ভালোবাসার ঠিকানা

in Incredible India7 hours ago

আসসালামু আলাইকুম

প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন।আজ আমি খুব আবেগময় একটা গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।এ গল্পটা আমার জীবনে সেই দুই অধ্যায় কে নিয়ে একটা গ্রাম যেখানকার শিকরের টান আমাকে টানে আবার একটা শহর, যেখানে আমার ভালোবাসার মানুষ আমার হাজব্যান্ড আর আমার কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত হৃদয়ের পাতায় লেখা হয়ে আছে।

IMG_20250629_204242.jpg

সত্যি কথা বলতে কি, গ্রামে এসেছি অনেকদিন হলো। কি খোলা হাওয়া আত্মীয় স্বজনের মুখে হাসি সব কিছুই এক ধরনের প্রশান্তি দেয়। কিন্তু যখন মাঝে মাঝে সংসারের অশান্তি হয় তখন খুবই খারাপ। সকালে উঠে উঠান ঝাড়ু দেওয়া গরুর গোয়াল থেকে গোবর সরানো মেয়েকে খাওয়ানো রান্নাবান্না করা সবকিছু এক একটা কাজ যা নিজের হাতেই করতে হয়।গ্রামে যতই সবাই থাকুক না কেন শহরের বাসাটাকে আমি ভীষণ মিস করি। প্রতিদিনকার সেই ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্ত গুলো যেন এখন আমার চোখে ভাসে।

IMG_20250629_204315.jpg

সকাল বেলা আমার হাজব্যান্ড অফিসে যাওয়ার আগে আমার মেয়েকে কোলে করে নিয়ে চুমু খেতে দুপুরে ফিরে এসে বলতো তুমি ঠিকঠাক খেয়েছো তো?বিকাল বেলা সবাই মিলে একসাথে ঘুমাতাম। কখনো বা ঘুরতে যেতাম। সন্ধ্যাবেলায় আমাদের একসাথে বসে চা খাওয়া কিংবা বেলকনিতে বসে শহর দেখা হতো। এই ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসার দৃশ্য গুলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। শহরের ফ্ল্যাটটা খুব বড় ছিল, সেখানে ছিল আমার হাজবেন্ডের সান্নিধ্য আমাদের দুজনের একান্ত সময়।

আমি এখনো মনে করি আমাদের সেই ফ্ল্যাটের প্রতিটা দেওয়ালে যেন আমাদের ভালবাসা লেগে আছে। আমি যখন রাত জেগে পড়তাম সে পাশে বসে চুপচাপ চা বানিয়ে দিত। কখনো কখনো রান্না ঘরে হেল্প করতেও শুধু যাতে আমি একটু বিশ্রাম পাই। যদিও তিনি রান্নাবান্নায় পারদর্শী না তবু আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করত। আর এখানে পাই না কারো আদর স্নেহ সব যেন আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। হাজবেন্ডের উপস্থিতির আলাদা শক্তিই আমি বুঝতে পারছি সেটা অনুভব করতে পারছি। আগামীকাল চলে যাবে আমার হাজব্যান্ড। কিভাবে থাকবো সেটা ভাবতেই ভীষণ খারাপ লাগা শুরু হচ্ছে।

IMG_20250629_204347.jpg

মেয়ে যখন তার বাবাকে খুঁজবে বাবা কোথায় কি বা বলবো আমি?কি করব? কালকের দিনটাই আমার কেমন যাবে এসব ভাবতে ভাবতে যেন ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।তবুও তো জীবন থেমে থাকে না আমি গ্রামে থেকেও চেষ্টা করছি প্রতিটা দিন রঙ্গিন করে তুলতে।এখানে সব কাজ করতেই হবে এবং সব কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি।আমার শশুর আম এনে দিলেন চন্দ্রমল্লিকা।আমার মেয়ে ভীষণ খুশি আম দেখে তার মন ভরে গেল।তবে যতই গ্রাম ভালো হোক আমি জানি আমার জন্য আমার শহরটাই ছিল সেরা। কারণ শহর মানে আমার হাজব্যান্ড শহর মানে স্বাধীনতা আর শহর মানে আমাদের স্বপ্ন দেখা দুজনে মিলে। শহরের প্রতিটা স্মৃতি আমার মনে এতটা গেঁথে আছে যে সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।

আমি জানি এই গ্রামের জীবনের স্বাদ একেবারে ভিন্ন। কিন্তু আমার মনে একদম জায়গা করে নিয়ে আসে আমার শহরটা। এখানে প্রকৃতি কাছাকাছি আত্মীয়-স্বজনের সান্নিধ্য মেলে। কিন্তু আমার মনে হয় কোন জায়গার সৌন্দর্য না সেখানে কাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে সেটাই আসল ব্যাপার। আর সেই হিসেবে আমার কাছে আমার শহরের বাসাটা এখনো সেরা।বন্ধুরা আজকের এই গল্পটি আমার হৃদয় থেকে লেখা।

IMG_20250628_192206.jpg

হয়তো একদিন আবার ফিরে যাবো শহরে সেই ছোট্ট বাসায় আবার সেই একই ছাদের নিচে কাটাবো প্রিয় মানুষের সাথে কিছু মুহূর্ত। কিন্তু জানিনা আসলেই কি যাওয়া হবে? শহরের বাসাতে আবার সেই একই ছাদের নিচে কাটাতে পারবো কি প্রিয় মানুষের সাথে কিছু মুহূর্ত?সবকিছু মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু যতদিন গ্রামে আছি ততদিন এখানে সেই ভালোবাসা ছায়ায় থাকতে চাই। কিন্তু সবাই সেটা বোঝেনা বিশেষ করে আমার শাশুড়ি।তাই হোক সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 hours ago 

সত্যি কথা বলতে আপু কল্পনার জগত থেকে, আমাদের বাস্তব জীবনটা বড্ড কঠিন,,নিজেদের মত করে চাইলেও সবকিছু পাওয়া যায় না,, আর যখন পেয়ে ও হারিয়ে ফেলি তখন বড্ড কষ্ট হয়।
জীবনে চলার পথে অনেক বাধা অনেক প্রতিকূলতা পার হয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়,, আর মানিয়ে নিতে পারলেই সবার কাছে ভালো থাকা যায়। আমি আপনার জন্য প্রার্থনা করি, যেন আপনার জীবনে আবারো ওই রঙিন দিনগুলো ফিরে পান আর যতদিন গ্রামে থাকবেন , নিজের মনকে রঙিনভাবে গুছিয়ে নেবেন ,,কারণ নিজে ভালো রাখাটা একমাত্র নিজে ছাড়া আর কেউ বুঝবে না,, তাই নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজেরই নিতে হয়।।

Loading...