পরিত্যক্ত! (Abandoned!)

in Incredible Indialast month (edited)
1000051363.png

দাঁত বের করে থাকা ইটগুলোর দিকে এখন আর কেউ ফিরে চায় না!

তারা আজ বাতিলের দলে! মানুষের নজর আজ শহরের বুকে মাথা উঁচু করে থাকা আধুনিক আকারে গড়া ইমারতের দিকে।

পুরোনো মানুষ হোক, ইমারত অথবা সম্পর্ক সময়ের সাথে সবটাই এক সময় পরিত্যক্ত হয়ে যায় বোধহয়!

নতুনের প্রতি সকলের আগ্রহ, সেটা প্রানবিহীন ইমারত হোক অথবা জীবিত মানুষ কিংবা সম্পর্ক।

অথচ এই দাঁত বার করা ইটেরা নিজেদের মধ্যে ধরে রেখেছে শহরের ইতিহাস সেটা আমরা ভুলে যেতে বসেছি আর শুধু ইমারত বললে বোধহয় ভুল হবে আমরা ইতিহাসটা কেই পরিত্যক্ত ভাবতে শুরু করেছি!

সম্পর্কের শুরু আজ ইতিহাস! তাই বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজনীতা বোধ করেছে অনেক সমাজসেবী।
শুরুর সেই টান, সেই আকর্ষণ আজ কি সত্যি ব্যক্ত করা হয় পরস্পরের প্রতি?

ভেবে দেখেছেন কখনো? সম্পর্ক কখন যেনো নিজেদের অজান্তে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে!
শুধু রোবটের মত চলাফেরা করছে শরীরগুলো।

কলকাতা শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে এমন অনেক পরিত্যক্ত বাড়ি, যাদের অভ্যন্তরে সুপ্ত রয়েছে সেই স্থানের ইতিহাস।

1000051360.jpg

এক সময় যখন সেও নতুন ছিল, ঘর ভর্তি ছিল মানুষজন, তখন যাতায়াতের পথে মানুষ দাড়িয়ে একবার তাকে দেখতো, ঠিক যেমন নতুন বউ বাড়িতে প্রবেশ করলে প্রতিবেশী দেখতে হাজির হয়!

তবে, সময়ের হাত ধরে অযত্নের ফলস্বরূপ আজ সে বাতিলের খাতায়, ঠিক যেমনটি অনেক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়!
মানুষ পুরোনোকে ধরে রাখতে নারাজ।

অথচ, সেই পুরোনো থেকেই নতুনের আবির্ভাব এটা কেউ মনে রাখতেই চায় না।
নব প্রজন্ম তাই শিখেছে, সম্পর্ক হোক অথবা অন্যকিছু পুরোনো মানেই তার স্থান আস্তাকুঁড়ে!

1000051361.jpg

আজকাল কেউ গল্প শোনায় না, শেখায় না শুরুটা কোথা থেকে হয়েছিল, কি রকম ছিল আগের সময়, মানুষ, সম্পর্ক ইত্যাদি।

কারণ, এখন সবাই নিজের নিজের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত! নিজের জগৎ, নিজের পরিধি সেখানে প্রবেশ নিষেধ বাড়িতে থাকা শিশুদের, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় কারোর নেই!

আসলেই দাঁত বের করে তারা হাসছে নব প্রজন্মের দিকে চেয়ে, কারণ তারাও তো একদিন ইতিহাস হবে, পুরোনো হতে হবে সময়ের হাত ধরে সবাইকে!

তাই আজকে নিজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যারা উদাসীন, তাদের দিকে ভগ্নাবশেষ হয়ে পড়ে থাকা ইমারত গুলো চেয়ে আছে;
যদি পুরোটা ক্ষয় হয়ে যাবার আগে এই উদাসীন মানুষদের পরিণতি দেখে যেতে পারে!

শুরুটা নিয়ে যাদের মাথা ব্যথা নেই, শেখানোর আগ্রহ নেই, তারা যখন শেষের পথে হাঁটা শুরু করবেন, ঠিক একইভাবে মুখ ফিরিয়ে চলে যাবে সেই সময়ের নব প্রজন্ম!

এটাই তো পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক, যা কিছু আমরা দিয়ে থাকি, কিছুই সে নিজের কাছে রেখে না সুদ সমেত ফিরিয়ে দেয়, আর তাই আসে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সুনামি, করোনা আরো না জানি কতকিছু।

তবুও সেই ভগ্নাবশেষ অক্ষত থাকে, তাকে ছুঁতে পারে না কালের এই থাবা, কারণ সে রক্ষা করে চলেছে ইতিহাসকে!

