প্রথম গলাকাটা লাশ দেখার গল্প
হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি জঘন্যতম হত্যার গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের ভালো লাগবে এবং অজানা কিছু জানার সুযোগ পাবেন। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
Infinix Hot 11s
আমরা ছোট থেকে ছাগলের ঘাস সংরক্ষণ করার জন্য,আমাদের গ্রামের পশ্চিমে একটি মাঠ রয়েছে সেখানে যেতাম। সেই মাঠের নাম পদ্মবিল। বিলটা আমাদের গ্রাম আর নিকটস্থ বানিয়াপুকুর ও ১৬ টাকা নামক দুই গ্রামের মধ্যবর্তী মাঠ। আমাদের গ্রামটা পূর্বে আর ওই দুই গ্রাম পশ্চিমের উত্তর দক্ষিণ কোনে। মাঝখানে পদ্মবিল। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে অথবা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে, বিকেলে ছাগলের ঘাস সংরক্ষণ করতে এ মাঠের বিলের দিকে চলে যেতাম। ছোটবেলার দীর্ঘ অনেক বছর এই বিলে যাওয়া আসার অভ্যাস ছিল। তাই অনেকটা পরিচিত হয়ে গেছিলাম। প্রত্যেকটা দিন একবার অথবা দুইবার করে যাওয়া হতো। তখন সম্ভবত ক্লাস সিক্সে অথবা সেভেনে পড়ি। ২০০৬-৭ সালের দিকের ঘটনা হবে। ঘটনার আগের দিন বিকেলেও সেই পদ্মবিলের পুকুর পাড়ে ছাগলের জন্য ঘাস কেটেছি।
সময়টা কি মাস হতে পারে আমার মনে নেই। নতুন ধান কাটার পর। ধানের জমিগুলো ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এমন একটা সময়। সকালে ঘুম থেকে উঠছি রাস্তার উপর এসে দাঁড়ালাম। শুনতে পারলাম পদ্মবিলে আমাদের বড় দুলাভাইয়ের ধানের জমিতে দুইটা মানুষ কাটা পড়ে রয়েছে। গ্রামের অন্যপাড়ার মানুষেরা বলাবলি করছে এবং আমাদের রাস্তা হয়ে পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাটা জানার জন্য আমিও একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। পাশাপাশি পাড়ার দুইটা দোকান ছিল। সেখানে জানতে পারলাম দুইটা মানুষকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে পদ্মবিলে। মানুষজন যাওয়া আসা করছে। এই কথা শোনার পর আমি দৌড়ে বাড়ি চলে আসলাম। এরপর মায়ের কাছে বললাম। সময়ের সাথে সাথে বিষয়টা অনেক জানা জানি আর মানুষের চলাচল শুরু হয়ে গেল। আমিও দেখতে যাওয়ার জন্য ছটফট করছি। কিন্তু আমার আম্মা কিছুতেই যেতে দেবে না। আম্মা ভয় পাচ্ছে। ওইসব দেখতে যেতে হবে না। ওইসব দেখলে রাতে ভয় পেতে পারি। কিন্তু আমি কিছুতেই মায়ের কথা শুনলাম না। সমবয়সী পাড়ার বন্ধুদের সাথে আমরা দুই ভাই চলে গেলাম। দেখলাম ফসলের মাঠে মানুষে পরিপূর্ণ। অনেক মানুষ মাঠের দিকে যাচ্ছে,আবার অনেক মানুষ ঘুরে আসছে। মানুষের মুখের কথা শুনে যেন একটু একটু ভয় ভয় লাগছে। তবুও বন্ধুরা মিলে সাহস করে চলে যাচ্ছিলাম।