছয় মাসের মেয়ে অথচ বাবাকে ছাড়া কিছু বোঝে না। আয়াত আয়াত!
আয়াতঃ হুমম বলো।
তানিয়া: ধরো তোমার মেয়েকে। কেমন বাবা পাগল হয়েছে দেখো।
আয়াতঃ তো আমার মেয়েতো আমার মতই হবে। আয়াত সকালকে কোলে নিতেই সকাল চুপ হয়ে গেলো। আয়াত সকালকে একটা চুমো দিয়ে তানিয়ার ঠোটে একটা চুমো দিলো।
তানিয়া: এটা কি হলো?
আয়াতঃ একটু মিষ্টি খেলাম।
তানিয়া: ভালো হয়ে যাও মেয়ে বড় হচ্ছে।
আয়াতঃ ওরকম ভালো তো আমি কখনো হবো না জান। আই লাভ ইউ।
তানিয়া: হাসি দিয়ে লাভ ইউ টু।
সত্যিই ভালোবাসার জাদু মাখানো মধু যে পায় তার জীবনে আর কিছুর প্রয়োজন হয় না।
#####সমাপ্ত#####
মানুষ মাত্রই ত্রুটি, কোন মানুষই পারফেক্ট না।
আমাদের উচিৎ নিজের ভালোবাসার মানুষের ত্রুটি গুলোকে বাদ দিয়ে নিঃশ্বার্থ ভাবে তাকে ভালোবাসা।
নয়তো ভালোবাসার সাগরের অতলে লুকিয়ে থাকা
যে ধনভান্ডার আছে তার খোজ পাবেন না।
গল্পটা ধের্য্য সহকারে পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন। আর হ্যা সব সময়ের মত ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
https://www.packagetrackr.com/
সুন্দর লিখেছেন ।
im flow u...apnr post a upvote kore dilam...asa kori akhon thake amr sob post a upvote and comment korben...ami korbo apnr post a
জ্বি গুরু ।