কবিতা -- "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে"||~~
স্বরচিত -কবিতা-
সকলকে নতুন বছরের অনাবিল শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি। আজ আবারো আমার লেখা আর একটি কবিতা নিয়ে হাজির হলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে, আজকের কবিতাটিও।
"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে"—এই বাক্যের পিছনে লুকিয়ে আছে এক চিরায়ত বাঙালি মায়ের আকুতি। এটি কোনো একক মায়ের স্বপ্ন নয়; এটি যুগ যুগ ধরে মাটির কাছাকাছি থাকা প্রতিটি মা-বাবার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এই কথাটি যেন তাদের সারাজীবনের সংগ্রামের সারমর্ম।
এক সময়ের গ্রামীণ বাংলায় জীবন ছিল সাদাসিধে, কিন্তু দারিদ্র্যের ছায়া ছিল গভীর। বহু মা-বাবা দিনের পর দিন ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করে নিজের সন্তানকে একমুঠো ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। ভাত আর দুধ তখন শুধু খাবার নয়, ছিল আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রতীক।
প্রকৃতপক্ষে, "দুধে-ভাতে" থাকার ধারণাটি এসেছে সেই কৃষক পরিবারগুলো থেকে, যারা বছরের পর বছর মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চাল আর দুধের সংস্থান করতেন। ধান কেটে ঘরে তুলতে গিয়ে যদি কিছু শূন্যতাও থেকে যেত, মায়ের আঁচলে তবু দুধ-ভাতের চেষ্টাটা কখনো থামত না।
এই বাক্যটির পেছনে আছে এক করুণ বাস্তবতা। মায়েরা হয়তো নিজের ক্ষুধা লুকিয়ে রাখতেন, দিনের পর দিন অর্ধেক পেট খেয়ে থাকতেন, শুধু এই আশায় যে তার সন্তানের পেট ভরবে। সন্তানের মুখের হাসি আর পেটের তৃপ্তি ছিল তার জীবনের বড় প্রাপ্তি।
তবু এই কথাটি শুধু দারিদ্র্যের গল্প নয়, এটি এক আশার আলোও। মায়ের স্বপ্ন ছিল সন্তান যেন শুধু ক্ষুধা মেটাতে না পারে, বরং তার জীবন হোক পরিপূর্ণ—শিক্ষায়, সুস্থতায়, সুখে। দুধে-ভাত ছিল আসলে সেই সব স্বপ্নের প্রতীক যা একটি ভালো ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
আজকের সময়ে এই বাক্যটি হয়তো অন্যরকমভাবে ধ্বনিত হয়। দুধে-ভাতে থাকার অর্থ এখন শুধু খাবার নয়, বরং মানসিক শান্তি, সামাজিক নিরাপত্তা, এবং একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ। কিন্তু যে অনুভূতি থেকে এই কথা এসেছে, সেই ভালোবাসা, সেই ত্যাগ—সেগুলো চিরন্তন।
আমার সন্তানের মুখে
ক্ষুধার জ্বালার আঁচ যেন না লাগে
পেটের গভীর প্রান্তরে যেন না বাসা বাঁধে
অপূর্ণতার দীর্ঘশ্বাস।
পৃথিবীর হাজারো উত্থান-পতনের মাঝে,
আমি চাই তার পা যেন ছুঁতে পারে স্থির মাটি।
অশান্ত ঝড়ে ভাঙা কাঠের মতো তার
জীবন যেন না হয় ভেসে যাওয়ার কোনো গল্প।
আমি চেয়েছি, আমার সন্তান হোক
মাটির মতো নরম, জলবিন্দুর মতো স্বচ্ছ।
জীবন যখন তাকে চেপে ধরে কঠিন দোলায়,
তখন সে যেন নিজের শক্তি দিয়ে তৈরি করে
শান্তির আশ্রয়। আমি চেয়েছি তার চারপাশে যেন ভালোবাসার আলো, পুষ্টির ঘ্রাণ থাকে ।
প্রতিদিনের খাবারের প্লেটে থাকুক দুধের স্নিগ্ধতা
আর ভাতের উষ্ণ কোমলতা।
এটি জীবনের গভীর আনন্দ আর
পরিপূর্ণতার কথা।
আমি চাই তার মন যেন থাকে
সবুজ মাঠের মতো মুক্ত।
তার স্বপ্নের আকাশ যেন থাকে তার
নিজের নিয়ন্ত্রণে।
যদি দুনিয়া তাকে কঠোর প্রশ্ন করে,
সে যেন উত্তর দিতে পারে আত্মবিশ্বাসে।
যদি দুঃখ তাকে বাঁধতে চায়,
সে যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারে
সাহসের স্রোতে।
আমি শুধু চাই—তার জীবন হোক
আনন্দময়, তার অন্তরে থাকুক শান্তির গান।
আমার সন্তানের জন্য এই পৃথিবী হোক
এক নরম কোমল আশ্রয়।
তার প্রতিটি শ্বাস যেন মিলে যায়
দুধে-ভাতে পূর্ণ একটি গল্পের সঙ্গে।
১৪জানুয়ারি ২০২৫
সময় রাত ১১:২০
কবিতা কুটির -নীলফামারী।
বন্ধুরা আমার আজকের কবিতটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার লেখা কবিতায় গভীর মমতা ও মানবিকতার ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ। সন্তানের প্রতি এমন ভালোবাসার অনুভূতি এবং তার জন্য শান্তিময় ও সুন্দর জীবনের প্রার্থনা হৃদয় স্পর্শ করে। আপনার প্রতিটি বাক্যে অভিভাবকের আশার ছবি ফুটে উঠেছে। এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।