ভিক্ষার নতুন কৌশল
হ্যাল্লো বন্ধুরা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় পরিবারসহ সুস্থ আছি, ভালো আছি।আজ আপনাদের সাথে নতুন একটি পোষ্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। তো চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আজকের পোষ্ট টি তে.... ৷
আগে একটা সময় ছিলো যখন বাড়িতে যদি কেউ ভিক্ষার জন্য আসতো, তারা অল্প কিছু চাল বা দুটো আলু/ পটল পেলেই খুশি হয়ে নিতেন। যখন টাকা পয়সার চল শুরু হলো, তখন, মানে আমার ছোট বেলাতেই দেখা যে কেউ ভিক্ষা নিতে এলে ৫ পয়সা বা ১০ পয়সা কিংবা ২৫ পয়সাও চলতো। এখন কি আর সেই যুগ আছে! ৫ পয়সা, ১০ পয়সা বা ২৫ পয়সা ই তো এখন জাদুঘর এ পাওয়া যায় কেবল! বাজারে গেলে ৫০০ টাকার নোট ই যেনো নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়, কিন্তু বাজারের ব্যাগ যেনো অর্ধেক ও ভরে না.....
আজকাল মধ্যবিত্ত দের অবস্থা হয়েছে স্যান্ডুইচ এর মতোন। নিজেদের ই ঠিকঠাক চলানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কারোর কাছে প্রকাশ করতেও পারছে না, হাত পাততেও পারছে না। তার উপর বাজারে এখন নতুন ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি শুরু হয়েছে। যেমন ধরুন, আজকে সন্ধ্যার ই কথা বলি। আমার হাজবেন্ড এর ছুটির দিন আজ। বিকেলে দুজনে মিলে একটু বের হয়েছি। ছুটির দিনের বিকেলে আমরা কোথাও না গেলেও অন্তত বাসার বাহিরে গিয়ে একটু মাঠে বসি, বাজারটা দুজনে মিলে করি, টুকটাক চা -মুড়ি মাখা বা মোমো খাই, টুকটাক কাজ থাকলে সেটাও সারি তারপর মোটামুটি সন্ধ্যা কাটিয়ে ঘন্টা দুয়েক টো টো করে বাড়ি ফিরি। আজকেও তেমন, বের হয়েছি। ফেরার সময় হঠাৎ আমাকে দেখে এক রিক্সাওয়ালা করুণ কণ্ঠে বলা শুরু করেছে একটু সাহায্য করতে। তার বাসায় ছোট পিচ্চি, দুধ কেনার টাকা নাই। অথচ উনি কিন্তু কোনো কাস্টমার খুঁজে নাই, আমাদের জিজ্ঞাসাও করেন নি যে আমরা রিক্সায় কোথাও যাবো কি না! সরাসরি টাকার সাহায্য চেয়েছেন। আমার সাথে কথা শুরুর আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়েই ছিলেন! এমনটা যে ইদানীং এর মাঝে আজকেই প্রথম তা নয়! ধরুন আমি শাক কিনতে গিয়েছি, পাশ থেকে এক মহিলা এসে শাক - সবজি কিনে দিতে বলছেন। অথচ মহিলা দিব্যি সুস্থ্!!
