ছোট গল্প: সাহসিকতার ছোঁয়া।
🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001।
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসি.............
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।প্রতিদিনের মতো আজ একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছে আপনাদের সামনে। সপ্তাহের সাতটি ভিন্ন ভিন্ন পোস্ট শেয়ার করার চেষ্টা করি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ একটি ছোটগল্প পোস্ট শেয়ার করব। আশাকরি আমার লেখা ছোট গল্পটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে।চলুন তাহলে শুরু করা যাক আজকের নতুন ব্লগটি।
Source
একটি ছোট্ট গ্রামে বসবাস করতো এক শিশু, নাম তার অর্ণব। অর্ণব ছিল খুবই চঞ্চল, মেধাবী এবং সদা হাসিখুশি। তবে একদিকে তার ছিল একটি বিশেষ গুণ সে কখনোই কোনো সমস্যা সামনে এলে হাল ছাড়তো না।একদিন গ্রামের পাশের বন থেকে এক অদ্ভুত শব্দ শোনা গেল। গ্রামের লোকেরা অনেকদিন ধরেই শুনছিল, কিন্তু কেউই সাহস পায়নি সেই শব্দের উৎস জানার জন্য। সবাই বলেছিল এটা হয়তো কোনো ভূত-প্রেতের কাজ। কিন্তু অর্ণব একদিন ঠিক করে ফেললো সে সেই রহস্য উদঘাটন করবে।পরের দিন সকালে সে একা একা সেই বনে চলে গেল। বনের মধ্যে ঢুকতেই সে দেখতে পেল একটি ছোট্ট ঝর্ণা, যার পাশেই একটি পুরানো গাছ দাঁড়িয়ে ছিল। গাছের তলায় একটি ছোট্ট পাথরের থালা রাখা ছিল, আর তার মধ্যে একটি উজ্জ্বল আলো ছিল। অর্ণব ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে থালার দিকে নজর দিল।ঠিক তখনই থালার মধ্যে থেকে এক মিষ্টি কণ্ঠে কথা উঠলো, ধন্যবাদ তুমি এসে আমাকে মুক্তি দিলে। আমি এই বনরক্ষী দেবতা, অনেক বছর ধরে আমি এখানে বন্দি ছিলাম। তুমি যদি সাহায্য না করতে তাহলে আমি চিরকাল এইভাবে বন্দি থাকতে হত।অর্ণব কিছু না বলেই মাথা নত করলো। দেবতা তাকে আশীর্বাদ দিলেন এবং বললেন, তুমি যে সাহসিকতা দেখিয়েছো তার জন্য আমি তোমাকে একটি উপহার দেব।দেবতা একে একে অর্ণবের সামনে তিনটি উপহার রাখলেন একটি তলোয়ার, একটি শক্তিশালী তন্ত্র, আর একটি মণি যা তাকে অসীম জ্ঞান দেবে।অর্ণব ফিরে আসলো গ্রামের দিকে আর সবাই অবাক হয়ে দেখলো তার হাতে তিনটি অমূল্য উপহার। গ্রামবাসীরা তাকে কৃতজ্ঞতার সাথে সম্মান জানালো। অর্ণবের সাহস, বুদ্ধিমত্তা এবং সৎ মনোভাবের কারণে গ্রামটি অনেক দিন সুখে শান্তিতে বাস করল।
অর্ণব গ্রামে ফিরে আসার পর তার জীবন এক নতুন মোড় নিল। দেবতার উপহারগুলি শুধু তাকে শক্তি দেয়নি বরং তার অন্তরে নতুন এক দায়িত্ববোধ জন্ম নিল। গ্রামবাসীরা তাকে একজন নেতা হিসেবে দেখতে শুরু করলো। তবে অর্ণব জানতো তার কাজ এখনও শেষ হয়নি। বনরক্ষী দেবতার আশীর্বাদ পেলেও, সে বুঝতে পেরেছিল যে তার চেয়ে বড় দায়িত্ব এই উপহারগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা।একদিন গ্রামের সীমান্তে একদল দুর্বৃত্ত আক্রমণ চালাল। তারা গ্রামের মানুষদের ভয় দেখিয়ে শস্য ও সম্পদ ছিনতাই করতে চাইল। গ্রামের মানুষরা অর্ণবকে সাহায্যের জন্য ডাকলো। অর্ণব সিদ্ধান্ত নিল সে আর তার গ্রামবাসীরা এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।