গল্প: গভীর রাতে ভয়ানক ঘটনার সম্মুখীন

in আমার বাংলা ব্লগ18 days ago


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।

IMG_20231226_232847_568.jpg

Photography device infinix hot 11s





বেশ কয়েক বছর আগে। পুকুর পাহারা দিতে মাঠে অবস্থান করছি। রাত অনুমানিক তিনটা হবে। গভীর ঘন অন্ধকার রাত। বর্ষার সময় একমাত্র মোবাইলের আলো আর লাইটের আলো ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। টস বন্ধ করে ফেললে চোঁখে সামনে থাকা জিনিস দেখার সাধ্য নেই। বেশ দীর্ঘক্ষণ পুকুরে অবস্থান করছিলাম। তখন মাঠে তিনটা পুকুরে মাছ চাষ করতাম। প্রথমত তিনটা পুকুরে বেশিটা সময় দেওয়া লাগত না। বড় পাংগাস মাছ থাকা অবস্থায় একটু বেশি ঘোরাঘুরি এমনকি মাঠে অবস্থান করতে হতো। যাইহোক রাত সাড়ে দশটায় এসেছিলাম সাড়ে তিনটার দিকে বাসায় চলে যাব এমনটাই প্ল্যান পরিকল্পনা ছিল। কারণ তখন দুইটা পুকুরের পাঙ্গাস বিক্রয় করতে হবে এমন মুহূর্ত এসে গেছিল।


তিনটা বাজার আর দিয়ে আমি একটু একটু এগিয়ে আসছি বাড়ির দিকে। অর্থাৎ লাস্টের পুকুর থেকে ফাস্টের পুকুরের দিকে চলে এসেছি। রাতে যখন পুকুরে থাকি তখন শুধু শেয়াল আর বন-বিড়াল বা বোন গাড়া এর সাথে দেখা হয়। এছাড়া কুকুর বা বাড়িতে থাকা বিড়াল এর সাথে দেখা হয় না। বর্ষার সময়, আসতে মাঠে আগাছায় পরিপূর্ণ। চলতি পথের দুই পাশ দিয়ে ভাইটগাছ আর খ্যাড় বাড়ুন বাধা উলু। যেগুলো নিজের বুক পর্যন্ত উঁচা। আমি মোবাইলের টস অফ করে গ্লাসের আলোতে একটু পথ দেখছি আর সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। কারণ মাঠে অবস্থান করার মুহূর্তে যত কম আলো জ্বালানো যায় তত ভালো। বিদেশি লাইটটা প্যান্ট শার্টের পিছনের পকেটে ছিল। একটু সতর্কভাবে চলতে হয় তাই আলো জ্বলাচ্ছিলাম না। গায়ে গেঞ্জি বা টি শার্ট, পরনে জিন্স প্যান্ট আর পায়ে ছিল হাঁটু পর্যন্ত গাম্বুট জুতা। হাতে মাত্র একটা স্ট্রং লাঠি, কাছে মোবাইল আর বিদেশি লাইটটা। গাম্বুট জুতা পায়ে দিলে নিজের কাছে অনেক সাহসী মনে হয়। কাদা পানি ভেদ করে দ্রুত চলা যায়। ঠিক সেভাবেই মনে সাহস নিয়ে অন্ধকার রাতে চলাচল। মোবাইলের গ্লাসের আলো বন্ধ হয়ে গেলেও আবার অন করে পথ দেখা। কিন্তু মোবাইলের টস বা লাইটের টস ব্যবহার করছি না।