রেস্টুরেন্টের বাহিরে খাবারের আশায় বসে থাকা মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম না। ইদানীং রেস্টুরেন্টে যাওয়া হয় কমই, কিন্তু বাহিরে অপেক্ষারত এমন ধরনের মানুষের লাইন চোখ এড়ায় না!! অথচ সকলেই বেশ দিব্যি সুস্থ মানুষ।
এই বিষয়টি যে শুধু আমার বা আমার হাজবেন্ড এর সাথেই হচ্ছে এমন না। এই বিষয় টি এখন ঢাকায় বেশ কমন হয়ে গিয়েছে। একই রকম ঘটনা আমার হাজবেন্ড এর কলিগদের সাথেও অহরহ হচ্ছে। মশলার দোকানে কেউ মশলা কিনছে, সেখানেও কেউ আবদার করছে মসলা কিনে দেয়ার জন্য৷ এই তো গত বছরের শীতকালের কথা, আমি ফুলকপি কিনছিলাম আমার জন্য। হুট করে এক বৃদ্ধ মহিলা এসে আবদার করে বসে ফুলকপি কিনে দেয়ার জন্য। মায়া হয়েছিলো, দিলাম ও। কিন্তু একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে আবার কি একটা কাজে একই রাস্তায় যাওয়া পরেছিলো আমার। তখনো দেখি সেই মহিলা অন্য আরেকজনের কাছে এমন ই কাচুমাচু মুখ করে আবারো ফুলকপি কিনে দেয়ার আবদার করছেন!! সেদিন ই যথেষ্ট অবাক হয়েছিলাম। তাই এখন আর এমন মানুষের নতুন ভিক্ষার কৌশল দেখে অবাক হই না, বিরক্ত হই!
এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় একদল মানুষ যাদের আসলেই সাহায্য প্রয়োজন!! কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এমনই আলস্যপ্রিয় যে অন্যের কাছে হাত পাতবে, কিন্তু সেই হাত দিয়ে কষ্ট করে কাজ করে খাবে না! সন্ধ্যার যে রিক্সাওয়ালার কথা বললাম, উনি সাহায্য না চেয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতেন আমাদের রিক্সা লাগবে কি না! কিংবা যার রিক্সা লাগবে, এমন কাস্টমার খোঁজা বাদ দিয়ে সাহায্য খুঁজতিসিলেন! মানুষ এর অনুভূতি তে টোকা দিয়ে সহজেই যদি কিছু ইনকাম করা যায়, তবে কষ্ট করে কেন ইনকাম করবেন!! আর মানুষ ও আছেন, নিজেরা কষ্টে থাকলেও অন্যের কষ্ট মানুষ কে ছুঁয়ে যায় বলেই মানুষ ও চেষ্টা করে নিজেদের সামর্থ্য মতোন অন্যকেও সাহায্য করতে। যেমনটা আমি গতবছর করেছিলাম। যেহেতু নিজের চোখে দেখে সেই ভুল আমার ভেঙেছে, আমি আর এই নতুন ভিক্ষার কৌশলের ফাঁদে পা দিচ্ছি না। আপনাদের সাথেও এমন কিছু হয়ে থাকলে শেয়ার করবেন। ত্নে বোঝা যাবে শুধু ঢাকাতেই কি হচ্ছে এমন টা, নাকি অন্য কোথাওও হচ্ছে...
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে
আজ আর আমি কথা বাড়াচ্ছি না। আমার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো আপনাদের কাছে। সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এমন ঘটনা শুধু আপনার ওখানে নয় আপু আমাদের এখানেও প্রায় লক্ষ্য করে থাকি। বাজারে গেলে অনেক বৃদ্ধ মহিলারা এসে এমনটা বলে থাকে আবার বৃদ্ধ মানুষ এসে বলে থাকে। তবে বর্তমান সময়ে এমন ঘটনা আরও ঘটবে দেশে যে অবস্থা।
তবে এটাও এখন একটা পেশা হয়ে উঠেছে ভাই। মানে অসহায় হওয়ার এক্টিং করে অন্যের কাছ থেকে ফায়দা লাভ করার ধান্ধা। নিজে কষ্ট করবে না!
এইরকম একটা ঘটনা আমার সাথে ঘটেছিল ২০২২ সালে। আমি তখন কলেজে পড়ি। এক রিক্সাওয়ালা এমন আবদার করে বসে নিজের আসহায়ত্বের কথা বলে। তাৎক্ষণিক আমার এবং আমার বন্ধুর কাছে যা ছিল সবটাই দিয়ে দিয়েছিলাম। এদের যেমন বিশ্বাস করতে পারি না আবার অবিশ্বাস করলেও যেন চলে না।
সেটাই ভাই। এমনভাবে বলে যে মায়াও হয়। কিন্ত ট্রাস্ট ইস্যুও হয়!