সত্য ঘটনা | পদ্মা নদীতে আমার স্পীডবোট ডুবি (৩য় পর্ব) | ১০% @btm-school
(গত পর্বের পর)
অতঃপর মাঝবয়সী একজন চালক আমাদের বোটটিকে চালিয়ে নিয়ে ওপারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। আকাশে পুর্ণিমার চাঁদ ছিল, সন্ধ্যা হয়ে এলেও আশেপাশের সবকিছুই দেখা যাচ্ছিল। বোট চালু হওয়ার পরে আরেক প্রতিযোগিতা শুরু হলো আশেপাশের অনেকগুলো চালকের মধ্যে। কে যাত্রী নিয়ে সবার আগে ওপারে পৌঁছাতে পারবে। প্রথম থেকেই আমাদের স্পীডবোটের চালকের দক্ষতা নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। সে কিভাবে জানি চালাচ্ছে। প্রচুর স্পীডে চলার কারনে কিছুক্ষণ পরপর জোরে জোরে ধাক্কা লাগছে বোটে। যদিও নদী সেসময় কানায় কানায় পরিপূর্ণ এবং বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে। সেসব ঢেউ কেটে এগিয়ে যাওয়ার সময় ঢেউয়ের তাড়ে আমাদের বোট দুলে দুলে উঠছে। আল্লাহর নাম নিতে নিতে এভাবেই আমরা যাচ্ছি। আমাদের যাত্রীদের মধ্যে ২-৩ জন মহিলা ছিলেন, আর বাদবাকি আমরা সবাই পুরুষ। আল্লাহর রহমত যে আমাদের বোটে সেদিন কোন বাচ্চা বা বৃদ্ধ মানুষ ছিলেন না।
বোটটি তখন মাঝ নদীতে, হঠাৎ দেখলাম আমাদের বোটের সামনের পাটাতন (ড্রাইভারের সামনে যে দেয়াল থাকে) ভেঙে নদীর পানি সব বোটের ভেতরে ঢোকা শুরু করলো। সবাই তো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো বিশেষ করে মহিলারা কান্না জুড়ে দিলেন। আমার সাথে থাকা ব্যাগটা পিঠে ভাল করে আটকিয়ে আমি নিজেকে কোনভাবে সামলে নিলাম আর আল্লাহর নাম নিতে থাকলাম। ততক্ষণে বোটের মধ্যে পুরো নদীর পানি উঠে আমরা সবাই পানিতে ভাসছি। এরমধ্যে বড় বড় ঢেউ এসে আমাদের গায়ে বাড়ি মারছে আর একেকজন একেক দিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে একটাই মনের জোর যে সাঁতার জানি, কিন্তু কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবো জানিনা। কারো ব্যাগ হাত থেকে ফসকে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে চলে যাচ্ছে। এমন মুহুর্তে কি'বা আর করার আছে? নিজের জীবন আগে নাকি ব্যাগ রক্ষা করা আগে। এভাবে ২-৩ মিনিট পার হয়ে গেল। আমরা সবাই বোটের চালককে বকাবকি করছি। কেন সে ফিটনেস চেক না করে বা ফিটনেসবিহীন বোটে আমাদেরকে নিয়ে আসলো। অবশ্য তাকে বকেই বা আর কি লাভ, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। সেসময় আমার ছেলের কথা বারবার মনে পড়ছিল, তাহমিদ তখন অনেক ছোট ছিল।
এরমধ্যে হলো কি, বোটটা বড় ঢেউ এবং পানির ঝাপটায় একেবারে উল্টে গেল। মহিলা ক'জনসহ আমরা প্রায় ৮-১০ জন তখন সেই উল্টে যাওয়া বোটটা ধরে কোনরকমে পানিতে ভেসে থাকলাম। বোটটা প্লাস্টিক বডির হওয়াতে ফেটে উল্টে গেলেও একেবারে ডুবে যাচ্ছিল না, পানির উপরে ভেসে থাকছিল, ফলে আমাদের একটা সাহারা হলো। ওটা ধরেই আরও প্রায় মিনিট পনেরো পানিতে ভেসে ছিলাম। গ্রামের ছেলে ছোটবেলা থেকেই সাঁতার জানি, সুতরাং নিজের মধ্যে একটা কনফিডেন্ট ছিল যে আর যাই হোক অন্তত ডুবে যাবোনা (আল্লাহ যদি রক্ষা করেন), প্রয়োজনে সাঁতরে নদী পার হবো। চারিদিকে হালকা অন্ধকার ছেয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, তখন দেখলাম এপার থেকে যাত্রী নিয়ে ওপারে যেসব বোটগুলো গেছিল তাদের অধিকাংশই আবার খালি ফিরে যাচ্ছে মাওয়ার দিকে। তখন আল্লাহর রহমতে সেরকম ২-৩ টা খালি বোট এসে আমাদেরকে পানি থেকে উঠালো। আর যে কয়েকজন দূরে ভেসে গেছিল তাদেরকেও উদ্ধার করতে সক্ষম হলো। ফলে আল্লাহর রহমতে আমাদের সবার জান বেঁচে গেল।
আজ এই পর্যন্তই থাকুক, পরবর্তী এবং শেষ পর্বে ঘটনার বাকি অংশ এবং কিভাবে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছালাম সেসব বিষয়ে আপনারা জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
লাস্টে কি হলো ঐটার অপেক্ষায়
হ্যাঁ, খুব শীঘ্রই শেষটাও জানতে পারবেন।
অনেক ধন্যবাদ।
বেশির ভাগ বোটের ফিটনেস সমস্যা শুধু বোট না বাসেরও একই সমস্য। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি ভাইয়া
হ্যাঁ, এগুলো দেখার কেউ নেই বলে এমন অবস্থা।
ধন্যবাদ রোমেন, পুরোটা পড়ার জন্য এবং পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করার জন্য।
সত্যি খুব বিপদজনক একটা সময় ছিল। আজকে আসবে নাকি পরের পর্ব
না, আজ আসবেনা।
দেখি আগামীকাল ছাড়তে পারি কিনা!
ওকে ভাইয়া অপেক্ষায় রইলাম।
ভাই আপনার ঘটনা শুনে আমার জানের ভিতর কেমন কেমন করছে সত্যি
আল্লাহ আপনাদের উপর রহমত দান করেছে । আলহামদুলিল্লাহ্
Next part এর জন্য অপেক্ষা করছি ।
ধন্যবাদ ভাই পুরোটা পড়ার জন্য।
আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, তাছাড়া ওই অবস্থা থেকে বেঁচে ফেরা সম্ভব ছিলনা।
খুব শীঘ্রই আসবে পরবর্তী এবং শেষ পর্ব, সাথেই থাকুন।
আলহামদুলিল্লাহ্ শুকরিয়া সেই মহান আল্লাহুর কাছে
ওকে ভাইজান
অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের জন্যে।
আজকেই চলে আসবে ইনশাআল্লাহ।