কবিতা -"আজকে ভীষণ খুশির দিন"
স্বরচিত -কবিতা-
সকলকে নতুন বছরের অনাবিল শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি। আজ আবারো আমার লেখা আর একটি কবিতা নিয়ে হাজির হলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে, আজকের কবিতাটিও।
"আজকে ভীষণ খুশির দিন" কবিতাটি লিখতে বসার পেছনে এক আবেগঘন মুহূর্ত লুকিয়ে আছে। দিনটি ছিল এক সাধারণ সকাল, কিন্তু হঠাৎ কোনো এক ছোট্ট অর্জন কিংবা হৃদয়ে জমে থাকা কৃতজ্ঞতার অনুভূতি আমাকে এ কবিতাটি লিখতে অনুপ্রাণিত করে।
আমার জীবনের বহু দিন কেটেছে সংগ্রামের ভেতর। নিজের স্বপ্নগুলোকে গড়ে তোলার পথটা কখনোই মসৃণ ছিল না। অনেক দিন হেরে গেছি, অনেক বার পিছু হটতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই নিজের ভেতর শক্তি খুঁজে পেয়েছি নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
সেদিন সকালবেলায় বারান্দার ফুলগুলো যখন রোদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ফুটছিল, তখন মনে হলো, এগুলো তো আমারই প্রতীক। আমার ছোট্ট ছোট্ট কাজগুলো, আমার চেষ্টাগুলো—সবই একদিন ফল দেবে, যেমন এই গাছে ফুটেছে রঙিন ফুল। সেই মুহূর্তে নিজের জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মনটা ভরে উঠেছিল।
এমন সময় একটি স্মৃতি আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। কয়েক বছর আগের কথা—একটি দিন যখন কোনো আশা ছিল না। কিন্তু আজকের দিনটিতে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারি, সেই অন্ধকার দিনগুলো না থাকলে আজকের খুশির মূল্য বুঝতাম না।
আরও একটি কারণ ছিল এ কবিতার পেছনে। সেদিন হয়তো একটি ভালো সংবাদ পেয়েছিলাম বা কোনো প্রিয়জনের কাছ থেকে এক টুকরো ভালোবাসা। মনে হচ্ছিল, পৃথিবীটা সত্যিই সুন্দর, আর আমি সেই সৌন্দর্যের অংশ।
এই কবিতাটি আমার জন্য একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এটি মনে করিয়ে দেয়, খুশি ছোট ছোট মুহূর্তে লুকিয়ে থাকে—আমাদের প্রিয়জনের ভালোবাসায়, প্রকৃতির স্নিগ্ধতায়, বা কোনো ছোট্ট সফলতায়। আর এ খুশি আমাদের শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও ছড়িয়ে দিতে হয়।
আজ যেন প্রকৃতির মধ্যেও
এক উচ্ছ্বাস লুকিয়ে আছে।
আকাশটা মেঘমুক্ত,
রোদের হাসি চারপাশে আলো ছড়াচ্ছে।
জানি না, কেন এতটা আনন্দে ভাসছি।
হয়তো মনে হচ্ছে,
পৃথিবীর প্রতিটা কণা আজ
আমার সঙ্গে মিলে হাসছে।
আজকের সকালটা ছিল ভিন্ন রকম।
চিরচেনা চায়ের কাপে প্রথম চুমুকটা যেন
একদম অন্যরকম স্বাদ দিল।
মনে হলো, এই স্বাদ শুধু
আনন্দের দিনেই পাওয়া যায়।
আমার ছোট্ট বারান্দার টবের গাছে
ফুল ফুটেছে, যেন ওরাও বলে উঠছে,
"আজ আমাদের খুশির দিন।"
সেদিনের কথা মনে পড়ে,
যখন জীবনের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
সেই দিনগুলোতে কোথাও আলো খুঁজে পাইনি। আজকের এই খুশির দিন যেন
সেসব অন্ধকারকে দূর করে দিয়েছে।
জীবনের সব কষ্ট, সব পরাজয়কে
আজ মনে হচ্ছে আমার বড় অর্জনের সিঁড়ি।
আজ আমার স্বপ্নপূরণের দিন।
হয়তো আজকের দিনটি আমার জন্য
ছোট্ট কোনো জয় এনেছে,
যা আমার আত্মাকে বড় করে দিয়েছে।
কিংবা প্রিয় কারো হাসিমুখ
আমার হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছে।
হয়তো আজকে কারো কাছ থেকে পাওয়া
একটা ভালো কথা, একটা ছোট্ট উপহার,
কিংবা একটা ভালোবাসার ছোঁয়া
আমাকে এতটা সুখী করেছে।
আমার এই খুশি শুধু আমার নয়।
এই খুশি ছড়িয়ে দিতে চাই চারপাশে।
আজকে কোনো অভাবীকে
এক প্লেট খাবার দিতে চাই।
আজকে কারো মুখে হাসি ফোটাতে চাই।
আজকের দিনটা যেন বলে,
"তুমি পারবে, তুমি জিতবে।"
আজকে মনে হচ্ছে, আমার জীবনের
প্রতিটা দিন যদি এমন হত!
কিন্তু আমি জানি, প্রতিটা খুশির পেছনে
লুকিয়ে থাকে সংগ্রামের গল্প।
আর সেই গল্পই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।
আজকে ভীষণ খুশির দিন।
কারণ আজ আমি বেঁচে আছি,
স্বপ্ন দেখছি, ভালোবাসছি,
এবং সবচেয়ে বড় কথা,
আজ আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।
১৩জানুয়ারি ২০২৫
সময় রাত ১১:৩০
কবিতা কুটির -নীলফামারী।
বন্ধুরা আমার আজকের কবিতটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
একটা কথা খুবই প্রচলিত, রাত্রি যত গভীর সকাল ততই সুন্দর। জীবনে সংগ্রাম থাকে বলেই সাফল্যের মর্যাদা বেশি। সংগ্রাম সব্বাইকেই করতে হয়, শুধু ধরণটা আলাদা হয়। তোমার অনুভূতি ও লেখাগুলো বরাবরই ভালো লাগে। আজও কবিতাটা পড়ে ভালো লাগল। বেশ ভালো লিখেছ।
কষ্টের সীমা যত গভীর হয় সুখের দেখা তত তাড়াতাড়ি মিলে যায়। জীবনের কিছু সময় আমাদের কষ্টকর মুহূর্ত দিয়ে অতিবাহিত হয়। কিছু মুহূর্ত আমাদের জীবনে পুষ্প সজ্জিত হয়ে ফুটে ওঠে। আপনার জীবনের কিছু অনুভূতি কবিতার মাধ্যমে আমাদের মাঝে প্রকাশ করেছেন। আজকের কবিতাটিও ভীষণ ভালো লাগলো। এখন থেকে আপনার জীবন পুষ্প সজ্জিত হোক কষ্টগুলো নিপাত যাক। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আজকে ভীষণ খুশির দিন এই কবিতাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। খুবই দক্ষতার সাথে সৌন্দর্যময় কবিতা শেয়ার করেছেন মুগ্ধ হলাম।