যার কেউ নাই তার সৃষ্টি কর্তা আছে❤️

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

হ্যালো

আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।

IMG_20250113_203648.jpg

আজকে আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো একটি দুঃখজনক সত্যি ঘটনা।

আমাদের এলাকায় এক মোড়ল ছিলো।আগেকার দিনের মোড়ল তবে আমরা যখন তাকে দেখেছি ছোট বেলায় তখন তার জমিজমা একদমই কমে গিয়েছিলো কারণ সে আগেরকার দিনে না কি মাছও মাংস খেয়েও তাদের মাঝে জমি লিখে দিতো।

তিনি মসজিদ ও স্কুলের নামেও কিছু জমিজমা দিয়েছিলেন। ওনার নাম ছিলো হানিফ আমার বাবা তাকে হানিফ কা আনিফ চা এসব নামে ডাকতেন। সেই হানিফের ছিলো দুই বউ বড়ো বউয়ের দু মেয়ে ছেলে নাই।ছেলের আশায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কিছু দিন পর প্রথম বউ মারা গিয়েছিল।

দ্বিতীয় বউ ভীষণ ভালো মহিলা ছিলেন।আগের বউয়ের বাচ্চাদের কে নিজের বাচ্চার মতোই দেখতো।ছোট বউয়ের বাচ্চা না হওয়ার কারণে ওনারা একটি ছেলে সন্তান দত্তক নিয়েছিলেন।বড়ো মেয়ে হাসিনা ভীষণ চতুর প্রকৃতির মেয়ে।ঝগরাটেও অনেক।বিয়ে দিয়েছেন কিন্তুু সংসার না করে বাপের বাড়িতে চলে এসেছে তবে ডিভোর্স হয়নি।বর দ্বিতীয় বিয়ে করেছে কিন্তুু হাসিনা আর বিয়ে করেনি তিন ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থেকে যায় এবং বাবার কাছে থেকে আলাদা বাড়ি বানিয়ে বসবাস করতে থাকে।

দ্বিতীয় মেয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কথাও নাকে নাকে বলে দেখতে কুৎসিত। একদমই সাক চুন্নির মতো চেহারা।নাম হাজড়া কুচকুচে কালো রোগা হঠাৎ করে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে।গ্রামের সকলে হাজড়া পাগলি বলে ডাকতো।হাজড়া পাগলিকে অনেক টাকার বিনিময়ে কোন এক লোভী পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। টাকার বিনিময়ে বিয়ে করে টাকা পয়সা এবং মেয়ের নামে দেয়া জমিজমা চাটুকারিতা করে নিজের নামে লিখে নেয়ার পর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং তা জানার পর নিয়ে এসে এই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মহিলার একটি ছেলে সন্তান হয় সুস্থ সবল তবে দেখতে মায়ের মতো।

বাবার বাড়িতে আসার পর বাবা,মায়ের সাথেই বসবাস করতো এবং সৎ মা নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসতো এবং নাতিকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতো ও বড়ো করে তুলছিলো।হানিফের যে জমিজমা অবশিষ্ট ছিলো সেগুলো পালিত ছেলের ও দুই মেয়ের নামে লিখে দিয়ে কিছু দিন পর মারা যায়।

বড়ো মেয়ে হাসিনা ছিলো ভীষণ লোভী প্রকৃতির মেয়ে।বাবা হানিফের সাথে সব সময় খারাপ আচরণ করতো এবং সবকিছু লিখে নেয়ার জন্য চাপ দিতো।হাসির কথা সে সব একাই লিখে নেবে পাগলিকে কি জমি দিতে হবে আর পালিত ছেলে তার কিসের জমিজমা।

এদিকে হানিফের কথা সে সব সন্তান কে সমান ভাবে ভাগ করে দেবো সব জমিজমা করলেনও সেটাই সমান ভাবে সব ভাগ করে দিলেন সবার মাঝে।হাসিনা এটা ভালোভাবে কিছুতেই নিলেন না এবং তার বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেন তখন সেবাযত্ন করলেন না।এভাবে কিছু দিন পর হানিফ পরপারে চলে গেলেন।

হাসিনা মনে মনে বুদ্ধি আটছিলো কিভাবে পাগলি বোনের জমিজমা গুলো হাতিয়ে নেয়া যায়।যেহেতু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বোনের একমাত্র ছেলে সন্তান তাকে যদি পথ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তাহলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর সব জমিজমা তার ছেলেরা পাবে।এই কুবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে একদিন হাজড়ার তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে বহুদূর নাটোরের চলন বিলে নিয়ে গিয়ে ছেরে দিয়ে এসেছিলেন।

এদিকে ছেলে সন্তান কে হারিয়ে হাজরা পাগলি ভীষণ কান্নাকাটি করতে থাকলো। পাগল হলেও সে তো মা। সন্তান কাছে থাকলে তেমন তার প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও সন্তান হারিয়ে যাওয়ার পর তার মাতৃত্ব জেগে উঠলো।এভাবে কেটে গেলো সাতদিন। সাতদিন পর তাকে পাওয়া গেলো। বাচ্চাটি নাকি বিলে মাঝিদের যে ঘর থাকে সেই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো কোন এক মাঝি গিয়ে দেখে কোলে করে নিয়ে এসেছে এবং বাচ্চা টি চালাক ছিলো সে তার দাদুর নাম মানে হানিফের নাম ও গ্রামের নাম বলেছিলো এবং সেই সূত্র ধরে তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।

