কেন ধর্ষিত ও নির্যাতিত এই দেশ?

in #hot6 years ago

15321465508830_L.jpg
মা ধর্ষিত! বোন ধর্ষিত! বউ ধর্ষিত!

আজকে আমাদের পুরো সমাজ ধর্ষিত৷

দৈনিক সংবাদ পত্র ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশিত করা প্রত্যেকদিনের বিশেষত রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

এই ধর্ষিত জাতি ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়! চায় তাদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার৷ তাদের অসহ্য আর্তনাদে পুরো সমাজ আজ অশান্তির সংক্রমণে ভুগছে, প্রতিকার প্রয়োজন৷বেশি দেরি হলে হয়তো বাকী থাকা অভুক্তরাও ভুক্তভোগী হয়ে যাবে৷

হতে আপনার মা,বোন,কিংবা প্রিয়তমা বউ৷হারিয়ে যাবে ধর্ম,বর্ণ,মানবতা৷ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে সমাজ৷ আইন অকেজো হয়ে পড়বে, জয় হবে অশুভ ক্ষমতার৷

পরিসংখ্যানে ধর্ষণ ও নির্যাতনে চিত্র:

'জানুয়ারি থেকে জুলাই: ২৮০ শিশু ধর্ষণের শিকার'

আড়াইশোর বেশি মানবাধিকার সংগঠনের জোট শিশু অধিকার ফোরামে বলছ, গত ৭ মাসে বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৮০ টি।শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুছ সহীদ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন,গতবছর এই সংখ্যা ছিল ১৯৯টি। আর ২০১৩ সালে ১৭০টি এবং ২০১২ সালে ছিল ৮৬টি। এই সংখ্যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর বাইরেও থাকতে পারে।

(---বিবিসি---)

এছাড়াও, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে ৪২৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর ৩৭ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০৪ জন নারী। যার মধ্যে ১৪৪ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ জুন, শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে । আটটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ এবং আসকের নিজস্ব সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সংখ্যাগত প্রতিবেদনটি তৈরি । এর বাহিরেও পরিসংখ্যানের হিসাব থকতে পারে৷যা পরিসংখ্যানের খাতায় অজ্ঞাত রয়ে গেছে৷

ধর্ষণ ও নির্যাতনের নেপথ্যে কারণ কি?

আজকের সমাজে ধর্ষণ যে সবচেয় নিন্দনীয় আলোচিত ও বড় সমস্যা সকলের জ্ঞাতব্য,কেউ এর বাহিরে নয়৷

১.প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা,প্রেমিকা অন্য ছেলের হাত ধরে চলে যাওয়া,প্রেমিককে ধোঁকা দেওয়া৷ ফলে সেই সব ছেলেরা মেয়েটির উপর রেগে গিয়ে তার সর্বনাশ করতে চায় আর সেই চাওয়া অতিসহজে বেছে নেয় মেয়েটিকে ধর্ষণ ,নয়তো হত্যা করা ৷ নিয়মিত পত্রিকাগুলোর হেডলাইন দেখা যায় "প্রমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অমুক তমুক ধর্ষিত " "প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া প্রেমিকা খুন"

২.পুরোনো শত্রুতার জের ধরেও আজকে মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে নিত্যদিন৷ পারিবারিক কারণে হতে পারে এর অন্যতম কারণ৷

৩.অশ্লীল পোশাক,চালচলনও ধর্ষণের অন্যতম কারণ৷

৪.দায়ী আমাদের সামাজিক অবকাঠামো ৷

এছাড়াও অনেক লৌকিক-অলৌকিক কারণ রয়েছে৷

৫.দারিদ্রতার কারণে আজ অনেক শিশু ও নারী ধর্ষিত আর

নির্যাতিত৷

৬.যৌতুকের কারণে আজ ৮০% স্বামীর দ্বারা নারীরা নির্যাতিত৷

সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কি ধর্ষণ ও নির্যাতনের কারণ?

আমরা সকলে অবগত যে, মানুষ সামাজিক জীব; সমাজ ছাড়া জীবন অতিবাহিত করার চিন্তা করা একেবারে মূর্খদের পরিচয় বহন করে৷তাই মিলেমিশে শান্তিতে থাকা আমাদের সকলের কাম্য৷

কথায় আছে, "অভাবে স্বভাব নষ্ট"

আজকে নারীরা ধর্ষণ ও নির্যাতনের একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অভাব৷ অভাবের কারণে আজকে নারীরা চলছে জীবিকার জন্য পতিতালয়ের৷ তবে এনাদের দ্বারা একটু নয়, অনেক খানি উপকার হইছে, এরা না থাকলে আজকে আমাদের সমাজ আরো অনেক আগেই ধর্ষণের কোলাহলে ব্যস্ত থাকত শহর-নগর-মাঠ-ঘাট দেশের প্রত্যেকটি স্থান৷ মাটির প্রতিটি কণায় স্মৃতি হয়ে থাকতো ধর্ষণে হিংস্রতার সব চিত্র৷ আজকের সমাজে ধর্মের ব্যবহার সহ আইনের সঠিক ব্যবহার না থাকায় ধর্ষণ ও নির্যাতনের চিত্র দিন দিন বেড়েই চলেছে৷আমাদের সমাজে নির্বিঘ্নে চলছে যৌতুকের নামে কৌতুক৷

