কর্ণফুলীর শহর চট্টগ্রামে, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী টারবাইন ইঞ্জিনের প্লেনে করে।
ঘুরতে পছন্দ করেন, কিন্তু উড়ার শখ জাগে না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। পাখির মতো দুইটা ডানা নেই বলে অনেকে হয়তো ভাবেন কপালে উড়ে যাবার ভাগ্য নেই। অন্যথায় মনে হয় , ধ্যাৎ ডুরালুমিন আর কম্পোজিটের ডানায় করে উড়তে কত টাকাই না লাগে। হ্যা, দু-চার পাখার প্লেনের কথাই বলছি। (যারা এই ব্যাপারে বিজ্ঞ, তাদের জন্যে এই পোস্ট নয়)
কমপক্ষে শ'খানেক মানুষের সাথে প্লেনের ব্যাপারে কথা বলেছি এই পর্যন্ত, শুধু তাদের ধারণাটা বুঝার জন্যে - টেকনিকাল, এক্সপেরিয়েন্সিয়াল এবং ফিনান্সিয়াল। টেকনিকাল এবং এক্সপেরিয়েন্সিয়াল ব্যাপারে ধারণায় অনেক গড়বড় আছে ৯০% এরই, আর ফিনান্সিয়ালের ব্যাপারেও গড়বড় ধারণাটাও নেহায়েৎ কম নয়। রিক্সাচালক মামাও মনে করেন প্লেনে চড়তে কমপক্ষে তার একমাসের সম্পূর্ণ ইনকাম খরচ হয়ে যাবে, যা মোটেও সত্য নয়।
আচ্ছা, ২,৩০০ টাকায় ৪১৯ জনের প্লেনে উঠার প্ল্যান শেয়ার করার আগে নিজের পুরোনো একটা এক্সপেরিয়েন্স বলে নেই। প্রায় ১০ বছর আগে প্রথমবার প্লেনে ফ্লাই করি। প্লেনের টিকেট কাটার জন্যে সম্পূর্ণ টাকা (৩,৪৫০ টাকা ) সাথে ছিল না। তখন, অর্থাৎ প্রায় এক দশক আগে ৩,৪৫০ টাকা কোনো স্টুডেন্টের জন্যে একেবারে কম টাকাও ছিল না। এই ঘাটতি থাকার কারণে আমারই পুরোনো এক চেকে, তারিখ আর অর্থ পরিমান পরিবর্তন করে নিজে ছয়বার সাইন করি আর টাকা তুলে বিমানের অফিস থেকে টিকেট কিনি। ভাগ্যে জোটে ২২০ জন ক্যাপাসিটির এয়ারবাস A310 যেটা মাত্র কয়দিন আগে বিমান থেকে ফেজ আউট করে দেয়া হয়। অন্যান্য খরচ বাবদ আরো কিছু টাকা শেষ হয়ে যাবার পর, সর্বশেষ ১৫ টাকা পকেটে নিয়ে সিলেটের এয়ারপোর্টে ঢুকি আর ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে লোকাল ৩ নম্বর বাসে করেই সেদিন বাসায় ফিরি।
তবে প্রথম সেই টেক-অফের ফিলটা এখনো ভুলতে পারিনি। তা ছিল খুব অপরিচিত একটা মারাত্মক রকমের অনুভূতি, যেখানে মধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে পুরো শরীরটা তিনশ কিলোমিটার হরিজন্টাল স্পীডে উপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দু-চোখ দিয়ে দেখা সবুজ শহরটা দ্রুতই নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, শুভ্র মেঘগুলোও বাই-বাই দিচ্ছে উপরে উঠার পথে আর মোস্ট ইম্পোর্টেন্টলি, মন ভাবছে, ঠিক থাক থাকবে তো সবকিছু? থাকতে পারবো তো আকাশে? স্পষ্ট মনে আছে, এই গোজামিল অনুভূতিতে মুখে আমার ছিল একটু মুচকি হাসি , তবে রাগ ও হচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো আরো আগেই এর অদ্ভুত স্বাদটা নিতে পারলে বেশি ভালো হতো।
মজার ব্যাপার হলো আপনি চাইলে, ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট গুলোর একটাতে করে ফ্লাইটের এক্সপেরিয়েন্স নিতে পারেন, সেটা বাংলাদেশেই, আর তা একটা ডোমেস্টিক ফ্লাইটে করেই। এয়ারক্রাফটি হলো বিমানের Boeing 777-300ER, এর টারবাইন ইঞ্জিন দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন (GE90). ২,৩০০ টাকায় একটু বেশি বেশি মনে হচ্ছে না? স্বাভাবিক।
এই বড় এয়ারক্রাফটগুলো সাধারণত শুধুমাত্র ডোমেস্টিক ফ্লাইটের জন্যে উড়ানো হয় না। বিমানের এ ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটগুলো শুধু ঢাকাতেই অপারেট করে না, এগুলো ঢাকা থেকে ছেড়ে চিটাগাং বা সিলেট হয়ে সৌদি, ইংল্যান্ড বা অন্যান্য ডেস্টিনেশনে চলে যায়। বুঝানোর সুবিধার্তে ধরে নিলাম X ফ্লাইট ঢাকা থেকে ৩০০ আর পথিমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে আরও ১১৯ জন যাত্রী নিয়ে জেদ্দা যাবে। সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে উড়ার সময় ১১৯ সিট ফাঁকা থাকবে যেটা চট্টগ্রাম গিয়ে ফিল-আপ হবার কথা। এয়ারলাইন্স টেকনিক্যালি ওই ১১৯ সিট ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ডোমেস্টিক যাত্রীর কাছে সেল করে দেয়, এতে করে তারা এক্সট্রা কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারে কারণ সবসময়ই সে সিট গুলো ফিলিড আপ রাখতে পারছে। আর এজন্যই আমরা চাইলে খুব সহজেই ছোট ডোমেস্টিক রুটেও বড় এয়ারক্রাফটে ট্রাভেল করতে পারি।
কিভাবে বুজবো যে X ফ্লাইটাই Boeing 777? এর জন্যে আপনার মূলত ফ্লাইট নম্বর খেয়াল করতে হবে। যেমন, বিমানের BG 121 ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মাস্কট যায়, সাধারণত, তার মানে এটি বড় ফ্লাইট। আবার একই দিনে বিমানের BG411 ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে শুধু চট্টগ্রাম যায়, যেটি ৭০ আসনের ছোট্ট Dash 8. আপনি ফ্লাইট নম্বর দিয়ে গুগল সার্চ করে বের করতে পারবেন যে এটি কোথাকার ফ্লাইট আর কত বড় ফ্লাইট (এয়ারক্রাফট মডেল)। আবার খুব সহজেই, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ৪০০ সিরিজের ফ্লাইটগুলো এভোয়েড করলে ছোট ফ্লাইট গুলো বাদ দিতে পারবেন।
আর এয়ার ট্রাভেলের ক্ষেত্রে আপনাদের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে খুশি হব। হ্যাপি ফ্লায়িং :)
ছবি: মেঘের সাগর, বালি যাবার পথে মালয়েশিয়ান এয়ার স্পেসে তোলা। এয়ারক্রাফট : Boeing 737, এয়ারলাইন: Malindo