লাইফ স্টাইল: রাতে পুকুরে পানি দেওয়ার মুহূর্ত
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি রাত জেগে পুকুরে পানি দেয়ার মুহূর্তে ধারণ করা ফটোগ্রাফি নিয়ে। আশা করবো এই পোষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের কিছু অনুভূতি এবং অনেক কিছু জানতে পারবেন।
বেশ কিছুদিন ধরে পুকুরে পানি দেওয়া চলছে। মার্চ এপ্রিল মাসগুলোতে পুকুরে পানি থাকে না। প্রচন্ড রোদ গরমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। তাই রাত জেগে পুকুরে মোটর চালিয়ে পানি দিতে হয়, দেখাশোনা করতে হয়। কয়দিন ধরে আকাশের অবস্থা তেমন ভালো মনে হচ্ছে না। তাই রাতে একটু বেশি সজাগ থাকতে হয়। মটর টা ফাঁকা জায়গায়। ঠিক তেমনি আজকে রাত সাড়ে ১১ টার পরে মাঠের দিকে চলে যায়। চারিদিকে সবকিছু দেখাশোনা করে মোটরের কাছে এসে উপস্থিত হলাম। দেখলাম মোটর নিজ গতিতে ঘুরছে পানি উঠছে দীর্ঘ পাইপ লাইন জুড়ে দূরের একপুকুরে পানি দেয়া হচ্ছিল। আকাশটা কেমন মেঘাচ্ছন্ন। আকাশে তেমন তারা দেখলাম না। তাই বাগানের মধ্যে পুকুরপাড়ে বেশ ঘন অন্ধকার লক্ষ্য করলাম।
এরপর সবজি বাগানের দিকে এগিয়ে গেলাম। সবজি বাগানের দিনে যে সমস্ত কাজ করে জিনিস রেখে চলে যাওয়া হয়েছিল লক্ষ্য করে দেখলাম জায়গায় জায়গায় জিনিস পড়ে রয়েছে। হঠাৎ করে বিদেশি লাইফ তার কাজ ফুরিয়ে গেল। কোনভাবে লাইটে আর আলো হলো না। অনেকদিন লাইফটা ঘরে পড়ে থাকায় ব্যাটারি ড্যামেজ হয়ে গেছে। এরপর মোবাইলের টস জ্বালিয়েই আশেপাশের ফটো ধারণ করলাম। মূলত সময় তো পার করতে হবে। তাই কলা গাছের দিকে কলার ফটোগ্রাফি। এরপর সামনে এদিকে ওদিকে অগ্রসর হওয়া। পুকুর দেখাশোনা ইত্যাদি।
নিঝুম রাত, আকাশের দিকে ফটো ধারণ করার চেষ্টা করলাম। দেখলাম দূরে চাঁদ মামা একটু দেখা যাচ্ছে। নিচে এদিকে ওদিকে গ্রামে স্টিক লাইট ও মাংসের বাড়ির আলো নজরে আসছে। আশেপাশে কোন মানুষের শব্দ নেই। মাঝেমধ্যে বাগানের মধ্যে পাতার শব্দ হয়ে উঠছে। হয়তো শেয়াল বনগাঁড়া সহ অন্যান্য জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গের চলাচল। মোবাইলের আলো দেখে বোনের মধ্য থেকে বের হয়ে আসলো একটি তেলাপোকা।
এরপর কিছুটা সময়ের জন্য পাশের ধানের জমিতে নেমে পড়লাম। ধানের পাতায় পাতায় শিশির জমা। যতটা জানি এগুলো শিশির নয়। বিকেল থেকেই জমতে দেখেছিলাম উদ্ধৃত পানি। হয়তো অনেকে জানে না আবার অনেকে জানতেও পারে। কিছু কিছু ফসলের পাতা বিকেল বেলায় বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এগুলো গাছের উদ্রিত পানি বের হয়ে আসে। আর সকালে আমরা গাছে আরও বেশি যেগুলো বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা দেখে সেগুলো শিশির। সবমিলেই গাছের পাতায় জমে রয়েছে। এদিকে হাত পা ভিজে যেতে লাগলো শিশির কণা আর এ সমস্ত ধানের পাতায়। তাই আর সামনে না এগিয়ে পিছনে ফিরে উঠে আসলাম।