এই সুযোগে চারটি জ্যান্ত কুকুর আমাকে ফলো করেছে। হয়তো তারা বুঝতে পারেনি আমি মানুষ চলছি অথবা অন্য কিছু চলছে। তারা দূর থেকে হয়তো মোবাইলের গ্লাসের আলোটাকে টার্গেট করেছে। যা অনুমান করা যায় ভেবেছিল কোন একটা কিছু। তারা আমাকে ভয় পেয়ে চলে না গিয়ে বরঞ্চ কামড় দেওয়ার জন্য সাই সাই করে ছুটে চলে আসছে। আমি বন জঙ্গলের দৌড়ানোর আওয়াজ এ হাঁপালো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। সোজা রাস্তা শুধু পায়ে চলার মত পথ দুই পাশে বড় বড় বন জঙ্গল। এদিকে মোবাইলের গ্লাসের আলো টাও বেশ কমানো। পিছন পকেট থেকে লাইট বের করব নাকি লাঠি উঁচা করে ধরবো নাকি মোবাইলের টস জ্বালাবো কিছুই বুঝিনা। আমি মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো শিয়ালের পাল দৌড়ে আসছে। তখন মনের মধ্যে একটু ভয়ের কাঁপুনি লেগে উঠলো। তিন চারটা শিয়াল যদি হঠাৎ আক্রমণ করে সেটা কিন্তু বেশ ভয়ানক বিষয়। নিঝুম রাতে মাঠে আমি একা। মোবাইলের গ্লাসের আলোতে যতটুক লক্ষ্য করলাম ছুটে এসে যেন আমার গা পানে হাচড়ে উঠে চেপে ধরবে! আমিও সাথে সাথে উপস্থিত বুদ্ধি মত জুতা দিয়ে সামনে এক লাথি বসিয়ে দিলাম। তখন কুকুর ঘেউ করে উঠলো। মোবাইলের গ্লাসের আলোটা কমানো ছিল আবার টাইমটাও কম ছিল। যার জন্য আমি বেশ বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলাম। এরপর সজোরে সামনে লাঠি দিয়ে দুইবাড়ি দিলাম মাটির উপর। এদিকে আতঙ্কের মধ্যেই মোবাইলের টস জ্বালিয়ে ফেললাম। দ্রুত মোবাইলটা টি-শার্টের পকেটে রেখেই, প্যান্টের পিছন পকেট থেকে লাইট বের করে আলো মারলাম সামনের দিকে।


তাকিয়ে দেখতে পারলাম ৪ টা বড় বড় কুকুর। বেশ হিংস্র কুকুর, কয়টা দিন ধরে কোন স্থান থেকে এসে বাসা বেধেছে আমাদের চাচাদের মটর ঘরের পাশে। মটর ঘরটা আমার থেকে দুই পুকুর পর। মূলত এরা হিংস্র রাত চরা কুকুর। একসাথে দল বেধে থাকে। এলাকায় নতুন তাই আমাকে সেভাবে চিনতে পারেনি। তাই আক্রমণ করার জন্য ছুটে আসে। এলাকার শিয়ালগুলো এভাবে সাহস করে আমার সামনে দাঁড়ায় না। দীর্ঘদিন পুকুরে চলাচল করি কোনদিন শিয়াল চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসেনি। একসাথে চারটা শিয়ালের সম্মুখীন হয়েছি অনেকবার। পাশ দিয়ে তারা পার হয়ে গেছে। আমি সামনে একা এগিয়ে গেছি। কিন্তু হঠাৎ ঐদিন চারটা কুকুর এভাবে একা রাতে আমার পানে কামড়ানোর উদ্দেশ্যে আসবে। বিষয়টা আমার কাছে খুবই অবাক লেগেছিল। একটু নীরবে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে বুকের হার্টবিট বেড়ে গেছিল। হঠাৎ ভয় লাগাটা যেন নিয়ন্ত্রণে আনলাম। হাত পা বল অনেকটা কমে গেছিল পুনরায় ফিরে আসলো। এরপর লাইটের আলো জ্বালিয়ে কুকুরের অবস্থান দেখলাম। খেয়াল করে দেখলাম একটা কুকুর টার্গেট নিয়ে আমার পানে তাকিয়ে পুকুরের ওই পাশে বসে রয়েছে। এতক্ষণে তারা নিশ্চিত আমি আর কিছু নই একজন মানুষ। তবুও তারা বসে রয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ জোরে জোরে ঘেউ ঘেউ করছিল। তারপরে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।