বাচ্চারটিকে যখন মাঝি পেয়েছে তখন নাকি সে মাঝিকে বলেছেন মায়ের সাথে রাতে ঘুমিয়ে ছিলো।মাতো আমাকে রাতে এই ঘরে এনে ঘুম দিলো।আমি তো কান্না করছিলাম মায়ের সাথে এসে তো এখানে ঘুমিয়ে গেছি।এই কথাটা শোনার পর সবাই বলছিলো যার কেউ নাই তার সৃষ্টিকর্তা আছে আর সে-রকম ঘটনাই ঘটেছে বাচ্চাটির ক্ষেত্রে।অনেক বলছে বাচ্চা টিকে কোন ভুত মা সারারাত আগলে রেখেছিলো।বাচ্চার কছে সবাই জানতে চেয়েছে এতো দূরে কি করে চলে গেছো তখন সে বলেছে হাসিনার বড়ো ছেলের কথা যে ভাইয়া তাকে নিয়ে গিয়ে রেখে এসেছে তাকে কত্তো খুজলাম আর আমার কাছে গেলো না এসব শোনার পর আর কারো বাকি রইলো না এটা কার কাজ।

গল্পটি থেকে সত্যি বুঝতে পারছি যার কেউ নাই তার সৃষ্টিকর্তা আছে এই বাচ্চার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।

ভালো থাকবেন সবাই।আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোস্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



4i88GgaV8qiFU89taP2MgKXzwntUGAvkoQiKU7VxyD37q9Fia2nV6QxLL38mySfdsqgxc2WfvTTyQp4N7nMvXesy8jd7jL2j27pqLfA3YLbpWQdAjDkFXjqxbQ.png

IMG_20250107_231839.png

Sort:  
 5 days ago 

পাগলী হোক আর ভালো ,মা সেতো মাই হয়। সন্তান হারানোর বেদনা কেউ সইতে পারবে না। যাই হোক আপনি আসলেই সঠিক বলেছেন যার কেউ নেই তার স্রষ্টা রয়েছেন। তার বাস্তবিক প্রমাণ হলো হাজরার ছেলে। যে কিনা এরকম পরিস্থিতির মধ্যেও সুস্থ সবল ছিল। তবে হাসিনা যে সকল কুচক্রী চিন্তাভাবনা করছে তার ফলাফল সে একদিন ভোগ করবেই। বাস্তব একটি ঘটনাকে আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 5 days ago 

আমার পোস্ট টি ধৈর্যসহকারে পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 5 days ago 

PhotoCollage_1736785228031.jpg

 5 days ago 

বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য করলে আমরা এমন অনেক ঘটনা জানতে পারি। আমরা বেশিরভাগ জানি যে সৎ মারা খারাপ হয়। কিন্তু অনেক সৎ মা হয়েছে যারা অনেক অনেক ভালো হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি একটা সৎ মা আমাদের পাশের গ্রামে রয়েছে। নিজের দুই ছেলের চেয়েও আগের পক্ষে দুই ছেলেকে বেশি ভালোবাসেন এমনকি তার সন্তানদের কোলেপিঠে করে মানুষ করে দিতেন। তবে তারা তাকে মায়ের চোখেই দেখে। কিন্তু এই ঘটনা একটু ব্যতিক্রম দেখলাম। অনেক সন্তানরা এমনটাই করে থাকে, পালিত ভাইদের সম্পদের ভাগনাত দেওয়ার পাঁয়তারা খোঁজে আবার নিজে স্বার্থ খোঁজে।

 4 days ago 

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করেছেন জন্য।

 4 days ago 

আপনি বাস্তব কথা বলেছেন আপু, যার কেউ নাই তার সৃষ্টি কর্তা আছে। আপন মানুষ গুলো যখন পর হয়ে যায় চিরচেনা মুখগুলো যখন অচেনা হয়ে যায় তখন আর কোন কিছু করার থাকে না। যতোই দুঃখ কষ্ট আসুক আমাদের জীবনে সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আমাদের পাশে থাকে। আপনার পোস্টটি পড়ে বেশ খারাপ লাগছে। সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

 4 days ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করেছেন জন্য।

 4 days ago 

একদমে পুরো গল্পটি পড়ে ফেললাম দিদি।আসলেই বর্তমানে অত্যন্ত লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ এইসব কাজ হামেশাই করছে।যেটা খুবই অমানবিক,অথচ বাবা-মা হিসেবে তারা তাদের দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করছে।আসলেই ঈশ্বর আছেন বলেই বাচ্চাটি তার দাদুর নাম ও গ্রামের নাম বলতে সক্ষম হয়েছিলো।ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে,ধন্যবাদ আপনাকে দিদি।

 4 days ago 

ধৈর্য ধরে পুরা গল্পটি পড়ে ফেলেছেন জন্য ধন্যবাদ দিদি।

 3 days ago 

বেশ দারুন একটি টপিক নিয়ে লিখেছেন। এটা ঠিক বলেছেন আপু যার কেউ নেই তার সৃষ্টিকর্তা আছে।মা তো মা পাগল হোক আর ভালো হোক মায়ের মত আপন আর কেউ হয় না। আমাদের জীবনে যতই দুঃখ কষ্ট আসুক না কেন সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমাদের পাশে আছেন।আপনার লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপু। ধন্যবাদ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।