কবিতা - "আপন যখন পর"
স্বরচিত -কবিতা-
সকলকে নতুন বছরের অনাবিল শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি।
অনুভূতির কিছু কথা
একসময় ভেবেছিলাম, "আপন" শব্দের মানে অটুট বন্ধন, যেখানে বিশ্বাস থাকে, ভালোবাসার শেকড় গাঁথা থাকে মাটির গভীরে। কিন্তু জীবন আমাকে অন্য কিছু শিখিয়েছে। শিখিয়েছে, আপনি আপন বলতে যাদের চিনতেন, তারা একদিন হয়তো আপনার কাছে সবচেয়ে বড় অচেনা মুখ হয়ে দাঁড়াবে।
আপন যখন পর হয়, তখন আকাশটা অচেনা লাগে। চারপাশের আলো যেন ধূসর হয়ে যায়। একসঙ্গে কাটানো স্মৃতিগুলো কেমন যেন বেদনার কাঁটা হয়ে বুকের ভেতর বিঁধে।তাদের মুখে যে মমতার ছায়া ছিল, আজ তা কেবল হিসাবের খাতা। তাদের কথায় যে আশ্বাস ছিল, আজ তা বিষাক্ত তির।
তবু আমি থেমে যাই না। পরের মুখাপেক্ষী হই না। জীবন আমাকে শিখিয়েছে, "আপন" বলতে কারও নাম নয়, বরং নিজের ভেতরকার শক্তি।
যারা পর হয়ে গেছে, তাদের জন্য আমার মনে কোনো অভিশাপ নেই।তারা শিখিয়েছে, কাকে ভালোবাসা যায়, আর কাকে দূরে রাখা উচিত।
আজ যখন আয়নার সামনে দাঁড়াই, দেখি আমি একা নই। আমার স্বপ্ন, আমার বিশ্বাস, আর আমার গল্পগুলো আমার সঙ্গে।আপন যখন পর হয়ে যায়, তখন জীবন নতুন রূপ নেয়। আমি সেই রূপে নিজেকে খুঁজে পাই।
আমার ভেতরের স্বপ্নগুলো আজও আপন।
তাই আমি এগিয়ে যাই, পেছনের কষ্টগুলো ফেলে রেখে। যারা আপন থেকে পর হয়েছে, তাদের জন্য আমার একটাই কথা—"তোমরা যদি কখনো ফিরে আসতে চাও, আমি হয়তো মুছে ফেলব না,
তবে সেই জায়গায় আমি আর দাঁড়িয়ে নেই।"
আপন—শব্দটি উচ্চারণ করলেই
মনে হয় যেন এক নির্ভরতার কাঁধ।
শৈশবে মায়ের আঁচলে বাঁধা
জীবনের মিষ্টি মুহূর্ত, বাবার শক্ত হাতে
আঁকা সুরক্ষার বৃত্ত।
কিন্তু সময়? সময় বড় অদ্ভুত।
একদিন সেই আপন মুখগুলো পর হয়ে যায়।
আপন যখন পর হয়ে ওঠে,
তখন সে কি আপন থাকে?
নাকি তার ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে
অপরাধবোধের ছায়া?
একটা সময় ছিল, যখন তার মুখে
আপনার জন্য ছিল অগণিত দোয়া,
আর আজ? আজ সে আপনাকে
অচেনা চোখে দেখে।
আপনার সফলতা তার গায়ে
বিষের মতো ঝরে।
আপন যখন পর হয়ে যায়,
তখন গোপনে কান্না আসে।
বুকের ভেতর জমা হয় ব্যর্থতার পাহাড়।
কেন এমন হলো? এত ভালোবেসেও কেন
সেই আপন আজ আপনার না?
আপনি তখন ভাবেন, সময়ের কাঁটায় বুঝি
সম্পর্কের রং ফিকে হয়।
কিন্তু আসল সত্য?
মানুষ বদলায়।
স্বার্থ এসে ভালবাসার শেকড় কেটে দেয়।
আপন যখন পর হয়,
তখন চোখের জল কেউ দেখে না।
ঘরের কোণটাও আপনাকে একা পায়।
তবু আপনি বাঁচেন।
নিজের অস্তিত্ব নিয়ে বাঁচেন।
কারণ আপনার জীবনে পর হয়ে যাওয়া
তাদের থেকেও অনেক
বড় আপন হয়ে ওঠেন আপনার স্বপ্নগুলো।
হ্যাঁ, স্বপ্ন কখনো পর হয় না।
স্বপ্ন আপন হয়ে সঙ্গ দেয়।
আর তাই স্বপ্নকেই বড় বেশি
আপন মনে হয় আজ।
৪ জানুয়ারি ২০২৫ সময় রাত ১০: ৩৮ কবিতা কুটির -নীলফামারী।
বন্ধুরা আমার আজকের কবিতটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অনেক দিনপর তোমার পোস্ট পেলাম চোখের সামনে৷ আর কবিতাও৷ সত্যিই আপন যখন পর হয়ে যায় তখন সব কিছুই অচেনা লাগে৷ তবে আপনই পর হয় কখনও কখনও। বড় বেদনার। স্বপ্নের প্রাণ নেই তাই মনে হয় ছেড়ে যেতে পারে না৷ ভালো লাগা যেনো।
আপু আপনার স্বরচিত কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।কবিতার লাইনগুলোতে নিজের আবেগ খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সত্যিই আপন যখন পর হয় তখন সবকিছু অচেনা লাগে। কথাগুলো কবিতার মাধ্যমে খুবই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপু আপনি দেখে অনেক বেশি ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে আপু সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আমার এই ছোট বয়সেও আমি যতটা বুঝতে পেরেছি দিনশেষে আমাদের আপন কেউই না। আমরা নিজেদের জন্য শুধ নিজেরাই। সঠিক সুযোগ টা পেলে সবাই নিজের রুপ টা দেখিয়ে দেয় হা হা। চমৎকার লিখেছেন আপনি কবিতা টা আপু। সবমিলিয়ে দারুণ ছিল। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
খুব সুন্দর একটি কবিতা লিখেছেন আপু।আপন যখন পর কবিতাটি পড়ে ভালো লাগলো। আসলে আপন মানুষগুলো পর হলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তখন নিজের সবকিছু কষ্টের সাগর হয়ে যায়। এবং মনের কষ্ট ও মনের কথা দিয়ে কবিতাটি লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।