রবিবারের আড্ডা -১০৮ | উন্মুক্ত আড্ডা - ১৪ পর্ব
ব্যানার ক্রেডিটঃ @hafizullah
আমার বাংলা ব্লগের আয়োজন রবিবারের আড্ডার নতুন সংযোজন হচ্ছে এবিবি উন্মুক্ত আড্ডা । মূলত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে তাদের সামনে একটা বিষয় তুলে ধরা হয়। যে সকল সদস্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হয়, তাদের নিয়েই মূলত এই অনুষ্ঠানটা পরিচালিত করা হয়।
তাছাড়া এই অনুষ্ঠানটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেহেতু চার-পাঁচজন অতিথি থাকে প্রথমত দুইবারে সকল অতিথির মতামত শোনা হয়, দ্বিতীয়তঃ কিছুটা বিরতি দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মতামত গ্রহণ করা হয় এবং নিজেদের পছন্দের গান শোনা হয়। সর্বশেষে উপস্থিত সকল দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য থাকে শুভেচ্ছা পুরস্কার।
শৈশবের রোজার স্মৃতিচারণ।
প্রথম অতিথিঃ @selinasathi1
ভেরিফাইড সদস্য, আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ রমজান আসলেই মূলত সবার আগে বাবার কথা মনে পড়ে। বিশেষ করে বাবা, সব ভাইবোনদের কে নিয়ে ইফতারের সময় ইফতার ভাগাভাগি করে দিতেন এবং সবাইকে নিয়েই ইফতারি করতেন। এই বিষয়টা প্রচুর ভালো লাগতো এবং এই বিষয়টাই প্রচুর মনে পড়ে। তাছাড়া তো ছোটবেলায় টুকটাক রোজার সময় লুকিয়ে লুকিয়ে বিভিন্ন খাবার খেয়েছি, পানি খেয়েছি, একবার ইফতারের আগে মা কাঁঠাল রেখেছিল সেখান থেকে কাঁঠাল খেয়েছিলাম । এরকম অনেক মজার ঘটনা আছে। সব মিলিয়ে বলতে গেলে, শৈশব স্মৃতি বড্ড আবেগপ্রবণ ব্যাপার।
দ্বিতীয় অতিথিঃ @ah-agim
ভেরিফাইড সদস্য, আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ তখন আমি ছোট ছিলাম, সেবার আমি আর আমার ভাই রোজা রেখেছিলাম। যেহেতু অতি আগ্রহে রোজা রেখেছি, তাই দুপুরের পরে গিয়ে প্রচুর ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল, সেসময় বারবার মায়ের কাছে এসে বলতাম, কখন ইফতারি হবে। মা শুধু এটা সেটা বুঝিয়ে বলতো, আর অল্প কিছু সময় পরেই ইফতারির সময় হবে, তোরা বাহিরে থেকে ঘুরে আয়। অবশেষে যখন বাহির থেকে ঘুরে আসলাম, তখন দেখছিলাম মা বেগুনী বানাচ্ছিল। খাবার টেবিলে যখন বেগুনী রাখা হয়েছিল, তখন আমরা দুই ভাইয়ের এক ভাইও লোভ সামলাতে পারিনি এবং আমরা বেগুনী খেয়ে ফেলেছিলাম, পরে যখন মা খাবার টেবিলে এসে দেখে বেগুনী নেই, তখন আমাদের বলল বেগুনী কোথায়, তখন আমরা বললাম যে খেয়ে ফেলেছি, যেহেতু এটা ইফতারি তাই আমরা খেয়েছি। তখন মা বুঝিয়ে বললো ইফতারি আসলে মাগরিবের আযান দেওয়ার পরে খেতে হয়। সেবার অবশ্য অল্পের জন্য আমাদের রোজাটা হয়নি।
আর একটা মজার ঘটনা হচ্ছে, আমাদের এলাকায় রোজার সময়ে মসজিদে ইফতারি করানো হতো ,তবে মসজিদের সভাপতি ছিল একটু কঠোর মানুষ। হঠাৎই আমাদের মতো ছোট বাচ্চাদের দেখে, বারবার বলছিল তোরা কি রোজা আছিস, তখন আমরা সবাই বলেছিলাম, হ্যাঁ আমরা রোজা আছি। যেহেতু আমরা সামনের কাতারে বসে ছিলাম এবং আমাদের সবাইকেই বিভিন্ন ফল, খেজুর অন্যান্য খাবার দেওয়া হয়েছিল, তবে আমাদের মাঝে দুই একজন বন্ধু রোজা ছিল না, তাই তারা খাবার পেয়েই হুট করে দু একটা খাবার লুকিয়ে খেতে গিয়েছিল আর তখনই সভাপতি সেটা দেখে ফেলেছিলেন, পরে অবশ্য আমাদের সবাইকে বের করে দিয়েছিলেন এবং অন্য কাতারে বসিয়ে রেখে হালকা ইফতারি দিয়েছিলেন।
তৃতীয় অতিথিঃ @shahid540
