অনুগল্প// “রঙে ভরা দিন, শূন্যতা নিয়ে ফেরা"
হ্যালো বন্ধুরা,আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
কয়েকদিন পরেই পহেলা বৈশাখ আর সেই কথা চিন্তা করেই আজ নতুন একটি গল্প নিয়ে চলে আসলাম। তাহলে চলুন শুরু করি ---
পহেলা বৈশাখের সকাল থেকেই ঢাকা যেন লাল-সাদার সমুদ্রে ভাসছে। চারদিকে হেঁটে বেড়ানো মানুষ, ঢাকের শব্দ, মুখে মুখে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। রমনা বটমূলে রবীন্দ্র সংগীত, মঙ্গল শোভাযাত্রার আনন্দঘন দৃশ্য… সেই আনন্দের মাঝে কোথাও দাঁড়িয়ে ছিল বৃষ্টি ও আকাশ।
বৃষ্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। প্রাণচঞ্চল, কাব্যপ্রেমী, সাহসী। অন্যদিকে আকাশ, ইংরেজি বিভাগের ছাত্র, স্বপ্ন দেখত লেখক হবে একদিন। দুই বছর আগে, এই বৈশাখেই ওরা প্রথম দেখা করেছিল—চারুকলার সামনে এক ছোট্ট কবিতার বই নিয়ে তর্ক করতে গিয়ে পরিচয়। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব,তারপর ধীরে ধীরে একটানা প্রেম।
এই বছরের বৈশাখে আকাশ বিশেষ পরিকল্পনা করেছে। সে ঠিক করেছে আজই বৃষ্টি কে প্রস্তাব দেবে—একটা নতুন অধ্যায় শুরু করার। তারা দু'জন রমনা পার্কের বটতলায় বসে রয়েছে। চারপাশে হেঁটে বেড়ানো মানুষ, হেসে-খেলে কাটানো দিন, লাল-সাদা শাড়িতে বৃষ্টি যেন বসন্তদেবী। কিন্তু আজ সে যেন কিছুটা চুপচাপ। আকাশ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিল, তার কিছু একটা হয়েছে। তাই আকাশ চুপ না থেকে প্রশ্ন করে বসলো, “তুমি আজ এত চুপ কেন?”
বৃষ্টি হাসল ম্লানভাবে। তারপর বলল,
“আকাশ, একটা কথা বলব… কিন্তু তুমি রাগ করবে না, প্লিজ।” আকাশের মুখের হাসি একটু কমে গেল।
“বলো, আমি শুনছি।” বৃষ্টি একটু থেমে বলল,
“আমি কানাডায় স্কলারশিপ পেয়েছি। মাসখানেকের মধ্যেই চলে যাচ্ছি। মাস্টার্সে পড়ব… মা-বাবা অনেক দিন ধরেই চাচ্ছিল।”আকাশের মুখ নিস্তব্ধ। সে যেন বুঝতেই পারছে না কী বলবে।
“তুমি কবে জানলে?”
“দুই সপ্তাহ আগে। ভাবছিলাম বলব না… কিন্তু আজ আর রাখতে পারলাম না।”
আকাশ চুপচাপ ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট বাক্স বের করল। খুলে দেখাল একটা ছোট্ট রূপার আংটি।
“তুমি যাওয়ার কথা বলার আগে ভেবেছিলাম এটা তোমাকে দেব। ভাবছিলাম আজ তোমাকে বলব, সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে কি না…”
বৃষ্টির চোখে জল এসে গেল। সে ধীরে ধীরে বলল,
“আকাশ… আমি চাইলে হয়ত থাকতে পারতাম, কিন্তু আমার পরিবার… তারা কিছুতেই আমাদের মেনে নেবে না। আর তুমি জানো, আমি মায়ের একমাত্র মেয়ে।”
আকাশ নিচু গলায় বলল,
“আমার চেয়ে বেশি কারো কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারো না, বৃষ্টি।”
বৃষ্টি হেসে উঠে বলল, “তুমি এমন করো না, প্লিজ। আমি চাই এই দিনটা স্মৃতিতে থাক, দুঃখ নয়—রঙ হোক, ভালবাসা হোক।”
এরপর বৃষ্টি এক টুকরো রক্তজবা ফুল তুলে এনে আকাশের হাতে দিল।
“এই ফুলটা রেখো। আমার শেষ বৈশাখ তোমার সাথে… কিন্তু শেষ প্রেম নয়। ভালবাসা তো চির বসন্তের মতো, না?”
বৃষ্টি উঠে দাঁড়াল, ধীরে ধীরে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল।
আকাশ বসে রইল বটতলায়, হাতে সেই জবা ফুল, আর চোখে অদেখা ভবিষ্যতের কুয়াশা। চারপাশে ঢাকের শব্দ, আনন্দ… কিন্তু তার ভেতরে বাজছে এক অনির্বচনীয় বিষাদের সুর। সেই সুরের সাথে সাথে আকাশ যেন নিজেকে কোথায় হারিয়ে ফেলেছে। যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন সে নিজেকে তার রুমে আবিষ্কার করলো আর বৃষ্টির কথা মনে হতেই দু'চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝড়তে লাগলো। কিন্তু আকাশ নিরুপায় ছিল আর এভাবেই দু'জনের গভীর ভালোবাসা বৈশাখের সাথে সাথে মিলিয়ে যায়।
আমার গল্প আজ এখানেই শেষ করলাম। যদি ভালো লাগে তাহলে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন। ধন্যবাদ সবাইকে♥️।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।






Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power



Comment link
Comment link
Comment link
Comment link
Comment link
Comment link
Comment link
Comment link
Comment link
আপনার উপস্থাপিত গল্পটি এক গভীর প্রেমের, যেখানে বৈশাখের আনন্দঘন পরিবেশে আকাশ ও বৃষ্টির সম্পর্ক একটি নতুন মোড় নেয়। এই গল্পে বৈশাখের উজ্জ্বলতা ও প্রেমের বিষাদের মিশ্রণ এক অনন্য আবহ তৈরি করেছে। বৈশাখ, যদিও মূলত নতুনের আহ্বান ও উৎসবের মাস, তবুও এই গল্পে তা একটি বিচ্ছেদের পটভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
রঙের মাঝেও অনেক সময় সাদা কালো লক্ষ্য করা যায়। তেমনি একটি গল্প ছিল এটি। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ।