"রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ সাজানো"
বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি।বহু দিন পর আবার আপনাদের মাঝে আসতে পেরেছি। নিজের সংসার জীবন নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি অনেকদিন ধরেই। আমার বাংলা ব্লগ একটি ভালো লাগার জায়গা।তাই তো বার বার ফিরে আছি যখনই একটু সময় পাই। আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল পর্বে ফিরে যাই। আপনারা অনেকেই জানেন ২৭ তারিখ ছিলো প্রভু জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।
" রথযাত্রা ,লোকারণ্য মহা ধুমধাম ",
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব ,রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব- হাসে অন্তর্যামী।"
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই উক্তিগুলোর সাথে আমরা কে না পরিচিত? বিশ্বকবি যে রথ যাত্রার কথা কবিতা লিখেছেন, সে রথযাত্রার ইতিহাস আমরা কম বেশি সবাই জানি।
রথ শব্দের আভিধানিক অর্থ অক্ষ, বুদ্ধ যান বা কোন প্রকার যানবাহন অথবা চাকাযুক্ত ঘোড়ায় টানা হালকা যাত্রীবাহী গাড়ি। এই গাড়িতে দুটি বা চারটি চাকা থাকতে পারে। সাধারণত অভিজাত শ্রেণীর ঘোড়ার গাড়িকে বলা হয় রথ। পৌরাণিক কাহিনীতে রথের ব্যবহার। দেখা যায় "যুদ্ধক্ষেত্রে"। মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সেনানায়কেরা রথে চড়ে নিজেরা যুদ্ধ করেছেন এবং সেনাবাহিনীকে পরিচালিত করেছেন। তবে রথ শব্দের অর্থ ভিন্ন -রথ একটি কাঠের তৈরি যান, যাতে চড়ে স্বয়ং ভগবান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। ভগবানের এই রথা রোহনই "রথযাত্রা"নামে পরিচিত। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে পালিত হয় রথযাত্রা। এর ঠিক অষ্টম দিনে পালিত হয় উল্টোরথ। প্রভু জগন্নাথ শ্রীকৃষ্ণ জগতের প্রতিপালক শ্রী নারায়ণের ই দুটি রূপ। বলরাম বা বলভদ্র, শ্রীকৃষ্ণ বা জগন্নাথ এবং সুভদ্রা দেবী এই তিনজন একে অপরের ভাই বোন। এই রথযাত্রা প্রচলন হয়েছিল প্রায় সত্য যুগে। তবে এই রথযাত্রা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বললাম। এর পুরো কাহিনী নয় অন্য আর একদিন বলবো।
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে আপনাদের দাদা বাজার থেকে টিনটিন বাবুর জন্য একটা রথ কিনে এনেছিলো। গত বছর বাবা মারা গিয়েছিল তাই আর রথ টানতে পারিনি। তাই এবার রথের সাথে সাজানোর কিছু জুঁই ফুলের মালা ও দুই রকম গাঁদা ফুলের মালা নিয়ে এসেছিলো। সত্যি বলতে রথ সাজাতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই তো রথের দিন সকাল সকাল সমস্ত কাজ সেরে আমি আর টিনটিন বাবু বসে গেলাম রথ সাজাতে।
প্রথমে রথের উপড়ে লাল ধ্বজার নিচ থেকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিলাম। এর পর রথের চারটি পিলার গাছের ডাল ও কিছু জুঁই ফুলের মালা দিয়ে পেঁচিয়ে দিলাম।
এবার রথের ভিতরে কিছু গাঁদা ফুল বিছিয়ে দিলাম। এবং বিছানো ফুলের উপড়ে জগন্নাথদেবের মূর্তি বসিয়ে দিলাম। তারপর। রথের চারপাশ গাঁদা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিলাম। এভাবেই ফুল দিয়ে পুরো রথটি সাজিয়ে তুলেছি।
এবার জেদ ধরলো বাবু রথ টানতে বাইরে যাবে।কিন্তু বাইরে তখন খুবই বৃষ্টি পড়ছে। তাই বাবু রথ নিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটের প্রতি ঘরে ঘরে গেলো। আর সবাই খুশি হয়ে বাবুর সাজানো রথ টানলো আর সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী দক্ষিণা দিলো।আর বাবু সবাইকে প্রসাধ দিলো। বাবু রথ টানতে পেরে খুবই খুশি হয়েছিলো। আসলে যেকোনো উৎসবে। বাচ্চাদের আনন্দ টাই সবথেকে বেশি হয়। আর এবার আমাদের টুনকু বাবুর প্রথম রথ যাত্রা ছিলো। সবকিছু মিলিয়ে রথযাত্রার দিনটি বেশ ভালোই কেটেছিলো।তবে বৃষ্টির কারণে রথ যাত্রার দিন মেলাতে যেতে পারিনি।কিন্তু ওদের মামা রথের মেলা থেকে গরম গরম পাঁপড় ভাজি, জিলাপি ও হরেক রকমের গজা বিভিন্ন রকম খাবার নিয়ে এলো। আসলে মেলা মানেই পাঁপড় ভাজি ও গরম গরম জিলাপী এগুলো না হলে কি চলে। আর তারপর তো আমার পছন্দের বাদাম ভাজা। আজ এই পর্যন্তই। পরে একদিন রথের মেলা নিয়ে চলে আসবো। সেই পর্যন্ত সকলে ভালো থাকবেন।
অসাধারণ পোস্ট, @tanuja! আপনার রথযাত্রার বর্ণনাটি খুবই প্রাণবন্ত এবং আন্তরিকতাপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করাটা বিশেষ ভালো লেগেছে। রথটির সুন্দর সজ্জা এবং আপনার ছেলে টিনটিন বাবুর আনন্দ দেখে মন ভরে গেল।
ছবিগুলো খুব সুন্দর, বিশেষ করে ফুলের মালা দিয়ে সাজানো রথের দৃশ্যটি চমৎকার। আপনার পরিবারের সাথে রথযাত্রার আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার এই গল্পটি Steemit-এ একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
আপনারা সবাই ভালো থাকুন, আর টিনটিন বাবুকে অনেক আদর। এমন সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ! আপনার অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ার জন্য আমি উৎসাহিত থাকলাম।