কবিতা -"পবিত্র মাহে রমজান " ||~~
স্বরচিত -কবিতা-
সকলকে পবিত্র মাহে রমজানের অনাবিল শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি। আজ আবারো আমার লেখা আর একটি কবিতা নিয়ে হাজির হলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে, আজকের কবিতাটিও।
পবিত্র মাহে রমজান—এ মাস শুধু রোজা রাখার জন্য নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম, ধৈর্য এবং ইবাদতের এক অনন্য সময়। এই কবিতাটি লিখতে গিয়ে আমি গভীরভাবে অনুভব করেছি রমজানের সত্যিকারের সৌন্দর্য, যা শুধু উপবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার এক অনবদ্য সুযোগ।
প্রতি বছর রমজান এলে আমি দেখি চারপাশের পরিবেশ বদলে যায়। মানুষের মধ্যে অন্যরকম এক প্রশান্তি কাজ করে। ছোটবেলায় রমজানের প্রথম রোজা রাখার অভিজ্ঞতা এখনো মনে আছে—মায়ের হাতের রান্না, ইফতারের সময়ের অপেক্ষা, প্রথম তারাবির নামাজ, আর শেষ রাতে উঠে সেহরির আনন্দ। সময়ের সঙ্গে সেই অনুভূতিগুলো আরো গভীর হয়েছে, আরো পরিপূর্ণ হয়েছে।
এই কবিতাটি লিখতে গিয়ে আমি শুধু নিজের স্মৃতিই নয়, সমাজের বাস্তবতাও তুলে ধরতে চেয়েছি। যখন দেখি ধনী-গরিব একসঙ্গে বসে ইফতার করছে, তখন মনে হয় রমজান এক মহৎ শিক্ষা দেয়—সমাজে বিভেদ নয়, বরং সহমর্মিতা ও ভালোবাসার বন্ধন গড়ে তোলা।
রমজানের শেষদিকে, বিশেষ করে লাইলাতুল কদরের রাতে, যখন চারপাশে নিরবতা নামে, যখন মানুষ গভীরভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়। যেন এই এক মাস মানুষের মধ্যে এক নতুন জাগরণ ঘটায়, এক নতুন আশার আলো ছড়িয়ে দেয়।
এই অনুভূতি থেকেই কবিতাটি লেখা। রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত যেন রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে। আমি চেয়েছি কবিতার প্রতিটি লাইনে সেই অনুভূতির প্রতিফলন ঘটাতে—যেন পাঠক রমজানের গভীরতা অনুভব করতে পারেন, যেন তারা উপলব্ধি করতে পারেন, রমজান শুধু ইবাদতের মাস নয়, এটি মানুষকে নতুনভাবে গড়ার, নতুনভাবে ভাবার এক সুবর্ণ সুযোগ।
তাই কবিতার প্রতিটি শব্দে আমি সংযম, ত্যাগ, ভালোবাসা আর আধ্যাত্মিকতার এক সুর বাঁধতে চেয়েছি—যেন এই মাসের মূল শিক্ষা মানুষের অন্তরে গেঁথে থাকে সারাজীবন।
সুবহে সাদিকের আলোয় উদিত হয়
পবিত্র মাহে রমজান,
আকাশে সাদা মেঘের ভেলা,
বাতাসে প্রশান্তির সুর।
রোজাদারের হৃদয়ে ধ্বনিত হয়
তাকওয়ার সঙ্গীত,
তৃষ্ণার্ত আত্মা জেগে ওঠে
রহমতের স্নিগ্ধ ছোঁয়ায়।
দিনের সূর্য সহ্য করে ক্ষুধা-পিপাসার
কঠোর পরীক্ষা,
মায়ের চোখে সন্তানের জন্য
দোয়ার ঝিলিক,
বাবার কপালে সিজদাহ করা দাগ—
সকলটাই যেন এক অনন্য উৎসর্গ,
সবর ও সংযমের মোহন সুরে বাঁধা
এক মাসব্যাপী ইবাদত।
ইফতারের সময়ে যখন
আজানের ধ্বনি বাজে,
তখন যেন সমস্ত পৃথিবী
শান্তির পরশ পায়।
একটি খেজুর, এক ঢোক পানি—
এ যেন জান্নাতের সুধা স্পর্শ করার মুহূর্ত।
তারাবির মোনাজাতে,
লাইলাতুল কদরের প্রতীক্ষায়,
সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের আকুতি
ছড়িয়ে পড়ে ধূলির দেশে।
রমজান আসে শুধুই উপবাসের জন্য নয়,
আসে হৃদয়ের কলুষতা মুছে,
আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে,
মানুষের মধ্যে মানুষকে খুঁজে পেতে।
এ মাস আমাদের শেখায় সংযম,
দেখায় ত্যাগের সৌন্দর্য,
গরিবের কষ্ট অনুভবের পথ খুলে দেয়।
এ যেন আলোর জাগরণ,
রহমত-মাগফিরাত আর
নাজাতের এক মোহনা,
যেখানে মিলিত হয় সকল
ভুলে যাওয়া স্বপ্ন,
সকল আশা, সকল দোয়া।
হে পবিত্র মাহে রমজান,
তুমি এসো আমাদের মাঝে বারবার,
নিয়ে এসো রহমতের ছায়া,
নিয়ে এসো আত্মশুদ্ধির আলো।
বন্ধুরা আমার আজকের কবিতটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟
রমজান যে আত্ম উপলব্ধি দেয় সেই উপলব্ধি বাকি সারা বছর মানুষের মধ্যে বেঁচে থাক এটাই কাম্য। তোমার কবিতা অনেক দিন বাদে পড়লাম। রমজানের শুভেচ্ছা জানাই। পরিবারের সমস্ত সদস্যের সাথে তোমাদের এই দিনগুলো খুব ভালো কাটুক।
মাহে রমজান নিয়ে খুবই সুন্দর কবিতা লিখেছেন। আপনার কবিতাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো অসাধারণ ছিল।
আপনাকেও মাহে রমজানের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।মাহে রমজান সম্পর্কে খুবই সুন্দর কবিতা লিখেছেন আপু আপনি।আপু আপনি ঠিক বলেছেন রমজান মাস শুধু রোজা রাখার জন্য নয় এটি আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য ,সংযমের ও ইবাদতের এক অনন্য সময়।আপনার কবিতাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো কবিতাটি অসাধারণ ছিল।