প্রকৃতি জানে ইতিহাসের মূল্য, তাই কত ঝড় এই ইমারত সহ্য করেও, কোনো মেরামত ছাড়াও একইভাবে দাড়িয়ে আছে।

প্রতিনিয়ত বলছে শেখো, দেখো আমায়, শুরু থেকে আমি কিন্তু এমনটি ছিলাম না, সময়ের থাবা আর আধুনিক পথে পা বাড়াতে চাই নি বলে, আজ আমি অবক্ষয়ের পথে।

1000051362.jpg

আজ আমি পরিত্যক্ত! তবে যদি কখনও ইতিহাস জানতে চাও, ফিরে এসো আমার দ্বারে, এই দাঁত বের করা ইটগুলোয় কান পাতলেই সেই যৌথ পরিবারের কোলাহল আজও শুনতে পাবে!

একসাথে জমিয়ে পাত পেড়ে খাওয়া, কখনও কাঁসার বাসনে আবার কখনও কলা পাতায়!
তোমরা সেই স্বাদ বুঝবে না, কারণ সবটাই তো এখন তোমরা অনলাইন থেকে কিনতে অভ্যস্ত!

আমাদের সময় সবকিছু যোগানের ব্যবস্থা ছিল বাড়িতেই, সে চাল, ডাল হোক অথবা আনাজ পাতি!

সকলে মিলে একসাথে খেতে না বসলে পেট মন সবটাই খালি থেকে যেতো!
সারাদিনের যার যার মতো করে অতিবাহিত দিনযাপন নিয়ে খাবার শেষে আড্ডা দিয়ে তবেই ঘুমুতে যাবার অনুমতি ছিল।

তবে হ্যাঁ বাপু! আমাদের আবার তোমাদের মত রাত জাগার অভ্যেস ছিল না!
কুয়াশা ঘেরা শীতের সকাল দেখেছো কখনও?
সেই সাত সকালে খেজুর গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে আসা খাঁটি খেজুরের রসের স্বাদ পাও আজকাল?

1000051355.jpg
1000051356.jpg

নাহ্! এখন সবটাই ভিন্ন, জীবন বাঁচার ধরন, সম্পর্কের পরিভাষা, তাই বোধহয় অল্পেতেই শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে!

তাদের আর দোষ কোথায়, সবটাই পাল্টে গেছে সাথে অনিয়ম থাবা বসিয়েছে জীবনে।
দেখছো তো এত বুড়ো হয়ে গিয়েও আজও খানিক অংশ অযত্নের পরেও টিকিয়ে রাখতে পেরেছি, সবটাই ওই নিয়মের কারণে।

তবে, গাছ গুলোকে কেটে সবটা আধুনিকীকরণ করতে গিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে এনেছে মানুষ।

নকল কোনকিছুই বোধহয় দীর্ঘস্থায়ী হয়না! তোমরা কখনও ভেবে দেখেছো কি এই বিষয়টি নিয়ে? শিখিয়েছো কি বাড়ির শিশুদের ইতিহাসের গুরুত্ব?
পরিত্যক্ত হতে না দেবার শিক্ষা?

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
 last month 

পুরোনো মানুষ হোক, ইমারত অথবা সম্পর্ক সময়ের সাথে সবটাই এক সময় পরিত্যক্ত হয়ে যায় বোধহয়!
নতুনের প্রতি সকলের আগ্রহ, সেটা প্রানবিহীন ইমারত হোক অথবা জীবিত মানুষ কিংবা সম্পর্ক।

একটা সময়ের পর মানুষ আসলে নিজের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসে। আপনি ঠিকই বলেছেন সম্পর্ক হোক কিংবা পুরনো মানুষ অথবা ইমারত। সবকিছুই একটা সময় অবহেলায় পরিণত হয়। মানুষ বর্তমান সময়ে নতুন কিছু দেখতে নতুন সম্পর্কে জানাতে অনেক বেশি পছন্দ করে। তবে আমার কাছে মনে হয় পুরনো জিনিসের কদর করলে তারও কিন্তু মূল্য কম নয়।

যে কোন জিনিস আপনি যদি অনেকদিন অযত্নে ফেলে রাখেন ।তাহলে সেটা এমনিতেই পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। সেটা কোন সম্পর্ক হোক কিংবা কোন মানুষ অথবা কোন বাড়ি। বর্তমান সময়ের মানুষ শহরে থাকতে অনেক বেশি পছন্দ করে। গ্রামের বাড়িতে এখন আর কেউ থাকে না বললেই চলে।

