"ছোটবেলা ঈদ VS বড় বেলার ঈদ "
![]() |
---|
আজকে ২৬ রমজান, দেখতে দেখতে রমজান মাসটা কত দ্রুত আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল, তাই না। সামনে ঈদ অথচ ঈদ নিয়ে তেমন একটা আনন্দ নেই। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আমার ছোটবেলার ঈদ আর আমার বড় বেলার ঈদ সম্পর্কে। আসলে ঈদ হচ্ছে আনন্দের একটা মুহূর্ত। যে মুহূর্তটা বছরে আমরা দুইবার পেয়ে থাকি। মুসলমানদের জন্য এই দুইবার অনেক বেশি খুশির মুহূর্ত হয়ে থাকে। তবে আমার কাছে মনে হয় ছোটবেলার ঈদ অনেক বেশি সুন্দর ছিল। তখন কোন চিন্তা ছিল না, ভাবনা ছিল না। মনের আনন্দে নতুন জামা পরে কখন ঘুরে বেড়াবো এটাই ছিল একমাত্র বিষয়।
ছোট বেলার ঈদ
আজকে যেহেতু ২৬ রমজান। ছোটবেলার ছাব্বিশ রমজান থেকেই শুরু হয়ে যেত ঈদের আমেজ। আগে থেকেই জামা কাপড় কিনে আলমারির মধ্যে লুকিয়ে রাখতাম। আর মনে মনে চিন্তা করতাম যদি কেউ আমার জামা দেখে ফেলে, তাহলে হয়তোবা ঈদ শেষ হয়ে যাবে
এটা ভেবে কাউকে ঈদের জামা দেখাতাম না। কেউ দেখতে চাইলেও কান্নাকাটি করতাম আর আম্মুকে বলতাম কখনোই আমার ঈদের জামা কাউকে দেখাবে না। ঈদের দিন যখন আমি গায়ে দিব তখন সবাই দেখতে পাবে।
![]() |
---|
আগে থেকেই বাড়ির সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতাম। ঈদের দিন কি কি করব। এরপরে যেটা করতাম চাঁদ 🌙 রাত যেদিন হতো ঐদিন সবাই মিলে উঠনের মধ্যে বসে গল্প করতাম। আমরা মোটামুটি পাঁচ-ছয়জন ছিলাম, সবাই মিলে গল্প করতে করতে সময়টা পার করে দিতাম। আবার যেটা করতাম ডানুর দুধের যে ছোট কোটা আছে। সেই কোটা সংগ্রহ করতাম, তারমধ্যে প্যারাগ দিয়ে ছোট ছোট ছিদ্র করে নিতাম এর পরে রাতে যখন উঠানে সবাই গল্প করতে বসতাম। তখন তার মধ্যে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিতাম। দেখতে অনেকটা হারিকেনের মতো দেখা যেত, এটা নিয়ে সবাই সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতাম।
রাত হওয়ার আগে কোথায় মেহেদি পাতা আছে সবাই মিলে সেটা খুঁজে বের করতাম। এরপর মেহেদি পাতা নিয়ে এসে মায়ের কাছে দিতাম সুন্দর করে বেটে দেয়ার জন্য। যাতে করে রাতে হাতে দিতে পারি। কারণ তখন টিউব তেমন একটা পাওয়া যেত না। এরপরে কাকিমার কাছে বসে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। একজন একজন করে লাগিয়ে দিতে অনেকটা সময় লেগে যেত। আজকে যখন কাকিমার কথা আপনাদের কাছে শেয়ার করছি। বর্তমান সময়ে সেই মানুষটা আমাদের মাঝে আর নেই। বিগত দেড় মাস আগে তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আল্লাহতালা উনাকে পরকালে ভালো রাখুক। রাত প্রায় দুইটা তিনটা বেজে যেত কিন্তু আমাদের ঘুম আসতো না। কখন সকাল হবে কখন ঈদের জামা পরব, কখন ঈদে যাব এটা নিয়েই অনেক বেশি আনন্দে মেতে থাকতাম।
যদিও একটু ঘুমাতে যেতাম ফজরের আজান কানে আসার সাথে সাথে সবাই উঠে বসে থাকতাম। এরপরে সবাই মিলে পুকুরে নেমে পড়তাম গোসল করার জন্য। সবাই গোসল করে এসে মায়ের হাতের রান্না করা গরম গরম সেমাই খেয়ে ঈদের জামা পরে সবার কাছ থেকে ঈদের সালামি নিয়ে, ঈদগাহের দিকে রওনা দিতাম। ওখানে গিয়ে নিজেদের পছন্দমত খেলনা কিনতাম খাবার কিনতাম। ঈদগাহের চারপাশ ঘোরাঘুরি করে আবার বাড়িতে চলে আসতাম। এরপরে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে সেমাই খাওয়া নুডুলস খাওয়া পিঠা খাওয়া এভাবেই মোটামুটি ঈদের দিন সকালটা পার করে দিতাম। ওই মুহূর্তগুলোকে অনেক বেশি মিস করি।
বড় বেলার ঈদ
সামনে ঈদ অথচ ঈদ নিয়ে তেমন একটা আনন্দ নেই। না আছে নতুন জামা কাপড় কেনার কোন আনন্দ। না আছে হাতে মেহেদি দেওয়ার আনন্দ। আসলে সব আনন্দ ছোটবেলায় শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু মাথা ভর্তি টেনশন কখন এই টেনশন থেকে মুক্তি পাব এটা নিয়েই দিন পার করে দিচ্ছি। এখন আর পিঠা বানানোর জন্য টেনশন করি না। এখন আর সবাই মিলে গল্প করব এটা নিয়ে আনন্দে মেতে উঠি না। সংসারের কাজগুলো করতে করতে সময়টা কখন পেরিয়ে যায় নিজেও বুঝতে পারি না।