সেই কৌতুকের আসল চরিত্রের শিকার হচ্ছে নারীরা, আর এমন ভাবে স্বামীর সাথে কৌতুকে জড়িয়ে যাচ্ছে এর থেকে বেড়িয়ে আসার এক মাত্র উপায় মৃত্যু নয়তো বা নিজের বাবার বাড়ি৷

ধর্ষণ,নির্যাতন, হত্যা নির্মূলের জন্য আগে বন্ধ করতে হবে যৌতুকের নামে কৌতুকের খেলা৷ তাহলে নারী নির্যাতন কমে যাবে কমপক্ষে ৮০ভাগ৷ সমাজে আজকে অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাও বিষাক্ত কুনজর দিচ্ছে নারী ও শিশুদের উপর;আর এই কুনজরে বন্দী হচ্ছে শত থেকে সহস্র নারী ও শিশু৷ কলঙ্কের চিহ্ন অথবা পৃথিবী থেকে বিদায়ের টিকিট নিয়ে না ফেরার দেশে চলে যেতে হচ্ছে অনেককে৷

বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ও দীর্ঘসূত্রতাঃ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।কিন্তু এমন অনেক নজির আছে যে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে।বিচার কাজ সঠিক সময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় নারী ও শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন দিনদিন আরো ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে৷ বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার অভাব মিলছে৷ এছাড়া মামলা ঝুলিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ডিফেন্স ল ইয়ারের মানসিকতারও পরিবর্তন আনতে হবে।সঠিক সময়ে সঠিক বিচার কার্য্য সম্পন্ন করতে হবে, তা না হলে দেশের জন্য অমঙ্গলের ছাপ পড়বে৷ শকুনে ঢেকে যাবে পুরো দেশ৷

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা হাত রয়েছে কি?

শিশু ও নারী নির্যাতন বাড়া কিংবা শিশু ও নারী ধর্ষণ বাড়ার কারণ হিসেবে অনেকই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করে থাকেন ৷তবে পুলিশের পক্ষ অস্বীকার করছেন না যে, শিশু ও নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে ।

তবে একশ্রেণির অমানুষরা শিশুদের ওপর বল খাটানো বা ভয় দেখিয়ে তাদেরকে নির্যাতন ও যৌন হয়রানী শিকার করছেন ৷ শিশুরা সাধারণত ভীতু প্রকৃতির হয় তাই তারা এই কাজ অতি সহজে করছে । ফলে সেই সুযোগটি যৌন চাহিদার কাজে লাগাচ্ছে অমানুষ নামক জানোয়াররা।

ধর্ষণ ও নির্যাতন থেকে প্রতিকার পাওয়া যাবে কীভাবে?

প্রথমে বলি, মানুষ পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই৷

আজ বিনা তারে মানুষ কথা বলছে৷ এই অসাধ্যের কাজ কিন্তু মানষই করেছে৷ পায়রার যুগ থেকে মানুষ আজ ইমেইলে,ফলে নিমিষেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করছে নির্বিঘ্নে ৷ এই প্রযুক্তির মাধ্যকে আমরা বলছি গ্লোবাল ভিলেজ৷ তারহীন যোগাযোগ মাধ্যম কিন্তু এক সময় মানুষের কাছে অলৌকিক ছিলো কিন্তু তা আজ লৌকিকে পরিণত হয়েছে৷ কিন্তু নির্যাতন ও ধর্ষণ মানুষের কাছে দিন দিন লৌকিক থেকে অলৌকিকত্বের পরিচয় বহন করছে৷ কিন্তু কেন? আমাদের সকলের সচেতনতার কেন্দ্রবিন্দু হবে এই বিষাক্ত অনুচ্ছেদ থেকে মুক্তির হাতিয়ার৷ আমাদের সকলকে নিজ নিজ ধর্মকে বিশ্বাস করতে হবে ,সে অনুযায়ী পালন পালন করলে কোন প্রকার অশান্তি বিরাজ করবে না আমাদের সুন্দর সমাজে৷ আমাদের আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো বেশি প্রখর ও বিচক্ষনতার সাথে কাজ করে যেতে হবে যাতে অশুভ শক্তি সমাজকে ধবংস করতে না পারে৷ বিচার বিভাগকে আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে৷ আমাদের দেশের আইনের ব্যবহার সুষ্ঠু থাকলেও তার মূল্যায়ন আরো সর্বোত্তম ও সময়সাপেক্ষ হলে নারী ও শিশু, নির্যাতন ও ধর্ষণ থেকে মুক্তি পাবে; সাথে মুক্তি পাবে আমাদের সুন্দর সমাজ৷

"আসুন ভালোবাসি দেশকে, গড়ি ধর্ষণ ও নির্যাতন মুক্ত সোনার বাংলাদেশ।"