সবাই শহরের উঁচু নিচু দালান কথা শহরের লাল নীল রঙের শহরটাকে আপন করে নেয়, কিন্তু একটা সময় দেখা যেত যৌথ পরিবারের সবাই গ্রামেই থাকতো। এখন আর সেই বাড়ির কথা কারো মনে পড়ে না। আমাদের বাড়ির পাশে এমন একটা বাড়ি আছে। যেটাতে মনে হয় গত 20 বছর ধরে কেউ এসেছে কিনা আমার জানা নেই।

সদ্য জন্মগ্রহণ করা বাচ্চাগুলো কিন্তু একটা সময় পুরনো হয়। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বানানো বাড়িটা ও একটা সময় পুরনো হয়ে যাবে। এখন একটা সম্পর্ক যখন নতুন করে শুরু হয়, সেই সম্পর্কের মাঝেও কিন্তু জং ধরে। তবে সবকিছু সবাই ধরে রাখতে পারেনা। প্রথম থেকে যেটা শুরু হয়েছে সেটা যদি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধরে রাখা যেত, তাহলে আমার মনে হয় কোন কিছুই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকত না। অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য ভালো থাকবেন।

 last month 

@rubina203 আজকে আপনি হয়তো লেখাটি পড়ে উপলব্ধি করছেন নব প্রজন্ম দের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আজকের মাতা পিতা!

জ্ঞান হতে না হতেই হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে মোবাইল, সেটার জন্য কে দায়ী? আপনি নিজেও নিজের কাজের স্বার্থে একই পথ অবলম্বন করছেন, আর শুধু আপনি কেনো বেশির ভাগই একই পথের পথিক।

শেষ বয়সে গিয়ে আপনাদের মত মানুষদের জীবনে আফসোস পড়ে থাকে কারণ সেই সময় সন্তান বৃদ্ধ মা বাবার চাইতে মোবাইলকেই আপন ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, যার গোড়াপত্তন করেছেন আপনাদের মত মা বাবা
ভেবে দেখবেন, আজকের রক্তের জো চড়দিন স্থায়ী থাকবে না, কি দিচ্ছেন, কেনো দিচ্ছেন এবং এর ফলাফল কি হতে পারে সবটাই আজ ভাবার প্রয়োজন আছে।

নিজেকে উন্নত না করলে অন্যদের কাছে উদাহরণ হওয়া যায় না।

1000005434.png
Your post from Team6 has been curated by @adriancabrera

 last month 

@adriancabrera thank you for your support

Loading...
Loading...
 last month 

আমাদের সমাজে পুরনো সম্পর্ক, পুরনো ভবন, সবকিছুই যেন অবহেলিত হয়ে যাচ্ছে। সময়ের সাথে-সাথে মানুষের আগ্রহের পরিবর্তন হতে থাকে, এটা আপনি ঠিকই বলেছেন দিদি আবার আমরা নতুনের দিকে ঝুঁকে পড়ি। কিন্তু, পুরনো ইতিহাসে অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে যা আমরা হারিয়ে ফেলছি। আপনার লেখা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে সব কিছুই পুরনো হয়ে গেলে পরিত্যক্ত হয়ে যায় না। বরং আমাদের জীবন, সম্পর্ক, এবং ইতিহাসকে ধারণ করে। মনে রাখতে হবে, পুরনো জিনিসগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা থাকা প্রয়োজন, কারণ সেগুলোর মধ্যেই রয়েছে অতীতের স্মৃতি এবং জীবনের আসল মূল্য।

আপনার লেখায় এক শক্তিশালী বার্তা রয়েছে, এটা আমার কাছে মনে হয়েছে আমি যখন আপনার পোস্টটি সম্পন্ন ভাবে পড়লাম। আপনি যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, সেটা আমাদের সমাজের বর্তমান চিত্রকেই প্রকাশ করে। পুরনো সম্পর্ক বা পুরনো ভবন যেন মানুষের দৃষ্টি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, অথচ এর মধ্যে যে স্মৃতি ও ভালোবাসা আর ইতিহাস রয়েছে, তা অমূল্য আপনার এই ভাবনা আমাকে বিভিন্নভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
এই লেখাটি শুধু বাস্তবতা নয়, আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে গভীর চিন্তা দেয়, আমি মনে করি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের কেউ উপহার দেওয়ার জন্য।

Loading...