রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারা
নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।রবীন্দ্রনাথ নাট্য সাহিত্যে ছিলেন একজন কালজয়ী পুরুষ । অনেক অনেক বিখ্যাত নাটক তিনি উপহার দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যকে। তার মধ্যে অন্যতম সাংকেতিক নাটক হল "মুক্তধারা''।
যেহেতু আমি নিজেও বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলাম ।তাই বারবার সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে আমার খুবই ভালো লাগে। আজকে আবার অনেকদিন পর এই নাটকটা আবার পড়লাম। যতবারই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প এবং নাটক পড়ি ততবারই যেন আমার ভালো লাগে। এমন অনেক গল্প ,নাটক, উপন্যাস আছে যা বারবার পড়লেও কখনো পুরনো হয় না। তেমনভাবেই এই নাটকটা সম্পর্কে কিছু আলোচনা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
"মুক্তধারা" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি নাটক, যা ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। এটি মূলত এক সামাজিক, রাজনৈতিক ও দার্শনিক রচনা যা মানবতার মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং প্রকৃত স্বাধীনতার ধারণা নিয়ে রচিত। নাটকটি মানুষের মধ্যে প্রচলিত যন্ত্র নির্ভরতা, প্রাকৃতিক শক্তির শোষণ এবং ক্ষমতার লোভের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ।
মূল কাহিনী:
নাটকের পটভূমি হলো উত্তরায়ণ নামক একটি কাল্পনিক রাজ্য। উত্তরায়ণ রাজ্যর শাসক রণজিত ও তার পুত্র অভিজিৎ এই নাটকের মুখ্য চরিত্র। উত্তরায়ণের মূল লক্ষ্য হল প্রতিবেশী শোণিতপুর রাজ্যকে তাদের নির্মিত "যন্ত্র" নামক বাঁধের সাহায্যে শোষণ করা। শোণিতপুর রাজ্যের জনগণ মুক্তধারা নদীর পানির উপর নির্ভরশীল, যা উত্তরায়ণের নির্মিত বাঁধের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
অভিজিৎ, রণজিতের পুত্র, এই যন্ত্র ও বাঁধের প্রভাব সম্পর্কে চিন্তিত এবং শোণিতপুরের মানুষের কষ্ট বোঝে। সে তার পিতার আদেশ অমান্য করে এবং যন্ত্র ভেঙে ফেলে যাতে মুক্তধারা নদী পুনরায় মুক্তভাবে প্রবাহিত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত, অভিজিৎ তার এই কাজে সফল হয়, কিন্তু নিজের জীবন বিসর্জন দেয়।
থিম ও বার্তা:
"মুক্তধারা" নাটকটি একাধারে রাজনীতি, মানবতা, প্রকৃতি এবং স্বাধীনতার বিভিন্ন স্তর নিয়ে আলোচনা করে। এটি দেখায় কিভাবে ক্ষমতার লোভ মানুষকে অমানবিক করে তোলে এবং প্রকৃতির শৃঙ্খলাকে বাঁধার চেষ্টা করে। একইসাথে, অভিজিতের আত্মত্যাগ মানবতার মুক্তির জন্য একটি প্রতীক হয়ে ওঠে। এই নাটকটি মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের বার্তা দেয়।
নাটকের দার্শনিক দিক:
রবীন্দ্রনাথ এই নাটকের মাধ্যমে যন্ত্রসভ্যতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এখানে "যন্ত্র" শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং মানুষের সীমাহীন লোভ ও ক্ষমতালিপ্সার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মানবতার প্রকৃত মুক্তি কোনো যান্ত্রিক উন্নয়নে নয়, বরং আত্মার মুক্তি এবং প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানে রয়েছে, এই মর্মে নাটকটি একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে।
উপসংহার:
"মুক্তধারা" একটি অসাধারণ নাটক, যা সমকালীন সমাজ এবং রাজনীতির প্রতিচ্ছবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার অসামান্য চিন্তা ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে এই নাটকটিতে মানবতা, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
দিদি আপনি সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন জেনে ভালো লাগলো। আর সুন্দর করে এই "মুক্তধারা" নাটকটির সারমর্ম উপস্থাপন করেছেন পড়ে অনেক ভালো লাগলো। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উনার প্রতিটি লেখার মাধ্যমে নতুন কিছু উপস্থাপন করেছেন। এই নাটকের বিভিন্ন দিকগুলো সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি দিদি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সাংঘাতিক দুরদর্শি মানুষ ছিলেন তা তাঁর প্রতিটা লেখাই বলে দেয়৷ জীবন দর্শন আমি ওনার লেখার হাত ধরেই শিখেছি। আপনার লেখা ও সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ পড়ে ভালো লাগল। উনি রাজনীতিটাও বেশ বুঝতেন। জমিদার বাড়ির ছেলে ছিলেন তো, অনেক কিছু বাড়ি থেকেই শিখেছেন।
ব্লগের ছবিটি খুব সুন্দর।
আমি বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী না। তবে বাংলা সাহিত্যের প্রতি আমার গভীর একটা টান আছে। এইজন্য সবসময় জানার চেষ্টা করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুক্তধারা নাটকের কথা আগে শুনেছি। কিন্তু এটা পড়িনি। আসলে উনার এতশত রচনা যে তার একটা অংশ পড়াও বেশ কঠিন। বেশ ভালো লাগল আপনার পোস্ট টা পড়ে আপু।
আসলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প এবং নাটকগুলো পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুক্তধারা নাটক সম্পর্কে দারুণ আলোচনা করেছেন বৌদি। পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।