বস্ত্রহরণ

in #life2 years ago

Image Source: Pixabay

অদ্ভুত অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারদিক! এপাড় বাংলা ওপাড় বাংলা! মাঝখানে বিভেদের কাঁটাতার! সেই কাঁটাতারের দুই দিকেই ভুলুন্ঠিত নারীর সম্মান! নারীর স্বাধীন ব্যক্তিত্বের মৌলিক অধিকার! পথে ঘাটে দিনে রাতে নারী আজ হিংস্র মানবের নারকীয় বীভৎসতার শিকার! প্রশাসন আছে দলতন্ত্রের করাল গ্রাসে! রোজকার শিরোনামে সবচেয়ে ব্যবহৃত শব্দ, "ধর্ষণ" এ কোন সভ্যতা! এ কোন শতাব্দী! বিবেকের আয়নায় প্রতিদিন জমে ওঠে গ্লানি! মানুষের বীভৎসতা রুখতে ব্যর্থ সভ্যতা সভ্যসমাজ! সমাজের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসে! সমাজের প্রাসঙ্গিকতা অবিশষ্ট থাকে তবে কতটুকু? যে সমাজ নারীর মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে অপারগ? যে সমাজ সুষ্ঠ দক্ষ প্রশাসন দিতে ব্যর্থ?

বর্তমান সময় যে হারে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে, জাতির পক্ষে তা অশনি সংকেত স্বরূপ! সমাজদেহের অনেক গভীরেই ধরেছে পচন! যা কর্কট রোগের মতো ছড়াচ্ছে অতি দ্রুত! এসময়ে সাধু উপদেশে কাজ হবে না! কাজ হবে না দোষারোপে! চাই দূর্নীতিমুক্ত বলিষ্ঠ প্রশাসন! কঠোর থেকে কঠোরতম আইন! দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন! এবং সুসংগঠিত সামাজিক আন্দোলন! যে আন্দোলনের তিনটি মুখ থাকতে হবে! প্রথমত প্রশাসনিক তৎপরতা ও দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করতে সরকারের উপর নিরন্তর চাপ দিয়ে যাওয়া! নির্যাতিতা নারীর পাশে থেকে তার সুস্থজীবন সুনিশ্চিত করা! এবং সমাজের ভেতর থেকে সমাজ শোধনের বন্দোবস্ত করা! এই তিনদিকেই আন্দোলনের গতিমুখকে ফলপ্রসু করে তুলতে হবে!

শুরু করতে হবে একেবারে গোড়া থেকে! প্রাথমিক থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তরে সহশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে! বাধ্যতামূলক করতে হবে সকলের জন্য শিক্ষা! শিক্ষা বিস্তার করতে হবে ব্যাপক হারে! প্রতিটি পাড়ায় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলমতের ঊর্দ্ধে উঠে নিজের অঞ্চলকে দুর্বৃত্ত মুক্ত করতে হবে! করতে হবে ধর্ষণ মুক্ত! নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে নিজের নিজের অঞ্চল থেকেই! এই ভাবে নিরাপদ বলয়ের পরিধি বাড়িয়ে যেতে হবে ক্রমাগত ।নিজেদের অঞ্চলের প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলির কাজকর্মের উপর নজর রেখে তাদেরকেও এই নিরাপদ বলয় সৃষ্টির আন্দোলনে শামিল করে নিতে হবে! সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই অসুখ প্রতিহত করা সম্ভব নয়! এবং নারীকে এগিয়ে আসতে হবে যুথবদ্ধ প্রবল শক্তি রুপে! সমবেত ভাবে দলবদ্ধ উদ্যোগে প্রতিরোধের পথে এগোতে হবে! আইন আদালত প্রশাসন সর্বত্র ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে নিজেদের দাবি নিয়ে হাজির হতে হবে!

প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মহিলা শাখাকে অন্যান্য দলের মহিলা শাখার সাথে একযোগে এই প্রতিরোধ কর্মসূচীতে এগিয়ে আসতে হবে, সমস্ত রাজনৈতিক মতপার্থক্য এবং ক্ষমতায়নের সমীকরণকে দূরে সরিয়ে রেখে! সমাজদেহের ভিতরে এইভাবে নারী শক্তির জাগরণ ভিন্ন কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়! যুব সমাজের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রেখে, মানসিক অসুস্থতা থেকে যুবসমাজকে যথাসাধ্য দূরে রাখতে হবে! এবং উন্নত চরিত্র গঠনে কাজ করে যেতে হবে একসাথে!

সমাজ জীবনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বাড়াবাড়ি, রাজনৈতিক দলগুলিতে সমাজ বিরোধীদের অবাধ আশ্রয় প্রাপ্তি, নারী নির্যাতনের এই বাড়াবাড়ির অন্যতম কারণ! রাজনৈতিক দলগুলির হয়ে অপকর্ম করে দলীয় সম্পদ হয়ে ওঠা সমাজবিরোধীদের হাতে নিগৃহীত হওয়া নারীদের প্রায় সবাই ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটে এই সব অত্যাচার সহ্য করে চলে! যার অধিকাংশই খবর হয়ে ওঠে না! রাজনৈতিক দলগুলির ভণ্ডামী এই অবস্থার সৃষ্টির জন্য দায়ী! সবচেয়ে বড়ো দুঃখের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের প্রশাসনের শীর্ষে থাকা জনপ্রিয় দুই নেত্রীর সময়কালেই নারী নির্যাতনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি! ফলে পুরুষতন্ত্রের শৃঙ্খল দেশের অনেক গভীর থেকেই সক্রিয়! এর বিরুদ্ধে সমাজ বিপ্লব দরকার!

This was posted using Serey.io cross platform posting.