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পারলাম সত্যি দুইজন মানুষ গলাকাটা পড়ে রয়েছে। প্রথমে আমি দেখে অবাক হলাম মানুষকে এভাবে জবাই করে। না জানি কি অপরাধ আর কেনই বা জবাই করে ফেলে রেখেছে এভাবে। অনেকে বলাবলি করছিল বিলের ওপারে অর্থাৎ পশ্চিমে কাশটোদহ নামক গ্রাম। ওই গ্রামের মানুষ। দেখে মনে হয়েছিল একজন মানুষ মধ্যবয়সী। আরেকজন মানুষ অল্প বয়সে। দূর দূরান্তের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত মানুষ ভিড় জমিয়েছি লাশ দুইটা দেখার জন্য। আমি কয়েকবার করে লাশ দুইটার দিকে তাকালাম। দেখলাম ফসলের জমিতে ধান গাছের গোড়ায় রক্ত লেগে আছে। কিছু কিছু জায়গায় রক্ত জমে। গলা থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। ইতিমধ্যে গলার আংশ যেন বোঝা যাচ্ছে না। বয়স্ক মানুষের মুখটা ভালোভাবে দেখেছিলাম। আজও যেন চোখে ভাসে। আমি বারবার ভাবছিলাম মাঠে এভাবে পড়ে রয়েছে,রাতের শিয়াল কুকুরে মানুষ দুইটার গায়ে কামড় দেয় নাই। আরো ভাবছিলাম আমি যদি কোন শক্তিশালী সব জানতাম মানুষ হতাম। তাহলে এই মানুষ দুইটাকে যারা হত্যা করছিল, উড়ে এসে তাদের হাত থেকে মানুষ দুইটাকে রক্ষা করে নিয়ে চলে যেতাম। কেন জানি বারবার এমন টাই মনে হচ্ছিল তখন। ইতোমধ্যে হঠাৎ দেখি আমার ভাই এর হাত পা কাঁপা শুরু হয়েছে। সে আমাকে বলছে মাথা ঘুরছে বাড়ি চলে যাব। আমি অবশ্য তেমন ভয় পাচ্ছিলাম না বা কিছু মনে হচ্ছিল না। কিন্তু ভাইয়ের অবস্থা খারাপ দেখে দ্রুত বাড়ির দিকে ফিরতে হচ্ছিল। এরপর বন্ধুদের মুখে অনেক কিছু শুনতে পারলাম। পথচলা মানুষদের মুখে অনেক কিছু শুনতে পারলাম।
এর কিছুদিন পরে মানুষের মুখে গল্পে গল্পে জানতে পেরেছিলাম। এদের মধ্যে একজন ব্যক্তি ডাকাতদের সাথে সম্পর্ক ছিল। কম বয়সী যে ছেলেটা সেই ছেলেটার ভাইকে ধরতে এসে ভুল করে ওকে ধরে নিয়ে এসে হত্যা করেছে। কোন কারনে হয়তো তাদের মধ্যে গ্যাঞ্জাম ছিল। পরবর্তীতে আরো শুনতে পেরেছিলাম ডাকাতেরা নাকি চিঠির মাধ্যমে কম বয়সী ছেলের মায়ের কাছে মাফ চেয়েছিল। তাদের ভুল হয়েছিল কম বয়সী ছেলেটাকে হত্যা করা। তারা নাকি ধরতে এসেছিল তার অন্য ভাইকে। আরো জানতে পেরেছিলাম কম বয়সী ছেলেটা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তার এইচএসসি রেজাল্ট বের হয়েছে, সে ভালো রেজাল্ট করেছিল। কিন্তু অকালের জীবনটা চলে গেল। এক কথায় ডাকাতদের কাছে মিস হয়েছিল এমনটা জেনেছিলাম। আর এভাবে জীবনে প্রথম গলা কাটা লাস দেখেছিলাম পরিচিত পদ্ম বিলে। আর সেই থেকে পদ্ম বিলে ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল আমাদের। আমরা অনেক সাহসী ছিলাম, তার পরেও গলাকাটার কথাটা মনে আসলে ভয় পেতাম। তাই সাহস করতাম না আর ওই বিলের মাঠে ছাগলের ঘাস কাটতে যেতে। এরপর বেশ অনেক বছর পর এগারো সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্ট হওয়ার পরে আমি আর আমার বন্ধু ঘুরতে গিয়েছিলাম। আর সেই মুহূর্তে স্মরণ করেছিলাম ওই দিনের ঘটনা। দীর্ঘ কত বছর পর ২০১১ সালের শেষের দিকে আবার ওই বিলে পুকুর ঘুরতে গেছি। আজকে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে কয়েকটা ঘটনা দেখে হঠাৎ মনে পড়লো সেই স্মৃতি।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | হনুমান |