![]() |
---|
ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য সেমাই তৈরি করা, ছেলেদেরকে গোসল করানো ওদেরকে ঈদগাহে পাঠানো। মোটামুটি সকালটা এভাবেই কেটে যায়। তারপর আবার রান্না বান্নার জন্য সবকিছু রেডি করে ঈদের দিনের রান্না করা নুডুলস রান্না করা। সবকিছু মিলিয়ে রান্নাবান্না শেষ করতে অনেকটা সময় শেষ হয়ে যায়। তারপর গোসল করে এসে ঘরের মধ্যে শুয়ে থাকা। হয়তোবা মোবাইলে ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান দেখা, এটাই হচ্ছে বর্তমান সময়ের ঈদ। সবকিছুর মধ্যেই কতটা পরিবর্তন এটা ভেবেই অনেক বেশি অবাক হয়ে যায়। ছোটবেলাটা কতটা আনন্দের ছিল। মা ঈদ বোনাস না দিলে কান্না করতাম। বাবা ঈদ বোনাস না দিলে কান্না করতাম। কিন্তু এখন আর কারো কাছে ঈদ বোনাস পাওয়া হয় না, আর কারো কাছে পাওয়ার জন্য কান্নাও করি না।
সবকিছুর মধ্যে অন্যরকম একটা ব্যবধান। তার পরেও আমরা আমাদের জীবন নিয়ে ভালো থাকতে চাই। ভালো থাকতে হবে। তা না হলে তো আমরা অনেক আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতাম। যাই হোক ঈদের আনন্দ সবার ভালো কাটুক এটাই কামনা করে সৃষ্টিকর্তার কাছে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা রইল।
দারুন একটি লেখা আপনি আজকে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন,, বয়সের সাথে সাথে দিনগুলো হারিয়ে যায় আমাদের জীবন থেকে,, ছোটবেলায় কত খুশি কত আনন্দ নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছি,, এবং বড় হওয়ার সাথে সাথে দায়িত্ব এবং সংসারের চাপ নেওয়ার জন্য সেই আনন্দগুলো হারিয়ে গিয়েছে আমাদের জীবন থেকে।
ছোটবেলার সেই দিনগুলো যদি আবারো ফিরে পেতাম তাহলে কতই না ভালো লাগতো হয়তোবা সেটা কখনো সম্ভব না,, আজকের আপনার এই লেখাটি পড়ে আমি সত্যি আনন্দিত এবং পুরনোদিনে ফিরে গেলাম ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পরিদর্শন করতে পেরে শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
দিন হারিয়ে যাচ্ছে আনন্দ শেষ হয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু কাছের মানুষ চিরতরে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে তাদেরকে এখন অনেক বেশি মিস করি কিন্তু চাইলেও তাদেরকে এখন আর ফিরে পাবো না তবে তাদের প্রতি ভালোবাসা এখনো আগের মতই আছে আসলে পুরনো দিনগুলো আমাদের জন্য অনেক বেশি স্পেশাল ছিল আর সেই দিনগুলো আমরা হারিয়ে ফেলেছি দিনগুলোকে এখন ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছি কিন্তু এখন আর উপলব্ধি করে কোন লাভ হবে না আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্য করার জন্য ভালো থাকবেন।
একদম ছোটবেলার কথা মনে করে দিয়েছেন আমরাও যখন ঈদের সময় আসত দুই তিন দিন আগে থেকেই অন্যরকম আনন্দ মনের মধ্যে কাজ করতাম।। নতুন জামা আলমারিতে রাখতাম আর ভাবতাম ঈদের দিন পড়বো আমাকে অনেক সুন্দর লাগবে।। এছাড়াও শেষ রমজানে চাঁদ দেখার জন্য আমরা অনেকেই রাস্তার পাশে যে বসে থাকতাম আর চাঁদ খুঁজতে থাকতাম যখনই চাঁদ চোখে পড়তো তাকে একটা সালাম দিতাম আর সবাই মিলে চিল্লাচিল্লা শুরু করতাম।
আর বড় হওয়ার সাথে সাথে আপনি যেমনটা বলেন বলেছেন আনন্দ সব লুকিয়ে গেছে দায়িত্ব অনেক মাথার উপর পড়ে গেছে।। ঈদ আসলো মনে হয় না ঈদ এসেছে।। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট লেখার জন্য।।
ছোটবেলার ঈদের আনন্দ ছিল অন্যরকম ওই মুহূর্তগুলো আমরা কিভাবে পার করেছি নিজেরাও জানিনা তবে এখন যখন বড় হয়েছি তখন ওই সময়টাকে অনেক বেশি মিস করছি খুব ইচ্ছে করে আবারো ফিরে যেতে ঐ সময়ের মধ্যে কিন্তু চাইলেই তো আর ফিরে যাওয়া সম্ভব না ছোটবেলার ঈদের আনন্দ সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নেয়া চাঁদ দেখা নতুন জামা পরে ঈদে যাওয়া এই মুহূর্তগুলো জীবনের সবচাইতে সুন্দর মুহূর্ত ছিল আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্য করার জন্য ভালো থাকবেন।