এরপর লক্ষ্য করলাম কোথাও কোন ফুল রয়েছে কিনা। দেখলাম বনো কিছু ফুল পুকুর পাড়ে ফুটে রয়েছে। এরমধ্যে কুকুর শোঁকা নামক গাছড়ার ফুল, ভাট গাছের সাদা সাদা সুন্দর ফুল। এগুলাই ফটোগ্রাফি করলাম সময় পার হতে থাকলো। এই মুহূর্তে বেশ ভালই লাগছিল, ঠান্ডা আবহাওয়া। কোন প্রকার ভয় মনে না করে নির্জন নিরালায় অন্ধকারে ঘোরাঘুরি আর ফটোগ্রাফি করা। তবে দেশের পরিস্থিতির কথা মনে করছিলাম। প্রতিনিয়ত দেশে হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে। এইতো গতকালকের ভিডিও নিউজে দেখলাম, ঝিনাইদহ তে একজন মানুষকে একাধিক অস্ত্র আঘাত করে কেটে ফেলার চেষ্টা করেছে ডাকাতেরা। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা প্রয়োজন। চোর ডাকাত কখন কিভাবে ক্ষতি করে তার ঠিক নাই।
এরপর কিছুটা সময়ের জন্য বাগানের দিকে এগিয়ে আসলাম। বাগানের দিকে এগিয়ে আসতেই রয়েছে আমাদের এক ফুফাতো ভাইয়ের মটর ঘর। মটর ঘরকে অতিক্রম করে ই রয়েছে বড় বাঁশ বাগান। তখনো বেশ ভালো লক্ষ্য করলাম বাগানের মধ্যে কি যেন দৌড়াদৌড়ি করছে। রাতে কোন সারা শব্দ নেই এজন্য বন জঙ্গলে থাকা জিনিসের চলাচলের শব্দটা পাতার উপর একটু বেশি জোরে মনে হয়। ভাবতে থাকলাম বাঁশবাগান নিয়ে কত গল্প শুনেছি ছোটবেলায়। ভূতের গল্প জিন পরীর গল্প আলা ভোলার গল্প ইত্যাদি। তবে আমি এসব জিনিস গুলো তত বেশি একটা ভয় মনে করি না। মানুষের মধ্যে একটা শয়তান রয়েছে সেই শয়তানটাই বড় শয়তান। যদি তাকে কন্ট্রোলে রাখতে পারা যায় মনে সাহস রেখে, সেটাই বড়।
এরপর সামনে এগিয়ে আসতে লক্ষ্য করলাম আকন্দ ফুল। পাশের খেজুর গাছগুলো দণ্ডায়মান। শীতের মুহূর্তে এই সমস্ত গাছে গাছিরা কত খেজুরের রস সংরক্ষণ করেছে। মনে মনে ভাবলাম যখন যার যেটা প্রয়োজন তখন সে সেখানে সালাম করতে যায়। যখন আর প্রয়োজন নেই তখন আর ঘুরে তাকায় না। আসলে দুনিয়াটা বেশ স্বার্থবাদী জায়গা। আমিও হয়তো স্বার্থের টানে এই রাত জেগে পুকুর পাড়ে। স্বার্থ যদি না থাকতো কেন ঘুম কামাই করে রাত দুপুরে পুকুর পাড়ে আসবো। তেমনি মনে হল খেজুর গাছটাকে দেখে। শীতের সময় খেজুর গাছের রস হয় বলেই গাছেরা খেজুর গাছটাকে নিজের ইচ্ছে মত কেটে রস বের করে। এরপর আর রস হয় না বলে তার পানের তা কেউ দেখতে আসে না। এভাবেই নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতে কোন এক সময় বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিষয় | পুকুর পাহারা |
---|---|
লোকেশন | Location |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix hot 11s |
ফটোগ্রাফার | @sumon09 |
দেশ | বাংলাদেশ |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকুন সকলে। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
20-03-25
আপনার এই রাতে পুকুরে জল দেওয়ার পোস্টটি দেখে বেশ ভালো লাগলো। আমিও এমন রাতে জমিতে জল দেওয়ার জন্য এবং টমেটো পাহারা দেওয়ার জন্য রাত জেগে চাষের জমিগুলোতে ঘুরে বেড়াতাম। তখন এমন সুন্দর সুন্দর অনেক অনুভূতি হতো এবং রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেশ ভালো লাগতো। আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
অনেক ভালো লাগলো দাদা আপনার মন্তব্য দেখে।