অনু গল্প-একটি হতাশার গল্প||
আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।
বন্ধুরা, কেমন আছেন? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে ভালো লাগে। তাই সময় পেলে লিখি। ভালো গল্প লিখতে পারি এটা কখনোই বলবো না। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তো বন্ধুরা চলুন আমার লেখা অনু গল্প পড়ে নেয়া যাক
অনু গল্প-একটি হতাশার গল্প:

মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনের গল্পগুলো বড্ড বেশি হতাশার। ফারুক ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী ছিল। কৃষক বাবার ঘরে জন্ম হয়েছে তার। বাবা কৃষিকাজ করে যেটুকু টাকা আয় করতেন সেটা দিয়েই চলত সংসার। মেধাবী ফারুকের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কৃষক বাবা রাত দিন পরিশ্রম করতেন। ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করার চেষ্টার তার কোন ত্রুটি ছিল না। ফসল বিক্রি করে ছেলের পড়াশুনার জন্য খরচ করতেন।ফারুক যখন একটু বড় হল তখন নিজেও কিছুটা নিজের দায়িত্ব নিতে শিখলো। কিন্তু যখন শহরে পড়তে গেলো তখন নিজের খরচ চালাতে পারছিল না কৃষক বাবা। আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল তাকে মানুষ করার।
প্রতিমাসে টাকা পাঠাতো সেই কৃষক বাবা। নিজের ছেলের সুখের কথা ভেবে কিংবা ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজের ভিটেমাটি টুকুও রাখেননি। বিক্রি করে দিয়েছিলেন। দেখতে দেখতে পড়াশোনা প্রায় শেষ হয়ে যায়। ফারুকের বাবা স্বপ্ন দেখে তার ছেলে বড় চাকরি করবে। সংসারের হাল ধরবে। বুড়ো বুড়ির দায়িত্ব নেবে। অনেক আশা নিয়ে বেঁচে আছে দুটো মানুষ। অন্যদিকে ফারুকের পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। কয়েকটা টিউশনি জোগাড় করেছে। কোনরকমে নিজের পকেট খরচ চালাতে পারছে সে। বাবা মায়ের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার ক্ষমতা তার তৈরি হয়নি।
দেখতে দেখতে পড়াশুনা শেষ হয়ে যায়। ছাত্র জীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথে বেকারত্বের জীবনে প্রবেশ করে ফারুক। বেকারত্ব যে কতটা ভয়াবহ সেটা তখনই উপলব্ধি করতে পারে সে। একদিকে বাবা-মা বড় আশা করে আছে অন্যদিকে বেকারত্ব ফারুকের জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছে। হতাশায় দিন কাটতে লাগে তার। তবুও নতুন আশা বুকে বাসা বাঁধে। নতুন স্বপ্ন নিয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে শুরু করে। কিন্তু এই দুনিয়াটা বড় নিষ্ঠুর। মেধাবী ফারুকের কপালে চাকরি জোটে না। দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েও হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয় তাকে।
এভাবে কেটে যায় অনেকগুলো বছর। দেখতে দেখতে চাকরির বয়স প্রায় শেষের দিকে। সারা জীবনের অর্জন করা সার্টিফিকেট আজ মূল্যহীন হতে চলেছে। বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর সামর্থ্য তার হলো না। আজও সব হতাশা যেন তার জীবনটাকে গ্রাস করে নিয়েছে। বৃদ্ধ বাবা পথ চেয়ে আছে কখন তার ছেলে খুশির খবর নিয়ে ফিরবে। ফারুক বাবা মায়ের কাছে ফিরলো ঠিকই কিন্তু তার পরিবারের জন্য কান্না বয়ে আনলো। হতাশায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল সে। নিজেকে শেষ করে দিয়েছিল ছেলেটা। হয়তো নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেনি। এভাবেই শেষ হয়ে যায় একটি মেধাবী মানুষ। শেষ হয়ে যায় বাবা-মায়ের স্বপ্নগুলো। এরকম হাজারো হতাশার গল্প আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹
আমি মো: স্বপন । আমি একজন বাংলাদেশী। বাংলা আমার মাতৃভাষা। তাই আমি বাংলায় লেখালেখি করতে ভালোবাসি। ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং এবং ক্রাফটিং করা হচ্ছে আমার অন্যতম শখ। অবসর সময়ে গান শুনতেও অনেক ভালোবাসি। এছাড়া বাগান করতে আমার অনেক ভালো লাগে। মাঝে মাঝে রান্না করতেও অনেক ভালো লাগে। আমার স্টিমিট আইডি নাম @shopon700। আমি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্টিমিট ব্লগিং শুরু করি। আমি গর্বিত, কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড ব্লগার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাস্তব একটি গল্প তুলে ধরেছেন ভাইয়া।এই সমাজে এখন মেধার কোনো মূল্য নেই।হাজার গরীব অসহায় বাবা নিজের শেষ সম্বল দিয়ে সন্তানকে পড়াশুনা করায়।কিন্তু এই দুনিয়ায় চাকরির বড়ই অভাব।চাকরি না পেয়ে ফারুক হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছিল।খুবই ভালো লাগলো আপনার লেখা গল্পটি।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু এই সমাজে মেধার কোনো মূল্য নেই। তাই অনেকে হতাশ হয়ে জীবন দিয়ে দেয়।
আমাদের দেশের প্রতিটি ফ্যামিলিতে এমন অবস্থা, যে অনেক কষ্ট করে বাবা-মা টাকা-পয়সা দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাবেন কিন্তু লেখা পড়া শেষে ভালো একটি চাকরি খুঁজতে গিয়েও সব সময় হতাশা নিয়েই ফিরবে সেই ছেলে মেয়ে।যাই হোক আপনার গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
ঠিক বলেছেন আপু প্রত্যেকটা ফ্যামিলির গল্প এরকমটাই। অনেকে অনেক আশা নিয়ে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব আশা শেষ হয়ে যায়।