ভেরিফাইড সদস্য, আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ তখন আমি খুবই ছোট, সেসময় স্কুলে ক্লাস করছিলাম সঙ্গে আমার এক বন্ধু হঠাৎ দুপুর বেলার দিকে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। ম্যাডাম তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কি হয়েছে তোমার। সে তখন বলেছিল, সে নফল রোজা আছে। যদিও তখন আমি রোজা সম্পর্কে এত কিছু বুঝতাম না, তবে তার কাছ থেকে কিছু বিষয় জানার চেষ্টা করেছিলাম। যেহেতু তার পরিবার আমাদের পরিবারের থেকেও বেশি ধার্মিক ছিল, তাই আমার জন্য কিছুটা সহজ হয়ে গিয়েছিল কিছু বিষয় জানা। অবশেষে রোজার ছুটি চলে আসলো, তবে তারপরেও আমি আর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে রেখেছিলাম, সে যদি রোজা রাখে তাহলে আমিও রাখবো। মনের ভিতরে জেদ কাজ করছিল, ও রোজা করতে পারলে কেন আমি করতে পারব না। অবশেষে রোজা রাখলাম, বিশেষ করে বিকেল বেলার দিকে শারীরিক অবস্থা ভীষণ দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। মা আমার অবস্থা দেখে, বাবাকে ডেকেছিল এবং আমাকে বলছিল বেশি খারাপ লাগলে না হয় ডাক্তার ডাকি,তবে আমি বলেছিলাম, আমি একটু একা থাকি আশা করা যায় সব ঠিক হয়ে যাবে । সেদিন অবশ্য বেশ ভালোভাবেই রোজা করতে পেরেছিলাম এবং ওই যে তারপর থেকে রোজা করা শুরু করেছি এবং এখনো করেই যাচ্ছি। এই গল্পের মাধ্যমে শুধু একটা মেসেজ দিতে চাই, আসলে ভালো বন্ধুর সঙ্গে মিশলে ভালো কিছুই হয়।
তাৎক্ষণিক অতিথি ও শ্রোতার মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
পুরস্কারের স্পন্সর কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা @rme দাদা
মূলত এভাবেই আয়োজন করা হয়েছিল এবিবি উন্মুক্ত আড্ডা। আমাদের চিন্তাধারা প্রতিনিয়তই ব্যতিক্রম, তাই সব ব্যতিক্রম চিন্তা-ভাবনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই প্রতিনিয়ত সামনের দিকে। আশাকরি আমাদের সঙ্গে সকলেই থাকবেন, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দীর্ঘ দিন পর গতকাল আমাদের সকলের প্রিয় সেলিনা সাথী আপু কে রবিবারের আড্ডায় পেয়ে বেশ ভালোই লাগছিলো আমার কাছে। আমরা তিন জন ইউজার এর কাছে থেকে রোজার স্মৃতিচারণ শুনেছিলাম। সকলেই সাজিয়ে গুছিয়ে তাদের শৈশবের রোজার স্মৃতিচারণ শেয়ার করেছে আমাদের মাঝে।
গতকালকে খতম তারাবীহ শেষ হতে রাত ১০ টার উপরে বেজে গিয়েছিল। তাই রবিবারের আড্ডায় জয়েন হতে পারিনি। তবে এই রিপোর্টটি দেখে বিস্তারিত জানতে পারলাম। যাইহোক এই রিপোর্টটি আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এই সপ্তাহের রবিবারের আড্ডায় তিনজনের রোজার স্মৃতিচারণ শুনে আমার নিজের কাছেও ভীষণ ভালো লাগলো। কারণ ছোটবেলায় রোজার সময়টা সবারই খুব সুন্দর কাটে। প্রত্যেক জনের কথাগুলোর মধ্যে যেন ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম। যাইহোক সবার রমজান মাসে পুরো মাসটা যেন ভালো কাটে সবার জন্য এই কামনা করি।
রবিবারের আড্ডা মানেই দারুন আয়োজন।এবারের আড্ডায় উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে আপনার এই পোস্ট পড়ে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। অতিথিরা অনেক সুন্দর করে নিজেদের স্মৃতিগুলো উপস্থাপন করেছেন। রোজার দিনের শৈশবের অনেক মধুর মধুর স্মৃতি রয়েছে।
শৈশবের রোজার দিনগুলো যেন এক রঙিন গল্প, যেখানে সেহরির ঘুম-জড়ানো ডাক আর ইফতারের আগে ক্ষুধা ভুলিয়ে রাখার খেলাগুলো আজও মনে দোলা দেয়। আগামীকাল আড্ডায় তিন জনের স্মৃতিচারণ শুনতে বেশ ভালো লেগেছে। আপনার পোস্টটি মধ্যেমে আবার স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই সুবর্ণ দিনগুলো আবার একটু ছুঁয়ে দেখলাম। রমজান মাস সবার জন্য শান্তি, আনন্দ আর বরকতে ভরে উঠুক। ধন্যবাদ ভাইয়া।