এরপর শুরু হলো আমার খেলা। মোবাইলটা প্যান্টের পকেটের মধ্যে রেখে দিলাম। নিজের মনোবল শক্ত করে নিয়ে বাঁ হাতে বিদেশি চার্জার লাইট অন করে ধরলাম। আর ডান হাতে স্ট্রং পাশের দুই হাত এর একটু বড় সাইজের লাঠিটা উঁচু করে ধরে। দৌড়াতে থাকলাম কুকুরের দিকে। রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটা হবে। শুরু হলো কুকুরের সাথে ধস্তাধস্তি। কুকুর আমার লাইটের আলোতে একটু বিরক্ত বোধ করছিল। আমার ছুটে যাওয়া তারা বুঝতে পারলো। তারা সামনে দৌড়াতে থাকলো আর জোরে জোরে ঘেউ ঘেউ করতে থাকলো। ঠিক এভাবে দুই তিনটা পুকুর পাড় চক্কর দিলাম কুকুর মারার জন্য। কুকুর রাও বেশি জোরে জোরে দৌড়াতে থাকলো। তারা কোন বন জঙ্গলের মধ্যে যাচ্ছে না। আশেপাশে বন জঙ্গলে ভরপুর। মানুষের চলা পাওয়াটা পথে তারা চলতে থাকলো। জায়গায় জায়গায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে পুকুরপাড়। কিন্তু বেশ খোঁচ খাড়া হয়ে রয়েছে। তাই সাবধানেই দৌড়াতে থাকলাম। আর এভাবে কুকুরটাকে অনেক দৌড়ানি দিয়ালাম। কারণ আমি যদি কুকুরকে ভয় পায় তাহলে পরবর্তী রাত্রে পুকুর পাহারা করতে আসলে এরা ডিস্টার্ব করবে। এভাবে বেশি দীর্ঘক্ষণ কুকুরগুলোকে তাড়তে তাড়তে গ্রামের মধ্যে তুলে ফেললাম। আমারও পুকুরে থাকার আর প্রয়োজন ছিল না, তাই কুকুরগুলোকে তাড়াতে তাড়াতে গ্রামের মধ্যে। কুকুরগুলো পাড়াগাঁয়ে উঠে এসে জোরে জোরে ঘেউ ঘেউ করতে থাকলো। আমি থামলাম না। হাই রোডে উঠে পড়েছি। রাস্তার উপরে এসে আবার তাড়া শুরু করলাম। ততক্ষণে বুঝতে পারলাম বেশ কয়েকজন মানুষ সজাগ হয়েছে। রাস্তা দিয়ে মাছের গাড়ি বহন করা মানুষেরা আমার সাথে যুক্ত হয়ে গলাবাজি বলতে থাকলো "দাও তাড়া, ধর ধর" ইত্যাদি। আর এভাবেই সেই রাতে কুকুরগুলো আমার কাছে তাড়া পেয়ে, কয়েক দিনের মধ্যেই আস্তানা ত্যাগ করল। এরপরে কয়েকদিন তাদেরকে দেখেছিলাম। কিন্তু পরে আর কুকুরগুলোকে দেখা যায়নি। হয়তো এই জায়গা ত্যাগ করে অন্য কোন জায়গায় আস্তানা গড়েছিল।


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিচাঁদ
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
ঘটনার লোকেশনজুগীরগোফা
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png


file-g5jU1EzEHAcdc41yLeGvhd2C.webp


Sort:  
 18 days ago 
 18 days ago 

12-01-25

Screenshot_20250112-204729.jpg

Screenshot_20250112-204703.jpg

Screenshot_20250112-204607.jpg

 18 days ago 

এত রাতে একা পুকুর পাড়ে চলাচল করাটাই তো কঠিন কথা। এর মধ্যে আবার কুকুরের সম্মুখীন হওয়া। উল্টা তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানো। কেমনে কি ভাই। যেন বুঝে আসেনা। আপনিও পারেন বটে। বেশ ভয়ানক ঘটনা শেয়ার করেছেন।

 16 days ago 

হাতে লাঠি রয়েছে, তাড়া করব তো ভয় কিসের।

 18 days ago 

কুকুর অনেক খারাপ জিনিস। আসলে ভাইয়া কুকুর এভাবে অত্যাচার করে বলার মতো নয়।সত্যি আপনি যদি মানুষ না হয়ে অন্য কিছু হতেন তাহলে হয়তো কুকুর ধরে আমার হাঁসের মত খেয়ে ফেলতো।যাইহোক অবশেষে আপনার তাড়া খেয়ে স্হান ত্যাগ করেছে জেনে ভালো লাগলো।

 16 days ago 

ঠিক বলেছেন

 18 days ago 

অনেক বড় ভয়ের ঘটনা ছিল এটা। আমি তো ঘটনা পড়তে গিয়ে যেন ভয়ে সে অবস্থা। মনে হচ্ছিল আমার সাথে এমন ঘটনা ঘটছে। ভাবাটাই যেন কঠিন। একদম গল্পের মধ্যে হারিয়ে গেছিলাম।

 16 days ago 

তাহলে আর ভাবার দরকার নেই।

 17 days ago 

ভাইয়া আপনি পুকুর পাহাড়া দিতে গিয়ে অনেক বড় একটি বিপদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন। কুকুরের কামড় খুবই বিপজ্জনক। কুকুর হয়তো বুঝতে পারেনি আপনি ভদ্র মানুষ। কারণ অনেক সময় কুকুর চোর ডাকাত কিংবা অন্য কিছু দেখলেও এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে আপনি যদি সাথে সাথে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে তাদের চোখে ধরতেন তাহলে আপনাকে এভাবে অপ্রস্তুত হতে হতো না। তবে অবশেষে শেষ রক্ষা পেয়েছেন এটাই শুকরিয়া। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 16 days ago 

আসলে বাহির থেকে আসা কুকুর ছিল তো, এলাকার পরিচিত কুকুর হলে সমস্যা ছিল না। আর এলাকার কুকুর এত রাতে পুকুরের দিকে যায় না।