সে তলোয়ারটি হাতে নিয়ে, তন্ত্রটি সঙ্গে নিয়ে এবং মণিটি নিজের কাছে রেখে প্রস্তুত হলো। তার সঙ্গে চলে এল কয়েকজন সাহসী যুবক, যারা তার নেতৃত্বে চলতে প্রস্তুত ছিল। অর্ণব জানতো শুধু শক্তি দিয়েই এই দুর্বৃত্তদের পরাজিত করা যাবে না। তাকে তাদের সাথে মানসিক যুদ্ধও করতে হবে।তারা গ্রাম থেকে বেরিয়ে পাহাড়ি পথে চলতে চলতে দুর্বৃত্তদের দেখা পেলো। অর্ণব তলোয়ারটি হাতে তুলে নিয়ে প্রথমেই তাদের নেতা, কৃপালুকে চ্যালেঞ্জ করলো। কৃপালু ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং সে জানতো না যে অর্ণবের কাছে সেই দেবতার আশীর্বাদ রয়েছে।
অর্ণব তন্ত্রটি পড়তে শুরু করলো এবং সেই অদ্ভুত শব্দ গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো। এই তন্ত্রের শক্তি সবার সামনে একটা অদ্ভুত আলো ছড়াতে শুরু করলো। দুর্বৃত্তরা ভীত হয়ে পড়লো এবং একে একে অর্ণবের সামনে হার মানতে শুরু করলো। কৃপালু শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলো, তার শক্তি ও ভয় অর্ণবের সামনে তুচ্ছ।অর্ণব তখন কৃপালুকে বলল "দুষ্ট কাজ থেকে তুমি ফিরে এসো এবং অন্যদের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করো।" কৃপালু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর মাথা নত করে স্বীকার করলো তার ভুল। অর্ণব তাকে ক্ষমা করে দিলো এবং বলল, "আসল শক্তি মানুষের হৃদয়ে, আমাদের একে অপরকে সহানুভূতির সাথে গ্রহণ করতে শিখতে হবে।"গ্রামে ফিরে এসে অর্ণবকে এক নতুন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেয়া হলো। গ্রামবাসীরা বুঝলো যে, একসাথে মিলিত হলে সাহস ও বন্ধুত্বের শক্তি দিয়ে তারা কোনো বিপদ মোকাবিলা করতে পারে।এর পরবর্তী সময়ে অর্ণব গ্রামে এক নতুন দিশা তৈরি করলো। সে শিক্ষার প্রচলন করলো, যাতে সবাই জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং নিজেদের উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে। তলোয়ার, তন্ত্র, এবং মণির শক্তি একসময়ে গ্রামবাসীদের জীবনে শান্তি আনার লক্ষ্যে ব্যবহৃত হলো।গ্রামটি এখন শুধু শান্তি ও সমৃদ্ধি নয়, বরং আদর্শও হয়ে উঠলো অন্য গ্রামের কাছে। অর্ণবের নাম সবার মুখে মুখে ঘুরতো এবং তার গল্প নতুন প্রজন্মকে সাহস এবং সঠিক পথে চলতে অনুপ্রাণিত করতো।এভাবেই অর্ণব তার জীবনকে শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পুরো গ্রাম ও তার জনগণের জন্য উৎসর্গ করলো।
পোস্টের বিষয় | ছোট গল্প |
---|---|
পোস্টকারী | তানহা তানজিল তরসা |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১১ |
লোকেশন | পাবনা |

আপনার লেখা আজকের এই গল্পটা ছিল অসম্ভব সুন্দর। অর্ণব নিজের সাহসিকতার প্রমাণ দিয়েছে। যেখানে কেউ যায়নি সেখানে সে গিয়েছে আর বনরক্ষী দেবতাকে সে মুক্ত করেছে। এমনকি ওনার দেওয়া উপহার গুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছে। এই গল্পের শুরু এবং শেষ অনেক বেশি সুন্দর ছিল।
আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।