---|---|
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
Photo editing | PicsArt app |
ঘটনার লোকেশন | জুগীরগোফা |
ব্লগার | Sumon |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
X-promotion
02-02-25
এরকম সামান্য একটি ভুলের কারণে তরতাজা একটি প্রাণ ঝরে পড়ল। এখন ক্ষমা চেয়ে আর হবে। যার হারানো সেতো তার সন্তান হারিয়ে ফেলেছে। এরকম ঘটনাগুলো আসলেই খুব মর্মান্তিক। নতুন এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু বিষয়টা খুবই মর্মান্তিক ছিল
গল্পটা পড়ে বেশ খারাপ লাগলো। যতটুকু বুঝতে পারলাম আসলে ছোট ছেলেটা একদম নির্দোষ ছিল তাকে ডাকাতেরা অপরাধ ছাড়াই হত্যা করেছে। তাকে হত্যা করার কিছুদিন পরে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট আসে আর সেখানে সে ভালো ফলাফল করেছিল এটা শোনার পরে আরো বেশি খারাপ লেগেছে।
এটাই ভাগ্য ভাই
আসলে ভাইয়া কোন কিছু বলার ভাষা নেই। মানুষ কেন যে মানুষের প্রতি এমন অন্যায় অবিচার করে ফেলে। এই বলে একজন মানুষকে দুনিয়া থেকে শেষ করে দিতে হবে। কি একটা দুনিয়া। হয়তো ছেলেটা রেজাল্টের আশায় নতুন স্বপ্ন নিয়ে বসে ছিল। কিন্তু তার জীবনটা চলে গেল, কোন কিছু না বুঝতেই। এভাবেই কত জনের কত জীবন কিভাবে চলে যায় কেউ বলতে পারেনা।
ঠিক যেন তাই
আজকে আপনি আমাদের মাঝে প্রথম গলাকাটা লাশ দেখার গল্প শেয়ার করেছেন। আমাদের এলাকায় ও প্রায় প্রায় এ রকম অনেক ঘটনা ঘটে । তবে যতটুকু বুঝতে পারলাম আসলে ছোট ছেলেটা একদম নির্দোষ ছিল তাকে ডাকাতেরা অপরাধ ছাড়াই হত্যা করেছে। উনারা মোটেও এটা ঠিক করে নাই। আসলে এভাবে যে কত জনের জীবন চলে যাচ্ছে তা আমাদের সবার ধারণার বাইরে।
হ্যাঁ ছোট ছেলেটা নির্দোষ ছিল
ভাইয়া আপনার কাছ থেকে এই ঘটনা শুনে আমারও একটা ঘটনা মনে পড়েছে। আমিও এমনি একটি গলা কাটা লাশ দেখেছি আর সেই গল্প একদিন শেয়ার করবো। যাই হোক অল্প বয়সী ছেলেটি বিনা কারণে তার তরতাজা প্রাণ হারালে। ছেলেটির ভালো রেজাল্টের খবর পেয়ে না জানি তার বাবা- মায়ের কেমন লেগেছে। যার হারায় সেই বুঝে হারানোর যন্ত্রনা।
আচ্ছা আপু অপেক্ষায় রইলাম
ঘটনাটি পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো ভাই। আমাদের দেশে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা প্রায় সময় ঘটে যায়। ছেলেটি ভালো পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট অর্জন করে। কিন্তু সেই সময় ছেলেটি আর দুনিয়াতে নেই, জেনে মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। ভুল করে ক্ষমা চেয়ে কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। যাইহোক ছেলেটির জন্য দোয়া রইল মন থেকে। ঘটনাটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
হ্যাঁ ভাই এই ঘটনাটা শুনে অনেকেই আফসোস করেছিল।